বাংলা

চীনের গ্রামের কাঁচাবাজারের কথা

CMGPublished: 2023-01-20 14:19:27
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চৌছুনচুন

“চলে যাচ্ছি”! চৌছুনচুন’র একটি জোরালো চিত্কারে যেন ভেঙে গেল শীতকালীন ভোরের শীতল আমেজ। ৩৫৯ কেজি ডিম নিয়ে চৌছুনচুন ও তার স্ত্রী ওয়াংসিউইয়ান তাদের ছোট ট্রাকে করে কাঁচাবাজারের দিকে ছুটে যান।

বসন্ত উত্সবকে সামনে রেখে চীনের থিয়ানচিন শহরের উপকণ্ঠে গ্রামীণ কাঁচাবাজারে আগেরকার প্রাণশক্তি ফিরে আসে। “কাঁচাবাজারে বসন্তের কেনাকাটা’ দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে, বাজার তাই জমজমাট এবারও। অনেকে নানান ধরণের পণ্য কাঁচাবাজারে বিক্রয় করতে ছুটে যান। কাঁচাবাজারের বিক্রেতা হিসেবে চৌছুনচু দম্পতি এবার থিয়ানচিন শহরের চিচৌ অঞ্চলের বিখ্যাত সিলুচুয়াং কাঁচাবাজারে যেতে চান।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দম্পতি কাঁচাবাজারে পৌঁছে যান। তারা বাজারের প্রধান সড়কের একটি ভালো স্থান দখলে নিতে সক্ষম হন। দু’জন চার বাক্স ডিম মাটিতে রেখে একটি চেয়ারে বসে যান এবং ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। চৌছুনচু যে ডিম বিক্রি করেন, সেগুলো তার নিজের পালিত দশ হাজার মুরগির দেওয়া। ৬ বছর আগে তিনি হ্যপেই প্রদেশ থেকে চিচৌ শহরে আসেন। তিনি কিছুটা জমি ভাড়া করে মুরগি পালন করা শুরু করেন। একসময় বিক্রি বাড়াতে তিনি বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ছুটতে শুরু করেন।

তিনি বলেন, ‘সেসময় আমি কয়েকশ মুরগি পালতাম। ডিমের ভালো বাজারের জন্য আমি প্রতিদিন একটির পর একটি কাঁচাবাজার বদলাতাম। আমার ক্রেতারাই আমার ডিমের সুনাম ছড়িয়ে দেয়, যা ছিল আমার কল্পনার বাইরে। এখন আমি ডিমের চাহিদা মেটাতে পারছি না।”

সম্প্রতি স্থানীয় গ্রামকমিটির সাহায্যে, বড় লালনকারী চৌছুনচু ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করেছেন এবং নিজস্ব প্যাকেজ অর্ডার দিয়েছেন। যার মানে, চৌছুনচুন নিজের পণ্যের ব্র্যান্ডিং করছেন। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে চৌ অনলাইন বিক্রির পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। তাঁর অনলাইনে পণ্য বিক্রির কথা কাঁচাবাজারের অন্যান্য বিক্রেতাদের মুখে মুখে। তাঁরাও এখন অনলাইনে পণ্য বিক্রির স্বপ্ন দেখেন।

সিলুচুয়াং কাঁচাবাজারের ব্যবস্থাপক ছিওয়েইমিং আন্তরিকভাবে বণিকদের অভ্যর্থনা জানান। তিনি বলেন, ‘অনেক বণিক চিচৌ শহরের বিভিন্ন উপজেলা ও থানা থেকে আসেন। পাশাপাশি, বেইজিং মহানগর এবং হ্যপেই প্রদেশ থেকেও অনেকে আসেন। আর এখানে নির্দিষ্ট স্টলের সংখ্যা ৩০০টিরও বেশি। বসন্ত উত্সবের সময় সেসব স্টলের বাইরেও ব্যাপক ক্রয়-বিক্রয় চলে।”

চৌছুনচুন’র স্টলের পাশে লিউলানলান’র শুকানো ফলের স্টল অনেক শিশু’র দৃষ্টি কাড়ে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিশুদের বাবামা’র কাছে তার সুস্বাদু শুকানো ফল তুলে ধরার চেষ্টা চালান লিউলানলান। গত ৫ বছরে লিউলানলান’র বিক্রির পরিমাণ অনেক বেড়েছে।

বাজারে লাইভস্ট্রিম করছে বিক্রেতা

তিনি বলেন, “এখন এমন কাঁচাবাজারে অন্যস্থান থেকে আসা অতিথি বেড়েছে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্য ক্রয় করতে পছন্দ করেন তারা। আগে আমি অন্যস্থানের শুকনো ফল বিক্রি করতাম। এখন আমি চিচৌর স্থানীয় শুকনো পিচ ও শুকনো এপ্রিকট বিক্রি করি। পরিবহণব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এখন এমন কাঁচাবাজার গ্রামবাসীদের প্রধান কেনাকাটার স্থান হয়েছে। বর্তমানে এ ধরণের কাঁচাবাজার পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।”

পারিবারিক হোটেলের মালিক লিছুয়ানচুনও লিউলানলানের সঙ্গে একমত। আসন্ন বসন্ত উত্সবে এখানে অনেক পর্যটক আসবেন। তাই এখন তিনিও প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় ব্যস্ত। তিনি বলেন, ‘চিচৌ থিয়ানচিন শহরের একমাত্র পাহাড়ি অঞ্চল। অতীতে এখানকার অনেক গ্রামের মানুষ পাহাড়ের পাথর সংগ্রহ করে বিক্রি করতো। পরে সরকার সেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে স্থানীয় প্রকৃতি পুনরুদ্ধার শুরু করে। ফলে পাহাড় সবুজ হয়েছে। গ্রামগুলো আরো সুন্দর হওয়ার পর পর্যটনশিল্প সরগরম হয়ে উঠেছে। এখন পারিবারিক হোটেল বেশ জনপ্রিয়। পর্যটন মৌসুমে এখানে রুম পাওয়া অনেক কঠিন।”

এদিন বিকেলের শেষ দিকে কাঁচাবাজার অবশেষে ধীরে ধীরে শান্ত হয়। চৌছুনচুন’র ডিমের বাক্স খালি হয়েছে। লিউলানলান এ দিনের উপার্জন হিসেব করছেন। লিছুনচুন বড়-ছোট প্যাকেজ নিয়ে বাজার ছেড়ে বেড়িয়ে পড়েন। আগামীকাল এ প্রাণচঞ্চল স্টলমালিকরা অন্য একটি গ্রামের কাঁচাবাজারে হাজির হতে পারেন, তাদের চিত্কারে চীনের বসন্ত উত্সবের আমেজ ছড়িয়ে পড়বে তখন।

একদিনের ব্যস্ততার পর চৌছুনচুন তার নববর্ষের প্রত্যাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি একটি সহযোগিতামূলক সমবায় গঠন করতে চাই, যাতে অনেক বেশি মানুষ তাতে অংশগ্রহণ করতে পারে। আমি সবার কল্যাণ করতে চাই।”

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn