বাংলা

কেনিয়ার সুখের রাস্তা পাকা করেছে ‘এক অঞ্চল এক পথ’

CMGPublished: 2022-08-01 14:01:51
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম বন্দর মোম্বাসা এবং কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিকে সংযুক্ত করা মোম্বাসা-নাইরোবি রেলপথ হচ্ছে চীনা মানদণ্ড, চীনা প্রযুক্তি এবং চীনা সরঞ্জাম দিয়ে নির্মিত আধুনিক রেলপথ এবং চীন-আফ্রিকা ‘এক অঞ্চল এক পথ’ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল। সাম্প্রতিক পূর্ব আফ্রিকার প্রথম এক্সপ্রেস ওয়েই—নাইরোবি এক্সপ্রেস ওয়েই--এর পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়েছে।

কেনিয়া স্বাধীন হবার পর তার বৃহত্তম অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প মোম্বাসা-নাইরোবি রেলপথ ২০১৭ সালের ৩১ মে চালু হয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট জোমো কেনিয়াত্তা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আবেগপ্রবণভাবে বলেছেন, ‘কেনিয়ার জনগণের নতুন রেলপথ আছে। আমরা নতুন পেজ খুলে পরবর্তী ১শ’ বছর কেনিয়ার ইতিহাস লিখব’।

বর্তমানে মোম্বাসা-নাইরোবি রেলপথ নিরাপদে চালুর ৫ বছর হয়েছে। নিরাপদ, দ্রুত ও আরামদায়ক স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলপথ যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা কেনিয়ার জনগণের যাতায়াতের প্রথম বাছাই পরিবহনে পরিণত হয়েছে। এছাড়া, মালামাল পরিবহন পরিমাণও বছরের পর বছর বৃদ্ধির প্রবণতা বজায় রেখেছে। কেনিয়ার জন্য মোম্বাসা-নাইরোবি রেলপথ একটি “অর্থনৈতিক এক্সপ্রেস পথ”। পাশাপাশি, এটি দেশটির স্থানীয় জনগণের জীবনযাপনের জন্য বিরাট পরিবর্তন ডেকে আনছে।

২০১৬ সালে কনসিলিয়া ওয়্যার সহকারী চালক প্রার্থী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। চীনে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর তিনি কেনিয়ায় ফিরে গিয়ে মোম্বাসা-নাইরোবি রেলপথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তিনি দেশটির বিখ্যাত তারকা চালক এবং মোম্বাসা-নাইরোবি রেলপথের প্রথম নারী চালক। দেশটির প্রেসিডেন্ট দুইবার করে তাঁর ট্রেনে চড়েন। বর্তমানে তিনি নিরাপদে ১ লাখ ৪ হাজার কিলোমিটার চালিয়েছেন।

চীনে প্রশিক্ষণ নেয়ার দিনগুলি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘চীনের পাও চি শহরে আমি প্রথমবারের মতো ট্রেন চালাতে আরোহণ করি, তখন আমি খুব উত্তেজিত ছিলাম। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে আমি অনেক অভিজ্ঞতা জমা করেছি। মোম্বাসা-নাইরোবি রেলপথের কাজ থেকে আমি অনেক শিখেছি। আমি একজন সহকারী চালক প্রার্থী থেকে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চালক পর্যন্ত উন্নীত করেছি। বর্তমানে আমি যন্ত্রপাতি অপারেশন কর্মশালার উপ-পরিচালক হিসেবে প্রশিক্ষণ কাজে দায়িত্ব পালন করি। স্থানীয় কর্মীদের ট্রেন চালানোর প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ দেয়ার দায়িত্ব পালন করি’।

কনসিলিয়া বলেন, আফ্রিস্টার রেলওয়ে অপারেটিং কোম্পানি কেনিয়ায় ৫ বছর ধরে ব্যবস্থাপনা করছে। ম্যাক্রো স্তরে কেনিয়ার অর্থনীতি ত্বরান্বিত করেছে। মোম্বাসা-নাইরোবি রেলপথ কেনিয়ার পর্যটন শিল্প এবং রপ্তানি মালামাল উন্নীত করেছে। বলা যায়, কেনিয়ার অর্থনীতি আরও ভালো হয়েছে। বিরাট প্রকল্পটি হচ্ছে কেনিয়া স্বাধীন হবার পর বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্প, এবং দেশটির বৃহত্তম উন্নয়ন সাফল্য।

মোম্বাসা-নাইরোবি রেলপথ হচ্ছে চীনের “এক অঞ্চল এক পথ” উদ্যোগ কেনিয়ার “২০৩০ দৃষ্টি” সার্বিকভাবে সংযুক্ত ও জৈব একীকরণের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প। পাশাপাশি, চীন চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের কাঠামোয় “দশটি কার্যক্রম” কার্যকর করা, সার্বিকভাবে আফ্রিকার দেশগুলোর “২০৬৩ আলোচ্য সূচী” বাস্তবায়নে সমর্থন দেয়ার প্রতিনিধিত্বমূলক ফলাফল। রেলপথটির চালু কেনিয়া এবং আঞ্চলিক দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, আফ্রিকার শিল্পায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য আছে। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ রেলপথটি প্রায় ৬৮ লাখ যাত্রী এবং ১৫.৭ লাখ টিইইউ পরিবহন করেছে।

চীন ও আফ্রিকা উচ্চমানের “এক অঞ্চল এক পথ” নির্মাণের অব্যাহত গভীর করার সঙ্গে সঙ্গে আফ্রিকার জন্য চীনের নির্মিত রেলপথ ও রাজপথসহ বেশ কিছু প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে কার্যকর হয়ে আফ্রিকার অর্থনৈতিক সমাজের উন্নয়নের জন্য স্পষ্ট পরিবর্তন ডেকে আনে। চলতি বছরের ১৪ মে চালু হবার পর নাইরোবি এক্সপ্রেসয়ে আবার পূর্ব আফ্রিকার জনগণের উত্সাহব্যঞ্জক নজির সৃষ্টি করে।

নাইরোবি এক্সপ্রেসয়ে পূর্ব আফ্রিকার প্রথম টোল হাইওয়ে। চীনা কোম্পানি নির্মিত টোল হাইওয়ে’র দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নাইরোবি সিবিডি ও কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট ভবনসহ বিভিন্ন অঞ্চল সংযুক্ত করা হাইওয়ে’টি চালু হবার পর বিস্তৃতভাবে কেন্দ্রীয় শহরের যানজট প্রশমন করে, শহুরে অপারেশন দক্ষতা উন্নত করবে।

২৪ বছর বয়সী ব্রায়ান ভিনেলি হচ্ছেন নাইরোবি এক্সপ্রেসয়ে’র প্রথম দফা টোল আদায়কারী। তিনি দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের একটি গ্রাম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। চাকরি শুরু করার আগে তিনি মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনি বলেন, এক্সপ্রেসয়ে’র চাকরি তাঁর জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করে।

নাইরোবি এক্সপ্রেসয়ে পাশাপাশি স্থানীয় কর্মসংস্থান ত্বরান্বিতকরণ জীবিকা প্রকল্প। জানা গেছে, নির্মাণ কাজ চলাকালে এক্সপ্রেসয়ে ৩ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। ২শ’ উপ-ঠিকাদার এবং কয়েকশ’ স্থানীয় বিল্ডিং উপাদান সরবরাহকারী লাভ করে। চালু হবার সময় আরও ৫শ’টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। নিজে এবং নিজের জন্মস্থানের ভবিষ্যতের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস করেন ব্রায়ান।

ব্রায়ান বলেন, ‘অনেক কেনিয়ান কর্মসংস্থান পায়। এটা আমার জন্য খুব গর্বের ও খুশীর কারণ। এটা নতুন সুযোগ, আমরা নতুন জ্ঞান অর্জন করতে পারি এবং আমাদের দেশ উন্নয়ন করতে পারব। হয়তো ভবিষ্যতে আমাদের দেশে আরও বেশি টোল রোড হবে। আমরা চীন-কেনিয়া অংশীদারিত্বের সম্পর্কের জন্য ধন্যবাদ জানাই। এটা সত্যিই আমাদের দেশের জন্য উন্নয়ন ডেকে আনছে’।

মোম্বাসা-নাইরোবি রেলপথ থেকে নাইরোবি এক্সপ্রেসয়ে পর্যন্ত পথ শহরগুলোকে সংযুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক ধমনী উন্মুক্ত করে। এক একটি ট্রেন শুধু যাত্রী ও মালামাল বহন করে, এক একটি প্রশস্ত পথ শুধু গাড়ি বহন করে, সেটা নয়, বরং কেনিয়ান সামাজিক উন্নয়ন এবং সুন্দর জীবনের প্রতি আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং চীন-কেনিয়া দু’দেশের মধ্যে সুদীর্ঘকালের গভীর মৈত্রী। এটা চীন-আফ্রিকা যৌথভাবে উচ্চমানের “এক অঞ্চল এক পথ” নির্মাণের দৃঢ়প্রতিজ্ঞার প্রতিফলন। নতুন যুগে চীন-আফ্রিকা অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির নির্মাণ নিঃসন্দেহে আরও উচ্চমানে উন্নয়ন ও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলা আশা করা হচ্ছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn