বাংলা

মরুভূমি মরূদ্যানে পরিণত হওয়ার গোপন কথা

CMGPublished: 2022-06-18 15:49:39
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

মরুকরণকে ‘বিশ্বের ক্যান্সার’ বলা হয়। যা বিশ্ব প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। চীনে এমন একটি তৃণভূমি আছে। আগে তা ছিল কবিতায় ও গানে- স্বর্গের মতো সুন্দর জায়গা। এক সময় তা মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছিল, হ্রদ শুকিয়ে গিয়েছিল। তাহলে কীভাবে এই তৃণভূমি আবার জেগে উঠলো? কীভাবে মরুকে প্রতিরোধ করে তৃণভূমি প্রাকৃতিক দেয়ালে পরিণত হলো? আজকে এই বিষয়ে কথা বলবো।

ছি ল্য ছুয়ান, ইন পাহাড়ের নিচে, তৃণভূমি অনেক বিস্তীর্ণ, বাতাসে কোমল ঘাস নামিয়ে দিলে গরু ও খাসি দেয়া যায়। এই সুন্দর কবিতা চীনাদের কাছে অতি পরিচিত। যা চীনের সুন্দর তৃণভূমি ছি ল্য ছুয়ানের অতীতের অবস্থা বর্ণনা করে। ছি ল্য ছুয়ানের ভাগ্যের মতো, চীনের ইনার মঙ্গোলিয়ার ছিং থু হ্রদ হাজার বছর ধরে আস্তে আস্তে শুকিয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সবুজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সি চিন পিং-এর প্রাকৃতিক সভ্যতা চিন্তাধারার নেতৃত্বে চীনের সব কিছুর পরিবর্তন ঘটছে।

এই মালভূমি হলো ইনারমঙ্গোলিয়ার ছি ল্য ছুয়ান। এই তৃণভূমি এক সময় খুব সমৃদ্ধ ও সবুজ ছিল, তবে পরে মরুকরণের কবলে পড়ে। স্থানীয় সরকার ও জনগণের নিরলস চেষ্টার পর এখন এখানে আবারও দেখা যাচ্ছে সবুজ চেহারা। প্রাণচঞ্চল তৃণভূমি সবার সামনে জেগে উঠছে।

তাহলে এই তৃণভূমি পুনরুদ্ধারের গোপন রহস্য কি? এখানে ২২ হাজার বন্য উদ্ভিদের বীজ সংরক্ষণ করা হয়েছে। যা হল ছি ল্য ছুয়ান তৃণভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধারের রহস্য।

স্থানীয় মেং ছাও গবেষণাকেন্দ্রের বীজ সম্পদ ও পরীক্ষাকেন্দ্রের উপ-পরিচালক চেং লি না বলেন, ‘ঘাসের নোয়াস আর্ক’ মানে আমরা ঘাসের বীজ ও শস্যের বীজ সংগ্রহ করি, শুধু সংরক্ষণ নয়, বরং আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বীজ শিল্পের উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক অবস্থা পুনরুদ্ধার প্রকল্পে প্রয়োগ করা যায়।

মরুকরণের কবল থেকে বের হওয়া ছি ল্য ছুয়ান তৃণভূমিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় ৬০ ধরনের উদ্ভিদ দেখা গেছে। বন্য-খরগোশ, খেঁকশিয়াল, মৌমাছি, প্রজাপতিসহ অনেক বন্যপ্রাণী ফিরে এসেছ, জীববৈচিত্র্য অব্যাহতভাবে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।

এর ফলে তৃণভূমির স্ব-নিরাময় সামর্থ্য স্থাপন করা গেছে। পুরো প্রকৃতির টেকসই উন্নয়ন সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে।

ছি ল্য ছুয়ান তৃণভূমির পশ্চিমে এক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কান সু প্রদেশের ছিং থু হ্রদ। যা চীনের তৃতীয় বৃহত্তম মরুভূমি বাদাইন জারান মরুভূমি এবং চতুর্থ বৃহত্তম মরুভূমি টেঙ্গার মরুভূমিতে অবস্থিত। ছিং থু হ্রদকে এই দুই মরুভূমি প্রতিরোধের পানির দেয়াল বলা হয়। গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে, ছিং থু হ্রদ পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। এর ফলে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বালিঝড় হতো। দুটি বড় মরুভূমি তখন যুক্ত হতে যাচ্ছিল। ২০০৭ সালে চীন এই হ্রদের উচ্চ অববাহিকার সি ইয়াং নদী পরিচালনার কাজ শুরু করে। এর ফলে স্থানীয় লোকজন আশার আলো দেখে। ভূগর্ভস্থ পানি অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে। ৫১ বছর শুকিয়ে যাওয়ার পর ছিং থু হ্রদ আস্তে আস্তে মরুভূমি হয়ে ওঠে।

স্থানীয় মিন ছিন জেলার জলসেচ ব্যুরোর প্রকৌশলী ওয়াং সি ভেং বলেন, ২০০৭ সালে সি ইয়াং নদীর পরিচালনা কাজ শুরু হলে ২০১০ সাল থেকে ছিং থু হ্রদে পানি সরবরাহ শুরু হয়। তখন শুকিয়ে যাওয়া ছি থু হ্রদের আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় ৩ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে এই হ্রদের আয়তন আরো বড় হয়েছে, তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬.৭ বর্গকিলোমিটার।

বর্তমানে ছিং থু হ্রদে ২৬.৭ বর্গকিলোমিটার এলাকায় পানির আয়তন এবং ১০৬ বর্গকিলোমিটারের জলাভূমি স্থায়ীভাবে বজায় রয়েছে। যা একটি সবুজ ফুসফুসের মত মরুকরণ প্রতিরোধ করে চলেছে।

সবুজ শুধু ছি ল্য ছুয়ান এবং ছিং থু হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবর্তন নয়, বরং তা চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর মনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেছিলেন, পাহাড়, নদী, বন, হ্রদ, ঘাস এবং মরুভূমির পরিচালনা করতে হবে। প্রাকৃতিক সংরক্ষণ প্রকল্প ভালোভাবে করতে হবে। প্রাকৃতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। মরুভূমিকে মরূদ্যানে পরিণত করা হচ্ছে। চীনকে আরও সুন্দর দেখা যাচ্ছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn