বাংলা

প্রেসিডেন্ট সি’র পদচিহ্ন অনুসরণ করে গড়ে ওঠা ফুচিয়ান প্রদেশ

CMGPublished: 2022-06-10 11:51:48
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দুইবার ফুচিয়ান প্রদেশ পরিদর্শন করেছেন এবং ওই অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন প্রদেশের উন্নয়ন কেমন হচ্ছে? বিস্তারিত শুনুন প্রতিবেদনে।

ফুচিয়ান প্রদেশের সান মিং শহরের সা জেলার ইয়ু বান গ্রামে প্রবেশ করলে উপভোগ করা যায় সমৃদ্ধ গ্রামীণ জীবনের স্বাদ। ২০২১ সালর মার্চ মাসে সি চিন পিং সা জেলা পরিদর্শনের সময় বলেছিলেন, সা জেলার মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমৃদ্ধ জীবনের জন্য চেষ্টা করছে। তাদের চেষ্টায় সা জেলার হালকা খাবার লোকজনকে ধনী করতে পারে, এমন শিল্পে পরিণত হয়েছে। গ্রামাঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে চাইলে নিজ গ্রামের বৈশিষ্ট্যময় শিল্প উন্নত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এখন সা জেলার হালকা খাবার ছোট জেলা থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, আগের ছোট দোকান থেকে বর্তমানের চেইন রেস্তরাঁয় পরিণত হয়েছে। বিদেশেও সা জেলার হালকা খাবার পাওয়া যায়। লোকজন এর মাধ্যমে ধনী হতে পেরেছে। ২০২১ সালে সা জেলার হালকা খাবার বিক্রির পরিমাণ ৫০ লাখ ইউয়ান ছাড়িয়েছে। এতে ৩ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ইয়ু বাং গ্রামে ‘সা জেলার হালকা খাবারের শীর্ষ গ্রাম’ ব্র্যান্ড স্থাপন করার চেষ্টা করছে। এর সঙ্গে সা জেলার হালকা খাবারের কাঁচামাল চাষের কেন্দ্র নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

চা তৈরি করা হল ফু চিয়ান প্রদেশের উ ই পাহাড়ি এলাকার জনগণের প্রাচীনকালের অর্জিত প্রযুক্তি। যা স্থানীয় গ্রামীণ পুনরুদ্ধারের প্রধান শিল্প। ২০২১ সালের মার্চ মাসে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ফু চিয়ান প্রদেশ পরিদর্শনের সময় স্থানীয় কৃষকদের বলেছিলেন, তোমাদের উচিত ভালোভাবে চা সংস্কৃতি, চা শিল্প এবং চা বিজ্ঞান উন্নয়নে কাজ করা।

ফু চিয়ান প্রদেশের কৃষি ও বনজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর লিয়াও হুং বলেন, চা শিল্প এখন ভালো ভূমিকা পালন করছে। ২০২১ সালের অগাস্ট মাসে উ ই পাহাড়ি এলাকায় সার্বিকভাবে প্রাকৃতিক চা বাগান নির্মাণকাজ শুরু হয়। বছরের শেষ নাগাদ ৩০০ বর্গকিলোমিটার বড় চা বাগান তৈরি হয়েছে, এতে মুনাফা হয় ১২ বিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের তুলনায় ৯.৩ শতাংশ বেশি।

বর্তমানে ফু চিয়ান প্রদেশ সুবিধাজনক এবং বৈশিষ্ট্যময় শিল্পের কাজ জোরদার হয়েছে। চীনের চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনার সময় ফু চিয়ান প্রদেশে ২০টি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যময় শিল্পকে উন্নত করা হবে, শতাধিক কৃষি শিল্পের শক্তিশালী থানা উন্নত করবে, দুই সহস্রাধিক বিশেষ শিল্পের গ্রাম উন্নত করবে, যাতে বৈশিষ্ট্যময় আধুনিক কৃষি উন্নয়নের কাঠামো গঠন করা যায়।

এদিকে, ফু চিয়ান প্রদেশের রাজধানী ফু চৌ শহরের রেল স্টেশনে, প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ায় মহামারি প্রতিরোধের বিশেষ মেশিনের সামনে দাড়িয়ে আপনি একবার আইডি কার্ড স্ক্যান করুন, পরিচয় নিশ্চিত হোন, শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করুন এবং স্বাস্থ্যকোড চেক করার সব কাজ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারেন। মেশিনের ব্যবহৃত চিপ হল ফুচিয়ানের বিজ্ঞান কোম্পানির নিজস্ব মেধাস্বত্ত্ব পণ্য। কোম্পানির সিইও ওয়াং চিং বলেন, সি চিন পিং ২০১৪ সালের নভেম্বর কোম্পানি পরিদর্শন করেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন যে, কোম্পানির উচিত বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন এবং গবেষণার ফলাফলসহ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করা। গত ৮ বছরে কোম্পানি ডিজিটালকরণ দ্রুততর করেছে এবং এখন কোম্পানির ব্যবসা বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

বর্তমানে ফু চিয়ান প্রদেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ইতোমধ্যে অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, সমাজ ও প্রকৃতিসহ বিভিন্ন খাতে শুরু হয়েছে। ২০২১ সালে গোটা প্রদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির পরিমাণ ২.৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। যা প্রদেশের মোট জিডিপির ৪৭ শতাংশ। ৫জি বেসস্টেশন গোটা প্রদেশের ৯৫ শতাংশ এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

২০২১ সালের মার্চ মাসে ফুচিয়ান প্রদেশ পরিদর্শনের সময় সি চিন পিং আশা ব্যক্ত করে বলেন যে, ফুচিয়ান প্রদেশ সার্বিকভাবে উচ্চ গুণগতমানের উন্নয়নে নতুন সাফল্য অর্জন করবে। আসলে সমৃদ্ধভাবে উন্নত ডিজিটাল অর্থনীতি হলো একটি উদাহরণ।

২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ফুচিয়ান প্রদেশ ডিজিটাল অর্থনীতি, সামুদ্রিক অর্থনীতি, সবুজ অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাত উন্নয়নের পরিকল্পনা উত্থাপন করেছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে, ডিজিটাল অর্থনীতি প্রদেশটির অর্থনীতির মোট পরিমাণের প্রায় ৫০ শতাংশ। সামুদ্রিক জিডিপি দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে।

এ ছাড়া ফুচিয়ান প্রদেশের অবাধ বাণিজ্যের পরীক্ষামূলক এলাকার সুবিধা কাজে লাগিয়ে সক্রিয়ভাবে সেবা ও নতুন উন্নয়নের কাঠামোতে যোগ দিয়েছে। ২০২১ সালে ফু চিয়েন অবাধ বাণিজ্য পরীক্ষামূলক এলাকা দেশে সবার আগে ২৫টি নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর ফলে সেই বছর নতুন করে ২৮৯টি বৈদেশিক পুঁজির প্রতিষ্ঠান ফুচিয়ান প্রদেশে নিবন্ধন করা হয়। ২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বৈদেশিক পুঁজি আকর্ষণ করেছে ফুচিয়েন প্রদেশ।

এদিকে ফুচিয়ান প্রদেশ সক্রিয়ভাবে তাইওয়ান প্রণালীর দু’তীরের সহযোগিতা জোরদার করেছে। ২০২১ সালে ফুচিয়ান প্রদেশ তাইওয়ানবাসীদের ফুচিয়ানে থাকা বা ব্যবসা করার ২২৫টি সুবিধাজনক নীতি চালু করেছে। সেই বছর ফুচিয়ান এবং তাইওয়ান প্রদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রথমবারের মত একশ’ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়।

চীনের প্রথম রাষ্ট্রীয় প্রাকৃতিক সভ্যতার পরীক্ষামূলক এলাকা হিসেবে ফুচিয়ান প্রদেশের বনভূমির হার টানা ৪৩ বছর ধরে দেশের শীর্ষস্থানে আছে। পানি ও ভূমি ক্ষয়ের হার নেমে দাঁড়িয়েছে ৭.৫ শতাংশে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে সি চিন পিং ফুচিয়ান পরিদর্শনের সময় বলেছিলেন, আরো চেষ্টা করতে হবে, যাতে সবুজ পাহাড় ও পরিচ্ছন্ন পানি ফুচিয়ানের অহংকারে পরিণত হয়। তিনি আরো বলেন, উচ্চ মানের জীবনের মান বাস্তবায়নের সঙ্গে আরো বেশি অর্জনের চেষ্টা করতে হবে।

২০১৭ সালের জুলাই মাসে, ফুচিয়ান প্রদেশের কু লাং ইয়ু ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অল্প সময় পর সি চিন পিং এক নির্দেশনায় বলেন, উত্তরাধিকার তালিকায় যোগ দেওয়ার আবেদন জানানোর উদ্দেশ্য হলো আরো ভালোভাবে এর ব্যবহার করা ও সংরক্ষণ করা। ২০২১ সালের জুলাই মাসে সি চিন পিং ৪৪তম বিশ্ব উত্তরাধিকার সম্মেলনে অভিনন্দবাণী পাঠান। তিনি বলেন, এসব মূল্যবান সম্পদ ভালোভাবে রক্ষা করতে হবে ও ব্যবহার করতে হবে। এটি আমাদের অভিন্ন দায়িত্ব।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn