বাংলা

আকাশ ছুঁতে চাই ৯১

CMGPublished: 2024-10-11 00:19:19
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

এবারের পর্ব

১. তিন প্রজন্মের নারী শিল্পী

২. ৭৫ বছরে চীনের নারী ও শিশুদের অগ্রগতি

৩. উইচ্যাটে নারীদের সহযোগী দল

আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠান থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের বলবো তিন প্রজন্ম ধরে কারুশিল্পকে বয়ে নিয়ে চলা এক মা ও কন্যার গল্প। রয়েছে ৭৫ বছরে চীনের নারী শিশুর উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদন এবং চীনে বাস করা এক জন বিদেশি নারীর কথা।

তিন প্রজন্মের নারী শিল্পী

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মিয়াও নারীরা তাদের নকশীকাজের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। চীনের কুইচৌ প্রদেশের মিয়াও জাতির একটি পরিবার কিভাবে নানী, মা ও মেয়ের মাধ্যমে এীতহ্যের ধারা বহন করছেন শুনবো সেই গল্প।

কুইচৌ প্রদেশের এক প্রবীণ নারী শি ইয়াংচিউ। তার বয়স এখন ৭৩ বছর। মাত্র এগারো বছর বয়সে তিনি হাতে তুলে নিয়েছিলেন সুই সুতো। এরপর থেকে তিনি মিয়াও নকশী কাজে পার করেছেন জীবনের দীর্ঘ সময়। ৪৯টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রদেশ কুইচৌ। এদের অন্যতম মিয়াও জাতিগোষ্ঠী। মিয়াও জাতির লোকজ সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। মিয়াওদের নকশী কাজ বা মিয়াও এমব্রয়ডারির রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য। এই এমব্রয়ডারি শুধুমাত্র নারীরাই করেন। তারাই জানেন প্রতিটি নকশার ভাঁজে লুকিয়ে আছে কি গোপন রহস্য। প্রকৃতপক্ষে মিয়াও এমব্রয়ডারির মধ্যে তাদের জাতির ইতিহাস, লোককাহিনী ব্যক্ত করা হয়। মিয়াও নকশী কাজ অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে। এই ঐতিহ্যের একজন ধারক বা ইনহেরিটর হলেন শি ইয়াংচিউ। তিনি তার মায়ের কাছ থেকে শিখেছিলেন এই কারুশিল্প। শি ইয়াংচিউ তার মেয়ে শি ছুয়ানইয়িংকে এই শিল্প শেখানো শুরু করেন । ছুয়ানইয়িংয়ের তখন মাত্র ১১ বছর বয়স।

শি ছুয়ানইয়িং বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন বিশ্বে এক পরিচিত ব্যক্তি। তিনি মিয়াও নকশার উজ্জ্বল ও সাহসী রঙগুলোকে তুলে ধরেছেন ফ্যাশন জগতে।

শি ছুয়ানইয়িং বলেনতিনি তার মা ও নানীর কাছ থেকে শিখেছেন। শি ইয়াংচিউ মনে করেন তার মেয়ে বেশি দক্ষ শিল্পী। কারণ সে এর সঙ্গে যোগ করেছে আধুনিক চিন্তা।

১৯৩০ এর দশক থেকে শি ইয়াংচিউ নকশীকাজের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন। তখন আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তার দুই মেয়ে জুনিয়র মিডল স্কুল পাশ করে। ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়। নকশীকাজের কাপড় বাজারজাত করেই সংসার চালিয়েছেন তিনি। টাকা ধার করে ব্যবসা চালাতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, অক্লান্ত পরিশ্রমে বড় করেছেন প্রতিষ্ঠান। এমনকি বিদেশেও কাপড় সরবরাহ করতে থাকেন।

পরে মেয়ে তার ব্যবসার হাল ধরে।

১৯৯০ এর দশক থেকে শি ইয়াংচিউ বলে আসছেন যে, এই নকশী কাজ পরবর্তি প্রজন্মের কাছে পৌছে দিতে হবে। তিনি প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু করেন। গ্রামের নারীদের এই কাজে প্রশিক্ষণ দেন। তার মাধ্যমে অন্তত ৩০০ নারী তাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছেন।

শি ছুয়ানইয়িং আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন নতুন মিয়াও পোশাক, একসেসরিজ উপহার দিয়ে খ্যাতি পেয়েছেন। বিশ্ব ফ্যাশন দরবারে এখন মা মেয়ে দুজনেই নাম করেছেন।

প্রতিবেদন : শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

৭৫ বছরে চীনে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি

চীনে গেল ৭৫ বছরে নারী ও শিশুর অবস্থায় অনেক উন্নতি হয়েছে। ৭৫তম জাতীয় দিবস উদযাপনের পর সম্প্রতি জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নারী শিশুর অবস্থানের কতটা উন্নয়ন হয়েছে এ বিষয়ে জানাচ্ছেন হোসনে মোবারক সৌরভ

বিগত ৭৫ বছরে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসি এবং সরকার সবসময় নারী এবং শিশুদের উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যের অবস্থা ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গত ৭৫ বছরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সাফল্যের উপর একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা জোরদার অব্যাহত রয়েছে। ১৯৫০ সাল থেকে, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য-পরিচর্যা প্রতিষ্ঠানের সাথে চীনা বৈশিষ্ট্যসহ মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য পরিষেবা নেটওয়ার্কগুলো ধীরে ধীরে শহর ও গ্রামীণ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা নেটওয়ার্ক ধীরে ধীরে ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যাকে কভার করে চিকিত্সা সুরক্ষা নেটওয়ার্ক এবং শহর ও গ্রামীণ এলাকাকে কভার করে তিন-স্তরের চিকিত্সা সেবা নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

দেশব্যাপী মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৯৫০ সালে ছিল ৪২৬টি। ২০২২ সালে ৩০৩১টি প্রতিষ্ঠান হয়েছে এবং শিশু হাসপাতালের সংখ্যা ১৯৮৩ সালে ২৫ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ১৫১টি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তালিকাভুক্ত চীন মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যে উচ্চ কর্মক্ষমতা সম্পন্ন ১০টি দেশের মধ্যে একটি।

মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার সক্ষমতা ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। ২০২৩ সালে, মাতৃত্ব ব্যবস্থা পরিচালনার হার, প্রসবপূর্ব পরীক্ষার হার, মাতৃত্বকালীন হাসপাতালে প্রসবের হার এবং প্রসবোত্তর ভিজিট হার হবে যথাক্রমে ৯৪.৫%, ৯৮.২%, ৯৯.৯৫% এবং ৯৭%। যা ১৯৯৬ সালের তুলনায় যথাক্রমে ২৯%, ১৪.৫%, ৩৯.২৫% এবং ১৬.৯% বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২২ সালে, নবজাতকের পরিদর্শনের হার, ৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের পদ্ধতিগত ব্যবস্থাপনার হার এবং ৭ বছরের কম বয়সী শিশুদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার হার যথাক্রমে ৯৬.৭%, ৯৩.৩% এবং ৯৪.৯%, যা ১৯৯৬ সালের তুলনায় ১৫.৩%, ৩১.৯% এবং ৩২.২% বেশি।

নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যের স্তর ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে। ২০২০ সালে, নারীদের গড় আয়ু ছিল ৮০.৮৮ বছর, যা ১৯৮১ থেকে ১১.৬১ বছর বেড়েছে। মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৯০ সালে প্রতি লাখে ৮৮.৮ থেকে ২০২৩ সালে ১৫.১-এ নেমে এসেছে। জাতীয় নবজাতক মৃত্যুর হার, শিশুমৃত্যুর হার এবং ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর হার ১৯৯১ সালে যথাক্রমে ৩৩.১‰, ৫০.২‰ এবং ৬১‰ থেকে ২.৮‰, ৪.৫‰ এবং ৬.২‰ নেমে এসেছে।

প্রতিবেদন: ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা

উইচ্যাটে নারীদের সহযোগী দল

চীনে বসবাসরত বিদেশি নারীদের সহযোগী দল গড়ে তুলেছেন কলম্বিয়ান নারী ডিয়ানা ভাইডাল। চীনের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইচ্যাটে একটি গ্রুপ খুলে নারীদের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করছে দলটি। বিস্তারিত প্রতিবেদনে।

তিন বছর ধরে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে বাস করছেন কলোম্বিয়ান নারী ডিয়ানা ভাইডাল। দীর্ঘদিন চীনে বসবাসের পর বিদেশি নারীদের সহযোগিতা করার লক্ষ্য থেকে উইচ্যাট গ্রুপ খুলেছেন এই নারী।

শুরুতে মাত্র ছয়জনকে নিয়ে ‘বস লেডিস’ নামে গ্রুপ খোলেন ডিয়ানা। এই গ্রুপ একদিন বৃহৎ পরিসরে কাজ করবে সেই উদ্দেশ্যে থেকে গ্রুপ করেননি তিনি। কিন্তু এই জায়গা থেকেই ধীরে ধীরে অনেক নারীর সঙ্গে যুক্ত হোন তিনি।

বিভিন্ন বয়সী নারীরা এই গ্রুপের মাধ্যমে নিজেদের সঙ্গে পরিচিত হন। আর এই গ্রুপের মাধ্যমেই খোঁজেন চাকরি। একটা সময় পরে নিজেদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পেয়ে যান চাকরি।

এই গ্রুপের মাধ্যমে চীনা ভাষার শেখার সুযোগও পান নারীরা। পাশাপাশি চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানতে পারেন। তারা চীনা আর্ট, ক্যালিগ্রাফিও শেখেন। এতে করে চীনা সমাজে সহজেই নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেন বিদেশি নারীরা।

এই গ্রুপের মাধ্যমে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন এবং ট্যুরে গিয়ে থাকেন নারীরা। এছাড়া একসাথে খাওয়াদাওয়াও করেন তারা।

ডিয়ানা বলেন, এই গ্রুপের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন কাজ করি। আবার অনেক চীনা নারীদের সঙ্গেও দেখা করি। তারা খুব উদার। তাদের সাথে মিশে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি’।

চীনের বিভিন্ন উন্নয়নে মুগ্ধ এই গ্রুপের নারীরা। চীনকে আরও জানতে চায়, চীন থেকে শিখতে চায়। তারা এই দেশে কাজের মাধ্যমে উন্নয়নেও অবদান রাখতে চা্য।

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠান শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। আগামি অনুষ্ঠানে শোনার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn