বাংলা

আকাশ ছুঁতে চাই ৮৪

CMGPublished: 2024-08-23 15:16:15
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

কী রয়েছে এবারের পর্বে

১. সাফল্যের চূড়ায় বাংলাদেশের জেসি

২. প্রিন্ট মেকিং শিল্পী লি ছ্যংচি

৩. শাওলিন কুংফুকে ভালোবাসেন ইরাকি নারী

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

সাফল্যের চূড়ায় বাংলাদেশের জেসি

বাংলাদেশে একসময় ক্রীড়াঙ্গনকে পুরুষদের একচেটিয়া অধিকার বলে মনে করা হত। ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ কল্পনাও করা যেতো না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীরা নিজেদের মেধা ও সাহসের বলে সমাজের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও জেন্ডার বৈষম্যের বেড়াজাল ভেঙে গড়ে তুলেছেন নতুন ইতিহাস। এক্ষেত্রে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তাদের একজন সাথিরা জাকির জেসি। অদম্য এই নারীর সাফল্যগাথা তুলে ধরছেন শুভ আনোয়ার

বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক নারী আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসি। তিনিই প্রথম কোনও বাংলাদেশি নারী যিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করেছেন। সম্প্রতি এশিয়া কাপের মতো একটি বড় মঞ্চে তাঁর সফল অভিষেক হয়েছে, যা বাংলাদেশি ক্রিকেটের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

অদম্য এই নারীর সাফল্যের পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। একজন নারী হিসেবে ক্রিকেটের মতো পুরুষতান্ত্রিক খেলায় নিজেকে প্রমাণ করতে অনেক কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতা, পরিবারের সমর্থন না পাওয়া, এমনকি ক্রিকেট মাঠেও নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তিনি আজকের পর্যায়ে এসেছেন।

লালমনিরহাটের প্রত্যন্ত এক গ্রামে জন্ম জেসির। বাবা-মা চাইতেন মেয়ে লেখাপড়া করে ভালো চাকরি করবে। তবে জেসির মনে ছিল ভিন্ন কিছুর চিন্তা। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রেমে পড়েন তিনি। কিন্তু জেসি যখন ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখতেন, তখন তার চারপাশে কেউ চিন্তা করেনি যে মেয়েরা ক্রিকেট খেলবে। ২০০১ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় দেশের একমাত্র ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভর্তি হন তিনি। তখনও বাংলাদেশে নারীদের ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়নি। এরপর ২০০৭ সালে ঢাকায় শুরু হলো মেয়েদের ক্রিকেটের হান্টিং। সেসময় ঢাকা জেলা মহিলা ক্রিকেট দলে নাম লেখালেন তিনি। সে লিগে ভালোই পারফর্ম করেছিলেন জেসি। এরপর জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয় তার।

স্বপ্ন পূরণের পর আবারও বড় ধাক্কা আসে তার জীবনে, বিয়ের পর দল থেকে বাদ পড়ে যান। কিন্তু হাল ছাড়েননি জেসি। ভালো খেলা দেখিয়ে তিনি আবারও জাতীয় দলে ফিরে আসেন। বিয়ের পর এক সন্তানের জননী জেসি তার খেলা চালিয়ে গেছেন। এখানেই থেমে যেতে পারতেন জেসি। কিন্তু সবুজ মাঠের সঙ্গে যে মিতালি গড়ে তুলেছেন সে বন্ধন ধরে রাখতে খেলোয়াড় জীবন শেষ করে আম্পায়ারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ধাপে ধাপে নিজেকে পরিণত করে এক যুগ পর মেলে স্বীকৃতি। বাংলাদেশের প্রথম নারী আম্পায়ার হিসেবে নাম লেখান সাথিরা জাকির জেসি।

তিনি বলেন, অনেক বড় স্বপ্ন রয়েছে তার। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে নারী টি ২০ ওয়ার্ল্ড কাপ হতে যাচ্ছে। সেখানেও আম্পায়ারিং করতে চান! আর চূড়ান্ত স্বপ্ন হলো, বিশ্বের সেরা আম্পায়ারদের একজন হিসেবে অবসরে যাওয়া। আগামী দিনে নারীদের সামনে এগিয়ে নিতে কাজ করতে চান তিনি।

বর্তমানে জেসি একটি বেসরকারি সংস্থায় ক্রিকেট কোচিং এবং ক্রিকেট বিষয়ক অনুষ্ঠান করেন। ক্রিকেট মাঠের বাইরে গিয়েও উপস্থাপনা করছেন, ক্রিকেট বিশ্লেষণ করছেন, ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। এ ছাড়া কমেন্ট্রি বক্সেও ধারাভাষ্য দিয়েছেন ব্রেট লি, ব্রায়ান লারাদের মতো কিংবদন্তিদের পাশে বসে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের পাঁচজন নারী ম্যাচ অফিশিয়ালকে ডেভেলপম্যান্ট প্যানেলে যুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল। সাথিরা জাকির জেসি ছাড়াও রোকেয়া সুলতানা, ডলি রানি সরকার ও চম্পা চাকমা আম্পায়ার এবং ম্যাচ রেফারি হিসেবে সুপ্রিয়া রানী দাসও ওই প্যানেলে যুক্ত হয়েছেন।

প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

প্রিন্ট মেকিং শিল্পী লি ছ্যংচি

চীনের একটি অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো ছিচিয়াং ফারমার’স প্রিন্টমেকিং। এই কারুশিল্পের একজন প্রথম শ্রেণীর ইনহেরিটর লি ছ্যংচি। এই কারুশিল্পের চর্চার মাধ্যমে গ্রামের একজন দরিদ্র মেয়ে থেকে দেশ বরেণ্য শিল্পী হয়েছেন লি । কিভাবে? শুনবো সেই গল্প।

লি ছ্যংচি চীনের একজন প্রথম শ্রেণীর কারুশিল্পী। তিনি ছিচিয়াং ফারমারস প্রিন্টমেকিং অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একজন ধারক।

ছিচিয়াং ফারমার’স প্রিন্টমেকিং বা ছিচিয়াং কৃষকের ছাপচিত্র চীনের এক অনন্য অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। এই শিল্প ছোংছিং এর বিভিন্ন টাউনশিপের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

এই শিল্পের রয়েছে প্রায় একহাজার বছরের দীর্ঘ ঐতিহ্য। উড ব্লক বা কাঠের ব্লক প্রিন্টিং থেকে এর উদ্ভব। মিং ও ছিং রাজবংশের সময় এই শিল্প জনপ্রিয়তা পায় এবং নববর্ষের সময় এ ধরনের ছাপচিত্র ব্যবহৃত হতো। ১৯৮০র দশকে এই শিল্পকর্ম বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পায়। ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ চল্লিশটির বেশি দেশ ও অঞ্চলে এই শিল্পের প্রদর্শনী হয়।৬০টির বেশি আন্তর্জাতিক শিল্পীদল স্থানীয় আর্ট স্টুডিও পরিদর্শন করেন। আশির দশকে এই শিল্পের জন্য বিভিন্ন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

লি ছ্যংচির যখন ১৭ বছর বয়স তখন তিনি এমনি একটি কর্মশালায় যোগ দেয়ার সুযোগ পান।

সেসময় ছিচিয়াং কালচারাল সেন্টারের প্রধান ছিলেন লি ইলি নামের একজন নিবেদিতপ্রাণ শিল্পী। তিনি স্থানীয় কৃষকদের সাংস্কৃতিক জীবনমান উন্নয়নের জন্য ২০টি গ্রামীণ কালচারাল স্টেশন স্থাপন করেন এবং ছিচিয়াংয়ের ১০টি টাউনশিপে ফ্রি প্রিন্টমেকিং ক্লাস চালু করেন।

দরিদ্র কৃষককন্যা লি ছ্যংচি এরকম একটি ফ্রি ক্লাসে যোগ দেন। এর আগে তিনি সারাদিন ক্ষেতে খামারে কঠোর পরিশ্রম করেও সংসারের চাহিদা মেটাতে পারতেন না। প্রিন্ট মেকিংয়ে তিনি প্রতিভার পরিচয় দেন। দুই বছর প্রশিক্ষণের পর তিনি স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রথম ৩০০ কৃষক শিল্পীর একজন হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন।

এই কারুশিল্প থেকেই তার জীবনের গতি পালটে যায়।

১৯৯২ সালে তিনি প্রিন্ট মেকিং থেকে প্রথম রোজগার করেন। ২৫ ইউয়ান সম্মানী পেয়েছিলেন এলিমেন্টারি স্কুলের শিশুদের প্রিন্ট বানিয়ে। ওই বছর তিনি স্থানীয় একটি ফারমারস প্রিন্ট মেকিং ইন্সটিটিউটে চাকরি পান। বিয়ের পর তিনি শহরে বসবাস শুরু করেন।

ফারমারস প্রিন্ট মেকিং শিল্পের প্রতি তার আগ্রহ বাড়তে থাকে। তিনি অনুশীলন চালিয়ে যান। ২০০ প্রিন্ট মেকিং শিল্পকর্ম এবং হাজারের বেশি হাতে আঁকা ছবি তৈরি করেন। ২০১০ সালে তিনি লি ছ্যংচি চায়না ফেডারেশন অব লিটেরারি অ্যান্ড আর্ট কাউন্সিল এবং চায়না আর্টিস্ট অ্যসোসিয়েশনের সেরা দশ লোকশিল্পীর সম্মান পান।

ন্যাশনাল ফারমার পেইন্টিং এক্সিবিশনে ২০১২, ২০১৭ এবং ২০২০ সালে তার তিনটি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচিত হয়। চায়না আর্টিস্ট আ্যসোসিয়েশন এই প্রদর্শনীর আয়োজক। তিনি এই সংস্থার সদস্য পদও লাভ করেন। ২০১৩ সালে পঞ্চম সিউচৌ চায়না ফারমারস পেইন্টিং আর্ট ফেস্টিভ্যালে তিনি স্বর্ণজয় করেন।

তার শিল্পকর্মের বেশিরভাগ বিষয়বস্তু গ্রামের দৈনন্দিন জীবন ও চার পাশের প্রকৃতি। তিনি মনে করেন লোকজ ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য নতুন পদ্ধতিও অবলম্বন করতে হবে। ৫৯ বছর বয়সী এই নারী শিল্পী প্রায়ই লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেন। অনেক তরুণ শিল্পী তার কাছ থেকে এই শিল্পকর্ম শিখছে। তিনি বিভিন্ন চারুকলা প্রতিষ্ঠানেও ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেন।

শাওলিন কুংফুকে ভালোবাসেন ইরাকি নারী

ছোটবেলা থেকে শাওলিন কুংফু ভালোবাসেন ইরাকি নারী সেওয়া জাসরাও। সম্প্রতি তিনি চীনের শাওলিন টেম্পলে এসে নতুন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। শুনবো তার গল্প।

ইরাকের নারী সেওয়া জাসরাও। ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন শাওলিন টেম্পলে আসবেন এখানে কুংফুর ট্রেনিং নিবেন। সম্প্রতি তার এই স্বপ্ন সফল হয়েছে। তিনি শাওলিন টেম্পলে এসে ট্রেনিং নিয়েছেন। এমনিতে তিনি ১৮ বছর বয়স থেকে ইরাকেই কুংফু শিখেছেন। তিনি সবসময় ভাবতেন কবে আসবেন চীনে।

গ্লোবাল শাওলিন কুং ফু প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তিনি হ্যনান প্রদেশে আসেন। সঙ্গে তার জীবনসঙ্গীও ছিলেন। এখানে তিনি কুংফু শিক্ষকদের কাছ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।

জাসরাও মনে করেন, শাওলিন কুংফু শেখার ক্ষেত্রে নারী পুরুষ কোন ভেদাভেদ নেই। সকলেই এই ঐতিহ্যবাহী কুংফু চর্চা করতে পারেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সুপ্রিয় শ্রোতা। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn