বাংলা

আকাশ ছুঁতে চাই ৫৫

CMGPublished: 2024-02-01 16:29:40
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

১. বসন্ত উৎসবকে ঘিরে নারীর ব্যস্ততা

২. বাংলাদেশী নারী শেফ গুলশানের সাফল্য

৩. আলোকচিত্রে প্রান্তিক নারীর জীবন

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

নববর্ষকে কেন্দ্র করে এখন চীনের সব জায়গায় চলছে সাজসাজ রব। নানা রকম কারুশিল্প ও খাবার তৈরি হচ্ছে। এসব কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চীনের মানুষ।

গ্রামীণ ও দরিদ্র নারীদের অনেকেই নিজেদের আয় রোজগারের পথ প্রশস্ত করেছেন এসব খাবার ও কারুশিল্প তৈরি করে। আবার উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত অনেক নারী মেলা ও শপিংমলগুলোতে ভিড় করছেন কেনাকাটায়। চলুন শুনি নববর্ষে চীনা নারীদের জীবন নিয়ে একটি প্রতিবেদন।

বসন্ত উৎসবকে ঘিরে নারীর ব্যস্ততা

চীনের নারীরা এখন দারুণ ব্যস্ত। কেউ তৈরি করছেন কারুপণ্য আবার কেউবা ব্যস্ত কেনাকাটায়। চীনের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন রকম কারুপণ্য ও খাবার তৈরি করে অনেক নারী নিজেদের আয় রোজগার বাড়িয়ে নিয়েছেন।

উত্তরপশ্চিম চীনের কানসু প্রদেশের পিংলিয়াং সিটির একটি কারখানায় চলছে ঐতিহ্যবাহী লাল চাইনিজ লণ্ঠন তৈরির কাজ। চীনের ঐতিহ্যবাহী এই কারুপণ্য যারা তৈরি করছেন তাদের একজন মা হাইইং ।

তিনি বলেন, ‘আমি দিনে তিনশর বেশি লণ্ঠন তৈরি করতে পারি। ফলে দিনে আমি একশ ইউয়ানের বেশি আয় করতে পারি। মাসে তিন হাজার ইউয়ানের বেশি আয় হয়।’

এখানকার লণ্ঠন বিখ্যাত। আর ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষ্যে এখানকার লণ্ঠনের চাহিদা রয়েছে সারা দেশে। কারখানাগুলোতে কাজ করে আয়রোজগার বাড়িয়ে নিয়েছেন মা এর মতো নারী কারুশিল্পীরা।

বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে এখন ঘরে ঘরে চলছে ফুল সাজানোর ধুম। বিভিন্ন মন্দিরেও দেয়া হয় ফুল। এ কারণে ফুলের বেচাকেনা এখন তুঙ্গে। আর এই বেচাকেনায় নারীদের রয়েছে ব্যাপক অংশগ্রহণ। হ্যনান প্রদেশের নানইয়াং সিটি, সুছাং সিটিসহবিভিন্ন শহরে চলছে ফুলের বেচাকেনা।

শানতোং প্রদেশের একটি বিশেষ খাবার সিমো। রঙিন এই খাবারটিকে বলা হয় সুখসমৃদ্ধির জন্য স্টিমড বান। বিভিন্ন আকারে এটি তৈরি করা হয়।

এ বছর ড্রাগন বর্ষ বলে ড্রাগন আকারে এই স্টিমড বান তৈরি হচ্ছে এবং দেদারসে বিক্রিও হচ্ছে। এটি তৈরিতে নারী কারুশিল্পীদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।

বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে চলছে মেলা।

এসব মেলায় অসংখ্য নারী উৎসাহের সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন। ছি ইয়াচিং শাংহাইয়ের বাসিন্দা। তিনি ছাংশায় এসেছেন ঐতিহ্যবাহী মেলা দেখতে। বললেন, ‘অনেক মানুষ এখানে প্রাচীনযুগের পোশাক পরেছেন এবং প্রাচীন যুগের মতো করে সবকিছু সাজিয়েছেন। খুব ভালো লাগছে। আমার মনে হচ্ছে আমি যেন প্রাচীন যুগে ফিরে গিয়েছি।’

শপিংমল এবং বিভিন্ন মেলায় কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চীনের নারী।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান

বাংলাদেশী নারী শেফ গুলশানের সাফল্য

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নারী শেফ নূর-ই গুলশান রহমান। যুক্তরাষ্ট্রের জেমস বিয়ার্ড ফাউন্ডেশনের ‘বেস্ট শেফ ইন দ্য মিড-আটলান্টিক’ ক্যাটাগরির সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছেন এই নারী। জেমস বিয়ার্ড ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ডস মূলত ‘ফুড অব অস্কার’ নামে পরিচিত।

আমেরিকায় রন্ধনশিল্পে এ পুরস্কারকে সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারগুলো সেরা শেফ এবং রেস্তোঁরাগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে রন্ধনশিল্পে নান্দনিকতা ও নতুনত্বের প্রসার ঘটায়।

জার্সি সিটিতে কড়াই কিচেন রন্ধনশিল্পের উপযুক্ত জায়গা হিসেবে পরিচিত। খাঁটি বাংলাদেশি স্বাদ ও ঘরোয়া রান্নার জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছে শেফ গুলশান রহমানের এই রেস্তোরাঁ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রেস্তোরাঁর পেজ থেকে প্রকাশিত আবেগঘন পোস্টে বলা হয় ‘আম্মা আজ জেমস বিয়ার্ড অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন!!এটি আমার মা ও আমাদের দুর্দান্ত দলের জন্য কতটা গৌরবের তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। বাংলাদেশি খাবার ও আমার অসম্ভব মেধাবী মায়ের জন্য স্বীকৃতির কী সুন্দর মুহূর্ত। তিনি পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সম্মানের সঙ্গে তার নৈপুণ্য দেখিয়েছেন!’

পোস্টে আরও বলা হয়েছে, ‘আমার মা মাঝে মাঝে বলতেন, তার নিজেকে একজন প্রতারকের মতো মনে হয়, কারণ তার রান্নাবিষয়ক কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। আম্মা, আপনি দেখিয়েছেন যে এটি রান্নার স্কুল নয়, এটি আবেগ, প্রতিভা, দৃঢ়তা ও ভালোবাসা।

'কড়াই কিচেন' একটি বাংলাদেশি বাড়িতে খাওয়ার মতো চমৎকার অভিজ্ঞতা দেয়। রেস্টুরেন্টটিতে শেফ রহমানের তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত ভর্তা এবং হালকা তরকারিসহ খাবারের একটি ঘূর্ণায়মান বুফে রয়েছে। ভালোবাসা ও যত্নের সঙ্গে তৈরি ঘরোয়া স্টাইলের বাংলাদেশি খাবারের রেস্তোরাঁ।

১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে, জেমস বিয়ার্ড অ্যাওয়ার্ডস রান্নাবিষয়ক শ্রেষ্ঠত্বের জন্য একটি মানদণ্ড স্থাপন করেছে। অসাধারণ শেফ বিভাগ, বিশেষত, যারা কেবল রান্নার উচ্চ মান বজায় রাখেন না বরং তাদের সমবয়সীদের ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেন এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেন তাদের সম্মান জানায় এ প্রতিষ্ঠান। শেফ গুলশান রহমানকে তার নিষ্ঠা ও দক্ষতার কারণেই সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তার হাত ধরেই আমেরিকান রান্নাবিষয়ক শিল্পে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ স্বাদ এসেছে।

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ: হোসনে মোবারক সৌরভ

আলোকচিত্রে প্রান্তিক নারীর জীবন

শহরকেন্দ্রিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ক সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা গল্প উঠে এসেছে ছবির মাধ্যমে। অভিনব এবং অংশগ্রহণমূলক ফটোভয়েস পদ্ধতি ব্যবহার করে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে ২৬টি ছবিতে তুলে ধরা হয় সেই গল্প।

'সাইলেন্ট ফ্রেমস, লাউড ভয়েসেস: এক্সপ্লোরিং এসআরএইচআর থ্রু কমিউনিটি লেন্স’ শিরোনামে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে আইপাস বাংলাদেশ ও এর সহযোগী সংস্থা।

প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত ছবির গল্পগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, মাসিক নিয়মিতকরণ, গর্ভপাত পরবর্তী সেবা, প্রজননে জবরদস্তি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং নারী ও কিশোরীদের অধিকার ভঙ্গসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এসব বিষয়ে আরও বৃহত্তর পর্যায়ের আলোচনা এবং কমিউনিটির ঐক্যবদ্ধতা ও সচেতনতা সৃষ্টি করাই ছিল এই ফটোভয়েস প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য।

এই প্রদর্শনীতে ২৫ জন তরুণ স্বেচ্ছাসেবীর সংগৃহীত ২৬টি ছবির গল্পের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার নিম্ন আর্থ-সামাজিক এলাকায় বসবাসকারী নারী ও কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ক সামগ্রিক পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের স্বতস্ফূর্ত সম্পৃক্ততা এবং আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে।

প্রদেশর্নীতে প্রথমবারের মতো নিজের সংগৃহীত ছবির গল্প তুলে ধরতে পেরে খুশি স্বেচ্ছাসেবী তরুণী সাবিকুন নাহার রুমকি।

ক্যাপশন: স্বেচ্ছাসেবী তরুণী সাবিকুন নাহার রুমকি।

তিনি বলেন, ‘অনেকেই আছে প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে সংকোচ বোধ করে। বলবো কী বলবো না,এগুলো সম্পূর্ণ লজ্জার। আমাদের সমাজে এখনো সবাই এসব বিষয় নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে চায় না। নিজের এই বিষয়গুলো আড়াল করতে চায়। তাই এই বিষয় নিয়ে কাজ করাটা অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে এই কাজ করে আমার ভালো লেগেছে”।

ক্যাপশন: স্বেচ্ছাসেবী হালিমাতুস সাদিয়া

আরেক অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবী হালিমাতুস সাদিয়া বলেন, ‘এই প্রদর্শনীতে আমার তিনটা ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। এর জন্য আমি খুব খুশি। আমার জন্য বড় একটা প্রাপ্তি এই কাজ করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। আমি জানতে পেরেছি মানুষ আসলে কতভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এছাড়া এখানে এসে আরও অনেকের সংগৃহীত ছবির গল্প সম্পর্ক জানলাম”।

সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত চলে এই প্রদর্শনী।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn