বাংলা

আকাশ ছুঁতে চাই ১২

CMGPublished: 2023-04-06 17:36:04
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

১. চীন ও রুশ সংস্কৃতির মধ্যে যোগসূত্র গড়ে তুলছেন ইরিনা প্রাতসুয়ুক

২. তং মিংচু: তৃণমূল থেকে শীর্ষ স্থানে পৌঁছানো নারী

৩. যুদ্ধবিমান চালাচ্ছেন নারী পাইলটরা

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারীর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

চীন ও রুশ সংস্কৃতির মধ্যে যোগসূত্র গড়ে তুলছেন ইরিনা প্রাতসুয়ুক

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনেক বছর ধরে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করছেন রুশ নারী ইরিনা প্রাতসুয়ুক। চীন ও রাশিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ঐতিহ্যে বেইজিং এক্সিবিশন সেন্টারে মস্কো রেস্টুরেন্টের রয়েছে নিজস্ব ভূমিকা। এখানে চীনা গ্রাহকদের কাছে রুশ সংস্কৃতিকে তুলে ধরেন রাশিয়ান নারী ইরিনা প্রাতসুয়ুক। চীনে জীবন গড়ে নেয়ার পাশাপাশি কিভাবে দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধুত্ব স্থাপনে ভূমিকা রাখছেন একটি প্রতিবেদনে শুনবেন সেই গল্প।

চীনের বেইজিং এক্সিবিশন সেন্টারে অবস্থিত মস্কো রেস্টুরেন্ট। ৭০ বছর ধরে চীনের রাজধানীতে খাঁটি রুশ খাবার পরিবেশন করছে। এখানেই ২০০৯ সাল থেকে রুশ সংস্কৃতিকে চীনের মানুষের সামনে তুলে ধরছেন ইরিনা প্রাতসুয়ুক। তিনি একজন রুশ পারফরমার ও সংগীত শিল্পী।

ইরিনা প্রাতসুয়ুক বলেন, `আমার পরিবেশনা দেখার আগে অনেকেই রুশ শিল্প ও সংগীত বিষয়ে জানতেন না। তাদের প্রশংসা শুনে আমার কাছে খুব ভালো লাগে যে, তাদের সামনে রাশিয়ার প্রথম পরিচয় আমি দিচ্ছি।‘

চীন ও রাশিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময়ের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দুইদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ঐতিহ্যে বেইজিং এক্সিবিশন সেন্টার এবং মস্কো রেস্টুরেন্টের রয়েছে নিজস্ব ভূমিকা। এখানে চীনা গ্রাহকদের কাছে রুশ সংস্কৃতিকে তুলে ধরেন রাশিয়ান নারী ইরিনা প্রাতসুয়ুক।

চীনে নিজের জীবন গড়ে নিয়েছেন ইরিনা। তার পুত্রবধূও চায়নিজ। তিনি নিজেও চীনা সংস্কৃতিকে ভালোবাসেন। তিনি বলেন, `আমি অনলাইন শপিং এবং চীনে ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। দুটোই এখানে সুবিধাজনক। অনেক চীনা মানুষ বিদেশি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চায়। আমার অনেক চায়নিজ বন্ধু আছে। তারা নিয়মিত এই রেস্টুরেন্টে আমার সংগীত পরিবেশনা দেখতে আসেন। পরষ্পরকে বোঝার এই তো সময়। আমি অনেক বছর ধরে চীনে রুশ সংস্কৃতি তুলে ধরছি। অনেক দর্শক আমাকে ভালো জানেন।

রেস্টুরেন্টে ক্রেতা দর্শকরা ইরিনার নাটকীয় পরিবেশনা দারুণ উপভোগ করেন। ২০জনের একটি শিল্পীদলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

এখানকার ক্রেতা দর্শকরা সকলেই তাকে পছন্দ করেন। তাদের মতে তিনি শুধু একজন অভিনেত্রীই নন, একজন বড় শিল্পীও বটে।ইরিনার গানের সঙ্গে ক্রেতারা উপভোগ করতে পারেন রুশ খাবার।

এই রেস্টুরেন্টের অন্দরসজ্জাতেও রুশ সংস্কৃতির ছোঁয়া আছে যা চীনাদের কাছে রাশিয়া ও চীনের দীর্ঘ বন্ধুত্ব এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ঐতিহ্য তুলে ধরে। অনেক চীনা মানুষ রাশিয়া ভ্রমণ করেছেন। তাদেরও স্মৃতিকাতর করে তোলে ইরিনার পরিবেশনা।

ইরিনা প্রাতসুয়ুক এভাবে দুটি দেশের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া

তং মিংচু: তৃণমূল থেকে শীর্ষ স্থানে পৌঁছানো নারী

চীনের শীর্ষ শিল্পপতিদের অন্যতম হলেন তং মিংচু। তিনি নারীর ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান এই সংগ্রামী নারী কঠোর পরিশ্রম ও বিচক্ষণতায় অর্জন করেছেন সাফল্য। শুনবেন তার গল্প।

সাফল্য এবং নারীর ক্ষমতায়নের একজন আইকন হলেন তংমিংচু। তিনি চীনের বিখ্যাত শিল্পপতি।

গ্রি ইলেকট্রিক কোম্পানির চেয়ারওম্যান তং ১৪তম ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের একজন ডেপুটি। তিনি অল চায়না উইমেন ফেডারেশনেরও একজন প্রভাবশালী সদস্য। নারী ও সমাজসেবামূলক অনেক কাজের সঙ্গেও তিনি যুক্ত।

চীনের অন্যতম শীর্ষ শিল্পপতি এই নারীর জন্ম ১৯৫৪ সালের আগাস্ট মাসে পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের নানচিং শহরে এক শ্রমজীবী পরিবারে। তিনি ছিলেন পরিবারের সাত সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। ছোটবেলায় তিনি সৈনিক, চিকিৎসক অথবা শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালে তিনি আনহুই প্রদেশের উহু শহরের একটি ইন্সটিটিউট থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। পরিসংখ্যান ছিল তার বিষয়। নানচিংয়ের স্থানীয় সরকারের কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিতে তিনি প্রশাসনিক পদে চাকরি পান এবং ১৫ বছর সেখানে কাজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পরপরই তং বিয়ে করেন। এক সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু ১৯৮৪ সালে ছেলের বয়স যখন মাত্র দুই বছর তখন তং তার স্বামীকে হারান। আর বিয়ে করেননি তিনি। বিধবা অবস্থায় তার জীবন সংগ্রাম দ্বিগুণ কঠিন হয়ে পড়ে।

১৯৯০ সালে ছেলেকে তার দাদীর কাছে রেখে তং চাকরি ছেড়ে অন্য শহরে আরও বেশি অর্থ উপার্জনের জন্য নতুন কাজ খুঁজতে থাকেন। তিনি হ্যালেই কোম্পানিতে সেলসপারসন হিসেবে যোগ দেন। কঠোর পরিশ্রমে ১৯৯৪ সালে তিনি সেলস বিভাগের প্রধান হন। হ্যালেই কোম্পানির নাম পরবর্তি সময়ে হয় গ্রি । ইলেকট্রনিক সামগ্রী বিশেষ করে অ্যাপ্লায়েনসেস তৈরি জন্য তারা বিখ্যাত। ১৯৯৬ সালে তিনি কোম্পানির ডেপুটি প্রেসিডেন্ট এবং ২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট হন। ২০১২ সালে তিনি গ্রি ইলেকট্রিকের চেয়ার ওম্যান হন।

তং তার বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা ও পরিশ্রমে গ্রি কোম্পানিকে বিশ্বে অন্যতম সেরা কোম্পানিতে উন্নীত করেছেন। ২০২১ সালে ফরচুন ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারীর তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রাখে।

সম্প্রতি সিজিটিএন এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি কংগ্রেসে অন্যতম ডেপুটি হিসেবে দেশের উন্নয়নে নিজের দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরেন। তিনি বলেন, উচ্চমানের উন্নয়নের জন্য উচ্চমানের পণ্যের প্রয়োজন। তিনি সম্পদের মধ্যে ব্যবধান কমানোর জন্য নিম্ন উপার্জনকারীদের কর কমিয়ে বেশি উপার্জনকারীদের কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

তং মিংচুর বয়স এখন ৬৮ বছর। এখনও তিনি দারুণভাবে কর্মক্ষম। এখনও সমাজ উন্নয়নে ও নারীর অবস্থান উন্নয়নে দৃঢ় ভূমিকা রেখে চলছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

কণ্ঠ: হোসনে মোবারক সৌরভ

যুদ্ধবিমান চালাচ্ছেন নারী পাইলটরা

সম্প্রতি এককভাবে চীনের যুদ্ধ বিমান জে-১১ পরিচালনা করেছেন পাঁচ নারী পাইলট। পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সে পাইলট হিসেবে কাজ করছেন এই পাঁচ নারী। যারা ইতিমধ্যেই পরিচালনা করছে যুদ্ধ বিমান। তবে বর্তমানে নিচ্ছেন ভারী হেভি-ডিউটি যুদ্ধ বিমান পরিচালনার প্রশিক্ষণ। অদম্য এই পাঁচ নারী পাইলটের গল্প শুনবেন এখন।

কৃষিকাজ থেকে শুরু করে আকাশপথ। কোথায় নেই চীনারা। পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স বলছে, যুদ্ধবিমান পরিচালনা করছে নারীরা।

সম্প্রতি জে-১১ যুদ্ধ বিমান এককভাবে পরিচালনা করেছেন চীনা পাঁচ নারী পাইলট। যারা বর্তমানে হভি ডিউটি যুদ্ধ বিমান পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

এই প্রশিক্ষণ চলাকালীন কঠিন কৌশল পরিচালনার পাশাপাশি প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে পাচ্ছেন উচ্চ স্কোর ।

বয়সে এই পাঁচ নারীই তরুণী। যুদ্ধবিমান পরিচালনায় নারীদের শারীরিক শক্তি যে কোন বাধা নয় সেটিই দেখিয়ে দিয়েছেন এই নারীরা।

এই অল্প বয়সে যুদ্ধ বিমান পরিচালনা করতে পেরে আনন্দিত তারা। এই পাঁচ নারী পাইলটের একজন ইয়ান চংকিউ প্রকাশ করেছেন তার অনুভূতি। তিনি বলেন, "আমরা জনগণকে দেখাতে চেয়েছিলাম , আমরা চীনা নারীরা হেভি ডিউটি যুদ্ধ বিমানও চালাতে পারি। এখন আমরা জে ১১ চালাতে সক্ষম হয়েছি, এবং অদূর ভবিষ্যতে আমরা জে২০ উড়াতে সক্ষম হব।

জানা যায়, এর আগে চীনের নারী যুদ্ধ বিমান পাইলটরা জে-৭ এবং জে-১০ এর মতো হালকা যুদ্ধ বিমান পরিচালনা করেছেন।

চীন ১৯৫১ সালে প্রথম নারী পাইলটদের নথিভুক্ত করে। তখন থেকেই বিমান বাহিনী তার ফ্লাইট স্কুলে প্রায় ৭০০ জন নারীকে নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। নারী প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে প্রায় ৩৬০ জন সকল পরীক্ষা এবং ফ্লাইট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিমান বাহিনীতে যোগদান করেছেন।

২০০৫ সাল পর্যন্ত চীনে নারী পাইলটরা শুধুমাত্র পরিবহন বিমান পরিচালনা করতেন।এরপর থেকে শুরু হয় যুদ্ধ বিমান পরিচালনার প্রশিক্ষণ। চার বছরের মতো কঠিন প্রশিক্ষণের পর অবশেষে ১৬ জন স্নাতক শেষ করেন এই প্রশিক্ষণে। আর একজন হন প্রথম নারী যুদ্ধ বিমান পাইলট।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া,

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn