আকাশ ছুঁতে চাই ৬
বড় শহরে চলে যাওয়ার এবং অন্য পেশা গ্রহণের অনেক সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের ছোট্ট শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিজের জাতির কারুশিল্পের আকর্ষণে এখানেই রয়ে যান তিনি।
গড়ে তোলেন ঐতিহ্যবাহী এথনিক পোশাকের নিজস্ব কারখানা। তার প্রতিষ্ঠানে তৈরি এথনিক পোশাক শুধু যে বোওয়েই জাতির নারীরা পরেন তা নয়, পর্যটকরাও এগুলো কেনেন। যারা এই এলাকায় বেড়াতে আসেন এবং স্থানীয় সংস্কৃতির স্পর্শ নিতে চান তারা এই পোশাকগুলো কিনে নেন সাগ্রহে।
তার প্রতিষ্ঠানে এই ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। ওয়াং চিং বলেন,
‘আমি পোশাকের ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন করেছি। ফলে নতুন প্রজন্ম সহজে এটি ব্যবহার করতে পারে। যেমন কোমরের কাছে বেল্টের ব্যবহার করেছি। পিছনে চেইন যুক্ত করেছি। ‘
ওয়াং চিং মনে করেন, নতুন প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যকে জনপ্রিয় করতে না পারলে সেটা ভবিষ্যতে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। বোওইয়েই জাতির নারীরা যে ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও অলংকার পরেন সেগুলোকে ফ্যাশনে পরিণত করার জন্য তিনি নারীদের হ্যান্ডব্যাগ ও অন্যান্য সামগ্রীতেও ঐতিহ্যবাহী নকশা ব্যবহার করেছেন। তিনি যখন নিজের কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন তখন সেখানে বোওইয়েই বুনন কৌশর প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেন। এখানে প্রশিক্ষিত নারীরা অনেকে তার কারখানাতেই কাজ পান। এতে গ্রামের অন্য নারীদের স্বাবলম্বের পথও খুলে দেন তিনি।
ওয়াং চিং জানান, বসন্ত উৎসবসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী উৎসবের আগে তার তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়ে যায়। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এমনকি বিদেশিরাও এগুলো কেনেন।
ওয়াং চিংয়ের বয়স এখন পঞ্চাশের কোঠায়। তার প্রতিষ্ঠান সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলছে। তার কারখানায় তৈরি পোশাকগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এথনিক সংস্কৃতিকে লালন করে ঐতিহ্য রক্ষা এবং নিজের ক্যারিয়ার গড়ে নেয়ার কাজে সফল হয়েছেন সৃজনশীল নারী ওয়াং চিং।
সাইফাই থেকে শিকড়ের সন্ধানে কণ্ঠশিল্পী চু চিংসি
একজন তরুণী সংগীতশিল্পী চু চিংসি। তিনি সাইফাই ভক্ত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। শুনবো তার কথা আমার তৈরি একটি প্রতিবেদনে।
চীনের একজন বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী চু চিংসি। তিনি সংগীত লেখকও বটে। এই তরুণী সংগীতশিল্পী সাইফাই ভক্ত হিসেবেই পরিচিত। তিনি ইলেকট্রনিক মিউজিক এবং সাইফাই সংগীতের জন্য তার দর্শক শ্রোতাদের কাছ থেকে অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছেন।
তবে সাইফাই মিউজক উপহার দিলেও তিনি নিজের শিকড়কেও একেবারে ভুওেল যাননি। বরং নিজের জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য এওবং ভবিষ্যত পৃথিবীর কল্পনা এই দুটি মিলিয়েই নিত্য নতুন সংগীত আসর উপহার দিচ্ছেন চু চিংসি।
চু চিংসির জন্ম ১৯৮৮ সালে ইউননান প্রদেশের ফু’আর সিটিতে। তিনি দাই জাতিগোষ্ঠীর মেয়ে। ২০০২ সারে মাত্র ১৪ বছর বয়স থেকে সংগীত জগতে তার পদচারণা শুরু।
তিনি সাইফাই উপন্যাস, অ্যানিমেশন এবং চলচ্চিত্রের ভক্ত। তাই তার সংগীত অ্যালবামগুলোও হয় সাইফাই ভিত্তিক। তার স্টেজ পারফরম্যান্সে দর্শরা এক সাইফাই জগতে টাইম ট্রাভেলের অনুভূতি পান।
তবে সম্প্রতি চু চিংসি জানান, তিনি তার শিকড়কে ভুলে যাননি। বরং তার জাতির ঐতিহ্যকে মঞ্চ সজ্জায় ব্যবহার করে ভিন্নতর এক সৃষ্টি উপহার দিচ্ছেন তিনি।
সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।
অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা সবসময় কথা বলি নারীর সাফল্য, সংকট, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে।
আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল