বাংলা

আকাশ ছুঁতে চাই ৫

CMGPublished: 2023-02-16 19:42:42
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

১. জীবন্ত কিংবদন্তি চাং সিয়াওইং

২. করোনা শিখিয়েছে অনেক কিছু

৩. একজন অগ্রদূত ইয়ুয়ে সাই কান

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারীর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

বয়স যাকে হার মানাতে পারেনি এমনই একজন নারী চাং সিয়াওইং। তিনি চীনের প্রথম নারী সিম্ফনি পরিচালক । ৯৩ বছর বয়সে এখনও তিনি অর্কেস্ট্রা পরিচালনা করছেন তারুণ্যের শক্তি ও উদ্দীপনায়। চলুন এই অসামান্য শিল্পীর কথা শুনি।

জীবন্ত কিংবদন্তি চাং সিয়াওইং

চাং সিয়াওইং। বয়স তার এখন ৯৩ বছর। এই বয়সেও তিনি সাফল্যের সঙ্গে অর্কেস্ট্রা পরিচালনা করছেন।

চীনের প্রথম নারী সিম্ফনি পরিচালক চাং। ক্ল্যাসিকাল সংগীতকে জনপ্রিয় করার জন্য দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কাজ করে চলেছেন সংগীতজ্ঞ চাং।

সংগীতের প্রতি তার ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন চাং।

তিনি বলেন, ‘সংগীত হয়তো গল্প বলার জন্য খুব উপযুক্ত মাধ্যম নয়। কিন্তু সংগীত আপনার হৃদয়ের তন্ত্রীতে নাড়া দিতে পারে,কল্পনার স্ফুলিংগকে জ্বালিয়ে তুলতে পারে, শান্তি দিতে পারে, আপনাকে সঙ্গ দিতে পারে এবং আত্মার পুষ্টিসাধন করতে পারে। তাহলে সংগীতকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে বাধা কোথায়?

চাং সিয়াওইংয়ের জন্ম সাংহাই মহানগরে ১৯৩০ এর দশকে। পিকিং ইউনিয়ন মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করেন তিনি। সেসময় চীনের মহান বিপ্লব শুরু হয়। তিনি মধ্য সমভূমি অঞ্চলের মুক্ত এলাকায় চলে যান। তিনি দেশের প্রতি কর্তব্য পালনে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেনা বাহিনীর কঠিন জীবনে তিনি পার্বত্য ও গ্রামীণ এলাকার লোকজ সংগীতের সংস্পর্শে আসেন। তিনি একটি সংগীত দলে যোগ দেন।

সেখানে তিনি বেশ প্রতিভার পরিচয় দেন। ড্রাম, লোকজ বাদ্যযন্ত্র লুশাং ইত্যাদি বাজাতে শেখেন চাং।

ষাটের দশকে চাং সিয়াওইং সিম্ফনি কনডাকটর হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। সেসময় চৌ এন লাইয়ের মতো মহান নেতার সঙ্গেও দেখা হয় তার। চাং বলেন, ‘এটা কনডাকটর হিসেবে আমার প্রথম ছবি। আমার মনে হয় তখন কেউ ভাবতেও পারেনি এই মেয়ে একদিন প্রফেশনাল কনডাকটর হবে। অবাক করা বিষয় নয়? এটাই ছিল আমাদের তারুণ্য।’

চাং সিয়াওইং পরবর্তিকালে চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত শিক্ষায়তন থেকে সংগীত শিক্ষা করেন। তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকেও সংগীত শিক্ষা করেন। তিনি সংগীত জগতের মানুষ হিসেবে জীবন শুরু না করলেও নিজের আগ্রহ, পরিশ্রম ও সাধনায় সেরা সংগীতজ্ঞ হয়ে ওঠেন।

মস্কোর ন্যাশনাল থিয়েটারে তিনি তোসকা শিরোনামে অপেরা পরিচালনা করেন। এটি ছিল মস্কোয় কোন চীনা সংগীত পরিচালকের প্রথম পরিবেশনা। শ্রোতা দর্শকদের অকুণ্ঠ প্রশংসা পান তিনি।

২০২২ সালে চাং বয়সের ভারে দুর্বল স্বাস্থ্য নিয়েও তার ছাত্রী উ লিংফানের সঙ্গে একটি অপেরা পরিচালনা করেন। সেটি ছিল বিশ্বখ্যাত সংগীতজ্ঞ ভার্ডির মাস্টারপিস লা ট্রাভিয়াতার চায়নিজ সংস্করণ।

দেশে বিদেশে অসংখ্যবার অনেক অপেরা পরিচালনা করেছেন তিনি। পাশ্চাত্য ক্লাসিকাল সংগীতকে চীনে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে চাং সিয়াওইংকে আইকন বলে মনে করা হয়।

বয়সকে হার মানিয়ে এখনও কাজ করে চলেছেন চির তরুণ জীবন্ত কিংবদন্তি চাং সিয়াওইং।

করোনা শিখিয়েছে অনেক কিছু

চীনের সফল ব্যবসায়ী নারী থান তামেই। যিনি একটি চীনা নিটওয়্যার কোম্পানির প্রধান। কাজের প্রয়োজনে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানো এই নারী পরিবারের সাথে সময় কাটানোর পাশাপাশি ঘরে বসেই করেছেন ব্যবসা পরিচালনা। এখন আফরিন মিম বলবেন থান তামেইয়ের দীর্ঘ তিন বছরের ঘরবন্দি সময়ের গল্প।

চিয়াংসু প্রদেশের রাজধানী নানচিংয়ের একটি নিটওয়্যার কোম্পানির মালিক থান তামেই। যিনি মহামারীর করোনার সময়টায় ঘরে বসেই পরিচালনা করেছেন নিজের ব্যবসা কার্যক্রম।

মহামারীতে বিশ্বব্যাপীতে দেখা দেওয়া অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তাকেও পড়তে হয়েছিল নানা সমস্যায়। অনেক ক্লায়েন্ট ও অংশীদার বের হয়ে যান তার এ ব্যবসা থেকে।

ব্যবসার এই কঠিন সময়ে কমে গিয়েছিল পণ্য অর্ডার। দেরিতে হতো পণ্য ডেলিভারী । একটা সময় পর কমে আসছিল আয়। কিন্তু এই প্রতিকূল সময়েও কর্মচারীদের বেতন ঠিক সময়ে দিয়েছেন থান তামেই।

তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে অভ্যন্তরীণ বাজারে নমুনা এবং উদ্বৃত্ত স্টক বিক্রি করতে হয়েছিল। আমার কর্মচারীরা ও আমি অডিও বই তৈরি করতে শুরু করেছিলাম। এটি ছিল আমাদের প্রতিষ্ঠানের কাজের বাইরের কাজ। সেই সময়ে আমি উপলব্ধি করেছি এই ব্যবসা আমার নিজের সন্তানের মতো”।

গেল কয়েক বছরে থানের দৈনন্দিন জীবন-যাপনে এসেছে আমূল পরিবর্তন। এক সময় কাজের প্রয়োজনে ক্লায়েন্টদের সাথে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণে অনেক ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন তিনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কাজের বাইরে বেশিরভাগ সময়ই কাটছে পরিবারের সাথে।

গেল কয়েক বছরে ব্যবসায় যেমন পরিবর্তন হয়েছে তেমনি তার পরিবারেও এসেছে পরিবর্তন। তার ছেলের ঘর আলো করে এসেছে নাতি। এই কয়েক বছরে তার সাথেও আনন্দে সময় কেটেছে তার। তিনি বলেন, "চীনের মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নীতি অনেক মানুষকে রক্ষা করেছে। অন্যথায়, প্রাদুর্ভাবের শুরুতে আরও বেশি মানুষ মারা যেতে পারত যখন স্ট্রেনগুলো আরও মারাত্মক ছিল।"

করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি অবস্থা তার জীবনে এনে দিয়েছে ব্যাপক ইতিবাচক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ।

এখন ব্যবসা আবার আগের অবস্থায় ফিরে ফিরে আসছে ধীরে ধরে। আর থান তামেই নতুনভাবে উপলব্ধি করছেন পরিবারের সঙ্গে বেঁচে থাকার আনন্দ।

একজন অগ্রদূত ইয়ুয়ে সাই কান

ইয়ুয়ে সাই কান চীনের একজন বিখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। তার বই ‘বি এ পাইয়োনিয়ার’ বা ‘একজন অগ্রগামী মানুষ’ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এটি তার দশম বই এবং চীনা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম আত্মজীবনী। এখানে তিনি বলেছেন তার জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতার গল্প। আমার তৈরি একটি প্রতিবেদন শুনবেন ।

ইয়ুয়ে সাই কানের জন্ম ১৯৪৬ সালে কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কুইলিন শহরে। শৈশব কেটেছে হংকংয়ে। তিনি হাওয়াইতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কাটান এবং পিয়ানো বাজানো শেখেন। বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষার্থী থাকার সময় এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে খ্যাতি পান।

১৯৭২ সালে তিনি নিউইয়র্কে যান এবং সেখানে একটি টিভি সিরিজ নির্মাণ করে দারুণ খ্যাতি পান। তিনি প্রাচ্যের সংস্কৃতি আমেরিকান দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন। তার টিভি সিরিজটি অনেক পুরস্কার পায় এবং তিনি নিজেও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের অগ্রদূত হয়ে ওঠেন। প্রাচ্য সৌন্দর্য, ফ্যাশন, সংস্কৃতির আইকন হয়ে ওঠেন ইয়ুয়ে।

১৯৮৬ সালে তিনি চীনে ফিরে আসেন। তিনি সিসিটিভিতে ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড ‘ নামে একটি অনুষ্ঠান নির্মাণ ও উপস্থাপনা করে দারুণ জনপ্রিয়তা পান।

১৯৯২ সালে জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব থেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন। তিনি ইয়ুয়ে সাই প্রসাধনী ব্র্যান্ড বাজারে আনেন।

তিনি ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করে সাফল্য পেয়েছেন। দীর্ঘ জীবনে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখেছেন। বিশেষভাবে লিখেছেন লাইফ স্টাইল, রিলেশনশিপ, সাফল্য ব্যর্থতা ইত্যাদি নিয়ে।

চীনের অন্যতম বিখ্যাত ও জনপ্রিয় নারী ইয়ুয়ে সাই তার সাম্প্রতিক বইতে নিজের বাবার কাছ থেকে শৈশবে পাওয়া একটি শিক্ষার কথা দিয়ে লেখা শুরু করেছেন। তিনি বলেছেন তার বাবা বলেছিলেন ‘জীবনে যে পেশাতেই যাও না কেন, পাইওনিয়ার বা অগ্রদূত হওয়ার চেষ্টা করো। সে বিষয়ে প্রথম হও, পাইয়োনিয়ার হও।’

ইয়ুয়ে সাই নারীদের জন্য সাফল্যের সূত্র দিয়ে বলেছেন যে, কোন বিষয়ে এগিয়ে যাওয়া, সাহসের সঙ্গে প্রথম পদক্ষেপ নেয়াই জীবনে এগিয়ে যাওয়ার চাবিকাঠি।

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা সবসময় কথা বলি নারীর সাফল্য, সংকট, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে।

আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn