বাংলা

আকাশ ছুঁতে চাই ২

CMGPublished: 2023-01-26 12:18:09
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

কী আছে এবারের পর্বে

১. লিন সিয়াওপাই

২. তিব্বতি মেয়ে থাশি

৩. পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছেন তরুণী ইয়ান হুয়ানহুয়ান

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারীর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী ও শিশুর অধিকার নিয়ে।

লিন সিয়াওপাই এক স্বপ্ন অভিযাত্রী নারী

অনুষ্ঠানে আজ আমরা কথা বলবো এমন একজন নারীরে বিষয়ে যিনি নিজের ভালোলাগাকে গুরুত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত জীবনের মোহ ত্যাগ করেছেন। পরে সফলও হয়েছেন। শুনুন স্বপ্ন অভিযাত্রী নারী লিন সিয়াও পাইয়ের কথা।

লিন সিয়াওপাই হলেন এমন এক ধরনের নারী যিনি নিজের স্বপ্নকে সফল করতে এবং নিজের ভালোলাগাকে প্রাধান্য দিতে বড় ধরনের ঝুঁকি নিতেও ভয় পান না। তিনি একের পর এক উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। অনেক সময় ও অর্থের অপচয় করেছেন। তবে এখন তিনি সফল।

লিন সিয়াওপাইয়ের বয়স এখন ৩৬ বছর। সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছাংতু শহরে তার জন্ম। ২০০৮ সালে তিনি ছাংতু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসনে গ্র্যাজুয়েশন করেন। এরপর তিনি ছাংতুর একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন।সাংহাইয়ের একটি বড় ট্রেডিং কোম্পানিতে চাকরি করেন। আবার সুচৌর অন্য একটি প্রতিষ্ঠানেও চাকরি করেন। তিনি ছিলেন অস্থির স্বভাবের। প্রায়ই চাকরি ছেড়ে দিতেন। নানচোং শহরের একটি ব্যাংকেও চাকরি করেন লিন। ২০১৪ সালে এই চাকরিটিও ছাড়েন তিনি।

লিন সিয়াওপাই বলেন, “ ব্যাংকে চাকরি নেয়ার কয়েক মাস পরেই আমার মনে হলো এই জীবন আমার জন্য নয়। আমি ভালো বেতন পেতাম। কিন্তু মনে হচ্ছিল যে চাকরিটি খুব একঘেয়ে এবং কাজের চাপও খুব বেশি।’

এই সময় তার দাম্পত্য জীবনে অশান্তি শুরু হয় এবং সেটা ডিভোর্সে গড়ায়।

ডিভোর্সের পর তিনি মনে করেন নিজস্ব উদ্যোগে কিছু করবেন। সুচৌতে একটি নিজস্ব কোম্পানি খোলেন। সেটি সফল হয়নি। এরপর শিশুদের ছবি আাঁকা শেখানোর স্কুল শুরু করেন। সেই স্কুলে ছবি আঁকা এবং নানা রকম কারুশিল্প শেখাতেন।

প্রচুর অর্থ নষ্ট হয়। ঋণও করতে হয়। সিংগেল মাদার হিসেবে তার টিকে থাকাই ছিল মুশকিল।

তিনি মনে করেন এই সময়ে তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ যার প্রচুর সৃজনশীল আইডিয়া আছে কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নেই।

লিন বলেন, ‘নিজের উদ্যোগে সফল হতে হলে খুব দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থাকতে হয়। মনোবল ধরে রাখাটা একটা প্রধান বিষয়। নিজের আরাম আয়েশ ত্যাগ করে নিজস্ব মেধা ও প্রতিভার সবটুকু কাজে লাগাতে হয়। কখনও কখনও ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তও নিতে হয়।’

এই কাজটিই করেন লিন। তার শখকে তিনি পেশাতে পরিণত করেন। তার শখ ছিল ছবি আঁকা। তিনি অনলাইনে একটি ছবি আঁকা প্রশিক্ষণ চ্যানেল খোলেন। এটা ২০২০ সালের কথা। এখন তার চার লাখ অনুসারী আছে।

তিনি নিয়মিত অফলাইন কর্মশালারও আয়োজন করেন। সেখানে এক হাজার পর্যন্ত মানুষ অংশ নিয়েছেন।

লিন এখন একজন সফল চিত্রাঙ্কন শিক্ষক। তিনি দিনে চার ঘন্টা কাজ করে প্রচুর উপার্জন করেন। দিনের শুরুতে একঘন্টা ব্যায়াম করেন। বাকি সময়টা নিজের ইচ্ছামতো কাটান।

নিজের ভালোলাগাকে প্রাধান্য দিয়ে এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছেন সাহসী নারী লিন সিয়াওপাই।

তিব্বতি মেয়ে থাশি

চীনের ৫৬ জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিকে ধারণ করে জীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন অনেক নারী। আজ আমরা শুনবো এমন একজন কিশোরী মেয়ের কথা যে খুব ছোট বয়সেই হয়ে উঠেছে তার সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী।

চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বতের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। তিব্বতি জাতির মানুষ শুধু তিব্বত নয় আশপাশের প্রদেশের বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারেও বসবাস করেন। এখানে তারা তিব্বতের সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে চর্চা করেন। যারা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে পরবর্তি প্রজন্মের কাছে পৌছে দেন এবং নিজে এই ঐতিহ্যকে চর্চা করেন তাদের বলা হয় কালচারাল ইনহেরিটর বা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারী।

এমনি একজন সাংষ্কৃতিক উত্তরাধিকারী থাশি বাদ্রো। থাশি বাদ্রোর বয়স মাত্র ১২ বছর। কিন্তু এই বয়সেই সে তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী সিয়ানচি নৃত্যে পারদর্শিতা অর্জন করেছে। চীনের সিচুয়ান প্রদেশের কানচি এলাকার বাথাং নামক স্থানে বসবাস করেন তিব্বতি জাতির বেশ অনেকজন মানুষ। এখানে তারা তিব্বতি জাতির সংস্কৃতির চর্চা করেন। এই এলাকার পর্যটন আকর্ষণের অন্যতম কারণ হলো তিব্বতি জাতির সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বাথাং এলাকায় বসবাসকারী তিব্বতি জাতির একটি বিশেষ ধরনের নৃত্য কৌশল হলো সিয়ানচি নাচ। এক হাজার বছর ধরে এই নাচের ঐতিহ্য বহন করছেন বাথাং এলাকার তিব্বতি জনগোষ্ঠীর মানুষ।

তিব্বতি জাতির কিশোরী মেয়ে থাশি বাদ্রো তার মায়ের কাছ থেকে শিখেছেন সিয়ানচি নাচ। ক্ষুদে এই শিল্পী যখন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তার নাচ পরিবেশন করে তখন দর্শকরা মুগ্ধ হয়। আশপাশের তুষার ঢাকা পাহাড়েও যেন বেজে ওঠে নৃত্যের ধ্বনি।

থাশি বাদ্রোর মতো নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা কালচারাল ইনহেরিটর হিসেবে কাজ করছেন। তারা নিজেদের জাতির সংস্কৃতিকে রক্ষা করছেন এবং তাকে ধারণ করে পৌছে দিচ্ছেন প্রজন্মান্তরে।

পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছেন তরুণী ইয়ান হুয়ানহুয়ান

সুপ্রিয় শ্রোতা, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় কয়েক মাস আগে। এই কংগ্রেসে অংশ নেন দেশের সকল পর্যায়ের কর্মীরা এমনি একজন কর্মী ইয়ান হুয়ানহুয়ান। এই তরুণী নারী পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে চলেছেন।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসে সারা চীন দেশ থেকে অংশ নিয়েছেন অনেক প্রতিনিধি যাদের মধ্যে ছিলেন অনেক নারী। এরা নিজের নিজের ক্ষেত্রে দেশ গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় ন্যাশনাল কংগ্রেসে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। এমনি একজন তরুণী প্রতিনিধি ছিলেন ইয়ান হুয়ানহুয়ান। তিনি কংগ্রেসে প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।

ইয়ান হুয়ানহুয়ান কমিউনিস্ট পার্টির একজন কর্মী। তিনি পরিবেশ সুরক্ষার জন্য কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক বিভাগ থেকে ডিগ্রি অর্জন করেন। গ্র্যাজুয়েশনের পর তিনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সুরক্ষামূলক বিভাগে কাজ শুরু করেন।

তিনি বলেন, ‘অনেক বছরের প্রযুক্তিগত আবিষ্কার ও গবেষণার ফলে আমাদের দল একটি নতুন ধরনের কেমিকেল বের করেছে যা বর্জ্য পানি পরিশোধনে ব্যবহার করা হয়। এটি আগের কেমিকেলটির চেয়ে অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব।

কোম্পানি ইয়ানের এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তার নামে একটি ইনোভেশন ওয়ার্কশপ স্থাপন করেছে। এখানে ইয়ানের মতো অন্য তরুণ কর্মীরা পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছেন।

৩৫ বছর বয়সী ইয়ান বলেন, ‘আমি চীনের পরিবেশ সুরক্ষা এবং সবুজ উন্নয়নে নিজের অবস্থান থেকে যথাসাধ্য অবদান রাখতে চাই।’

চীনের সর্বশেষ ন্যাশনাল কংগ্রেসে একজন তরুণ প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিতে পেরে তিনি গৌরব বোধ করেন। তিনি তৃণমূল পর্যায়ের শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

ইয়ান বলেন, ‘আমি মনে করি আমার দায়িত্ব অনেক। পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণ দরকার। এটি সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সবুজ সভ্যতা গড়ে তুলবে।’

ইয়ান মনে করেন পরিবেশ রক্ষায় যুবসমাজের আরও বেশি করে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশবান্ধব উন্নয়নই হলো ইয়ানের জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। এই অনুষ্ঠান আপনারা শুনতে পাবেন প্রতি বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটায় হ্যালো চায়না অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা সবসময় কথা বলি নারীর সাফল্য, সংকট, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে।

আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn