আকাশ ছুঁতে চাই ৮১
কী থাকছে এবারের পর্বে
১. গানকে সঙ্গী করে অনেকদূর যেতে চাই: সংগীত শিল্পী চৈতী রহমান
২.কারুশিল্পী ইয়ানের অবাক করা শিল্প
৩. ছবি যখন কথা বলে
৪. ঢাকায় নারী উদ্যোক্তাদের ঈদমেলা
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন। ঈদুল আজহার উৎসব আগত প্রায়। শ্রোতাদের জানাই ঈদ মোবারক
গানকে সঙ্গী করে অনেকদূর যেতে চাই: চৈতী রহমান
বাংলাদেশের নারীরা অনেক সংগ্রাম ও পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে চলেছেন জীবনের পথে, সাফল্যের পথে। পেশাগতভাবে সাফল্য অর্জনের জন্য তাদের পার হতে হচ্ছে বাধা বিপত্তি। এমনি একজন সংগ্রামী নারী চৈতী রহমান। তিনি একজন সংগীত শিল্পী। শত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও সংগীত সাধনা চালিয়ে যাচ্ছেন। চৈতী রহমানের কাছে আজ শুনবো তার জীবনের গল্প। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।
সাক্ষাৎকার
চৈতী
চৈতী রহমান বাংলাদেশের একজন তরুণ সংগীতশিল্পী। তিনি ছোটবেলা থেকেই গানের চর্চা করছেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পেয়েছেন। মূলত দেশের গান ও ইসলামি গান গেয়েই শৈশবে পরিচিতি পান। বর্তমানে চৈতী বিভিন্ন স্টেজ শোতে অংশ গ্রহণ করছেন। তিনি পদ্মা সেতু নিয়েও দলীয়ভাবে গান পরিবেশন করেছেন। তিনি লোকসংগীত, আধুনিক গানেও পারদর্শী। বললেন, ‘স্টেজে গান পরিবেশন করতে হলে সব ধরনের প্রস্তুতিই রাখতে হয়। কারণ বিভিন্ন রকম গানের জন্য অনুরোধ করেন শ্রোতা দর্শকরা’।
কোভিড মহামারীর কারণে গেল দুই বছরে সংগীত শিল্পীদের অনেক দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলে জানান চৈতী। কারণ এই দুই বছরে কোন স্টেজ শো হয়নি। চৈতী আরও বলেন, ‘গানকে পেশা হিসেবে নিতে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে।’ তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চৈতী। তিনি সম্প্রতি কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননাও পেয়েছেন বলে জানালেন।
একজন নারীকে পেশাগত জীবনে এগিয়ে যেতে হলে অনেক বাধা বিপত্তি পার হতে হয়। পরিবার থেকেও সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। পরিবার থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন বলে জানালেন চৈতী রহমান। তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো সংগীত জগতে নিজের অবস্থান গড়ে নেওয়া। ‘গানকে সঙ্গী করে অনেকদূর যেতে চাই’ বললেন চৈতী রহমান।
কারুশিল্পী ইয়ানের অবাক করা শিল্প
চীনা সংস্কৃতির একটি বড় জায়গা দখল করে আছে কারুশিল্প। এই শিল্পকে আরো অলঙ্কৃত করছেন ইয়ান হং নামের একজন তরুণী। এ শিল্প চর্চার মাধ্যমে ইয়ানের কর্মদক্ষতার পাশাপাশি চীনা সংস্কৃতির প্রচার বাড়ছে। ঐতিহ্যবাহী চীনা চিত্রকর্ম থেকে শুরু করে নানা ধরণের কাজ করে থাকেন ইয়ান। তার সুনিপুণ কাজে মুগ্ধ হন গ্রাহক এবং দর্শক। তার কথা শুনবো প্রতিবেদনে।
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের ছাংতোও শহরের একজন সৃজনশীল কারু শিল্পী ইয়ান হং। চীনা সংস্কৃতির প্রচারের দায়িত্ব কাঁধে নেয়া ইচ্ছুক তরুণদের একজন হয়ে উঠেছেন ইয়ান হং।
ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উপাদান ব্যবহার করে তিনি তৈরি করছেন বিভিন্ন কারুপণ্য-শিল্পকর্ম। হেডওয়্যার, চীনা পৌরাণিক কাহিনী এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা চিত্রকর্ম থেকে শুরু করে নানা ধরণের কাজ করে থাকেন ইয়ান। শুধু তাই নয়, ফেলে দেয়া ক্যান দিয়ে সূক্ষ্ম কাজের ওয়েডিং অর্নামেন্টস থেকে শুরু করে ঐতিহ্যগত বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করেন তিনি।
ইন্টারনেটে পোস্ট করা তার ভিডিওগুলি শিল্পকর্ম তৈরির পিছনের গল্প তুলে ধরে। এ সব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে পিকিং অপেরায় ব্যবহৃত একটি ফিনিক্স করোনেট তৈরির ভিডিও ৫ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে।
২০২০ সালে, তিনি মিয়াও জাতিগোষ্ঠীর হেডওয়্যারের একটি সেট তৈরির ভিডিও ইন্টারনেটে আপলোড করে ২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের সাড়া পান। তিনি বলেন,
‘প্রথম দিকে আমার শিল্পকর্মগুলো ক্যান দিয়ে তৈরি করা দেখে অনেকে খুব অবাক হয়েছিল। তারা জানত না কিভাবে ক্যান থেকে এত সুন্দর শিল্পকর্ম তৈরি করা যায়। এখন তারা অনেকেই আমার এই কাজে উৎসাহিত করে। আমিও তখন নতুন কিছু তৈরির সাহস পাই। এখন পর্যন্ত , আমি ২০০টিরও বেশি শিল্পকর্ম তৈরি করেছি। ’
সাত বছর আগে, ইয়ান একটি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি রূপসজ্জা শিল্পী হয়ে উঠেন এবং প্রায়শই কনের জন্য হেডওয়্যার তৈরি করতেন।
তারপর থেকে, তিনি টিভি নাটকে দেখা হেডওয়্যার এবং জামাকাপড় তৈরিতে ক্যান ব্যবহার করতে শুরু করেন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সাথে তার সৃষ্টিকর্মগুলো শেয়ার করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে তিনি প্রাচীন বই এবং চিত্রকর্ম থেকে অনুপ্রেরণা পেতে শুরু করেন, কারণ তিনি দেখতে পান যে ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির একটি বিশাল ভান্ডার রয়েছে চীনের।
শিল্পকর্মগুলো ক্রমাগত জমা হওয়ার সঙ্গে ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির প্রতি নতুন ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা তৈরি হয় তার। আরো ভালোভাবে চর্চার মাধ্যমে চীনা ঐতিহ্যগত সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেয়া কর্তব্য বলে মনে করেন ইয়ান।
ছবি যখন কথা বলে
ছবি আসলেই কথা বলে। এমন অনেক জটিল বিষয় আছে যা বুঝে উঠতে বেশ সময় লেগে যায়। কিন্তু এমন বিষয়গুলো যে কেউ খুব সহজেই বুঝতে পারেন ছবির মাধ্যমে। এমন একটি মজার বিষয় নিয়ে কাজ করেন চীনা তরুণী চাং ই মান।
অর্থনীতি, আইনের মতো দুর্বোধ্য ইস্যুগুলো সবার কাছে সহজবোধ্য করতে দুর্দান্ত ছবি আঁকেন তিনি। আর এতে উপকৃত হচ্ছেন বিশ্বের নানা প্রান্তের অসংখ্য মানুষ। বিস্তারিত প্রতিবেদনে।
দিনের শুরুতেই অফিসের জন্য প্রস্তুতি। নিজেকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে খুব সকালেই অফিসের পথে রওনা হন চাং ই মান। অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে শুরু হয় নিত্যদিনের কাজ।
এই চীনা তরুণী দেশটির একটি স্থানীয় অফিসে কার্টুনিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। তবে তিনি সাধারন কোন কার্টুনিস্ট নন, তিনি কাজ করেন জনস্বার্থে। তিনি মনে করেন এমন অনেক জটিল বিষয় আছে যা সাধারন মানুষ বুঝতে পারেনা। তবে সুন্দরভাবে তা ছবির মাধ্যমে খুব কম সময়ে বুঝিয়ে বলা সম্ভব।
তার আঁকা ছবি কখনো কখনো মামলা-মোকদ্দমায় বেশ কাজে লাগে। স্থানীয় একটি বন্দরে বেশ কিছুদিন ধরে খোলা অবস্থায় কয়লা রাখা ছিল যা প্রকৃতির জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এ বিষয়টি তিনি কার্টুনের মাধ্যমে তুলে ধরেন আদালতে এবং পরবর্তীতে মামলাটি জিতে যান। পরিবেশ সুরক্ষায় নির্মিত হয় কয়লা মজুদ রাখার তিনটি কেন্দ্র। চাং ই'র উদ্যোগে গেল তিন বছরে এরকম ১৩০ টিরও বেশী মামলা পরিচালনা করা হয়, যার অধিকাংশই দেখে সফলতার মুখ।
তিনি বলেন, "আমি ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে ভীষণ পছন্দ করি। একসময় বুঝতে পারি ছবির মাধ্যমে অনেক জটিল বিষয় ব্যাখ্যা করা সম্ভব। এরপর থেকে জনস্বার্থে কাজ করা শুরু করি।"
চাং ই মানের মতো তরুণ-তরুণীরা আরো সহজ করে তুলছেন মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন । আর এভাবেই নিত্যনতুন উদ্ভাবনী ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে পুরো বিশ্বে অনন্য হয়ে উঠছে চীন।
ঢাকায় নারী উদ্যোক্তাদের মেলা
ঈদকে কেন্দ্র করে নারী উদ্যেক্তারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করছেন। সম্প্রতি গুলশানের শুটিং ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা ফ্যাশন এক্সপো ২০২২ এবং ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে হয় ঈদ বারুণী মেলা। বিস্তরিত প্রতিবেদনে।
নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বাজারজাত করণের লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকা ফ্যাশন এক্সপো। পাঁচ বছর আগে এ ধরনের একটি উদ্যোগ নেয় হয়। মাঝখানে করোনা মহামারীর কারণে দুই বছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি।
এবারে নতুনভাবে শুরু হয় ঢাকা ফ্যাশন এক্সপো ২০২২। ২৯টি স্টল নিয়ে গুলশানের শুটিংক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় কয়েকদিনের এই উদ্যোক্তা মেলা। মেলার মূল আয়োজক তিন নারী উদ্যোক্তা ও ফ্যাশন ডিজাইনার। ফারহানা বিনতে লতিফ , নাজমা রশিদ শ্বেতা এবং দিলরুবা পারভীন ঢাকা ফ্যাশন এক্সপো ‘র আয়োজন করেন।
ফারহানা বিনতে লতিফ একজন ফ্যাশন ডিজাইনার এবং উদ্যোক্তা। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মসলিন শিল্পকে আবার জাগিয়ে তোলা এবং মসলিনের পোশাককে জনপ্রিয় করার লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম পানজেহ।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে তিনি উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন।
আরেকজন উদ্যোক্তা নাজমা রশিদ শ্বেতা। তিনি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার এবং উদ্যোক্তা।
কে ঢাকার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে নারী উদ্যোক্তাদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ঈদ বারুণী মেলা। ২৮টি স্টল নিয়ে চলে এই মেলা। এখানে শুধুমাত্র দেশীয় পণ্য বিক্রি হয়।
দেশীয় পণ্যকে বাজারজাত করা এবং নিজেদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই নারী উদ্যেক্তারা কাজ করে চলেছেন।
আজ আর কথা নয়, আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.
আজ এ পর্যন্তই। যাবার আগে আবারও জানাই ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। চীনাভাষায় বলা হয় কু আর পাং চিয়ে । সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন
ঈদ মোবারক।
আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা, উপস্থাপনা : শান্তা মারিয়া
কারুশিল্পী ইয়ানের অবাক করা শিল্প প্রতিবেদন রওজায়ে জাবিদা ঐশী
ঢাকায় নারী উদ্যোক্তাদের মেলা প্রতিবেদন শান্তা মারিয়া
ছবি যখন কথা বলে প্রতিবেদন হাবিবুর রহমান অভি
অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী ও শান্তা মারিয়া