আকাশ ছুঁতে চাই ৬৩
কী থাকছে এবারের পর্বে
১. নারীবান্ধব আইনগুলোর যথাযথ প্রয়োগ দরকার: ব্যারিস্টার নুসরাত জাহান স্বাতী
২. অলিম্পিয়ান ছাই শুয়ে থং
৩. গান: শিল্পী চোও সুন
৪ ই কমার্সের মাধ্যমে এলাকার চেহারা বদলে দিলেন এক নারী
৫. প্রবীণ চাও কুইলান ও কাপড়ের বাঘ
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন।
আগামি ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই বিশেষ দিবসকে সামনে রেখে আজ আমরা কথা বলবো একজন বিশিষ্ট নারী আইনজীবী ব্যারিস্টার নুসরাত জাহান স্বাতীর সঙ্গে। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।
নারীবান্ধব আইনগুলোর যথাযথ প্রয়োগ দরকার: ব্যারিস্টার নুসরাত জাহান স্বাতী
সাক্ষাৎকার
বাংলাদেশে নারী ব্যারিস্টারের সংখ্যা খুবই কম। সেই সূত্র ধরে ব্যারিস্টার নুসরাত জাহান স্বাতী প্রথমেই শোনালেন তার জীবন সংগ্রামের গল্প। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাশ করেন। আইনজীবী হিসেবে পরিশ্রম করে গড়ে তোলেন নিজের ক্যারিয়ার। তিনি লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করেন। সম্মানীয় লিংকন’স ইনের সদস্যও তিনি। বর্তমানে তিনি কানাডার আইনজীবীদের বারসংগঠনেরও সদস্য এবং সেখানেও আইন পেশায় রয়েছেন।
কোন বাধাবিপত্তিতে দমে না গিয়ে নিজের লক্ষ্যপূরণে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের সমস্যাগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন যে আইনগত অধিকার সম্পর্কে নারীকে সচেতন করে তুলতে হবে। বাংলাদেশে নারী বান্ধব আইন রয়েছে কিন্তু প্রয়োজন এর যথাযথ প্রয়োগ, বললেন নুসরাত। নারীদের কাছে তাদের অধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরতে সরকারি, বেসরকারি সেবাসংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অলিম্পিয়ান ছাই শুয়ে থং
মেডেল হারানোর যন্ত্রণা সত্ত্বেও খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা সীমাহীন রয়েছে চীনা অভিজ্ঞ স্নোবোর্ডার ছাই শুয়েথং এর। তিনি চীনের একজন নারী তারকা খেলোয়াড়। ২৮ বছর বয়সী এই নারী পেছনে না তাকিয়ে নিজের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে আরো বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাঁর ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদনে।
বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক ২০২২ এ নারীদের স্নোবোর্ড হাফপাইপের ফাইনালে বাদ পড়েন তিনি। তবে এমন হতাশাজনক উপসংহার সত্ত্বেও খেলার প্রতি তার অকৃত্রিম ভালবাসা রয়েছে।
তিনি চীনের একজন নক্ষত্র খেলোয়াড়। কারণ ছাই ২০০৯ সালে FIS Youth Snowboarding Championships জয়ী প্রথম চীনা নাগরিক। ২০১০ সালে ভ্যাংকুভার অলিম্পিকে তিনি সর্বকনিষ্ঠ প্রতিযোগী ছিলেন। যখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর।
তখনকার সময়ের ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে স্বীকৃত ছাই এর পর ৩৭টি বিশ্বকাপ ইভেন্টে অংশ নিয়ে ১২টিতে জয় লাভ করেন।
সম্প্রতি চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন সিসিটিভিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ছাই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘যদিও আমি আমার লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি তবু আমি প্রস্তুতির প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি উপভোগ করেছি। আমি এই খেলাকে খুব ভালোবাসি যদিও আমি আশানুরূপ ফলাফল পাইনি। এটি জীবনের মতোই, যা সব গোলাপ নয়।’
হোম গেমসে তিনি তার সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন তাই পদক অর্জন না করতে পারলেও তার কোনো হতাশা বা অনুশোচনা নেই।ছাই তার স্নোবোর্ডিং দক্ষতার উন্নয়ন এবং সাফল্য অর্জনে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ক্যারিয়ারের অগ্রগতির পাশাপাশি নতুন সম্ভাবনার প্রত্যাশা করেন তিনি।
গান
সুপ্রিয় শ্রোতা, চীনের একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী ও কণ্ঠশিল্পী হলেন চোও সুন। ১৯৭৪ সালে চীনের চেচিয়াং প্রদেশে জন্ম নেয়া এই শিল্পী তার অভিনয় ও সংগীতের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন।
এখন আমরা চোও সুনের কণ্ঠে শুনবো একটি ভালোবাসার গান।
ই কমার্সের মাধ্যমে এলাকার চেহারা বদলে দিলেন এক নারী
স্থানীয় বিশেষ ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে ই কমার্সের মাধ্যমে এলাকার চেহারা বদলে দিয়েছেন এক নারী। শুনবো তার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন।
চীনের উত্তর পশ্চিম অংশে অবস্থিত কানসু প্রদেশের লংনান সিটি। এখানে পাহাড় ঘেরা একটি গ্রাম শিথান। এই গ্রামের বাসিন্দা লিয়াং ছিয়ানচুয়ান। তিনি চীনের জাতীয় আইনসভারও সদস্য। লংনান সিটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। এই এলাকার বেশ কিছু খাদ্য সামগ্রী বেশ বিখ্যাত। কিন্তু দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এবং দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থার কারণে হওয়ায় এসব পণ্যের ব্যবহার স্থানীয় পর্যায়েই সীমাবদ্ধ ছিল। এই এলাকার নারী লিয়াংয়ের মনে ভাবনা আসে এই পণ্যগুলোকে দেশের সর্বত্র বিপণন করার। তিনি ই কমার্স পদ্ধতিতে এইসব পণ্য বিপণনের সিদ্ধান্ত নেন।
ই কমার্স কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। স্থানীয় মৌমাছি পালনকারীদের কাছ থেকে তিনি মধু কেনেন। এগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত করেন। বোতলজাত করেন। তারপর লাইভ স্ট্রিমিং করে জনপ্রিয় হয়েছেন এমন কয়েকজনকে নিযুক্ত করেন। স্থানীয় মধু বিক্রি শুরু হয় অনলাইনে। লিয়াং এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। দারিদ্র্য দূরীকরণে দৃঢ় ভূমিকা রাখেন। শুধু মধু নয়, ডিম, শুকনো ফল, ফুল ও ফলের বীজসহ আরও অনেক কৃষিপণ্য ও হস্তশিল্প পণ্য উৎপাদন ও বিপণন শুরু হয়।
শিথান গ্রাম ও লংনান সিটির অধিবাসীরা ই কমার্সের মাধ্যমে এভাবেই গড়ে নিচ্ছেন ভাগ্যকে। আর এ কাজে তাদের পথ দেখাচ্ছেন লিয়াং ছিয়ানচুয়ান।
প্রবীণ চাও কুইলান ও কাপড়ের বাঘ
প্রিয় শ্রোতা , আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই।
ঐতিহ্যকে ধরে রেখে পরবর্তি প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন ৮২ বছর বয়সী প্রবীণ নারী চাও কুইলান। শুনবো সেই গল্প।
শানতুং প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের বাঘ পুতুল। বিশেষ করে এ বছর চীনে বাঘবর্ষ হওয়ায় নববর্ষে এই বিশেষ ধরনের বাঘ পুতুলের জনপ্রিয়তা আরও বাড়ে। এই এলাকার একটি রীতি হলো নবজাতককে বা শিশুদের বাঘপুতুল উপহার দেওয়া। এটি এক ধরনের আশীর্বাদ দেয়ার পদ্ধতি।
শানতুং প্রদেশের সিবেইছাং গ্রামের প্রবীণ নারী চাও কুইলান। বয়স ৮২ বছর। এই বয়সেও সুই সুতা দিয়ে রং বেরঙের বাঘ পুতুল তৈরি করেন তিনি।
ঐতিহ্যবাহী এই কারু শিল্প তিনি শিখেছিলেন তার মায়ের কাছ থেকে। ছোটবেলা থেকেই ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের প্রতি তার আকর্ষণ প্রবল।
কাপড়ের বাঘপুতুল তৈরিতে দিনে দিনে তার দক্ষতা বেড়েছে। অনেক প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও জিতে নিয়েছেন। পেয়েছেন কারুশিল্পীর সম্মাননা। ২০২০ সালে চীনে জাতীয় পর্যায়ে অদম্য সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের একজন উত্তরসূরী হিসেবে তাকে সম্মাননা দেয়া হয়। তিনি নিজস্ব কিছু উদ্ভাবনও যোগ করেছেন এর সঙ্গে।
এই কারুশিল্প থেকে তার আয়ও হয়েছে অনেক। এমনকি এই টাকা তার সংসারেও অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বয়ে এনেছে। স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে সুখের সংসার গড়েছেন তিনি।
তবে নিছক অর্থের জন্য তিনি এই কাজ করেননি। এই বৃদ্ধ বয়সেও যে তিনি বাঘ পুতুল তৈরি করেন সেটির পিছনে রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা। তিনি পরবর্তি প্রজন্মের কাছে এই ঐতিহ্যকে পৌঁছে দিতে চান।
আকাশ ছুঁতে চাই অনুষঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা।
আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.
আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও অডিও সম্পাদনা : শান্তা মারিয়া
অলিম্পিয়ান ছাই শুয়ে থং প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
ই কমার্সের মাধ্যমে এলাকার চেহারা বদলে দিলেন এক নারী এবং প্রবীণ চাও কুইলান ও কাপড়ের বাঘ প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া