বাংলা

আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৬২

CMGPublished: 2022-02-24 14:38:34
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৬২

যা থাকছে এবারের পর্বে

১. প্রতিবেদন: বইমেলায় নারী

২. সাক্ষাৎকার: লেখালেখির জগতে নারীকে অনেক প্রচ্ছন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়-জরিনা আখতার

৩. ফ্যাশন ডিজাইনার ওয়াং ফাংচেন

৪. গান: চাং চিংইয়িং

৫ সম্মাননা পেলেন ৬৫৪ নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা?

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি চলছে। ঢাকার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যান প্রাঙ্গণে চলছে অমর একুশে বইমেলা। বইমেলার বিভিন্ন স্টলে প্রতিবারের মতো এ বছরও কাজ করছেন অনেক তরুণ তরুণী। বইমেলায় অংশ নেয়া তরুণী ও নারী দর্শনার্থীদের নিয়ে শুনুন তানজিদ বসুনিয়ার প্রতিবেদন।

বইমেলায় নারী

নানা শঙ্কা কাটিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে অমর একুশে বই মেলা। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে বই মেলা শুরু হলেও এবছর করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহ পর বসে বইমেলার ৩৮তম আসর। উদ্বোধনের পর থেকেই বইমেলায় ঢল নেমেছে পাঠক, লেখক ও দর্শনার্থীদের।

পুরুষদের পাশাপাশি প্রতিবছর বই মেলায় কাজ করেন কয়েক হাজার নারী। অন্যবারের মতো এবছরও ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী বিক্রেতারা। একজন নারী বলেন, ‘আমি খুব উৎসাহ নিয়ে এখানে কাজ করছি।’

বই মেলায় বিক্রেতা হিসেবে অংশ নেওয়া নারীদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। পড়াশুনার পাশাপাশি খন্ডকালীন এই চাকরিতে অংশ নিয়েছেন ওই নারী শিক্ষার্থীরা। কাজের অংশ হলেও বই বিক্রি করতে পারায় বেজায় খুশী এই বিক্রেতারা।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে সাত লাখ বর্গফুট জায়গায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের বই মেলা।

মেলায় মোট ৩৫টি প্যাভিলিয়নসহ একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে মেলা।

পরিবার পরিজন নিয়ে বই মেলায় আসছেন অসংখ্য নারী। মেলার পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারাও। একজন নারী দর্শনার্থী বলেন, ‘ আমি আমার শিশুকে নিয়ে প্রথমবারের মতো মেলায় এসেছি। পরিবেশ বেশ ভালো লাগছে’।

মেলাকে সফলভাবে সম্পন্ন করতে বাংলা একাডেমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে জানিয়েছেন একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা।

বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন, কিংবা প্রিয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বই মেলায় আসছেন পাঠকরা। পাঠক ও লেখকের পদচারণায় যেন মহাসম্মিলনে পরিণত হয়েছে প্রাণের এই মেলা।

লেখালেখির জগতে নারীকে অনেক প্রচ্ছন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়-জরিনা আখতার

অমর একুশে বইমেলায় প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে বই, আসছেন লেখক ও পাঠক। নারীর মনন ও লেখার জগৎ নিয়ে আজ আমরা কথা বলবো বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক জরিনা আখতারের সঙ্গে। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।

সাক্ষাৎকার

দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্য চর্চা করছেন জরিনা আখতার।তিনি যখন লেখালেখি শুরু করেন, তখন বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় নারী পাতা ছিল যেখানে নারীদের কবিতা প্রকাশ হতো। নারীরা মূল সাহিত্য পাতায় তেমন স্থান পেতেন না। সেসময়ই তিনি মনে করেন যে নিজের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে এবং নিজস্ব কণ্ঠস্বর ও স্টাইল গড়ে তুলতে হবে। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় জরিনা আখতারের প্রথম কবিতার বই ‘কালো ময়ূরের ডাক’।

জরিনা আখতার মনে করেন নারী লেখক ও পুরুষ লেখকের যোগ্যতায় পার্থক্য নেই তবে অবশ্যই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে।

নারী লেখকদের স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর শোনা যায় যা তাদের আলাদা বৈশিষ্ট্য। নারীর মনোজগতের প্রতিফল ঘটে কবিতায়। এটি অবশ্যই সাহিত্যে ভিন্নমাত্রা যোগ করে।

লেখালেখির ক্ষেত্রে নারীর অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো, ‘নারী লেখক’ হিসেবে তাদের চিহ্নিত করার প্রবণতা। ‘নারীকবি’, ‘নারীলেখক’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের প্রতি কিছুটা অবহেলা, প্রচ্ছন্ন অবজ্ঞা প্রদর্শন, তাদের পুরুষ লেখকের সমকক্ষ না মনে করা হলো একটি প্রতিবন্ধকতা। তবে এখন এই প্রবণতা কমছে বলেও জানান জরিনা আখতার। এখন নারীরা সমযোগ্যতা ও সম অবস্থান নিয়েই লেখালেখির জগতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখনও নারীকে অনেক প্রচ্ছন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বাধা পেরিয়েই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন।

জরিনা আখতার কিছুটা নিভৃতচারী। অতিরিক্ত প্রচার তিনি পছন্দ করেন না। তিনি যতটা ভাবেন ততোটা লেখেন না, যতটা লেখেন ততোটা প্রকাশ করেন না। জোর করে বা আরোপিত কবিতা লেখায় তিনি বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন, ‘আমি কবিতার কাছে যেতে পারি না। কবিতাকেই আমার কাছে আসতে হয়।’ লেখালেখি যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লাইক কমেন্ট নির্ভর হয়ে পড়ে তাহলে সেটা শুভ প্রবণতা নয় বলেও মনে করেন তিনি।

ফ্যাশন ডিজাইনার ওয়াং ফাংচেন

সদ্য সমাপ্ত বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকে চীনা দলের পোশাক প্রশংসিত হয়েছে। অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী আসরে চীনা পতাকাবাহী দল যে পোশাক পরেন তার ডিজাইনার হলেন ওয়াং ফাংচেন। এই প্রখ্যাত নারী ফ্যাশন ডিজাইনারকে নিয়ে রয়েছে একটি প্রতিবেদন।

ওয়াং ফাংচেন একজন বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার। চীনে জন্ম গ্রহণকারী ওয়াং ফাংচেন পাশ্চাত্য ফ্যাশন জগতে শুধু ফাংচেন নামেও পরিচিত।

তাকে বলা হয় চীন থেকে আসা নতুন প্রজন্মের ফ্যাশন প্রতিভা। তিনি ২০১৫ সালে লন্ডনের খ্যাতিমান রয়েল কলেজ অব আর্ট থেকে ফ্যাশন মেন’স ওয়্যার বা পুরুষের পোশাক বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

লন্ডনভিত্তিক এই ফ্যাশন ডিজাইনার অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের অ্যাথলেটদের পোশাক পরিকল্পনায় চীনের ঐতিহ্য এবং অলিম্পিক থিম দুটোইকেই মাথায় রেখে পরিকল্পনা করেন।

ফাংচেন বলেন, আমি সবসময় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেল বন্ধন করতে চাই। আমার ফ্যাশন চেতনা হলো ভবিষ্যতমুখী। চীনা অলিম্পিক দলের পোশাক নির্ধারণে আমি নীল রং এনেছি। তার সঙ্গে তুষার শুভ্র পাহাড় এবং চারপাশ ঘিরে শহরের ল্যান্ডমার্কগুলো রাখার চেষ্টা করেছি।’

চীনের ঐতিহ্যবাহী ব্রাশ পেইন্টের স্টাইল বেছে নিয়েছেন ফাংচেন। সেই সঙ্গে গ্রেট ওয়ালের মতো চীনের ল্যান্ডমার্ক স্থাপনার নকশাও রেখেছেন।

ওয়াং ফাংচেনের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার ব্র্যান্ডের বৈশিষ্ট্য হলো টেকসই ফ্যাশন। তিনি বলেন,

‘আমার প্রতিষ্ঠান খুব বড় কোন কর্পোরেট হাউজ বা বিগ বাজেটের নয়। তবে আমি চেষ্টা করছি টেকসই , আধুনিক ও ভবিষ্যতমুখী ফ্যাশন উপহার দেয়ার।’

চীনের এই আধুনিক নারী ফ্যাশন ডিজাইনার ফ্যাশন বিশ্বে নিজেকে মেলে ধরছেন এবং অলিম্পিকের পর তার খ্যাতির দিগন্ত স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি প্রসারিত হয়েছে।

গান

সুপ্রিয় শ্রোতা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই। চীনের একজন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী চাং চিংইয়িং যিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জেন চাং নামেও পরিচিত।

১৯৮৪ সালে জন্মগ্রহণকারী এই তারকা শিল্পী নিজেই গান লিখে থাকেন। তার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। এখন আমরা জেন চাংয়ের কণ্ঠে শুনবো একটি গান।

সম্মাননা পেলেন ৬৫৪ নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী ৬৫৪জন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্প্রতি সম্মাননা প্রদান করেছে বাংলাদেশ সরকার। বিস্তারিত প্রতিবেদনে:

বাংলাদেশের ৬৫৪জন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ৬৫ জন এবং বাকি নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সম্মাননা দেওয়া হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রেস্ট/সম্মাননা স্মারক, উত্তরীয়, শাড়ি ও স্যুভেনির দেওয়া হয়।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ণাঢ্য ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে উদযাপন উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস নির্মাণ করে দেয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে মুজিববর্ষের থিম সং এবং নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবময় ও সংগ্রামী জীবনের ওপর নির্মিত গীতি আলেখ্য পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্ত নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাকদুমা নার্গিস ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা খানম সাকী এবং গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া শিরিন অনুভূতি প্রকাশ করেন।

অনুষ।ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা। ভাষার মাসে মহান ভাষা শহীদ ও ভাষাসৈনিকদের প্রতি নিবেদন করছি শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা : শান্তা মারিয়া

বইমেলায় নারী প্রতিবেদন: তানজিদ বসুনিয়া

ফ্যাশন ডিজাইনার ওয়াং ফাংচেন এবং সম্মাননা পেলেন ৬৫৪ নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn