বাংলা

আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৬১

CMGPublished: 2022-02-17 18:41:18
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৬১

কী থাকছে এবারের অনুষ্ঠানে

১. ভাষা আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ: সাক্ষাৎকার আফরোজা পারভীন

২. চীনের স্বর্ণকন্যা কু আইলিং

৩. শত প্রতিকূলতাতেও হার মানেনি দল: চীনা নারী ফুটবল দলের কোচ

৪. বাংলাভাষায় অলিম্পিকের গান

৫. কথিকা: ভাষা আন্দোলনে বাংলার নারী

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা?

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি চলছে। সকল ভাষা শহীদ ও ভাষাসৈনিকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শুরু করছি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান

মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা আন্দোলনে নারী পুরুষ সম্মিলিতভাবে অংশ নেন। ভাষা আন্দোলনে নারীদের রয়েছে বিপুল অবদান ।

সাক্ষাৎকার:

ভাষা আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ: আফরোজা পারভীন

ভাষা আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে আজ আমরা কথা বলবো এদেশের প্রথিতযশা লেখক ড. আফরোজা পারভীনের সঙ্গে। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।

আফরোজা পারভীন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে সেখানে বাংলার নারীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা বলেন। তিনি উদাহরণ দেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা অধ্যাপক আবুল কাশেমের পরিবারের নারী সদস্যদের আত্মত্যাগের। অধ্যাপক আবুল কাশেমের স্ত্রী রাহেলা বেগম এবং অন্যান্য নারী সদস্যরা ভাষা আন্দোলনকে সক্রিয় সহযোগিতা দিয়েছিলেন। ইডেন কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। আফরোজ পারভীন বলেন, ‘সব আন্দোলন সংগ্রামেই নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ত্যাগ থাকলেও তাদের অবদানের কথা সেভাবে উচ্চারিত হয় না।

আফরোজা পারভীনের এখন পর্যন্ত ১১৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। একজন লেখক হিসেবে আফরোজা পারভীন মনে করেন, ভাষা আন্দোলন না হলে তিনি কখনও লেখক হতে পারতেন না। কারণ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় সৃজনশীল লেখালেখি করে সাফল্য পাওয়া একরকম অসম্ভব।

আফরোজা পারভীন মনে করেন সর্বস্তরে বাংলাভাষার চর্চা ও মর্যাদা বাড়াতে হবে। তরুণ প্রজন্ম যেন বাংলাভাষার চর্চায় আরও মনোযোগী হয় সেজন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে।

চীনের স্বর্ণকন্যা কু আইলিং

বেইজিং অলিম্পিক গেমস ২০২২ এর আসরে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ক্রীড়াবিদ কু আইলিং। তিনি বাবা মায়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে অপার সম্ভাবনা থাকার পরও শিকড়ের টানে চীনে ফিরে আসেন কু আইলিং। সিদ্ধান্ত নেন চীনের হয়ে অলিম্পিক্সে অংশ নেওয়ার। নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে চীনের পোশাক পরে নেমে পড়েন অলিম্পিক্সের ময়দানে। আর সেখানেই গড়লেন ইতিহাস। ফ্রি-স্টাইল স্কিয়িংয়ে চীনের হয়ে স্বর্ণ জয় করেছেন এই তরুণী। খেলার মাঠের মতো ফ্যাশন জগতেও দারুণ সফল কু আইলিং। বিস্তারিত প্রতিবেদনে।

কু আইলিং। দুই শব্দের একটি নাম। কিন্তু এই নামের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে শত-সহস্র মানুষের পাহাড়সম আবেগ।

এবারের শীতকালীন অলিম্পিক্সে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আলোচিত নাম কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলেও বেরিয়ে আসবে সেই একটি নাম; কু আইলিং।

আলোচনার পরিসরটা ছোট হলেও কোন কথা ছিলো না। কিন্তু এই নামের পরিধি এতটাই বড় হয়েছে যে তা ছড়িয়ে পড়েছে বেইজিং থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত।

খুব কম সময়ের মধ্যেই চীনের মানুষের কাছে পরম ভালোবাসার প্রদীপ হয়ে উঠেছেন এই তরুণী, যে ভালোবাসাকে শত জনম আগলে রাখতে চায় মানুষ। কে এই কু আইলিং? ঠিক কি কারণে এত আলোচনা এই তরুণীকে নিয়ে?

কু আইলিংয়ের জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর বাবা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও মায়ের জন্ম চীনে। তাই ছোটবেলা থেকেই চীনের প্রতি ভালোবাসা ও আবেগের কোনো কমতি ছিলো না।

পেশায় একজন অ্যাথলিট হলেও ইতোমধ্যে একজন ফ্যাশন মডেল হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ১৮ বছর বয়সী এই তরুণী। কাজ করেছেন বিশ্ববিখ্যাাত সব ফ্যাশন ব্র্যান্ডের সঙ্গে।

কৈশোরে পড়ালেখা, আর পিয়ানোতেই মজে ছিলেন কু আইলিং। কিন্তু পরবর্তীতে ঝুঁকে পড়েন স্কিয়িংয়ের প্রতি। খুব দ্রুতই দারুণভাবে রপ্ত করেন স্কিয়িংয়ের সব নান্দনিক দক্ষতা।

মায়ের দেশ চীনকে নিজের শিকড় হিসেবে ভাবতেন কু আইলিং। তাই চীনের হয়ে কিছু করার অভিপ্রায় ছিলো সেই ছোট বেলা থেকেই। সেই অভিপ্রায়কে পূর্ণতার পথ দেখায় স্কিয়িং খেলা।

বরফের বিশাল ফিল্ডে নিজের প্রতিভা ও দক্ষতা দেখানোর জন্য বেছে নেন ফ্রি স্টাইল স্কিয়িংকে। সিন্ধান্ত নেন এই খেলাতেই চীনের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শুরু করেন কঠোর পরিশ্রম। অবশেষে পরিশ্রমের ফলও আসে হাতেনাতে। ২০১৯ সালে চীনের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান তিনি। চীনের হয়ে ২০২২ সালের শীতকালীন অলিম্পিক্সে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেন এই তরুণী। শুরু হয় অলিম্পিক্স যাত্রা।

সত্যি হয়েছে সেই পরম আরাধ্য বাসনা। নিজের প্রথম অলিম্পিক্সে নেমেই সৃষ্টি করলেন ইতিহাস। মাত্র ১৮ বছর বয়সে চীনের হয়ে ফ্রি-স্টাইল স্কিয়িংয়ে স্বর্ণ জয় করেছেন এই তরুণী।

তাঁর এই জয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে পুরো চীন। কু আইলিংয়ের সেই জয়ধ্বনির সুবাস ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী।

যুক্তরাষ্ট্রে অপার সম্ভাবনা নিশ্চিতে সত্বেও শিকড়ের টানে চীনে ফিরে আসেন এই তরুণী। আর চীনে ফিরেই সষ্টি করলেন ইতিহাস। উজ্জ্বল স্বর্ণাক্ষরে এই ইতিহাস লেখা হবে মহাকালের খাতায়।

সুপ্রিয় শ্রোতা বেইজিং অলিম্পিক্সের গান গাওয়া হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়। আজ আমরা শুনবো বাংলা ভাষায় বেইজিং অলিম্পিকসের গান। গানটির শিল্পী পিংকি ছেত্রী।

গান

শত প্রতিকূলতাতেও হার মানেনি দল: চীনা নারী ফুটবল দলের কোচ

চীনের নারী ফুটবল দল সম্প্রতি এশিয়ান কাপ জয় করেছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও হার না মানায় দলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন চীনা নারী ফুটবল দলের হেড কোচ। পাশাপাশি দলের খেলোয়াড়দের অধ্যবসায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। এএফসি নারী এশিয়ান কাপের এই জয় তাদের অগ্রযাত্রায় আরো বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন এই প্রধান কোচ। বিস্তারিত থাকছে প্রতিবেদনে।

নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও হাল ছেড়ে না দিয়ে এএফসি নারী এশিয়ান কাপ ফাইনাল জয় করায় খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানিয়েছেন চীনের জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের প্রধান কোচ শুই ছিংসিয়া। গেল সপ্তাহে এ অভিনন্দন জানান তিনি। চায়না মিডিয়া গ্রুপকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শুই ছিংসিয়া বলেন, ‘ম্যাচের শেষে একটি গোল করায় আমাদের খেলোয়াড়দের সক্ষমতা প্রমাণ হয়েছে। আমি মনে করি সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তটি ছিল শেষ শট।’

ম্যাচের সবচেয়ে কঠিন সময়ের কথা স্মরণ করে শুই বলেন, প্রথমার্ধে খেলোয়াড়দের অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। খেলোয়াড়দের অসাধারণ পারফরম্যান্সের প্রশংসা করে শুই বলেন, তাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা আর কঠোর পরিশ্রমের কারণেই এই জয় সম্ভব হয়েছে। এটি চীনা নারী ফুটবল দলের চেতনাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। সাম্প্রতিক সময়ে সমর্থকদের অনুপ্রেরণা চীনা নারী ফুটবল দলকে আরো আগিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।

ভাষা আন্দোলনে বাংলার নারী

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবীতে ১৯৪৮ সাল থেকেই শুরু হয় তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের জনগণের আন্দোলন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে রাজপথে মিছিল করেন ছাত্র জনতা। ১৯৫২ সালে শুরু হয় ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়। একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয় সালাম, বরকত, রফিক জব্বারসহ ভাষা শহীদদের রক্তে। একুশ ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নামা ভাষা সৈনিকদের প্রথম মিছিলটি ছিল নারীদের।

ভাষা আন্দোলনে যে নারীরা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে সারা তৈফুর , সুফিয়া ইব্রাহীম, শামসুন্নাহার, সুরাইয়া হাকিম, সুফিয়া আহমেদ, জুলেখা হক, শরিফা খাতুন, হালিমা খাতুন, আনোয়ারা বেগম, প্রতিভা মুৎসুদ্দি, রওশন আরা বাচ্চু, নাদেরা বেগম, মোমতাজ বেগম প্রমুখ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদ দিবস এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। মহান ভাষা আন্দোলনের ভাষা শহীদ এবং ভাষাসৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের অনুষ্ঠান শেষ করছি।

আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা : শান্তা মারিয়া

শত প্রতিকূলতাতেও হার মানেনি দল: চীনা নারী ফুটবল দলের কোচ, প্রতিবেদন রওজায়ে জাবিদা ঐশী

চীনের স্বর্ণকন্যা কু আইলিং: প্রতিবেদন তানজিদ বসুনিয়া

ভাষা আন্দোলনে বাংলার নারী, কথিকা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn