আকাশ ছুঁতে চাই ৪৯-China Radio International
আকাশ ছুঁতে চাই ৪৯
কী থাকছে এবারের পর্বে
১. এখনি প্রতিরোধ করুন নারীর প্রতি সহিংসতা
২.করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিশুরা: ইউনিসেফের রিপোর্ট
৩. সাহসী সাংবাদিক হু চিবাং
৪. গান: হান হোং
৫. টেলিভিশন উপস্থাপিকা লি জুয়ান হয়ে উঠছেন নিজ জাতির মুখপাত্র
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন।
এখনি প্রতিরোধ করুন নারীর প্রতি সহিংসতা
নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিশ্বকে অরেঞ্জ করো: নারীর প্রতি সহিংসতা এখনি প্রতিরোধ করো। Orange the World: End Violence against Women Now! আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস বাংলাদেশে নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ে আজ আমরা কথা বলবো মানবাধিকার কর্মী বনশ্রী মিত্রের সঙ্গে। তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জেন্ডার অ্যাডভাইজার। অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।
সাক্ষাৎকার
বনশ্রী মিত্র বলেন, বিশ্ব জুড়ে নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক এক জরীপে দেখা গেছে বিশ্বে প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে দুজন যৌন নির্যাতনের শিকার হন। নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা, বৈষম্য ও নির্যাতন প্রতিরোধে এখনি পদক্ষেপ নিতে হবে। সে কারণেই এবারের থিম নির্ধারণ করা হয়েছে যে নারীর প্রতি সহিংসতা এখনি প্রতিরোধ করতে হবে।
বনশ্রী বলেন, ‘মোটা দাগে বলা যায়, নারীর প্রতি সহিংসতা আগের তুলনায় বেড়েছে।’ কিন্তু তিনি মনে করেন এর পিছনের কার্য-কারণ বিশ্লেষণ করাটা জরুরি। নারীরা আগে নির্যাতন নীরবে মেনে নিতেন। তারা প্রতিবাদ করতেন না। আবার অনেক শারিরীক, মানসিক, আর্থিক ও যৌন নির্যাতন বিষয়ে তারা সচেতন ছিলেন না। এগুলো যে নির্যাতন সেটা তারা জানতেন না। তারা মনে করতেন এটাই নিয়ম। কিন্তু সরকারি বেসরকারি সংগঠনগুলো নারীর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করে চলেছে। তাদের সচেতন করছে। নারীরা চেষ্টা করছেন তাদের নির্যাতন বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে। তবে এই বিষয়টি শুধু সরকারের নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একক দায়িত্ব ও কার্যক্রম নয়। কাজটি সবগুলো মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত। নারীর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা রয়েছে। রয়েছে নারীবান্ধব বাজেট প্রণয়নে অর্থ মন্ত্রণালয়েরও বিশেষ ভূমিকা। পুরো সমাজকে সমন্বিত ভূমিকা রাখতে হবে সমাজ ও বিশ্বকে নারীবান্ধব করে গড়ে তোলার কাজে। তিনি এমন এক বিশ্বের স্বপ্ন দেখেন যেখানে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলে হবে নিরাপদ, নির্যাতনমুক্ত ও বৈষম্যমুক্ত।
করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিশুরা: ইউনিসেফের রিপোর্ট
শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নের পর থেকে প্রতি বছরের নভেম্বরের ২০ তারিখে বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয়। এই দিনে ইউনিসেফ শিশুদের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো সমাধানে সমর্থন আদায় করে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদনে।
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর এ শিশুদের সুরক্ষা , বেড়ে ওঠা ও অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর বিশ্বনেতারা শিশু অধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়ন করেন। এটি বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে অনুমোদিত মানবাধিকার চুক্তি।এই সনদের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী ইউনিসেফ বিশ্ব শিশু দিবস পালন করে আসছে। এই দিনে ইউনিসেফ শিশুদের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো সমাধানে সমর্থন আদায় করে, শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ায় এবং প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করে। এইবার উদযাপিত হয়েছে ইউনিসেফের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
ইউনিসেফ বলছে, কোভিড-১৯-এর প্রভাব শিশুদের শিক্ষা, পুষ্টি ও সার্বিক কল্যাণের ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০২০ সালের প্রথম দিকে এই মহামারি শুরুর পর থেকে স্কুল বন্ধের কারণে বাংলাদেশের ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশু এবং সমগ্র এশিয়া মহাদেশের প্রায় ৮০ কোটি শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য, বৈষম্য, সংঘাত, জলবায়ু বিপর্যয় এবং কোভিড-১৯-এর মতো জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সীদের মধ্যে একটি চলমান পুষ্টিসঙ্কট তৈরি করছে। ইউনিসেফের এক গবেষণায় জানা যায়, ২০২০ সালের মহামারির পর থেকে বাংলাদেশে কিশোরীদের বিয়ের হার বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এদিকে, ওয়ার্ল্ড ভিশনের জরিপ বলছে , করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিশ্বের ৯১ শতাংশ শিশু ও তরুণ মানসিক চাপ ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।
ইতিহাসের পাতা থেকে চীনা নারী: সাহসী সাংবাদিক হু চিবাং
এ পর্যায়ে আপনারা শুনবেন ইতিহাসের পাতায় বিখ্যাত চীনা নারীর গল্প।
চীনের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম হু চিবাং। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্যাশিস্ট নাৎসি জার্মানির হামলার বিরুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণের মহান পিতৃভূমির যুদ্ধের বিবরণ সরাসরি রণাঙ্গন থেকে তুলে ধরেন। এই সাহসী নারী ছিলেন সেসময় রুশ রণাঙ্গনে চীনের একমাত্র ওয়ার করোসপন্ডেন্ট। রণক্ষেত্রে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে হু চিবাং যুদ্ধের প্রকৃত খবর চীনে পাঠাতেন।
হু চিবাংয়ের জন্ম ১৯১১ সালে। চীনা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি, ফরাসি, জাপানি, রুশ, ল্যাটিন ও হাংগেরিয়ান ভাষায় পারদর্শী ছিলেন তিনি। ১৯৩৫ সালে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে চীনা দূতাবাসের প্রেস অ্যাটাশিও ছিলেন। ১৯৪১ সালে নাৎসি জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে তিনি রণাঙ্গনে সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করেন। হুর পাঠানো প্রতিবেদনগুলোর মাধ্যমে চীনের জনগণ সোভিয়েত মানুষের বীরোচিত সংগ্রামের কথা সঠিকভাবে জানতে পারেন এবং জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পান। যুদ্ধর পর তিনি মস্কোতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সোভিয়েত পিতৃভূমির সংগ্রামের ৭০ তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং যখন রাশিয়া সফর করেন তখন তিনি হু চিবাংয়ের সাহসী ভূমিকাকে স্মরণ করেন।
১৯৪৯ সালে চীনে ফিরে হু চিবাং সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির ফ্ল্যাগশিপ সংবাদপত্র পিপল’স ডেইলির সাংবাদিক ছিলেন।
হু চিবাং ১৯৯৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এই সাহসী, দেশপ্রেমিক ও প্রতিভাবান সাংবাদিককে চীনের জনগণ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন।
সুপ্রিয় শ্রোতা
এখন শুনবেন জনপ্রিয় চীনা শিল্পী হান হোংয়ের গান সেই নদী।
টেলিভিশন উপস্থাপিকা লি জুয়ান হয়ে উঠছেন নিজ জাতির মুখপাত্র
পর্যটকদের কাছে নিজের জাতিকে সুন্দর করে উপস্থাপন করেন চীনা নাগরিক লি জুয়ান। একসময়ে টেলিভিশন উপস্থাপিকা এখন হয়ে উঠেছেন দং জাতির মুখপাত্র। পর্যটকরা এলেই লি জুয়ান তাদের সামনে তুলে ধরেন দং জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যমন্ডিত স্থাপত্যর পরিচয়। শুনুন প্রতিবেদন।
পর্যটকদের কাছে নিজের জাতিকে সুন্দর করে উপস্থাপন করেন চীনা নাগরিক লি জুয়ান। একসময়ে টেলিভিশন উপস্থাপিকা এখন হয়ে উঠেছেন দং জাতির মুখপাত্র।
পর্যটকদের প্রিয়মুখ লি জুয়ান। উদ্যমী এই তরুণী কাজ করেন জাদুঘরে।
পর্যটকরা আসলে, তাদের নিয়ে ঘুরতে বের হন লি। অতিথিদের সামনে তুলে ধরেন দং জাতির অজানা ইতিহাস আর বৈচিত্রময় জীবনচিত্র।
পর্যটকরা পরিচিত হন দং জাতির অসম্ভব সুন্দর সব কাঠের স্থাপত্য আর ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে।
লি মূলত টেলিভিশনে নানারকম প্রোগ্রাম তৈরি করতেন আর উপস্থাপনায় নিজেকে মেলে ধরতেন ভিন্ন নানা রকম রুপে। জন্মভূমিকে বিশ্ব দরবারে সুন্দর করে তুলে ধরতে তিনি চেয়েছেন টেলিভিশনে তার দীর্ঘ সময়ের উপস্থাপনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগুক।
২০১৯ সালে জন্মস্থানে ফিরে দং যাদুঘরে উপস্থাপনার কাজ শুরু করেন লি।
“আমার জন্মস্থানে ফিরে আসার প্রধান উদ্দেশ্য হলো আরো বেশি মানুষকে দং জাতির সংস্কৃতি সম্পর্কে জানানো।”: লি জুয়ান
সুন্দর পোশাকে সজ্জিত লি জুয়ানের সঙ্গে ছবি তুলতে পছন্দ করেন পর্যটকরা
জন্মস্থানকে ভীষণ ভালবাসেন লি। তাইতো সময় পেলেই গ্রামবাসীদের আঁকা ছবিগুলো নিয়ে স্থানীয় স্কুলগুলো পরিদর্শন করেন লি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শেয়ার করেন নানামাত্রিক অভিজ্ঞতা আর দারুণ সব অনুভূতি । এছাড়া চীনা সংস্কৃতির প্রাচীন ইতিহাসসহ আধুনিক জীবনে গুরত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন তিনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি সুরক্ষায় নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। দং জাতির সংস্কৃতি চর্চায় এরইমধ্যে চালু হয়েছে প্রশিক্ষণ কোর্স। এতে যুক্ত করা হয়েছে বাদ্যযন্ত্র, গান ও ছবি ।
লি প্রত্যাশা করেন. “তাঁর জন্মস্থানের তরুণ-তরুণীরাও অংশ নেবে নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার কাজে। সবার প্রচেষ্টায় বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে পড়বে দং জাতির ইতিহাস আর ঐতিহ্য”।
অনুষ্ঠান শেষ করছি একটি সাফল্যের খবর দিয়ে। বাংলাদেশের স্থপতি নারী মেরিনা তাবাসসুম সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের মর্যাদাপূর্ণ সন পদক ২০২১। লন্ডনের স্যার জন সন জাদুঘর কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর একজন স্থপতিকে তার কাজের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতিস্বরুপ এ পুরস্কারে ভূষিত করেন। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে আবহাওয়া সহনশীল এবং স্বল্প খরচে তৈরি করা যায় এমন ঘরবাড়ির নকশা প্রণয়ন করে তিনি পুরস্কার পেলেন। মেরিনা ১৯৬৯ সালে রাজধানী ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। এর আগেও তিনি স্থপতি হিসেবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.
আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিশুরা, ইউনিসেফের রিপোর্ট বিষয়ক প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সাহসী সাংবাদিক হু চিবাং বিষয়ক প্রতিবেদন : শান্তা মারিয়া
টেলিভিশন উপস্থাপিকা লি জুয়ান হয়ে উঠছেন নিজ জাতির মুখপাত্র বিষয়ক প্রতিবেদন হাবিবুর রহমান অভি, তথ্য: ছাই ইউয়ে মুক্তা, চায়না মিডিয়া গ্রুপ ।
অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী