আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৪৬-China Radio International
আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৪৬
জেন্ডার বৈষম্য নিরসনে পুরুষদেরও ভূমিকা রাখতে হবে
যা থাকছে এবারের পর্বে
১. ক্রীড়াবিদ নারী ইয়াং ইয়াং
২. সাক্ষাৎকার: জেন্ডার বৈষম্য নিরসনে পুরুষের ভূমিকা প্রয়োজন: শেলী নাজ
৩. উটের খামার গড়েছেন কাজাখ নারী এরজান.
৪. গান: সংগীত শিল্পী ছাং ফাংইউয়ান
৫. রাইজিং উইমেন টেক ট্যালেন্ট ফোরাম
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া।
ক্রীড়াবিদ নারী ইয়াং ইয়াং
চীনের নারীরা অলিম্পিক ও জাতীয় ক্রীড়ায় অনেক বছর ধরেই অবদান রেখে চলেছেন। চীনের তরুণীরা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় পেয়েছেন সাফল্য। এমনি একজন সফল ক্রীড়াবিদ নারী ইয়াং ইয়াং।
ইয়াং ইয়াং একজন বিশ্ববিখ্যাত চীনা শর্ট ট্র্যাক স্পিড স্কেটার। তিনি ২০০২ সালে শীতকালীন অলিম্পিক থেকে ২ বার চ্যাম্পিয়ন হন এবং ১৯৯৭ থেকে ২০০২ এর মধ্যে ছয়বার সামগ্রিকভাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৭৬ সালের ২৪ আগস্ট চীনের হেইলংচিয়াং এর চিয়ামুসিতে জন্ম নেন ইয়াং ইয়াং।
এ যাবৎকালে ইয়াং সবচেয়ে নিপুণ শর্ট ট্র্যাক স্পিড স্কেটারদের মধ্যে একজন যিনি ছয়টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ সহ মোট ৩৪ টি বিশ্ব শিরোপা জিতেছেন। ২০০২ সালের শীতকালীন অলিম্পিকে নারীদের ৫০০ মিটার শর্ট ট্র্যাকে তার জয় তাকে চীনের শীতকালীন অলিম্পিকে প্রথম স্বর্ণপদক জয়ী করে তোলে। সবশেষ ২০০৬ সালে অলিম্পিকে নেতৃত্ব দেয়ার পর তিনি অবসরে যান। ইয়াং চীনা জাতীয় শর্ট ট্র্যাক দলেরও সদস্য ছিলেন। ইয়াং ইয়াংকে বলা হয় আইস কুইন। কারণ আইস স্কেটিংয়ের রিংয়ে তিনি এখনও তুলনাহীন।
সাক্ষাৎকার
জেন্ডার বৈষম্য নিরসনে পুরুষদেরও ভূমিকা রাখতে হবে: শেলী নাজ
বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণে নারীর রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। এবিষয়ে আজ আমরা কথা বলবো, বাংলাদেশ সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক এবং লেখক শেলী নাজের সঙ্গে। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।
শেলী নাজ মনে করেন বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীরা আগের তুলনায় অনেক অগ্রসর হয়েছেন। জেন্ডার বৈষম্য নিরসনে বাংলাদেশের অগ্রগতি দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উজ্জ্বল একথাটিও জানালেন তিনি। কিন্তু এখনও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং কিছু পশ্চৎপদ ধারণা কর্মক্ষেত্রে নারীর অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মনে করেন তিনি। জেন্ডার বৈষম্য নিরসনে পুরুষদেরও ভূমিকা রাখা দরকার বলে মনে করেন তিনি। পুরুষদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণ থাকা দরকার যেখানে তারা জেন্ডার বৈষম্য বিষয়ে সচেতন হবে। তিনি মনে করেন বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুরুষের আচরণ ও নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করে ইতিবাচক করা সম্ভব। তিনি নিজেও অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন। শেলী নাজ মনে করেন, নারীকে তার অধিকার বিষয়ে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। জায়গা কেউ ছেড়ে দিবে না। নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা বাড়িয়ে এবং অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করেই নারীকে এগিয়ে যেতে হবে।
উটের খামার গড়েছেন কাজাখ নারী এরজান
চীনের উইগুর স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে বাস করেন আরও অনেক জাতির মানুষ। কাজাখ জাতির একজন নারী কিভাবে উটের খামার গড়ে তুলছেন। সে বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন।
মায়ের স্নেহ ও যত্ন নিয়ে উটদের পালন করেন কাজাখ জাতির মুসলিম নারী আইডেন এরজান। সিনচিয়াংয়ের ফুহাই জেলায় আইডেন এরজান ও তার স্বামী আমান মুহামেত উটের খামারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন।
উটগুলো মাঝে মাঝে দুষ্টুমিও করে। তখন তাদের স্নেহের সঙ্গে শাসন করতে হয়। ঠিক যেন মানবশিশু। এভাবেই উটদের পালন করেন আইডেন এরজান।
বিয়ের আগে এরজান কখনও উট দেখেননি। ঘোড়ায় চড়া বা মোটরবাইক চালাতেও জানতেন না তিনি।
বিয়ের পর ফুহাইতে এসে প্রথম উট দেখেন। মোটর বাইক চালানো আর উটের দুধ দোয়ানো শেখেন।
২০০৫ সালে বিয়ে হয় এরজান ও আমানের। প্রথমে তাদের ছিল মাত্র দুটি উট। খামারের এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। উটের দুধ দোয়ানো হয় মেশিনে।
সকাল সাতটায় উটের দুধ সংগ্রহের পর উটগুলোকে ৯টার দিকে চারণভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। মরুভূমির মধ্যে ছোট ছোট গাছের ঝোঁপ। এগুলোই উটের খাদ্য। আলাদা করেও খাবার আর পানি দেয়া হয় ওদের।
কাজাখ জাতির মানুষ উটের দুধের তৈরি চা খেতে ভালোবাসে। আরও নানা রকম খাবার তৈরি হয় এ থেকে।
এরজান ও আমানের দুই সন্তান। মেয়েটি বড়। জুনিয়র হাইস্কুলের থার্ড গ্রেডে আর ছেলেটি ফিফথ গ্রেডে পড়ছে।ভবিষ্যতে ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। এরজান আর আমান তাদের উটদের ছেড়ে একদিনও বাইরে থাকতে পারেন না। ১৫ বছর ধরে ওদের পালন করছেন এই দম্পতি। উটের পাল নিয়ে ভীষণ সুখী তারা।
সংগীত শিল্পী ছাং ফাংইউয়ান
চীনের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ছাং ফাংইউয়ান বেইজিং মিউজিক ফেস্টিভ্যালে সম্প্রতি তার পরিবেশনায় দর্শকদের মুগ্ধ করেন। এই প্রতিভাময়ী নারী শিল্পী আশির দশকে খ্যাতির আলোয় উদ্ভাসিত হন। তিনি নিজে একজন গীতিকারও। ৬১ বছর বয়সী ছাং ফাংইউয়ান ইংরেজি ও স্প্যানিশসহ বিভিন্ন ভাষায় সংগীত পরিবেশন করে থাকেন। তিনি ক্ল্যাসিক্যাল এবং পপ মিউজক দুটোইতেই দক্ষ। ১০টিরও বেশি মিউজিক অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে সম্মানজনক চায়না গোল্ড রেকর্ড অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পুরস্কার। প্রিয় শ্রোতা এই জনপ্রিয় নারী শিল্পীর কণ্ঠে এখন শুনবো শৈশব শিরোনামে একটি গান।
গান
রাইজিং উইমেন টেক ট্যালেন্ট ফোরাম
সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কম্পিউটার শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির দিক নির্দেশনা নিয়ে রাইজিং উইমেন টেক ট্যালেন্ট শিরোনামে একটি ফোরাম।
পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশেন নানচিং শহরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো রাইজিং উইমেন টেক ট্যালেন্ট ফোরাম। কম্পিউটার শিল্পে কাজ করছেন এমন নারীদের ক্যারিয়ার উন্নয়নের উপর আলোকপাত করা হয় ফোরামটিতে।
ফোরামটির আয়োজন করে ইউএন ওম্যান চায়না, চিয়াংসু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যাসোসিয়েশন এবং নারী উদ্যোক্তাদের অ্যাসোসিয়েশন। ৮০ জনের বেশি বিশেষজ্ঞ, পণ্ডিত এবং উদ্যোক্তা নারীরা ফোরামে অংশ নেন। কম্পিউটার শিক্ষায় নারীর ভূমিকা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইন্ডাস্ট্রিতে নারী স্কলারদের পেশা গড়ার সুযোগ এবং নারী উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে ফোরামে আলোচনা করা হয়।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফেসর চাং মিং কম্পিউটার শিল্পে নারীদের সংখ্যার স্বল্পতার কারণ এবং সমস্যা সমাধানের উপায় তুলে ধরেন।
ইউএন উইমেন চায়নার অফিস প্রধান স্মৃতি আরিয়াল বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে নারীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার জন্য তার সংস্থার বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে।এআই শিল্পে জেন্ডার বৈষম্য কমানো এবং নারী বিরোধী মনোভাব নিরসনে চিয়াংসু চীনের সবজায়গায় এবং সারাবিশ্বে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.
আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
ক্রীড়াবিদ নারী ইয়াং ইয়াং বিষয়ক প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
রাইজিং উইমেন টেক ট্যালেন্ট ফোরাম এবং উটের খামার গড়েছেন কাজাখ নারী এরজান বিষয়ক প্রতিবেদন : শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী