আকাশ ছুঁতে চাই ৪২-China Radio International
কন্যা শিশুর জন্য সমাজের বৈরী মনোভাব দূর করতে হবে
কী থাকছে এবারের পর্বে
১. কন্যা শিশুর জন্য সমাজের বৈরী মনোভাব দূর করা প্রয়োজন- সামিয়া আহমেদ
২. সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগাচ্ছেন সিনচিয়াংয়ের নতুন যুগের নারী
৩. গান: শিল্পী জে চোও
৪. ক্রীড়া জগতের সফল নারী লি ওয়েনওয়েন
৫. ছয় বছরে গ্রামের চেহারা পাল্টে দিলেন যে নারী
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া।
১১ অক্টোবর জাতিসংঘের দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়। কন্যা শিশুদের অধিকার রক্ষা এবং তাদের সুষ্ঠু বিকাশের উপর নির্ভর করে ভবিষ্যত বিশ্বের উন্নয়ন। বাংলাদেশে কন্যা শিশুদের বর্তমান অবস্থা, তাদের অধিকার, সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে এখন আমরা কথা বলবো জেন্ডার বিশেষজ্ঞ সামিয়া আহমেদের সঙ্গে। তিনি সেভ দা চিল্ডরেন ইন বাংলাদেশের সিনিয়র ম্যানেজার অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড ক্যাম্পেইনে কর্মরত আছেন। আমাদের অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত জানাই।
সাক্ষাৎকার
কন্যা শিশুর জন্য সমাজের বৈরী মনোভাব দূর করা প্রয়োজন: সামিয়া আহমেদ
জেন্ডার বিশেষজ্ঞ সামিয়া আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সমাজে এখনও কন্যা শিশু নানা রকম অবহেলার শিকার। কন্যা শিশুর জন্ম হলে অনেক বাবা মায়ের মুখ অন্ধকার হয়ে যায়। পুত্র সন্তানকে মনে করা হয় বংশের প্রদীপ। মনে করা হয় কন্যা শিশুকে বড় হলে বিয়ে দিয়ে অন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তাই কন্যা শিশুর প্রতি যত্নের ঘাটতি থাকে। এই মহামারীর সময় যখন স্কুল বন্ধ ছিল তখন অনেক কন্যা শিশুকেই বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে। বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে এই শিশুরা। সামিয়া আহমেদ জানালেন, বাংলাদেশে এখনও প্রচুর সংখ্যক বাল্য বিবাহ হয়। বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরে কন্যা শিশুদের অংশগ্রহণ অনেক বেশি থাকলেও, মাধ্যমিক স্তরে তাদের ড্রপ আউট বেড়ে যায়। বাবা মায়েরা মনে করেন, `মেয়ে বড় হয়ে উপার্জন করার দরকার নেই। বরং তারা যদি বিয়ে এবং ঘরসংসার করে সেটাই পরিবারের জন্য মর্যাদার।’ এই ভুল ধারণা সমাজ থেকে দূর করার জন্য চাই ব্যাপক ক্যাম্পেইন। বাংলাদেশে কন্যাশিশুদের সমস্যাগুলো হলো, পারিবারিক অবহেলার ফলে পুষ্টিহীনতা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এবং নারীর মর্যাদার ঘাটতি। তিনি মনে করেন, এই সমস্যাগুলো অতিক্রম করতে হলে, রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিকভাবে নারী পুরুষের বৈষম্য বিলোপ করে সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নারীর প্রতি সামাজিক বৈরীতা দূর করার জন্য চাই ব্যাপক ইতিবাচক প্রচার।
সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগাচ্ছেন সিনচিয়াংয়ের নতুন যুগের নারী
চীনের উইগুর স্বায়ত্ব শাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের নারীরা অতীতে কেবল ঘর গেরস্থালি নিয়ে জীবনযাপন করলেও বর্তমানে তাদের জীবন ধারায় বেশ পরিবর্তন এসেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের অংশ গ্রহণ বাড়ছে। তারা মিডিয়াবান্ধব হচ্ছেন।
উইগুর নারী গুলমিরা ।হুনান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ থেকে ২০১৩ সালে স্নাতক শেষ করার পর একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের একটি পোশাক ব্র্যান্ডের মডেল হিসেবেও কাজ করছেন। তিনি হাইকিং করতে এবং ব্যাডমিন্টন খেলতে পছন্দ করেন। এমনকি তার নিয়মিত জিম করার ভিডিও ভেসে বেড়ায় বিলিবিলির মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে।
সিনচিয়াংয়ের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মেয়েদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থিতি বেড়েছে। এর মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমই জানান দিচ্ছে যে তাদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ছে। তারা শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মমুখী হয়ে উঠছেন। চিরাচরিত জীবনধারা থেকে বের হয়ে উন্নয়নের গতিশীল পথে হাটছেন তারা। সম্প্রতি বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতে দেখা যায় উইগুর নারীদের। এ অঞ্চলের রাজধানী উরুমছিতে রেস্তোরাঁ, শপিং মল এবং ফিটনেস সেন্টারসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানের ছবি, ভিডিও শেয়ার করে পেশাগত কর্মপরিধি বাড়াতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করছেন তারা। নিজেদের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনযাপন শেয়ার এবং কোনো সুপ্ত প্রতিভাকে বিকাশের পর নেটিজেনদের প্রশংসায় উচ্ছসিত হয়ে এ অঞ্চলের অনেক নারীই অনলাইন কর্মবান্ধব হয়ে উঠেছেন।
সুপ্রিয় শ্রোতা আপনারা শুনছেন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান ‘আকাশ ছুঁতে চাই’। এখন শুনবেন চীনের বিখ্যাত শিল্পী জে চোও কণ্ঠে ক্রিসেনথিমাম টেরেস শিরোনামে একটি গান।
ক্রীড়া জগতের সফল নারী লি ওয়েন ওয়েন
মাত্র ২১ বছর বয়সেই নিজের স্বপ্ন অনেকটাই পূরণ করে ফেলেছেন চীনের ক্রীড়াবিদ নারী লি ওয়েনওয়েন। তবে সেখানেই থেমে না থেকে এগিয়ে চলেছেন লিজেন্ড হওয়ার পথে। লি ওয়েন ওয়েন চীনের ক্রীড়া জগতের এক উজ্জ্বল নারী। ভারোত্তলনে ২১ বছর বয়সী লি টোকিয়ো অলিম্পিকে স্বর্ণ জয় করেছেন। নারীদের ৮৭ কেজির বেশি ভারোত্তলন ক্যাটাগরিতে স্বর্ণ জয় করে রেকর্ড গড়েন তিনি। তবে অলিম্পিকেই থেমে থাকেননি লি। চীনের সদ্য সমাপ্ত জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতেও একই ক্যাটাগরিতে স্বর্ণ জয় করে দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করেন লি।
বলেন ‘আমার স্বপ্ন হলো আমি ওয়েট লিফটিং আসরে দেখবো আমার নাম বিজয়ী হিসেবে দেখা যাচ্ছে’।
সেই স্বপ্ন পূরণ হলেও লি এখনও কঠোর অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ তিনি আগামিতে আরও রেকর্ড স্থাপন করতে চান।
টোকিয়ো অলিম্পিকে স্বর্ণ জয় করার পর অনেকেই লিকে বলেন জাতীয় ক্রীড়াকে তিনি নিশ্চয়ই খুব সাধারণ ভাবে গ্রহণ করছেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, লি কোন প্রতিযোগিতাকেই হেলাফেলায় নেয়ার পক্ষপাতী নন। বরং জাতীয়, আন্তর্জাতিক সকল প্রতিযোগিতাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিনি নিজের অগ্রযাত্রাকে অব্যহত রাখতে চান।
ছয় বছরে গ্রামের চেহারা পালটে দিয়েছেন যে নারী
একজন উদ্যমী মানুষ পাল্টে দিতে পারেন পুরো গ্রামের চেহারা। এমনি একজন উদ্যমী নারী ছয় বছরে বদলে দিয়েছেন গ্রামবাসীর ভাগ্য। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন
চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের ছোট্ট একটি গ্রাম সিয়াওনানহ্য । ছয় বছর আগে এই গ্রামে নেতা হয়ে আসেন লাং জুচেন নামে এক নারী। আর তিনিই বদলে দেন গ্রামের ভাগ্য।
লাং জুচেনের ইচ্ছা ছিল লেখক হওয়ার। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ২০১৫ সালে হোমসিটি শুয়াংইয়াশাং থেকে কাছাকাছি গ্রাম সিয়াওনানহ্যতে তিনি যখন গ্রাম প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে আসেন তখন সেটি ছিল দারিদ্র্যপীড়িত। গ্রামের অধিবাসীরা ছিল কৃষিজীবী। দারিদ্য্য থাকলেও গ্রামটির প্রকৃতির অসাধারণ সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয় লাংয়ের। তিনি ক্যামেরা হাতে এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি তুলতে মেতে ওঠেন অবসর সময়ে। তখনি তার মনে হয় পর্য়টন শিল্প, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং গ্রামের ঐতিহ্যবাহী কৃষি পণ্য বাজারজাত করে তিনি গ্রামবাসীর আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারেন। তবে তার আইডিয়াকে ৪০০ গ্রামবাসীর অধিকাংশই তেমন পাত্তা দেয়নি।
তুং লিয়ানিং নামের একজন আধুনিক গ্রামবাসীকে অনুপ্রাণিত করে প্রথম কাজ শুরু করেন লাং জুচেন। ধীরে ধীরে অন্যরা গ্রাম পর্যটনের সুবিধা বুঝতে পারে। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি পর্যটক এই গ্রামে ভ্রমণ করেছেন। পর্যটন খাতে ৫মিলিয়ন ইউয়ানের বেশি আয় হয়েছে। গ্রামটি জাতীয় পর্যায়ে গ্রামীণ পর্যটনের তালিকায় ভুক্ত হয়েছে। গ্রামবাসীদের জনপ্রতি গড় বার্ষিক আয় ৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার ইউয়ানে উন্নীত হয়েছে।
এভাবেই গ্রামটির ভাগ্য বদলে দিচ্ছেন উদ্যমী নারী লাং জুচেন।
প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.
আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগাচ্ছেন সিনচিয়াংয়ের নতুন যুগের নারী, প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
ক্রীড়া জগতের সফল নারী লি ওয়েনওয়েন এবং সছয় বছরে গ্রামের চেহারা পাল্টে দিলেন যে নারী, প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী