আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৪১-China Radio International
নারী পুরুষের সম অধিকারের দেশ চীন
যা থাকছে এবারের পর্বে
১. নারী পুরুষের সম অধিকারের দেশ চীন
২. বিশ্বব্যাপী নারীদের চাই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
৩. সাক্ষাৎকার: জনসংযোগ পেশায়ও নারীরা সফল হচ্ছেন
৪. মাতৃভূমিতে ফিরলেন সফল নারী মেং ওয়ান চৌ
৫. মধ্য শরৎ উৎসবের গালা নাইটের গান
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া।
১ অক্টোবর চীনের জাতীয় দিবস। ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম হয় পিপলস রিপাবলিক অব চায়নার। মহান কমিউনিস্ট নেতা এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও জেতুং বেইজিংয়ের থিয়েন আনমেন চত্বরে নতুন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের যাত্রা শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
সমাজতান্ত্রিক চীনে রাষ্ট্রীয়ভাবে নারী পুরুষের সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ করা হয়। চেয়ারম্যান মাও জেতুং বলেন চীনের অর্ধেক আকাশ ধরে রেখেছে নারী। চীনে নারীর অবস্থান নিয়ে এখন রয়েছে একটি প্রতিবেদন।
প্রতিবেদন: নারী পুরুষের সমঅধিকারের দেশ চীন
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। গত তিন দশকে চীনের উন্নতি বিস্ময়কর। আর এই উন্নয়নের পিছনে চীনের নারীদের অবদান পুরুষের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। অথচ ১৯৪৯ সালের আগে সামাজিক রীতিনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে নারীরা ছিল নানা রকম নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার। মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর নবগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে নারীদের প্রতি সকল রকম বৈষম্য বিলোপ করা হয়। আইন ও রাষ্ট্রের চোখে তারা সকল ক্ষেত্রে পুরুষের সম অধিকার পান। রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন নীতিতে নারীর সম অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।
পঞ্চাশের দশক থেকেই সকল পেশায় সকল সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে চীনের নারীরা সমঅধিকার নিয়ে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়েও নারীর সমঅধিকার নিশ্চিতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নীতি ও কার্যক্রম অবিচল রয়েছে।
চীনের নারী ও শিশুর অগ্রগতিতে, বিশ্বব্যাপী তাদের অধিকার রক্ষায় এবং সামাজিক বৈষম্য নিরসনে ২০১৮ সালে ১২তম ন্যাশনাল উইমেন’স কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এবং অল চায়না উইমেন’স ফেডারেশনের নেত্রীবৃন্দ একযোগে কাজ করার জন্য ঐকমত্যে পৌঁছান। নারীর ক্ষমতায়নে চীন সরকার এবং কমিউনিস্ট পার্টি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ১৩তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০১৬-২০২০ সালের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নে প্রোমোটিং উইমেনস অল রাউন্ড ডেভেলপমেন্ট নামে একটি আলাদা অধ্যায় প্রণয়ন করে। বিশ্বব্যপী নারীর অধিকার রক্ষায় ১৯৯৫ সালের বেইজিং ঘোষণার ২৫তম বার্ষিকীতে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।
চীনের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। চীনের অর্থনীতিতেও নারীর অবদান বিশাল। চীনের জিডিপির ৪১ শতাংশের বেশি নারীর অবদান। ক্ষুদ্র ও বৃহৎ উদ্যোক্তা নারীরা দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। চীনে নারীর নিরাপত্তাও রয়েছে শতভাগ। দেশ গঠনে তাই নারীরা উত্তরোত্তর অবদান রেখে চলছেন।
সুপ্রিয় শ্রোতা,
জেন্ডার সমতা নিশ্চিতে বিশ্বব্যাপী নারীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গঠনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি। সেখানে বিষয়টি নিয়ে ৩টি প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা । বিস্তারিত রয়েছে প্রতিবেদনে
প্রতিবেদন: বিশ্বব্যাপী নারীদের চাই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে বিশ্বের নারী নেতাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন তিনি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেতাদের সামনে তিনটি প্র্রস্তাব রাখেন, জেন্ডার সমতা নিশ্চিতে যেগুলো সঠিকভাবে সমাধান করা প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা প্রথম প্রস্তাবে বলেন, ‘ জেন্ডার সমতার জন্য উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এখন এটিকে স্থানীয়করণ করা দরকার। প্রত্যেক পর্যায়ে জেন্ডার চ্যাম্পিয়ন দরকার যাতে নেতৃত্বের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন ‘একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক নারীদের ক্ষমতায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এজন্য নারীদের নেতৃত্বে থাকা সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে জাতিসংঘ।‘
তৃতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জেন্ডার সমতার জন্য সাধারণ কর্মসূচিকে আরও জোরদার করতে হবে, একইসঙ্গে আয়োজন করতে হবে সম্মেলনের, যেখানে অংশ নেবেন বিশ্বের অন্যান্য নেতারা।’ শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী। করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে রয়েছেন তারা। এছাড়া তৈরি পোশাক কর্মীদের ৮০ শতাংশের বেশি নারী। দেশের অগ্রগতিতে এসব নারীদের অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সাক্ষাৎকার: জনসংযোগ পেশায়ও নারীরা সফল হচ্ছেন
সুপ্রিয় শ্রোতা আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারীর সাফল্য, সমস্যা, সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে। অনুষ্ঠানে আমাদের আজকের অতিথি নূর কামরুন নাহার। তিনি ঢাকা পাওয়ার ডিসট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ২৫ বছরের চাকরি জীবনে অনেক বছর জনসংযোগের কাজ করেছেন। আমরা জনসংযোগে নারীর অংশ গ্রহণ নিয়ে কথা বলবো তার সঙ্গে। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।
নূর কামরুন নাহার দীর্ঘ পঁচিশ বছরের কর্মজীবনে অধিকাংশ সময়েই করেছেন জনসংযোগের মতো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজে। নারী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে তার। কারণ আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রথমেই মনে করা হয় ‘নারীদের দক্ষতায় ঘাটতি রয়েছে’ বললেন নূর কামরুন নাহার। এই নেতিবাচক ধারণাকে একেবারে ভেঙে ফেলে এগিয়ে যেতে হয় নারীকে। বর্তমানে জনসংযোগের কাজে নারীরা সফল হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
জনসংযোগের কাজে কামরুন নাহারকে অসংখ্যবার ঢাকার বাইরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে হয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রেস রিলিজ তৈরি করে সাংবাদিকদের দিতে হয়েছে। অনেক সময় রাত তিনটাতেও কাজ করতে হয়েছে। তিনি যখন প্রথম কাজ শুরু করেন অনেকেই ভেবেছিলেন তিনি পারবেন না। কিন্তু তিনি প্রথমেই চিন্তা করেছেন জনসংযোগ কর্মকর্তা একটি পদ। এটি নারী বা পুরুষের কোন বিষয় নয়। নিজেকে তিনি প্রস্তুত করেছেন কঠোর শ্রমের জন্য। জনসংযোগের কাজ করতে গেলে পরিবারের পক্ষ থেকেও সহযোগিতার খুব প্রয়োজন। কারণ প্রচুর সময় যখন পেশার পিছনে দিতে হয় তখন পরিবারের সদস্যদের মনে নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিতে পারে। পরিবারের কাছে নিজের কাজের বিষয়টি বুঝিয়ে বলে তাদের সহযোগিতার পরামর্শ দেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তাকে অবশ্য যৌথ পরিবারের বড় বউ হিসেবে বাড়ির সব দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে বলে জানালেন। সেইসঙ্গে অফিসের কাজও সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হয়েছে। নূর কামরুন নাহার একজন কবি ও গল্পকার। পেশা এবং পরিবারের পাশাপাশি লেখালেখিতেও ব্যস্ত তিনি। এজন্য অবশ্য তাকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। তবে অফিসের সহকর্মীরা তাকে লেখালেখিতে উৎসাহ দেন বলেও জানালেন। নূর কামরুন নাহার শ্রোতাদের জন্য একটি কবিতাও শোনান।
কানাডায় প্রায় তিন বছরের বন্দী জীবন শেষে নিজ দেশে ফিরেছেন হুয়াওয়ের অর্থনৈতিক বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা এবং কর্পোরেট জগতে চীনের সফল নারী মেং ওয়ান চৌ, বিস্তারিত রয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন: মাতৃভূমিতে ফিরলেন সফল নারী মেং ওয়ান চৌ
মাতৃভূমিতে ফিরেছেন সফল নারী মেং ওয়ান চৌ।কানাডায় এক হাজারেরও বেশি দিন আটক থাকার পর বন্দী জীবনের অবসান ঘটিয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর চীনের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেছেন হুয়াওয়ে কোম্পানির সিএফও মেং ওয়ান চৌ। শেনচেন বিমানবন্দরে দেশপ্রেমিক এই চীনা নারীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এসময় আবেগ আপ্লুত হয়ে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মেং বলেন, এক হাজার আটাশ দিনের অগ্নিপরীক্ষার পর অবশেষে আমি মাতৃভূমির আলিঙ্গনে ফিরেছি। দেশে ফিরে আমি খুব আনন্দিত। বিদেশে আটক থাকার সময় আমাকে অনেক কষ্ট ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে।’
এদিকে, চায়না মিডিয়া গ্রুপের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হুয়াওয়ের এ কর্মকর্তার প্রত্যাবর্তন নাগরিকের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় চীনা সরকারের দৃঢ় ইচ্ছার স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ প্রমাণ করে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে, কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ মেংকে ভ্যানকুভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে তথ্য চুরির অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ নাকচ করে কানাডা জানায়, মেং কানাডার কোনো আইন লঙ্ঘন করেননি বরং তাকে অযৌক্তিক ও অবৈধভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। মেংয়ের মামলার দায়িত্বে থাকা কানাডিয়ান বিচারক বলছেন, তার বিরুদ্ধে আনা মার্কিন অভিযোগ অস্পষ্ট এবং অস্বাভাবিক। চীনা নাগরিকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক চাল এবং এ ক্ষেত্রে কানাডাকে সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, আইনের দোহাই দিয়ে চীনের হাইটেক এন্টারপ্রাইজগুলিকে নষ্ট করতে এবং চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা এসব করেছে। তাদের এসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এখন শুনবো চীনে সম্প্রতি মিড অটাম ফেস্টিভ্যালে চায়না মিডিয়া গ্রুপের সাড়া জাগানো গালা নাইটে পরিবেশিত একটি গান।
প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.
আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
নারী পুরুষের সমঅধিকারের দেশ চীন-প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
বিশ্বব্যাপী নারীদের চাই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক, প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি
মাতৃভূমিতে ফিরলেন সফল নারী মেং ওয়ান চৌ, প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী