বাংলা

আকাশ ছুঁতে চাই ৪০-China Radio International

criPublished: 2021-09-23 18:57:54
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

কাজের ক্ষেত্রে কখনও আপোষ চলে না

১. সাক্ষাৎকার: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রথম নারী এমডি শিরীন আখতার

২.ঝড় তুলেছেন কিশোরী সঙ্গীতশিল্পী ভিকি সুয়ানসুয়ান

৩. সিনচিয়াংয়ের পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সুখী জীবন

৪. মা ইয়ান থেকে মা চিং: বদলে গেছে চীনের গ্রামীণ নারীর জীবন

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রথম নারী এমডি’র সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশের ব্যাংকিং পেশায় দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন নারীরা। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক কৃষি ব্যাংকে প্রথমবারের মতো একজন নারী এমডি(ম্যানেজিং ডিরেক্টর) পদে নিয়োগ পেলেন সম্প্রতি। ব্যাংকার শিরীন আখতারের এই সাফল্যে আনন্দিত বাংলাদেশের পেশাজীবী নারীরা। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আমাদের আজকের অতিথি কৃষি ব্যাংকের বর্তমান এমডি শিরীন আখতার। ভার্চুয়ালি তিনি যুক্ত হয়েছেন আমাদের সঙ্গে। আমাদের অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত জানাই।

সাক্ষাৎকার

কাজের বেলায় কখনও আপোষ করা চলে না , বললেন শিরীন আখতার। অনেকটা পথ হেঁটে আজকের এই সাফল্যের স্বাদ পেতে হয়েছে তাকে। বললেন, ‘চাকরি কখনও আমার কাছে নিছক চাকরি ছিল না। আমি এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছিলাম শুরু থেকেই। ক্রমাগত চেষ্টা করেছি নিজেকে আরও যোগ্য করে তোলার। আমার জীবনের প্রধান গুরুত্ব ছিল আমার পেশা। কখনও চাকরি জীবনে নারী হিসেবে বাড়তি সুবিধা নেয়ার কথা ভাবিনি। কোনদিন সাংসারিক অসুবিধার দোহাই দিয়ে অফিসের কাজে ফাঁকি দেইনি। কখনও বলিনি আজ আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে।’

ব্যাংকে চাকরির জন্য ১৯৮৭ সালে ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট কমিটির অধীনে পরীক্ষা দিয়ে অগ্রণী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগ দেন ১৯৮৮ সালের মার্চ মাসে। প্রথম পোস্টিং হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ শাখায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স ডিগ্রিধারী শিরীন আখতার।

আজিমপুর গার্লস স্কুল(এসএসসি ১৯৭৭) ও বদরুন্নেসো মহিলা মহাবিদ্যালয়ের(এইচ এসসি ১৯৭৯) মেধাবী ছাত্রী শিরীন আখতারের বাবা খলিলুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি ডিরেক্টর। বাবার ব্যাংকের চাকরিই তাকে অনুপ্রাণিত করেছে ব্যাংকিং পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে।

তার মা আয়েশা রহমান ছিলেন পাকিস্তান আমলে মোহাম্মদপুর থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়শা খাতুন ১৯৭২ সালে তাজমহল রোডে প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু ফ্রি প্রাইমারি স্কুল।

আয়শা খাতুন মোহাম্মদপুর এলাকার জনপ্রিয় কর্মী ও নেত্রী হিসেবে অনেক সালিশ বিচার করতেন, সমাজসেবামূলক প্রতিটি উদ্যোগে রাখতেন অগ্রণী ভূমিকা। মায়ের সাহসটা চিরদিনই নিজের ভিতরে লালন করেছেন শিরীন আখতার। চাকরিতে যোগদানের সময় তার ১০৫জন ব্যাচমেট ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রথম ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষায় পাশ করেন তিনি। ১৯৯৪ সালে তিনি প্রিন্সিপাল অফিসার হন।১৯৯৮ সালে এসপিও, ২০০৫ সালে এজিএম, ২০১০ সালে ডিজিএম এবং ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে হন জিএম। ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি কৃষি ব্যাংকের ডিএমডি হিসেবে যোগ দেন। আর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এম ডি হয়ে ইতিহাস গড়েন।

তার মতে নারীকে এগিয়ে যেতে হলে, ‘পেশার প্রতি নিবেদিত হতে হবে। নারীরা সাধারণত সৎ হন। কিন্তু তারা সংসারকে বেশি প্রায়োরিটি দিতে গিয়ে পেশাগত জীবনে বেশিদূর এগোতে পারেন না। তারা নিজের দক্ষতার উন্নয়নে তেমন সময় ও শক্তি ব্যয় করেন না অনেক ক্ষেত্রে। অনেকেই দায়সারাভাবে চাকরি করে যান। অফিস ছুটির পর কত তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরবেন সেই চিন্তায় থাকেন। ঘরের সমস্যা অফিসে বলেন, এবং ঘরের সমস্যায় অফিসকে ইনভলবড করেন। এটা ঠিক নয়। একজনের ঘরে সমস্যা থাকতেই পারে। অফিস কিন্তু সেজন্য সাফার করবে না। পুরুষের চেয়ে নারীকে অনেক বেশিবার নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। ধরেই নেয়া হয় নারী তার শতভাগ অফিসে দিতে পারবেন না। সেই ধরে নেয়াকে ভুল প্রমাণ করতে তাকে একশ দশভাগ শ্রম দিতে হয়।’

শিরীন আখতার সবসময় ব্যাংকিং পেশার কাজে শতভাগ সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। পেশাগত কাজের বেলায় কখনও আপোষ করেননি। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতাও পেয়েছেন সবসময়।

কৃষিব্যাংকে নারীদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু সহজ শর্তের ঋণ প্রকল্প। নারী উদ্যোক্তাদের সহায়ক বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে যা তাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে।

নারীরা বাংলাদেশের সকল পেশায় এগিয়ে যাবে সেটি শিরীন আখতারের একান্ত প্রত্যাশা।

কাজের ক্ষেত্রে কখনও আপোষ চলে না- ব্যাংকার শিরীন আখতার

ঝড় তুলেছেন কিশোরী সঙ্গীতশিল্পী ভিকি সুয়ান সুয়ান

নেট দুনিয়ায় সাড়া জাগানো কিশোরী সঙ্গীত শিল্পী ভিকি সুয়ানসুয়ান। চীনা সোশ্যাল মিডিয়া বিলিবিলিতে যার রয়েছে অসংখ্য অনুসারী।

মাত্র ১৫ বছর বয়সী স্কুল ছাত্রী চাং ইউসুয়ান। চীনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিকি সুয়ানসুয়ান নামেই বেশি খ্যাতি। শুধু তাই নয় সুন্দর গানের জন্য স্পটলাইটে থাকা এ কিশোরী চীনা নেটিজেনদের কাছে তরুন টেইলর সুইফট নামে বেশ পরিচিত।

জনপ্রিয় চীনা এবং ইংলিশ গানের পাশাপাশি নিজের লেখা এবং সুর করা বেশ কিছু মৌলিক গানও গেয়েছেন ভিকি। চীনের শীর্ষস্থানীয় ভিডিও-শেয়ারিং এবং লাইভ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বিলিবিলিতে প্রায় শ’ খানেক ভিডিও আপলোড করে প্রায় ১.৭ মিলিয়ন অনুসারী কুড়িয়েছেন এই ছোট্ট মেয়েটি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সুন্দর কণ্ঠ এবং অভিব্যক্তি দিয়ে মানুষের মন জয় করে নিচ্ছেন ভিকি। এরই মধ্যে ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মেও জায়গা করে নিয়েছেন ভিকি সুয়ানসুয়ান।

সিনচিয়াংয়ের পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সুখী জীবন

চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে জীবন মান দিন দিন আরও উন্নত হচ্ছে। বিশেষ করে নারীরা এগিয়ে আসছেন কর্মক্ষেত্রে এবং গড়ে নিচ্ছেন জীবন। শুনুন একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নারী কিভাবে সুখী জীবন গড়েছেন সে বিষয়ে প্রতিবেদন।

সিনচিয়াংয়ের প্রধান শহর উরুমছির একজন নারী মালিয়া নুয়েরদিং। তিনি একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। নগরীর বিভিন্ন ভবন পরিষ্কার রাখার কাজ করেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি একটি সরকারি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছেন যেখানে তাকে ভাড়া বাবদ দিতে হয় মাত্র ১৬৪ ইউয়ান যা বাংলাদেশী মুদ্রায় দুহাজার টাকার কাছাকাছি।এই বাড়িতে রয়েছে গ্যাসের ওভেন, সার্বক্ষণিক গরম পানির ব্যবস্থা, রেফ্রিজারেটর এবং অন্যান্য গৃহস্থালি অ্যাপলায়েন্সসহ ঝকঝকে সব আসবাবপত্র।

মালিয়া বলেন, ‘আমি যখন নতুন বাড়ি পাই সেটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত।’

মালিয়া নুয়েরদিং তার বাড়িতে প্রায়ই বন্ধুবান্ধবদের আমন্ত্রণ জানান। বিশেষ করে যেদিন পোলাও মাংস রান্না করেন। তার আগের বাসস্থানে গ্যাসের ওভেন ছিল না। কয়লার চুলায় রান্না ছিল বেশ খাটুনির। এখন তিনি নিজের বাসস্থান ও গৃহস্থালি নিয়ে দারুণ সুখী।

মা ইয়ান থেকে মা চিং: বদলে গেছে চীনের গ্রামীণ নারীর জীবন

সুপ্রিয় শ্রোতা আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই। গত বিশ বছরে চীনে গ্রামীণ কিশোরীদের জীবন কিভাবে বদলে গেছে শুনুন সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন।

দ্য ডাইরি অব মা ইয়ান চীনের একটি বিখ্যাত বই। সেখানে নিনসিয়া হুই স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের এক কিশোরী মেয়ে মা ইয়ান লিখেছিলেন তার জীবন সংগ্রামের কথা। কিভাবে প্রতিদিন পাহাড় পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয় মা ইয়ানকে।

এই ডাইরি প্রকাশ হওয়ার পর ২০ বছর পার হয়েছে। পরিবতিত হয়েছে জীবন। এখনকার চীনা টিনএজ মেয়েদের সামনে খুলে গেছে নতুন জগত। সেকথা জানিয়েছেন আরেক স্কুল ছাত্রী মা চিং । এখন আর স্কুলের কোন শিক্ষার্থী অভুক্ত বা ক্ষুধার্ত থাকে না। তাদের স্কুল প্রাঙ্গণ আর ধুলা ময়লায় ভরা থাকে না। স্কুল ভবনগুলো এখন আধুনিক।

মা চিংও গ্রামের মেয়ে। কিন্তু তাদের পরিবারের গাড়ি আছে। গ্রামের পথ ঘাটও এখন উন্নত। স্কুল থেকে ১০ মিনিটে বাড়ি পৌছাতে পারে সে। মা ইয়ান লিখেছিল কিভাবে সকালের নাশতা না খেয়েই তাকে কঠিন পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হতো।

মা ইয়ানকে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে কৃষি ক্ষেত্রে শ্রম দিতে হতো। কিন্তু মা চিংদের গ্রামে এখন ফসলের ক্ষেতে কাজ করে যন্ত্র। স্কুলের হোম ওয়ার্ক শেষ করেই ডিনার খেতে বসে যায় মা চিং। তার বাসস্থান আরামদায়ক। সেখানে সব রকমের আধুনিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। মা ইয়ান থেকে মা চিং। এভাবে পালটে গেছে চীনের জীবন।

প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

ভিকি সুয়ানসুয়ান বিষয়ক প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সিনচিয়াংয়ের পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং মা ইয়ান থেকে মা চিং বিষয়ক প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn