বাংলা

আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৩৯-China Radio International

criPublished: 2021-09-16 23:07:20
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

নারী সাংবাদিকদের হয়রানি রোধে হাইকোর্টের রায়ের বাস্তবায়ন চাই

কী থাকছে এবারের পর্বে

১. সাক্ষাৎকার : প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র

২. নারী অরণ্যরক্ষী দল

৩. গান: আ লিন

৪. কেমন আছেন আফগান নারী

৫. নতুন পেশায় সিনচিয়াংয়ের নারী

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।

বাংলাদেশের নারীরা বিভিন্ন পেশায় অংশগ্রহণ করছেন এবং এগিয়ে চলেছেন। সাংবাদিকতাকে একসময় মনে করা হতো পুরুষের পেশা। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকরা নিজেদের পরিশ্রমে এ পেশায় জায়গা করে নিয়েছেন। নারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে এখন আমরা কথা বলছি বাংলাদেশে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনুর সঙ্গে।

সাক্ষাৎকার:

নারী সাংবাদিকদের হয়রানি রোধে হাইকোর্টের রায়ের বাস্তবায়ন চাই—প্রেসিডেন্ট বিএনএসকে

বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের প্রেসিডেন্ট নাসিমুন আরা হক মিনু দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে গণমাধ্যমে কাজ করছেন। ২০০১ সালে তিনি নারী সাংবাদিকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র(বিএনএসকে) যা বর্তমানে বাংলাদেশের নারীর সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন। সাক্ষাৎকারে নাসিমুন আরা হক নারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন বাংলাদেশে এখনও গণমাধ্যমে পুরুষের তুলনায় নারী সাংবাদিকের সংখ্যা অনেক কম। বিশেষ করে পত্রিকায় নারীর সংখ্যা কম। পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারী সাংবাদিকরা অনেক সময় বৈষম্যের শিকার হন। মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়ার বেলাতেও কর্তৃপক্ষ অনেক সময় নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যমে ছাঁটাই শুরু হলে নারী সাংবাদিকরা অন্যায়ভাবে ছাঁটাইয়ের শিকার হয়। মিডিয়ায় নারী সাংবাদিকরা অনেক সময় যৌন হয়রানির শিকার হয়। কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের রায় রয়েছে। প্রতিটি অফিসে অভিযোগ বাক্স স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি অফিসে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই রায় কার্যক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা দরকার অবিলম্বে।

বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র দীর্ঘ বিশ বছর ধরে নারী সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে, তাদের বিভিন্ন দাবীও তুলে ধরেছে। বিএনএসকে প্রতিটি গণমাধ্যমে ৩০ শতাংশ নারী সাংবাদিকের নিয়োগ দাবী করছে।

মিডিয়ায় নারী সাংবাদিকদের সমস্যা সমাধানে তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেন নাসিমুন আরা হক।

সুপ্রিয় শ্রোতা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই। অরণ্যরক্ষী বা রেঞ্জার কথাটি শুনলে একজন পুরুষের চেহারাই প্রথম মনে পড়ে। কিন্তু রেঞ্জারের পেশায় নারীরাও সফল হচ্ছেন। বিশেষ প্রতিবেদনে শুনুন সেই গল্প।

নারী অরণ্যরক্ষী দল

চীনের উত্তরের প্রদেশ তুষার ঢাকা হেইলংচিয়াং। এখানে রয়েছে নিবিড় অরণ্য এবং জীব বৈচিত্র্য। এই অরণ্যে রেঞ্জার হিসেবে কৃতিত্বের পরিচয় দিচ্ছে নারী রেঞ্জারদের একটি দল। ছাওইয়াংকোও অরণ্যে এই দলের মূল কাজ হলো জঙ্গলের ভিতরে স্থাপিত ইনফ্রারেড ক্যামেরাগুলোর দেখভাল করা, বুনো জন্তু বিশেষ করে বিরল প্রজাতির প্রাণীদের খুঁজে বের করে তাদের গতিবিধি নজরে রাখা। চিলিনে নর্থওয়েস্ট চায়না টাইগার অ্যান্ড লিওপার্ড ন্যাশনাল পার্কে কাজ করেন এই দলের নারীরা। তারা তুংনিং ফরেসট্রি ব্যুরোর অধীনে কাজ করছেন।

ছয় জনের এই নারী রেঞ্জার দলের নেত্রী হলেন সু ছুনমেই। সুয়ের জন্ম এই অরণ্যেই। তারা তিন প্রজন্ম ধরে অরণ্যরক্ষীর কাজ করছেন। তিনি লেখাপড়াও করেছেন ফরেস্ট্রি বিষয়ে। ২০১৮ সালে যখন তিনি শোনেন অরণ্য রক্ষী দলে নারীদের নেয়া হচ্ছে তখন আর দেরি না করে যোগ দেন রেঞ্জারের কাজে।

সু ছুনমেই বলেন, ‘কাজের সময় আমরা ওয়াইল্ড লাইফ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন চালিয়ে যাই। যখন আমরা কোন প্রাণীর পদচিহ্ন সনাক্ত করি তখন খুব খুশি লাগে ‘

এই চ্যালেঞ্জিং কাজটিকে আগে পুরুষদের বলে ধরে নেয়া হতো। নারীরা অরণ্যের বুনো জন্তু রক্ষার বিপদজনক কাজ করবে এমনটি ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে পুরুষদের চেয়েও নারীরা বেশি ভালো কাজ করছেন।

ফরেস্ট ফার্মের ডেপুটি ডিরেক্টর নারী দলের প্রশংসা করে বলেন,‘ এই অরণ্যে ২০ জন রেঞ্জার আছে। নারী দলটি সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করছে। তাদের ওয়ার্ক প্ল্যান ভালো তারা সবচেয়ে বেশি তথ্যও সংগ্রহ করেন।’

অরণ্যের আশপাশের গ্রামে বন্যপ্রাণী বিষয়ক সচেতনতা তৈরিতেও নারী রেঞ্জাররা কাজ করছেন।

প্রিয় শ্রোতা এখন রয়েছে চীনের তাইওয়ানের জনপ্রিয় শিল্পী আ লিনের কণ্ঠে একটি গান। গানটির শিরোনাম এক ধরনের বিষণ্নতা। গানটিতে অতীত স্মৃতি ও ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে।

তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের পরই সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় নারীদের অধিকার নিয়ে। আগের তালিবান শাসনামলে নারীর অধিকার সুরক্ষিত না থাকার অনেক নজির চলে আসে উদাহরণ হিসেবে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে ক্ষমতায় আসা নতুন তালিবান ঘোষণা করে ‘নারী অধিকার সুরক্ষিত থাকবে আফগানিস্তানে। এরই মধ্যে শিক্ষা ও চাকরিসহ সমাজের সব ক্ষেত্রে নারীদের কাজ করার অনুমতি দেয়ার কথাও বলছেন তালিবান নেতারা। বিস্তারিত প্রতিবেদনে

কেমন আছেন আফগান নারী

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করে তালিবান। সে সময় ঘরের বাইরে কাজ করা তো পরের কথা, নারীদের ছিলো না স্কুলে যাওয়ারও অধিকার। তাই তালিবান শাসন নিয়ে পশ্চিমা সমাজে আছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। দীর্ঘ ২০ বছর পর মার্কিন বাহিনীকে হঠিয়ে তালিবান আবারো ক্ষমতায় চলে আসায় তাই এবারো পুরনো শঙ্কা জেগে উঠেছে। এবারো কি গৃহবন্দী হতে হবে আফগান নারীদের?

একজন নারী অধিকারকর্মী বলেন,‘নারী এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সহিংসতা প্রতিরোধে দীর্ঘ দিন ধরে আমি কাজ করে যাচ্ছি। জানিনা তা কতোটা অব্যাহত রাখতে পারবো।’

তবে সমস্ত জল্পনা-কল্পনা আর আশঙ্কা ছাপিয়ে নতুন স্বর তালিবানের কণ্ঠে। ক্ষমতা গ্রহণের পরপর কাবুলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তালিবানের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদের স্পষ্ট ঘোষণা, বাইরে কাজ করতে কোন বাধা নেই নারীদের। সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রে নারীরা কাজ করতে পারবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনিক নতুন কাঠামো গঠনের পর সিনিয়র পদগুলো যোগ্যতার ভিত্তিতে পূরণ করা হবে।

এদিকে, গেল ২৬ আগস্ট চায়না মিডিয়া গ্রুপকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে অংশ নেন কাতারে অবস্থিত তালিবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মুখপাত্র সুহেইল শাহীন। তিনি জানান, নারীরা সামাজিক সব কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবে। পাশাপাশি পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মস্থল অনুযায়ী কিভাবে হিজাব পরতে হবে তাও তারা নির্ধারণ করতে পারবে।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন নারী সাংবাদিকরা এখানে কাজ করছেন, তাদের সমালোচনার স্বাধীনতাও রয়েছে। শিক্ষক ও ডাক্তারসহ অন্যান্য পেশায় যারা রয়েছেন তারাও স্বস্ব কর্মস্থলে কাজ করছেন। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলা রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।’

আন্তর্জাতিক সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করেন, সদ্য ক্ষমতায় আসা তালিবান যেহেতু আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন চায় তাই নারী অধিকারের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে তাদের। এরই মধ্যে নারীদের প্রতি তাদের নমনীয় মনোভাব ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয় বলেও মনে করেন তারা।

সুপ্রিয় শ্রোতা, চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে জীবনমান উন্নত হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরেই। নারীরা আগে শুধু গৃহস্থালি ও পারিবারিক কৃষিক্ষেত্রে কাজ করতেন। কিন্তু এখন তারা গ্রহণ করছেন উচ্চ শিক্ষা, এগিয়ে চলেছেন বিভিন্ন পেশায়। শুনুন সিনচিয়াংয়ের নারীদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন

নতুন পেশায় সিনচিয়াংয়ের নারী

নারীরা আগে যেখানে কেবল ঘরের কাজে ও পারিবারিক কৃষিতে শ্রম দিতেন এখন সেখানে তারা নিজস্ব উপার্জন করে পালটে দিচ্ছেন জীবন।

সিনচিয়াংয়ের কাশগর শহরের উইগুর মুসলিম নারী মারিয়াম মামাতালি। ৩৪ বছর বয়সী এই নারীর বিশাল ছবি শোভা পাচ্ছে নানডা নিউ এগ্রিকালচারাল গ্রুপের কারখানার দেয়ালে। তিনি সাধারণ একজন কর্মী থেকে কারখানার রম্যানেজারের পদ পেয়েছেন। তার হাসিতেই রয়েছে আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ।

তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি কঠোর পরিশ্রমে অভ্যস্ত। কারখানার চাকরিতে আমি বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করেছি। কর্তৃপক্ষ আমার আন্তরিকতা লক্ষ্য করে ম্যানেজারের পদ দিয়েছেন।’

মারিয়াম তার বেতনের টাকায় বাড়িঘরের উন্নতি ঘটিয়েছেন। তার একটি ছোট ফল বাগানও রয়েছে। স্বামী , দুই যমজ মেয়ে এবং এক ছেলে নিয়ে তার সুখের সংসার। নিজস্ব মোটর গাড়ি কিনবেন আগামি মাসে। মারিয়ামের মতো নারীরা পালটে দিচ্ছেন পরিবারের চেহারা।

সিনচিয়াংয়ে ২০১৯ সালে ৪ লাখ৮০ হাজার ৯০০ নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যার ৪৭.৪ শতাংশ গ্রহণ করেছেন নারীরা। সিনচিয়াংয়ে সিনিয়র প্রফেশালদের মধ্যে অন্তত ৩৫ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ ম্যানেজেরিয়াল পদে নারীকে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে নারী ও শিশুর উন্নয়নের জন্য ২০১১ সালে স্থানীয় সরকার নীতি নির্ধারণ করে যা এখন সিনচিয়াংয়ের নারীদের জীবন উন্নয়নে দারুণ সাফল্যজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে।

প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

আফগান নারী বিষয়ক প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অরণ্যরক্ষী ও সিনচিয়াং বিষয়ক প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn