আকাশ ছুঁতে চাই ৩৮-China Radio International
বাংলাদেশের প্রান্তিক নারী: সংকট ও উত্তরণ
কী থাকছে এবারের পর্বে
১. রিপোর্ট: প্রান্তিক অবস্থানে নারী
২. সাক্ষাৎকার: উন্নয়ন কর্মী মাহমুদা শেলী
৩.মঞ্চের যমজ ফুল
৪.গান : আরজুগুল সেনডানের কণ্ঠে ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’
৫. বাংলাদেশী নারী বিজ্ঞানী পেলেন ম্যাগসেসে পুরস্কার
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন।
আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা সবসময় কথা বলি নারী ও শিশুর সমস্যা, সম্ভাবনা, সংকট ও সাফল্য নিয়ে।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন চলার পথ কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে যেসব নারীকে উপার্জন করে সংসার চালাতে হয় তাদের যুদ্ধটা আরো কঠিন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতগুলোতে উৎপাদন ব্যবস্থার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে শ্রমজীবী নারী। এমনই দুই শ্রমজীবী নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের প্রতিবেদক রওজায়ে জাবিদা ঐশী।
প্রান্তিক অবস্থানে নারী
শেফালী বেগম একজন ঝাল মুড়ি বিক্রেতা। স্বামী হারা শেফালী ছেলে মেয়েকে নিয়ে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। কোভিড -১৯ এর আগে একটা কারখানায় চাকরি করলেও করোনার থাবা থেকে রক্ষা হয়নি তার।
প্রান্তিক পর্যায়ের আরেক নারী পারভিন আক্তার। ফুটপাতে পানের ব্যবসা করে একা হাতে সাহসের সঙ্গেই সংসারের ঘানি টানছেন এ নারী।
প্রান্তিক পর্যায়ে তাদের মতো এমন বহু নারীই একা হাতে জীবনের কঠিন পথ পাড়ি দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েই চলেছে। তবে শ্রমবাজারে নারীর একটা বড় অংশই অনানুষ্ঠানিক বা নিম্ন আয়ের ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গত বছরের এক গবেষণায় বলা হয়, মোট দেশজ উৎপাদনে নারীর অবদান প্রায় ২০ শতাংশ। চলতি বছরে বিবিএসের সবশেষ জরিপ বলছে, অর্থনীতির বৃহত্তর তিনটি খাত কৃষি, শিল্প ও সেবায় প্রায় ২ কোটি নারী কাজ করছেন। তবে উৎপাদনব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারী কর্মীদের সিংহভাগই শ্রমজীবী।
সাক্ষাৎকার
বাংলাদেশের প্রান্তিক নারী: সংকট ও উত্তরণে
বাংলাদেশের প্রান্তিক অবস্থানের নারীর সমস্যা ও সংকট উত্তরণের বিষয় নিয়ে আজ আমরা কথা বলছি উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী মাহমুদা শেলীর সঙ্গে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মরত একটি উন্নয়ন সংস্থার প্রধান হিসেবে টাঙ্গাইল জেলার প্রান্তিক অবস্থানের নারীর উন্নয়নে এবং তাদের মানবাধিকার অর্জনে ভূমিকা রাখছেন। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।
মাহমুদা শেলী বাংলাদেশের প্রান্তিক নারীদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। প্রান্তিক অবস্থানের নারীরা ধর্ষণ, পারিবারিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন রকম নির্যাতনের শিকার। করোনা মহামারির মধ্যে এই নির্যাতন আরও বেড়েছে। ভিকটিম নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জানেন না যে ১০৯ হটলাইনে ফোন করলে সাহায্য পাওয়া যায়। ধর্ষণের শিকার হলে ভিকটিম নারীরা অনেক ক্ষেত্রে কাউকে প্রাথমিক অবস্থায় জানান না। পরে শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটলে তারা জানাতে বাধ্য হন। এটি অসচেতনতা। এর ফলে সুবিচার পাওয়া বাধাগ্রস্থ হয়। প্রবাসীর স্ত্রীরা অনেক সময় পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন। পারিবারিক নির্যাতন আইনে প্রথম অভিযোগ করতে হয় স্বামীর বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রবাসীর স্ত্রীর ক্ষেত্রে এখানে বড় বাধা রয়েছে । বলেন, ‘কারণ স্বামী তো থাকে প্রবাসে। নির্যাতন করে শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ, ননদের স্বামী, দেবর, জা এবং অন্য আত্মীয়রা।’ এক্ষেত্রে আইনটি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন মাহমুদা শেলী। কোভিডের সময় নারী নির্যাতন বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, নারীদের হাতে অর্থ নেই, তাদের উপার্জনের সুযোগও নেই। প্রান্তিক অবস্থানের অসংখ্য নারী কাজ হারিয়েছেন। পরিবার তাদের বোঝা ভাবছে। তারা বাইরেও যেতে পারছে না। তাদের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য দরকার সচেতনতা। দরকার তাদের হাতে অন্তত একটি মোবাইল ফোন থাকা। তাহলে তারা জরুরি অবস্থায় ফোনে সাহায্য চাইতে পারে। আরও দরকার আয়মূলক প্রকল্পে তাদের সংশ্লিষ্ট করা।
সুপ্রিয় শ্রোতা নারীর স্বপ্নপূরণের পথে থাকে অনেক বাধাবিপত্তি। তবু স্বপ্ন থাকে এগিয়ে যাওয়ার।
সিনচিয়াংয়ের দুই বোন কিভাবে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করে মঞ্চের নৃত্যশিল্পী হলেন শুনুন সেই গল্প বিশেষ প্রতিবেদনে।
মঞ্চের যমজ ফুল
চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের দুই উইগুর তরুণী সুবিনুর এবং কালবিনুর। ছোটবেলা থেকেই তাদের স্বপ্ন মঞ্চের নৃত্যশিল্পী হওয়া। শৈশবে বাবা মায়ের কাছে আবদার জানান তাদেরকে নাচ শেখার স্কুলে ভর্তি করার জন্য। নাচের স্কুলে তারা নাচ শেখেন কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে। উচ্চতর শিক্ষার জন্য তারা চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল ইনার মঙ্গোলিয়ায় যান। সেখানে তিন বছর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। অনেক কঠিন পরিস্থিতিরও মুখোমুখি হতে হয় তাদের। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে তারা দুজনে একটি আর্ট গ্রুপে যোগ দেন। এই দলে তাদের নাম হয় ‘মঞ্চের যমজ ফুল’ । এরমধ্যে কালবিনুরের একটি ইনজুরি ঘটে। কোমরে ব্যথা পান তিনি। নাচ ছেড়ে দিতে হয় তাকে। মন খারাপ হয়ে যায় সাবিনুরের। পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকাও তাদের জন্য ছিল কষ্টকর।
সুবিনুর বলেন, ‘ছোট ভাইটি প্রায়ই বলতো তোমরা কবে বাড়িতে ফিরবে। মা বাবাকে মিস করতাম।’ অবশেষে ইনজুরি কাটিয়ে উঠে সুস্থ হন কালবিনুর। দুই বোন আবার একসঙ্গে মঞ্চে অংশ নেন। যমজ ফুল তাদের পরিবেশনায় এখনও মঞ্চকে আলোকিত করে চলেছেন।
সুপ্রিয় শ্রেতা এখন শুনবেন সিনচিয়াংয়ের শিল্পী আরজুগুল সেনডানের কণ্ঠে একটি জনপ্রিয় গান ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।
গান
সুপ্রিয় শ্রোতা আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই। বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী পেয়েছেন ম্যাগসেসে পুরস্কার। শুনুন সেই গল্প।
বাংলাদেশী নারী বিজ্ঞানী পেলেন ম্যাগসেসে পুরস্কার
এশিয়ার নোবেল খ্যাত র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী। সম্প্রতি ফিলিপিন্স থেকে র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ -আইসিডিডিআর,বি’র সিনিয়র বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত আছেন ড. ফেরদৌসী। কলেরার টিকা নিয়ে গবেষণা ও সাশ্রয়ী দামে সহজলভ্য করে লাখো প্রাণ রক্ষায় কাজ করার অবদান হিসেবে তিনি এ পুরস্কার পেয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাবিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন থেকে বলা হয়, বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে কলেরা টিকা আবিষ্কারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন।
র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারকে এশিয়ার নোবেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশী একজন বিজ্ঞানীর জন্য এটি অনেক বড় এবং প্রেরণাদায়ী অর্জন।
প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.
আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
বাংলাদেশের প্রান্তিক অবস্থানে নারী বিষয়ক প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
মঞ্চের যমজ ফুল বিষয়ক প্রতিবেদন শান্তা মারিয়া
ফেরদৌসী কাদরী বিষয়ক প্রতিবেদন তানজিদ বসুনিয়া
অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী