আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৩৬-China Radio International
কী থাকছে এবারের অনুষ্ঠানে
১. সাক্ষাৎকার: পুষ্টিবিদ সামিনা জামান কাজরী
২. মাতৃদুগ্ধ দানে মায়েদের সহায়তায় শীর্ষে বাংলাদেশ
৩. তিব্বত: নতুন জীবনের স্বাদ
৪. গান: অ্যানথেম অব রেড প্লাম
৫.বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিন পদে নারী
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠান থেকে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন।
আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা সব সময় কথা বলি নারীর সাফল্য, সমস্যা, সম্ভাবনা, সংকট নিয়ে। আজ আমরা কথা বলবো বাংলাদেশে নারীর পুষ্টি সমস্যা, এর সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত এবং সমাধান বিষয়ে। ভার্চুয়ালি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন পুষ্টিবিদ সামিনা জামান কাজরী যিনি নেসলে বাংলাদেশের সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। আমাদের অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত জানাই।
নারীর নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে
সাক্ষাৎকার
বাংলাদেশে প্রান্তিক অবস্থানের নারীদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা খুব বেশি। একটি মেয়ে শিশু ছোটবেলা থেকেই পুষ্টিহীনতার শিকার হয়। সামিনা জামান বলেন, কিশোরীদের পুষ্টিহীনতা অনেক সময় ঘটে সামাজিক বৈষম্যের কারণে।এখনও অনেক পরিবারে ছেলে সন্তানকে পুষ্টিকর খাদ্য এবং মেয়ে সন্তানকে তুলনামূলক কম খাদ্য দেয়া হয়। ‘এখনও ছেলের পাতে মাছের মুড়ো মুরগির রান আর মেয়ের পাতে শুধু ঝোল তুলে দেয়া হয়।’ পুষ্টিকর খাদ্য দরকার শিশুবয়স থেকেই। একজন অপুষ্ট কিশোরী বড় হয়ে একজন অপুষ্ট সন্তানের জন্ম দেয়। শিশুকে মাতৃদুগ্ধ প্রদানের জন্য চাই মায়ের যথাযথ পুষ্টি। অপুষ্ট মায়ের স্তন্যপানকারী শিশুও অপুষ্ট হয়ে থাকে।
এভাবে পুষ্টিহীনতার চক্র চলতে থাকে। এজন্য দরকার সচেতনতা। অনেক সময় মেয়েরা পরিবারের সকলের দেখভাল করলেও নিজের কথা ভুলে যান। নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেন না। ‘নারীর নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে। নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে।’ বলেন তিনি। ‘আমাদের মা বোনেরা নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে মোটেই ভাবেন না। তারা স্বামী, ছেলের পাতে পুষ্টিকর খাবার তুলে দেন, আর নিজে একটা কিছু দিয়ে খেয়ে নেন।’ বললেন সামিনা জামান। ‘সুস্থ্ সন্তান জন্মদানের জন্য নারীর পুষ্টি দরকার এটা আমরা হয়তো অনেকেই জানি। কিন্তু প্রবীণ নারীর স্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়টা চিন্তাই করি না।’ দুঃখের সঙ্গে বলেন তিনি। প্রবীণ নারীদের সামাজিক অসহায়ত্ব ও পুষ্টিহীনতা একটি অন্যটির উপর নির্ভরশীল।
মধ্যবয়সী নারীদের অন্য আরেকটি সমস্যাও রয়েছে। অনেক মধ্য বয়সী নারী ডায়েটিং করতে গিয়ে স্রেফ না খেয়ে থাকেন বা পুষ্টিকর খাদ্য কম খেয়ে থাকেন। এটা অসচেতনতার জন্য ঘটে। নারীদের স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সামাজিক বাধাগুলো অতিক্রমের জন্য চাই গণমাধ্যমের ইতিবাচক প্রচারণা এবং নারীর আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়ন।
মাতৃদুগ্ধ পানে সহায়তায় বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন।
মাতৃদুগ্ধ দানে মায়েদের সহায়তায় শীর্ষে বাংলাদেশ
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে মায়েদের সহায়তার ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং ট্রেন্ডস ইনিশিয়েটিভ (ডব্লিউবিটিআই) ২৩ আগস্ট এক প্রতিবেদনে এ কথা জানায়। এ জন্য ‘সবুজ জাতি’র মর্যাদাও লাভ করেছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদন বলা হয়েছে- শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে মায়েদের সহায়তা করার তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বের ৯৮টি দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। ৯১ দশমিক ৫ স্কোর নিয়ে তালিকায় প্রথম অবস্থানে বাংলাদেশ। নবজাতক ও ছোট শিশুর খাবারের বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ এ স্কোর অর্জন করেছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কার স্কোর ৯১। তালিকায় মাত্র ১৯ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে লিবিয়া। প্রতিবেশী দেশ ভারত রয়েছে ৭৯তম অবস্থানে
সুপ্রিয় শ্রোতা আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই। চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল তিব্বতে গত সাত দশকে জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। এখন শুনুন তিব্বতের এক প্রবীণ নারীর জীবন নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন
তিব্বত: নতুন জীবনের স্বাদ
ছবি: সাদাকালো ছবিটি ভূমিদাস আমলের। রঙিন ছবিগুলো বর্তমানের। তিব্বতের জীবনমান কত উন্নত তা ছবিতেই প্রমাণ।
চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল তিব্বত একসময় ছিল সামন্ত প্রভুদের অধীনে । সাধারণ মানুষ সামন্ত প্রভুদের অধীনে ভূমিদাস বা সার্ফ হিসেবে কাজ করতো। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর তিব্বত থেকে দাসপ্রথা সম্পূর্ণভাবে দূর করে জনগণের মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিব্বতের নাইংছি শহরের ৮১ বছর বয়সের প্রবীণ নারী গাগা। তিনি তার স্মৃতি চারণে প্রকাশ করেন ৭০ বছর আগে যখন তিনি ভূমিদাস ছিলেন সেই সময়কার কাহিনী। গাগার বয়স যখন মাত্র সাত বছর তখন তার জমিমালিক তাকে ঘোড়ার পিঠের সঙ্গে বেঁধে চারণভূমিতে নিয়ে যায় ইয়াকের(চমরি গাই) রাখালি করার কাজে। সেসময় তিব্বতে নারী দাসদের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। তাদের প্রহার করা হতো। কারও বাড়িতে ঢোকার অধিকার ছিল না। পুরুষদের সঙ্গে কথা বলতে হতো চোখ নিচের দিকে নামিয়ে মাথা হেঁট করে। গাগা রাতের বেলা মাঠে ঘুমাতে বাধ্য হতো । বালিশ ছিল তার নিজের ছেঁড়া জুতা। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করতো যেন তাড়াতাড়ি জীবন পার হয়ে মৃত্যু আসে। কারণ জীবন ছিল দুঃসহ। তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবন ছিল পশুরও অধম। ইয়াকরা প্রাণভরে ঘাস খেতে পারে, কুকুররাও ঘরের ভিতর যেতে পারে কিন্তু আমাদের রাতদিন কঠোর শ্রম করতে হয়। বিশ্রামের অধিকারটুকুও ছিল না।’
বিপ্লবের পর যখন পিপলস আর্মি তাদের এলাকায় আসে তখন দাসমালিকরা সার্ফদের বলে যে সৈন্যরা তোমাদের শিশুদের খেয়ে ফেলবে। তোমাদের হত্যা করবে। ভয়ে অনেক দাস পালিয়ে যায়। গাগাও পালিয়েছিলেন পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু তিনি দেখেন যে, পিপলস আর্মি জনগণের সঙ্গে অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করছে। তাদের খাদ্য ও আশ্রয় দিচ্ছে। গাগা ফিরে আসেন নিজের জন্মভূমিতে। এখানে তিনি কাজ পান, মুক্তির স্বাদ পান। এখন তার নিজস্ব বাড়ি আছে। সুখী পরিবার আছে। তিনি একটি সম্মানিত জীবন যাপন করেছেন। বিপ্লব না হরে এই সুখী জীবন তিনি কখনও পেতেন না। গাগা এখন আরও বাঁচতে চান। বেঁচে থাকাকে উপভোগ করতে চান।
সুপ্রিয় শ্রোতা এখন শুনবেন চীনের বিখ্যাত শিল্পী ফাংলিইউয়ানের কণ্ঠে একটি দেশাত্মবোধক গান। গানটির শিরোনাম অ্যানথেম অব রেড প্লাম।
আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অন্যতম প্রধান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিন পদে আসীন হয়েছেন নারী। বিস্তারিত প্রতিবেদনে
বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিন পদে নারী
বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম শীর্ষ পদে একাধিক নারী আসীন হয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার এ তিন পদে কাজ করছেন তারা । দেশের প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে কাজ করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। দ্বিতীয়বারের মত তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। । তিনি শুধু দেশের প্রথম নারী উপাচার্যই না, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০১ সালে তিনি সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৪ সালের ২ মার্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অধ্যাপনা ছাড়াও তিনি বেসরকারি সংস্থা 'নাগরিক উদ্যোগ' এর চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চলতি বছরের ১১ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী কোষাধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক রাশেদা আখতার। ১৯৮৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ১৯৯৩ সালে সহকারী অধ্যাপক, ২০০১ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০০৭ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন রাশেদা আখতার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৮৪-৮৫ সালে স্নাতক ও ডিগ্রি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অসামান্য ফলাফলের জন্য নাজমুল করিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক এবং রাষ্ট্রপতি পদক লাভ করেন। ২০১১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
জাবির ইতিহাসে প্রথম নারী রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে নিয়োগ পান রহিমা কানিজ। এর আগে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার-১ (প্রশাসন) এর দায়িত্ব পালন করেন। রহিমা কানিজ ১৯৫৯ সালের পহেলা নভেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস মানিকগঞ্জ সদর থানার বেতিলা গ্রামে। তিনি ১৯৭৪ সালে এসএসসি, ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর সোভিয়েত ইউনিয়নের দানিয়েৎস্ক স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে বিএসসি ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন ।
প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.
আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
মাতৃদুগ্ধ দানে মায়েদের সহায়তায় শীর্ষে বাংলাদেশ প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিন পদে নারী বিষয়ক প্রতিবেদন: হোসনে মোবারক সৌরভ
নতুন জীবনের স্বাদ প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী