বাংলা

আকাশে ছুঁতে চাই(২২)-সফল হতে হলে সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা থাকতে হবে-China Radio International

criPublished: 2021-05-20 18:49:18
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।

আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি সেইসব নারীর সঙ্গে যারা সাফল্যের আকাশ স্পর্শ করেছেন অথবা স্পর্শ করতে চান। আমাদের আজকের অতিথি বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী, উপস্থাপক ,সংস্কৃতি কর্মী ও শিক্ষক প্রজ্ঞা লাবণী।

ভার্চুয়ালি তিনি যুক্ত হয়েছেন আমাদের সঙ্গে।

সাক্ষাৎকার

সফল হতে হলে সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা থাকতে হবে-প্রজ্ঞা লাবণী

প্রজ্ঞা লাবণী বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নারী। তিনি ছোটবেলা থেকেই বিটিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। একটি শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান পরিবারে জন্ম হওয়ায় তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শৈশব থেকেই যুক্ত ছিলেন। তার মা ড.হালিমা খাতুন মহান ভাষা আন্দোলনের একজন কর্মী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাহিত্যিক এবং সংস্কৃতিবান মানুষ ছিলেন। প্রজ্ঞা লাবণীর চাচা গোলাম মোস্তফা বাংলাদেশের অত্যন্ত বিখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ও আবৃত্তি শিল্পী ছিলেন।

প্রজ্ঞা লাবণী তাই শৈশব থেকেই কবিতা আবৃত্তির প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি বিতর্ক প্রতিযোগিতায়ও খ্যতি পান। উপস্থাপক হিসেবে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি বিটিভিতে কবিতার অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে বিশেষ জনপ্রিয়তা পান। এনটিভিতে অগ্রজ অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও তাকে জনপ্রিয়তা দেয়। সেই অনুষ্ঠানে তিনি দেশের বিশিষ্ট প্রবীণ নাগরিকদের জীবন ও কর্ম তুলে ধরেন। আবৃত্তিশিল্পী ও উপস্থাপক হিসেবে তার সাফল্যের সূত্র বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘সফল হতে হলে সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা থাকতে হবে।’ তিনি তার ভুলগুলো থেকে সবসময় শিক্ষাগ্রহণ করেছেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তিকালে আরও দুটি বিষয়ে তিনি মাস্টার্স করেন। তিনি বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।

প্রজ্ঞা লাবণী জীবনে এগিয়ে চলায় বিশ্বাস করেন। তিনি মনে করেন, জীবনে ঘাত প্রতিঘাত জয় করে এগিয়ে চলার সাহস ও বিশ্বাস থাকলে সফল হওয়া সম্ভব।

চীনের বিখ্যাত নারী সিয়ে চুন

গ্র্যান্ডমাস্টার সিয়ে চুন হলেন চীনের বিখ্যাত দাবা খেলোয়াড়। তিনি এশিয়ায় নারীদের দাবা খেলার অনুপ্রেরণাস্বরূপ। সিয়ে চুনের জন্ম ১৯৭০ সালে হপ্যেই প্রদেশের পাওতিং শহরে। তবে তিনি বেড়ে ওঠেন বেইজিংয়ে। ছয় বছর বয়স থেকে তিনি চায়নিজ চেজ খেলা শুরু করেন। দশ বছর বয়সে তিনি বেইজিংয়ে নারীদের সিয়াংছি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর তিনি আন্তর্জাতিক দাবা খেলায় অংশ নিতে থাকেন।

১৯৮৪ সালে চায়নিজ গার্লস দাবায় চ্যাম্পিয়ন হন এবং ১৯৮৮ সালে এশিয়ান জুনিয়র গার্লস চ্যাম্পিয়ন শিপের খেতাব পান। ১৯৯১ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে ওম্যান’স ওয়ার্ল্ড খেতাব জয় করেন সিয়ে চুন। ১৯৯৪ সালে তিনি পূর্ণাঙ্গ গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাব অর্জন করেন। তিনি ছিলেন এ খেতাব অর্জনকারী ষষ্ঠ নারী।

তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০১ পযন্ত নারী বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। তিনি পুরুষ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আনাতলি কারপভের বিরুদ্ধেও খেলেছেন ।

২০০৪ সালে তাকে ইন্টারন্যাশনাল আরবিটার খেতাব দেয়া হয় এবং তিনি ফিডের সিনিয়র ট্রেনার। ১৯৯৮ সালে চীনের নারী দল রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত চেস অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক জয় করে। এই জয়ে সিয়ে চুনের ব্যাপক অবদান ছিল।

সিয়ে চুন বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকোলজিতে ডক্টোরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

সিয়ে চুন চীনে যেমন নারীদের জন্য আইকন তেমনি এশিয়ার অন্য দেশেও তিনি নারীদের দাবা খেলায় অনুপ্রেরণাস্বরূপ।

সুপ্রিয় শ্রোতা এখন শুনবেন শিল্পী শু চিয়া ইংয়ের কন্ঠে একটি গান। গানটির শিরোনাম হলো ভুলে যাওয়ার আগে।

বিখ্যাত বাঙালি নারী

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক স্মরণীয় নাম। বিপ্লবী আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং কিংবদন্তি হলেন প্রীতিলতা। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ প্রীতিলতার জন্ম ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে।

চট্টগ্রাম শহরের ডা.খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয়ে তার প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়। মেধাবী ছাত্রী ছিলেন প্রীতিলতা। ১৯২৮সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকায় ইডেন কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩০ সালে আই এ পরীক্ষায় তিনি সম্মিলিত মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থান অধিকার করে কলকাতার বেথুন কলেজে বি. এ. ক্লাসে ভর্তি হন। সেখানেও মেধার স্বাক্ষর রাখেন।

কিশোর বয়স থেকেই তিনি বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। তিনি বাঙালি বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন এবং বন্ধু ও সহযোদ্ধা কল্পনা দত্তর সঙ্গে এই দলে যোগ দেন। মাস্টারদা সূর্যসেনের আদেশে ১৯৩২ সালে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব দখলের বিপ্লবী অভিযানে ১৫ সদস্যের দলের নেতৃত্ব দেন। সফলভাবে বিপ্লবী অভিযান শেষে ফেরার সময় গুলিতে আহত প্রীতিলতা পটাসিয়াম সায়ানাইড বিষ খেয়ে আত্মবিসর্জন দেন।

প্রীতিলতার এই আত্মদানের কাহিনী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণকে উজ্জ্বল করে তোলে। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও অনেক নারী স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন।

বীর ও সাহসী নারীর প্রতীক প্রীতিলতা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেও ছিলেন নারীদের অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণা।

নারীদের নিজস্ব ভাষা এনভিশু

প্রাচীন চীনের নারীরা প্রায়শই সমাজে অবহেলিত হওয়ায় তাদের অধিকার আদায়ে কয়েকশ বছর ধরে লড়াই করেছে। হুনান প্রদেশের একটি স্বল্প উন্নত জেলা সিয়াংওয়াংয়ে এনভিশু কেবল নারীদের ব্যবহারের জন্য একমাত্র চীনা হস্তলিপি। যা আবিষ্কার হয়েছিল কয়েকশ বছর আগে।

বিশ্বের একমাত্র লিঙ্গ-ভিত্তিক লিপি এটি। এনভিশুতে একটি বর্গাকার আকৃতির ফন্ট এবং সরু স্ট্রোক রয়েছে যা পিঁপড়ার আকার তৈরি করে। এনভিশুতে প্রায় ৭০০ টি অক্ষর রয়েছে যা একাধিক অর্থ উপস্থাপন করে। অতীতে, শুভ বার্তাগুলি প্রায়শই কাগজের টুকরো, অন্যের হাত বা রুমালে করে অন্য নারীদের কাছে গোপনে তথ্য সরবরাহ করতে লেখা হতো। এটাকে বলা হয়ে থাকে এক ধরনের গোপন লিপি।

এ অঞ্চলে নারীদের সামাজিক অবস্থান ছিল ক্ষীণ। বাড়িতে অবস্থান, পরিবারের দেখভাল, বাচ্চা লালন পালন এবং স্বামীর অনুগত থাকা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। তারা স্কুলে পড়ার সুযোগ না পেয়ে নিরক্ষর জীবন যাপন করতো।

হুনান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভাষা তত্ত্ববিদ অধ্যাপক পেং জেরুন বলেন, "যখন তাদের পড়াশুনা করতে দেওয়া হয়নি, তখন তারা লিখিত আকারে তাদের চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি লিপিবদ্ধ করার জন্য নিজস্ব একটি স্ক্রিপ্ট উদ্ভাবন করে।“

বেশিরভাগ এনভিশুর রচনাগুলি নারীদের জীবন যাপনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ছিল । বিয়ে, পারিবারিক জীবন, শ্রম, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, সংস্কৃতি এবং বিনোদন, রীতিনীতি, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং নৈতিকতার মতো বিষয়গুলি এতে জুড়ে ছিল। তারা সুখ, শান্তি,মান-অভিমান এবং কষ্ট সবই এ লিপিতে তুলে ধরতো।

প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn