বাংলা

‘বিজনেস টাইম’ পর্ব- ৪

CMGPublished: 2024-03-15 14:23:49
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-উন্নয়নের হালচাল নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘বিজনেস টাইম’।

এই পর্বে থাকছে:

১. বাংলাদেশে মাত্র ছয় বছরে স্মার্ট ফোনে বাজার মাতাচ্ছে চীনা কম্পানী ভিভো

২. চীনে কঠোর পরিশ্রমেই চলতি বছরে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সম্ভব

৩. চীনের ফোল্ডেবল স্ক্রিন স্মার্ট ফোনের বাজার বড় হচ্ছে

সাক্ষাৎকার:

স্মার্ট ফোনের কারখানার প্রসঙ্গ এলে অবধারিতভাবে চলে আসবে চীনের নাম। চীনে উৎপাদন হওয়া নানা নামিদামি ব্র্যান্ডের স্মার্ট ফোন এখন সারা বিশ্বের মানুষের হাতে হাতে। বাংলাদেশে স্মার্টফোন নিয়ে সাত বছর আগে ব্যবসা শুরু করে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ভিভো। বাজারে শীর্ষ স্থানের একটি এখন ভিভোর দখলে। এত দ্রুত এমন জনপ্রিয়তার নেপথ্যে কী কারণ, এবং বাংলাদেশের বাজার সম্পর্কে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হলে চায়না আন্তর্জাতিক বেতারকে ভিভো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড লি যা বললেন-

‍“‌বাংলাদেশে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। এতে আমরা সবাই অবাক। এখানকার ব্যবসায়িক পরিবেশও ভালো। আমরা এখানে সরকার ও সমাজ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি।

ভিভো ৭ বছর ধরে বাংলাদেশে অফিসিয়ালি কাজ করছে। প্রতি বছর ব্যবসায় আমরা উন্নতি করছি, বাণিজ্যের পরিবেশও ভালো হচ্ছে। এক কথায় যদি বলি—বাংলাদেশ একটি কর্মশক্তি ও সম্ভাবনায় ভরপুর দেশ। এদেশে ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে এখন পর্যন্ত ভিভো স্মার্টফোন ব্যবহারকারী আছে ৭০ লাখ।

ভিভোর কৌশলের মূলমন্ত্র হলো ‘মোর লোকাল মোর গ্লোবাল’অর্থাৎ স্থানীয় বাজারের হাত ধরেই পৌঁছাতে হবে বিশ্ব বাজারে। এটাই হচ্ছে দীর্ঘ সময় সফলতার সঙ্গে ব্যাবসার কারণ। এর অর্থ হলো, ভিভো সবসময় তার ভোক্তা, অংশীদার, কর্মীদল এবং সর্বোপরি সমাজের ভালোর জন্য সবোর্চ্চটা করার চেষ্টা করে।”

প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা কৌশল ও কাজের পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন,

“ভিভোর আছে তিন হাজারেরও বেশি কর্মী। চীনা ও বাংলাদেশি সবাই এক হয়ে কাজ করছে। আমরা সবাই এদেশের সংস্কৃতিকে হৃদয়ে ধারণ করি। এক পরিবারের মতো কাজ করি। এক সঙ্গে থাকি, এবং মজাও করি।”

বিশ্লেষণ পর্ব:

চীনের এই বছরের সদ্য সমাপ্ত দুই অধিবেশনে, ২০২৪ সালের জন্য ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চীন সরকার।

পিকিং ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক চৌ লিয়ান মনে করেন, এই লক্ষ্যমাত্রা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে এবং এই ধরনের লক্ষ্য দেশের উদ্যোক্তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।

তবে এই আত্মবিশ্বাস শুধু দেশি উদ্যোক্তাদের মাঝেই বাড়বে না। চীনের প্রতি বিদেশি উদ্যোক্তাদের আস্থাও বাড়াবে।

উদাহরণস্বরূপ, ফাস্ট ফুড চেইন কেএফসির কথা বলা হয়েছে সিনহুয়ার এক বিশ্লেষণে। চীনজুড়ে এখন কেএফসির ১০ হাজার শাখা ছাড়িয়ে গেছে। সামনে এর শাখা আরও বাড়বে বলেও জানানো হয়েছে। জানুয়ারিতে, ছেংতু শহরে নতুন করে একটি বড় আকারের পরিষেবা কেন্দ্র চালু করেছে নেদারল্যান্ডসের এয়ারবাস। ইউরোপের বাইরে এয়ারবাসের এটাই প্রথম এ ধরনের সেবা কেন্দ্র।

শুধু এয়ারবাস বা কেএফসি নয়, ইউরোপীয় চেম্বার অফ কমার্স চীনের ওপর সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। তাতে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া বিদেশি কম্পানিগুলোর প্রায় ৫৯ শতাংশই চীনকে তাদের শীর্ষ তিন বিনিয়োগ গন্তব্যের একটি হিসেবে দেখছে।

চীনের বাজার এবং এর অর্থনীতির ব্যাপারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে দারুণ আশাবাদী, সেটার প্রতিফলন ঘটছে চীনে ক্রমবর্ধমান বিদেশি বিনিয়োগে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা গেছে, চীনে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ২০২৩ সালে ছিল ১ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান যা প্রায় ১৫৯ বিলিয়ন ডলার। চীনে বিদেশি বিনিয়োগের ইতিহাসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ।

এ ছাড়াও, দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগে গড়ে ওঠা নতুন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গত বছর বেড়ে ৫৩ হাজার ৭৬৬-তে দাঁড়িয়েছে। যা এর আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি।

চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিবিসি স্কুল অফ ফাইন্যান্সের ভাইস ডিন থিয়ান সুয়ান বলেছেন, চীনের অর্থনীতিতে পর্যাপ্ত অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তি এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে দেশটি কিছু চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি রয়েছে। যেমন বাহ্যিক কিছু প্রভাব ও অনিশ্চয়তা রয়েছে এর বাজার ঘিরে। কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর চাহিদার অভাব আছে। আবার কিছু খাতে জনগণের প্রত্যাশার সূচকে আছে ঘাটতি। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, চীনের অর্থনীতির পালে যে পরিমাণ হাওয়া লেগে আছে, বিপরীত শক্তিটা তারচেয়ে ঢের কম।

চীনেরউৎপাদন খাত এখন বিশ্বের মোট ৩০ শতাংশ জুড়ে আছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তা বাজার এবং বৃহত্তম অনলাইন খুচরা বাজারও চীন। এক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো দেখা যায়, তাতে কুশন হিসেবে কাজ করছে চীনের উচ্চমানের উন্নতি।

চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং চ্যাংলিন বলেন, ‘চীনা অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার ক্ষমতা, সুবিধা এবং সুযোগ পাচ্ছে এবং দেশটির উন্নয়নের ইতিবাচক প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে অপরিবর্তিত রয়েছে।

২০১৪ সাল থেকেই চীনের অর্থনীতি একের পর এক মাইলফলক ছুঁয়েছে। চীনের জিডিপি ২০১৪, ২০১৭ ও ২০২০ সালে ছিল যথাক্রমে ৬০ ট্রিলিয়ন, ৮০ ট্রিলিয়ন এবং ১০০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। কোভিডের পরও চীনের জিডিপি না কমে বরং বেড়েছিল। পরবর্তী দুই বছরে জিডিপি ছিল ১১০ ও ১২০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান।

।। প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

কর্পোরেট প্রোফাইল:

বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের বাজারে অস্থিরতা ও নানামুখি চ্যালেঞ্জের মধ্যেও চীনের ফোল্ডেবল স্ক্রিন স্মার্টফোন শিল্প দ্রুত এগিয়ে চলেছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে চীনের তৈরি ফোল্ডেবল স্ক্রিন মোবাইল ফোন বিক্রি হয়েছে প্রায় ১১ মিলিয়ন, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধানত দুটি কারণে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা থাকলেও চীনের ফোল্ডেবল স্ক্রিন ফোন বিক্রি বেড়েছে। এর একটি হলো চীনা কম্পানিগুলো ওএলইডি স্ক্রিন উৎপাদন করছে, এর ফলে ফোনের দাম কমেছে এবং বাজারে আরও বেশি বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে। আর দ্বিতীয় কারণটি হলো চাহিদা বৃদ্ধি। বর্তমানে অধিকাংশ ফোল্ডেবল ফোনে বড় স্ক্রিন এবং উন্নত মাল্টিটাস্কিংয়ের সুযোগ থাকায় এসব ফোনের চাহিদা বেড়েছে।

সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে উৎপাদিত ‘অর্গানিক লাইট-ইমিটিং ডায়োড (ওএলইডি) স্ক্রিন এবং ফোল্ডেবল স্মার্টফোন উৎপাদন কৌশল একত্রীকরণ এই শিল্পকে ধারাবাহিক বৃদ্ধি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে চীনের ফোল্ডেবল ফোন শিল্পের আকার আরও বৃদ্ধি পেয়ে ২৯ দশমিক ৮ বিলিয়নে দাড়াবে।

মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে অবস্থিত টিসিএল চায়না স্টার অপ্টোইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি কম্পানি লিমিটেড ওএলইডি স্ক্রিন তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ কারখানাটি অনেক বৃহৎহলেও এতে কর্মীর সংখ্যা খুব বেশি নয়, কেননা এই কারখানার অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয় বিভিন্ন ধরনের বৃহৎ মেশিনের মাধ্যমে।

এ কারখানায় উৎপাদিত প্রতিটি নতুন মডেলের স্ক্রিন বাজারে পাঠানো আগে ভালো ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। টিসিএল সিএসওটির গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের সিনিয়র প্রকৌশলী চিয়াং চিয়াচুন জানান, ফোল্ডেবল স্ক্রিন হতে হলে প্রতিটি মডেলের স্ক্রিনকে ২ লাখের বেশি বার ফোল্ড করা হয়।

২০২৩ সালে বিশ্ববাজারে ফোল্ডেবল ফোন ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়েছে। চালু করা ১৮টি নতুন মডেলের মধ্যে ১৩টিতেই ওএলইডি ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে, যা তৈরি করেছে চীনা কোম্পানিগুলো।

বিগত কয়েক বছরে ফোল্ডেবল ফোনগুলো আরো বিকশিত করার ফলে মানুষের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শুরুর দিকে যখন ফোল্ডেবল স্ক্রিনের ফোন প্রথমে বাজারে আনা হয়েছিল, তখন বিভিন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ফোল্ডেবল স্ক্রিন ফোনের দাম ১ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি ছিল। তবে গত চার থেকে পাঁচ বছরে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বিভিন্ন উপকরণে উদ্ভাবনের ফলে ফোল্ডেবর স্ক্রিন ফোনের দাম কমে ৪০০ থেকে ৬০০ মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।

কংমাও হোম এপ্লায়েন্সের খুচরা ব্যবস্থাপক কাও না জানান, যখন ফোল্ডেবল স্মার্টফোনগুলো কেবল বাজারে আনা হয়েছিল, তখন এর বিক্রির পরিমাণ কেবল মোটের তিন থেকে পাঁচ শতাংশ ছিল। এখন সেই সংখ্যাটি ২০ শতাংশে পৌঁছেছে।

সামগ্রিক স্মার্টফোন বাজার ক্রমাগত হ্রাস পেলেও সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, গত বছরে চীনে ফোল্ডেবল ফোনের কম্পানিগুলো বছরে দ্বিগুণেরও বেশি প্রবৃদ্ধি করেছে।

।। প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

।। সম্পাদনা: শাহানশাহ রাসেল

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শাহানশাহ রাসেল

অডিও সম্পাদনা- নাজমুল হক রাইয়ান

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn