চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-উন্নয়নের হালচাল নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘বিজনেস টাইম’
চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-উন্নয়নের হালচাল নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘বিজনেস টাইম’।
এই পর্বে থাকছে:
১. বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে চীন কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে
২. চীনে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি
৩. বৈদ্যুতিক গাড়িশিল্পের মোড় ঘোরাবে চীন-ইউরোপ অংশীদারত্ব
বিশ্লেষণ পর্ব:
সারা বছরের কর্মপ্রতিবেদন এবং বিগত বছরের অর্জনগুলোর পর্যালোচনা নিয়ে চীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই অধিবেশন। চীনের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় দুই অধিবেশন মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত। ইতিমধ্যে চীন দারিদ্রকে জয় করে মধ্যম মানের স্বচ্ছল সমাজে পরিণত হয়েছে। তাই চীন বাংলাদেশের জন্য হতে পারে রোল মডেল। বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে চীন যেভাবে ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি পাঁচটি বিষয়কে ইঙ্গিত করেছেন: ১. শিল্পায়নের বহুমুখীকরণ ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ২. যোগাযোগ ব্যবস্থা ৩. কৃষি প্রযুক্তি ও সুনীল অর্থনীতি ৪. দারিদ্র দূরীকরণে পরিকল্পনা কৌশল ৫. বৈশ্বিক জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্য
কর্পোরেট প্রোফাইল:
২০২৩ সালে চীনের অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ট্রিপ ডটকম প্রায় ১০ বিলিয়ন ইউয়ান নিট মুনাফা অর্জন করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ছয় গুণেরও বেশি। সম্প্রতি কম্পানিটি এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
ট্রিপ ডটকমের আর্থিক তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে তাদের নিট রাজস্ব ১০ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ইউয়ান এবং পুরো বছরে ৪৪ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ইউয়ান পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ১০৫ ও ১২২ শতাংশ বেড়েছে।
এ ছাড়া শেষ তিন মাসে হোটেল বুকিং থেকে আয় হয়েছে ৩৯০ কোটি ইউয়ান। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৩২ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে এ খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ১৭ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ইউয়ান।
কম্পানিটি আরও জানিয়েছে, ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে তাদের পরিবহন টিকিট বুকিং থেকে আয় হয়েছে ৪১১ কোটি ইউয়ান। এটি আগের আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৬ শতাংশ বেশি।
এ ছাড়া গেল বছরের শেষ তিন মাসে প্রতিষ্ঠানটির পর্যটন ও ছুটি সংক্রান্ত ব্যবসা থেকে আয় হয়েছে ৭০ কোটি ৪০ লাখ ইউয়ান। যা আগের বছরের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি। এ খাত থেকে ২০২৩ সালে পুরো বছরে আয় ছিল ৩১৪ কোটি ইউয়ান। এটিও আগের বছরের চেয়ে তিন গুণ বেশি।
একই বছর কম্পানিটির আউটবাউন্ড হোটেল এবং ফ্লাইট বুকিং ২০১৯ সালের তুলনায় ৮০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। অনলাইন এজেন্সিটি ২০২৩ সালে পণ্য গবেষণা ও উন্নয়নে ১২ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউয়ান ব্যয় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি।
ট্রিপ ডটকম গ্রুপের বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াং চিয়ানচাং জানান, পর্যটন শিল্পের উত্থান এবং বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় তাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বায়ন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ২০২৩ সালের অভিজ্ঞতার আলোকে আরও সমানের দিকে এগিয়ে যেতে চায়।
।। প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
।। সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
ভিন দেশে চীন:
সম্প্রতি জেনেভায় হয়ে গেল আন্তর্জাতিক মোটর শো। বৈদ্যুতিক গাড়িই ছিল ওই প্রদর্শনীর মূল আকর্ষণ। আর সেই প্রদর্শনীর হাত ধরে গত সপ্তাহেই চীনের গাড়ি নির্মাতা সিয়াওপেং মোটরসের সঙ্গে চুক্তিতে সই করেছে জার্মানির ভক্সওয়াগন। মূলত বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে দুটো প্রতিষ্ঠান যেন একে অপরকে নানা ধরনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করতে পারে, সে লক্ষ্যেই করা হলো এ চুক্তি।
এ চুক্তিতে এটা স্পষ্ট যে, দুনিয়াজুড়ে গাড়িশিল্পে আসতে চলেছে একটি বড় পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনটা যেন সত্যিকার অর্থেই যুগান্তকারী কিছু হয়, সেটা নিশ্চিত করতে ইউরোপের গাড়িনির্মাতাদের নজর কিন্তু চীনের দিকেই।
আর বাজারে সেটার ছাপও রেখে চলেছে চীনের গাড়ি নির্মাতারা। জেনেভা মোটর শোর প্রেস্টিজিয়াস কার অব দ্য ইয়ার প্রতিযোগিতায় এবার ফাইনালিস্টদের তালিকায় থেকে নিজের নজরকাড়া ডিজাইন, পারফরমেন্স ও প্রযুক্তির কথা জানান দিয়েছে চীনের গাড়ি বি ওয়াই ডি সিল।
সিয়াওপেংয়ের মতো চীনের উদীয়মান বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতাদের প্রসঙ্গ টেনে জার্মানির সেন্টার অব অটোমোটিভ ম্যানেজমেন্ট-এর প্রধান স্টেফান ব্রাৎজেল বলেছেন, সমগ্র বিশ্বের গাড়ি শিল্প একটি বড়সড় পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আর এ পরিবর্তনটা আসছে বিশ্ববাজারে নতুন কিছু নির্মাতার হাত ধরে, যারা কিনা গাড়ির জন্য নতুন জ্বালানি এবং এর ডিজিটালাইজেশন নিয়ে কাজ করে চলেছেন।
গাড়ি শিল্পে চীনের সঙ্গে ইউরোপের এ ধরনের মেলবন্ধন নতুন নয়। ৪০ বছর আগে ১৯৮০ সালে ভক্সওয়াগন তাদের প্রথম স্যানটানা গাড়িটি তৈরি করেছিল চীনে। চীনজুড়ে তখন ওই গাড়িটির নাম ছিল সবার মুখে মুখে।
সেই ঐতিহাসিক চুক্তির পর থেকেই চীনের সঙ্গে ইউরোপের গাড়ি শিল্পের সখ্যতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। ইউরোপের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে মূলত চীনের প্রযুক্তি, গাড়ির উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বাজার ধরার কৌশল। অন্যদিকে ইউরোপের কাছ থেকে প্রকৌশল দক্ষতা আদান-প্রদান করতে চায় চীনের।
তবে নতুন দিনের গাড়ির এ যাত্রায় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউরোপীয় গাড়ি বাজারের ওপর মাত্রাতিরিক্ত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ।
গতবছর চীনের বৈদ্যুতিক যানগুলোকে ইউরোপের বাজারের জন্য হুমকি বিবেচনা করে ভর্তুকি বিষয়ক তদন্তের একটি বিতর্কিত ঘোষণা দিয়েছিলেন ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়ান। ইউরোপজুড়ে ব্যাপক সমালোচিত হয় উরসুলার ওই সিদ্ধান্ত। তার ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল জার্মান অ্যাসোসিয়েশন অফ দ্য অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি।
এ সাপেক্ষে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেয়ে ইউরোপ ও চীনের উচিত গাড়ি নির্মাতাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রযুক্তিকে সাদরে গ্রহণ করা এবং গবেষণা ও উন্নয়নে প্রাযুক্তিক জ্ঞান আদান-প্রদান করা। বৈদ্যুতিক গাড়ির লাখ লাখ ক্রেতার চাহিদার কথা ভেবেই এমনটা করা উচিত বলে মত দেন তারা।
।। প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ
।। সম্পাদনা: শাহানশাহ রাসেল
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শাহানশাহ রাসেল
অডিও সম্পাদনা- নাজমুল হক রাইয়ান
স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী