বাংলা

বিজনেস টাইম ১

CMGPublished: 2024-02-23 18:01:19
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-উন্নয়নের হালচাল নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘বিজনেস টাইম’।

এই পর্বে থাকছে:

১. এবার মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে চীনের লজিস্টিক কম্পানিগুলো

২. চীন- বাংলাদেশ সর্ম্পকের বিশ্লেষণ

৩. বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্র বাজারে এখনs চীন।

ভিন দেশে চীন:

এবার মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে চীনের লজিস্টিক কম্পানিগুলো

মধ্যপ্রাচ্যে ই-কমার্সের দ্রুত বিকাশের ফলে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। আর সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে অঞ্চলটিতে ব্যবসার পরিধি সম্প্রসারণ করছে চীনের লজিস্টিক কম্পানিগুলো।

দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্য সরবরাহের ব্যয় কমাতে অনেক চীনা লজিস্টিক কম্পানি এসব দেশে তৈরি করেছে গুদামঘর তথা ওয়্যারহাউস। বর্তমানে চীনের বিদেশি গুদামের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২ হাজার ৪০০। এর ফলে বিদেশি গ্রাহকদের আরও দ্রুত সেবা দিতে পারছে চীনা কম্পানিগুলো।

সরকারি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স আমদানি ও রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ৩৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রপ্তানি বেড়েছে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ।

এসব ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর বিক্রয় নেটওয়ার্ক পৃথিবীর ২২০টিরও বেশি দেশ এবং অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে।

একটি চীনা লজিস্টিক কম্পানির অপারেশন ম্যানেজার ইউন বো। দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) দুটি গুদাম রয়েছে তার। এই গুদামঘর থেকে প্রতিদিন সারা বিশ্ব থেকে আসা ৩০ হাজারেরও বেশি পার্সেল ব্যবস্থাপনা করা হয়। যার বেশিরভাগই আসে চীন থেকে। আনলোড, স্ক্যানিং, বাছাই এবং লোড করার পর পার্সেলগুলো মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় পাঠানো হয়।

তিনি জানান, চীনের ই-কমার্স শিল্প বর্তমানে ভালো অগ্রগতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শিশু পণ্য, সেল ফোন, খুচরা যন্ত্রাংশ, আসবাবপত্র এবং এমনকি বিড়ালের খাবারসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য রপ্তানি করছে চীন। প্রথমদিকে শিশুদের পণ্যগুলোর বিক্রেতারা বাজার ধরতে না পারলেও এখন এগুলো মধ্যপ্রাচ্যের সবখানে পাওয়া যাচ্ছে। আগে এই পণ্যগুলোর প্যাকেজে শুধু চাইনিজ নির্দেশনা থাকলেও এখন প্যাকেজে আরবি সংস্করণও যুক্ত হয়েছে।

ইউনের এ কম্পানি দুই বছর আগে দুবাইতে কাজ শুরু করে। একান্ত প্রচেষ্টা, সাহসিকতা ও অধ্যবসায়ের ফলে পার্সেল হ্যান্ডলিং সক্ষমতার দিক থেকে শীর্ষ তিনটি লজিস্টিক কম্পানির একটি হয়ে উঠেছে তার কম্পানি।

ইউন বোর কম্পানির ব্যবস্থাপনা দলে ৩০ জনেরও বেশি চীনা নাগরিক কাজ করছেন।

আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স কম্পানির জেনারেল ম্যানেজার চাও চাও বলেন,

`আমরা যখন প্রথম মধ্যপ্রাচ্যে এসেছিলাম তখন এটি খালি জায়গা ছিল। আমরা চীন থেকে সরঞ্জাম কিনে এনেছিলাম। আমাদের সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহকর্মীরা তো প্রথম দিকে কাজ আর জীবনকে এক করে ফেলেছিলেন। কারণ দিনভর তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল।‘

ইউন এবং তার সহকর্মীরা তাদের অফিস বিল্ডিংকে বিভিন্ন চীনা সাংস্কৃতিক উপাদান দিয়ে সজ্জিত করেছিলেন এবং বসন্ত উৎসব বা চীনা নববর্ষ উদযাপন করতে একসঙ্গে ডাম্পলিং তৈরি করেছিলেন।

এখন ইউন এবং তার বস দুবাইতে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য একটি বড় গুদামঘর স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন।

এবার বিশ্লেষণ পর্ব:

চীন এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রায় অর্ধশতক হতে চলেছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতির ও বন্ধুত্বের সাক্ষি হয়ে আছে দেশটি। সম্প্রতি দেশে তাৎক্ষণিক লেনদেন নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রিয়েল টাইম গ্রোস সেটলমেন্ট এ যুক্ত হয়েছে চীনা মুদ্রা ইউয়ান। দুই দেশের এর বাণিজ্যে কি প্রভাব? এসব নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের সেন্টার ফর পলিসি ডায়লোগ (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তৌফিকুল ইসলাম খান ।ইন্টারভিউয়ে তিনি বলেন.

“বাংলাদেশ চায়নার অর্থনৈতিক সর্ম্পক বেশ পুরনো ও গভীর। দেশের যতগুলো আমদানীর উৎস আছে তার মধ্যে চায়না সর্বপ্রথম। চীন থেকে কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও ভোগ্যপন্য আমদানি করা হয়।ফলে সেই দিক থেকে বাণিজ্য সর্ম্পকে চায়না খুব গুরুত্বপূর্ণ।বাংলাদেশি পণ্য চায়নার বাজারে সেই ভাবে আমরা রপ্তানী করতে পারিনা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যদি দেখি যখন চায়না বাংলাদেশকে যখন বাণিজ্য সুবিধা দিল তখন আমরা রপ্তানী বেশ ভালো গতিতে বাড়াচ্ছি, যদিও দ্বিপাক্ষিক ভাবে বেশ বড় বাণিজ্য ঘাটতি আছে।

সাধারণ ভাবে বাংলাদেশের সাথে সকল দেশের আমদানি রপ্তানি বা বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন গুটিকয়েক মুদ্রায় হয়, যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডলারেই সবচেয়ে বড়।এখন আমাদের লেনদেন প্রক্রিয়াতে যদি চায়নার মুদ্রা ইউয়ান যুক্ত করি এটা নিঃসন্দেহে একটা ইতিবাচক দিক হবে।এটার বড় কারণ হলো, বাংলাদেশে বৈদিশিক মুদ্রায় লেনদেনে একটা চাপ রয়েছে। সাধারণ ভাবে আমাদের ডলার সংকট রয়েছে।যখন চায়নার সাথে তাদের মুদ্রায় লেনদেন করতে পারবো, তখন লেনদেনের নতুন পথ যুক্ত হল। সেদিক থেকে এটা খুব ইতিবাচক। তবে একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা হলো চায়নার সাথে লেনদেনে আমরা বেশির ভাগই আমরা প্রদান করি।আমরা যা গ্রহণ করি তার চেয়ে বেশি আমরা প্রদান করি। আমদানি ব্যয় মেটাতে যে খরচ তার তুলনা রপ্তানী থেকে আয়, বৈদিশিক সাহায্য,লোন বা ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের পরিমাণ কম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সাথে বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, তার মূল্য পরিশোধে ইউয়ান মুদ্রায় ব্যবহার করলে ডলারে চাপ কমবে। সুতরাং এই ধরনের প্রাক্রিয়া একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ।সার্বিকভাবে বহুবৈচিত্রে ঘটাতে সাহায্য করবে। এক দুই বছরে একটা বড় পরিবর্তণ হয়তো দেখা যাবেনা, সময় লাগবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি বিষয়, রপ্তানী বাজারকে চায়নার বাজারে কিভাবে আরও সম্প্রসারিত করা যায়। বাংলাদেশের পণ্য সহজে রপ্তানি করতে পারি কিনা তার জন্য অন্যান্য লজেস্টিকস সহযোগিতা, বাণিজ্য সহযোগিতা আরও বাড়াতে হবে।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চীনা বিনিয়োগকে ব্যাক্তি খাতে আরও আকৃস্ট করতে পারি কিনা।যদিও এখন বিনিয়োগের পরিমান বাড়ছে।”

কর্পোরেট প্রোফাইল:

বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্র বাজারে এখন চীন।

এবারের বসন্ত উৎসবে বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে কমেডি ঘরানার চলচ্চিত্র ‘ইয়োলো’। ৩০ বছর বয়সী বেকার এক নারীকে নিয়ে ইয়োলোর গল্প। ওই নারী তার বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়িতে থাকেন। একপর্যায়ে তার সঙ্গে দেখা হয় এক বক্সিং কোচের। বদলে যেতে থাকে ওই নারীর জীবন। সিনেমায় বেকার ওই নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী-পরিচালক চিয়া লিং। চরিত্রের প্রয়োজনে যাকে ঝরাতে হয়েছে ৫০ কেজি ওজন।

লিংসহ সিনেমার অন্য কুশলীদের এই পরিশ্রম বৃথা যায়নি একটুও। মুক্তির পর থেকে ইয়োলো আয় করেছে ২৭২ কোটি ইউয়ান। সেই হিসাবে দিনে ২০ কোটি ৭০ লাখ ইউয়ানেরও বেশি আয় করেছে সিনেমাটি।

বসন্ত উৎসবকে ঘিরে জমে উঠেছে চীনের সিনেমা বাজার। গত বছরের তুলনায় সিনেমা দেখার জন্য এবার দর্শকদের চাহিদাও ছিল বেশি। যে কারণে দেশটির সিনেমার ইতিহাসে আয়ের দিক থেকে যাবতীয় রেকর্ড ভেঙেছে এ বছর মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো।

চীনের চায়না ফিল্ম অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এক পরিসংখ্যান দেখা গেছে, বসন্ত উৎসবের ছুটিতে অর্থাৎ গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিনেমার টিকিট বিক্রি হয়েছে ১৬ কোটি ৩০ লাখ। এতে আয় হয়েছে ৮০২ কোটি ইউয়ান। ২০২২ সালের তুলনায় যা যথাক্রমে প্রায় ১৯ ও ২৬ শতাংশ বেশি।

আয়ের বিচারে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ‘পেগাসাস-২’ । কমেডি ঘরানার সিনেমাটি লেখক ও পরিচালক হান হ্যানের ২০১৯ সালের ব্লকবাস্টার ফিল্ম রেসিংয়ের সিক্যুয়েল। পেগাসাস-২ এখন পর্যন্ত আয় করেছে ২০৪ কোটি ইউয়ান। এ ছাড়া, তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অ্যানিমেটেড ফিল্ম সিরিজ বনি বিয়ার্সের ‘টাইম টুইস্ট’।

অ্যানিমেটেড সিরিজটি আয় করেছে ১৩৯ কোটি ইউয়ান। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ‘আর্টিকেল-২০’ আয় করেছে ১৩৩ কোটি ইউয়ানেরও বেশি।

দেশটির বৃহৎ টিকিট বিক্রি পরিষেবাগুলোর একটি মাওয়ান। প্রতিষ্ঠানটির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রায় ৪০ ভাগ দর্শক নিজ শহরে ফিরে যাওয়ার সময় বা ভ্রমণের সময় সিনেমার টিকিট কিনেছিলেন। যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বক্স-অফিসের মোট আয়ের ৫৯ শতাংশই এসেছে তৃতীয় ও চতুর্থ-স্তরের শহরগুলো থেকে। এটিও গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

।। প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

।। সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

s

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শাহানশাহ রাসেল

অডিও সম্পাদনা- নাজমুল হক রাইয়ান

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn