বাংলা

চলতি বাণিজ্যের ৫৩তম পর্ব

CMGPublished: 2024-01-19 19:16:11
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান

‘চলতি বাণিজ্য’

চলতি বাণিজ্যের ৫৩তম পর্বে থাকছে:

১. শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখে এ বছরও ৩ কোটি গাড়ি বিক্রির প্রত্যাশা

২. থাইচৌ ন্যাশনাল মেডিকেল হাই-টেক জোনে কোটি ডলার বিনিয়োগ

৩. চীনা ফিড উৎপাদনকারী থেকে লাভবান বাংলাদেশের পোল্ট্রি খামারিরা

শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখে এ বছরও ৩ কোটি গাড়ি বিক্রির প্রত্যাশা

শুভ আনোয়ার, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বিশ্বে বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির বাজারে পরিচিত নাম টেসলা। সম্প্রতি গাড়ি বিক্রিতে সেই টেসলাকেও ছাড়িয়ে গেছে চীনের বিওয়াইডি বা ‘বিল্ড ইওর ড্রিম’। শুধু টেসলা নয়, গাড়ি রপ্তানিতে চীন এরই মধ্যে জাপানকেও ছাড়িয়ে গেছে, যা দেশটিকে পরিণত করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ি রপ্তানিকারক দেশে। ২০২৩ সালে রেকর্ড পরিমাণ গাড়ির উৎপাদন এবং বিক্রি করেছে দেশটি।

বিশ্ব বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও ২০২৩ সালে রেকর্ড পরিমাণ গাড়ির উৎপাদন ও বিক্রি করেছে চীনের খ্যাতনামা গাড়ি কোম্পানিগুলো। দেশটিতে থাকা আন্তর্জাতিক গাড়ির ব্র্যান্ডগুলোও দেখেছে বিক্রির জোয়ার। চলতি বছরও এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় প্রতিষ্ঠানগুলো।

গত বছর দেশটির গাড়ি নির্মাতারা ৩ কোটি ১ লাখ ৬০ হাজার গাড়ি তৈরি করেছে এবং এর মধ্যে ৩ কোটিরও বেশি ইউনিট বিক্রি করেছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। চায়না অ্যাসোসিয়েশন অব অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (সিএএম) এসব তথ্য জানিয়েছে।

সিএএমের ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল ছেন শিহুয়া বলেন, “২০২৩ সালের শুরুর দিকে বাজারে বিক্রি কম ছিল। কিন্তু বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিক্রি বাড়তে শুরু করে। এত বড় গাড়ির বাজার অন্য কোনও দেশ দেখেনি। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং অনুকূল শিল্পনীতির হাত ধরে চলতি বছর চীনের গাড়ি শিল্প আরও গতি পাবে বলে আশা করছি।”

২০০৯ সাল থেকে চীন বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ির বাজার। চলতি বছর ৩ কোটি ১০ লাখ গাড়ি বিক্রি হবে বলে আশাবাদী সিএএম। যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি হবে। এর মধ্যে নিউ এনার্জি বা পরিবেশবান্ধব গাড়ি বিক্রি হবে ১ কোটি ১৫ লাখ ইউনিট। ২০২৩ সালে যা ছিল ৯৫ লাখ ইউনিট।

চীনের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘বিল্ড ইওর ড্রিম’ ২০২৩ সালে ৩০ লাখ ২০ হাজার বৈদ্যুতিক গাড়ি ও প্লাগ-ইন হাইব্রিড বিক্রি করেছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে শুধু ডিসেম্বরেই ৩ লাখ ৪০ হাজার ইউনিটের বেশি গাড়ি বিক্রি হয়েছে। প্রথমবারের মতো, এটি বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রি হওয়া বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক টেসলাকে ছাড়িয়ে গেছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, চলতি বছর বিওয়াইডির মোট বিক্রি ৪০ লাখ ইউনিটে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে ২০২৩ সালে চীনা স্টার্টআপগুলোর মধ্যে গাড়ি বিক্রির তালিকায় শীর্ষে ছিল লি অটো। গেল বছর প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ৭৬ ইউনিট গাড়ি বিক্রি করে।

চলতি বছর দেশটির বেশ কিছু গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিদেশি বাজারগুলোতে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তারা জানিয়েছেন, তাদের গাড়িগুলো এখন নরওয়ে, ডেনমার্ক ও ইসরায়েলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

কোম্পানি প্রোফাইল:

থাইচৌ ন্যাশনাল মেডিকেল হাই-টেক জোনে কোটি ডলার বিনিয়োগ

শুভ আনোয়ার, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে করোনা ভাইরাসের টিকার জন্য বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে ইউরোপের ওষুধ প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা। চীনের থাইচৌ ন্যাশনাল মেডিকেল হাই-টেক ডেভেলপমেন্ট অঞ্চলকে বিশ্বব্যাপী ওষুধ উৎপাদন এবং ডায়াবেটিস সংক্রান্ত চিকিৎসা-পণ্যের ভিত হিসেবে গড়ে তুলতে আড়াই কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

চীনের প্রথম রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের ফার্মাসিউটিক্যাল হাই-টেক জোন হলো থাইচৌ ন্যাশনাল মেডিকেল হাই-টেক ডেভেলপমেন্ট জোন। পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের থাইচৌ শহরের ৪০৮ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে এ অঞ্চল।

সম্প্রতি সেখানে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ উৎপাদনে এক যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

চুক্তির আওতায়, গত নভেম্বরে চীনে বাজারজাত করা ডায়াবেটিস থেরাপি, ডাপাগ্লিফ্লোজিন এবং মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড উৎপাদনের জন্য কোম্পানিটি ১৯ কোটি ইউয়ান অর্থাৎ ২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে। ধারণা করা হচ্ছে এ বিনিয়োগের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন দাঁড়াবে এক হাজার কোটি ইউয়ানে।

এই অঞ্চলে ওষুধ, পেট্রোকেমিক্যালস ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সরঞ্জাম উৎপাদন করা হয়। অঞ্চলটি বহির্বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত। বর্তমানে এই মেডিকেল জোনে ১ হাজার ২০০টিরও বেশি বায়োফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

থাইচৌয়ের ভাইস-মেয়র ইয়ে তংহুয়া জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে ‘হেলদি চায়না’ উদ্যোগের প্রচার করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী চীনের বায়োফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন ছড়িয়ে দিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

সম্প্রতি এক সম্মেলনে কোম্পানিটি এই বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল। মূলত উচ্চ রক্তচাপ, হাইপারলিপিডেমিয়া এবং হাইপারগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তিনটি প্রধান দীর্ঘস্থায়ী রোগ: ক্রনিক হার্ট ফেইলিউর, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ এবং ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি রোগের ওষুধ উৎপাদন এবং চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতেই এমন বিনিয়োগের ঘোষণা দেয় অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের শিক্ষাবিদ এবং ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত চংশান হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের পরিচালক কি চুনবো জানান, ‘একজন মানুষের কিডনি ও হৃদপিণ্ড ভালো রাখার জন্য উচ্চ রক্তচাপ, হাইপারলিপিডেমিয়া এবং হাইপারগ্লাইসেমিয়ার প্রাথমিক এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

কার্ডিওভাসকুলার, রেনাল এবং মেটাবলিজমের প্রায় এক হাজারেরও বেশি বিশেষজ্ঞ থাইচৌ সরকার আয়োজিত ওই সম্মেলনে অংশ নেয়। সম্মেলনে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা হয়।

ভিনদেশে চীন:

চীনা ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশি পোল্ট্রি খামারিরা

শুভ আনোয়ার, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বাংলাদেশের পুষ্টি সরবরাহের প্রধান খাত পোল্ট্রি। প্রাণিজ আমিষ এবং পুষ্টির প্রধান উপাদান মাংস ও ডিম আসে এই খাত থেকে। এতদিন দেশটির পোল্ট্রি খামারিদের বড় শঙ্কা ও দুশ্চিন্তার কারণ ছিল পশু-পাখির বিভিন্ন রোগ। তবে চীনের বিশ্বখ্যাত পোল্ট্রি ফিড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিউ হোপের পোল্ট্রি ফিড, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, রোগ এবং ব্যবস্থাপনা তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার পর থেকে ব্যাপক হারে প্রসারিত হয়েছে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প।

বাংলাদেশের মোট মাংসের চাহিদার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশই আসে পোল্ট্রি শিল্প থেকে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার কাছে অবস্থিত গাজীপুর থেকেই আসে পোল্ট্রি উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশ। এই অঞ্চলটির খামারিদের একসময় বড় দুশ্চিন্তা ছিল হাঁস-মুরগির বিভিন্ন রোগ এবং মানসম্পন্ন ফিড নিয়ে।

যদিও গত কয়েক দশকে চীনা ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিউ হোপের সহায়তায় এসব সমস্যার সমাধান করেছেন গাজীপুরের খামারিরা। প্রতিষ্ঠানটির মানসম্পন্ন ফিড, আধুনিক প্রযুক্তি, রোগ সংক্রান্ত সঠিক তথ্য এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে লাভবান হচ্ছেন খামারিরা। ফলে সম্প্রসারিত হয়েছে পোল্ট্রি শিল্প। কর্মের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের। একই সঙ্গে সস্তায় পুষ্টির যোগান দিয়ে দেশে মেধাবী এবং সুস্থ সবল প্রজন্ম সৃষ্টিতে অবদান রাখছে।

গাজীপুরে নিজেই পোল্ট্রি খামার পরিচালনা করছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, তার খামারে ৪০ হাজার মুরগি রয়েছে। চীনা ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিউ হোপ থেকে মানসম্পন্ন ফিড এবং রোগ ব্যবস্থাপনার সঠিক তথ্য পেয়েছেন তিনি। এরপর গত এক দশকে রহমানের খামার সম্প্রসারিত হয়েছে ব্যাপক হারে।

পোল্ট্রি খামারের পাশাপাশি নিউ হোপের ডিলার হিসেবেও কাজ করছেন রহমান। এসব ফিড নিজ খামারের মুরগিকে খাওয়ানোর পাশাপাশি বিক্রিও করছেন। মাসে প্রায় ২০০ মেট্রিক টন পোল্ট্রি ফিড বিক্রি করছেন তিনি।

২০০৬ সালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় গড়ে তোলা হয় নিউ হোপের উৎপাদন কারখানা। ফিড মিলটি বাংলাদেশে পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদন করছে ১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

৮ দশমিক ১১ একর জায়গায় নির্মিত এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রায় তিন শতাধিক কর্মচারী ও শ্রমিক। চীনা ও বাংলাদেশিরা একই সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করছেন এই প্রতিষ্ঠানে।

গাজীপুরের একাধিক খামারি জানান, নিউ হোপ তাদের স্বল্প মূল্যে মানসম্পন্ন পোল্ট্রি ফিড সরবরাহ করছে। তাদের কাছ থেকে স্বল্প মূল্যে ফিড নিয়ে ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন তারা। এর ফলে বাড়ছে গ্রামীণ অর্থনীতিও।

বাংলাদেশের অনেক শিক্ষিত তরুণ এখন মুরগির খামারকে পেশা হিসেবে নিচ্ছেন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন।

নিউ হোপের সেবা ও প্রশিক্ষণের আওতায় স্থানীয় খামারিরা বেশ দক্ষ হয়ে উঠছেন। ইতোমধ্যে আড়াই হাজার পোল্ট্রি খামারি নিয়েছেন প্রশিক্ষণ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে আরও ৭ হাজার ২০০ নারী খামারিকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রাশেদ কবির নামের একজন খামারি জানান, নিউ হোপের সার্ভিস টিমের সাহায্যে তারা আধুনিক খামার গড়ে তোলার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং অনেক কিছু শিখেছেন।

বাংলাদেশে মুরগির রোগ নির্ণয়ের প্রথম ল্যাব নিউ হোপেরুন ভেটেরিনারি ল্যাব। এ ল্যাব তৈরির ফলে গাজীপুরের প্রান্তিক খামারিরা বিভিন্ন সেবা পাচ্ছেন বলে জানান নিউ হোপেরুন ভেটেরিনারি ল্যাবে কর্মরত প্রাণী চিকিৎসক রাবেয়া সুলতানা সোমা।

বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে ৪ লাখ টন পোল্ট্রি ফিড এবং ৪ কোটি ছানা উৎপাদন করছে নিউ হোপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ের খামারিদের কাছে মানসম্মত মাছ, মুরগি ও গরুর খাবার পৌঁছে দিতে বাংলাদেশে নিউ হোপ গ্রুপের রয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠান।

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

অডিও সম্পাদনা- নাজমুল হক রাইয়ান

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn