বাংলা

‘চলতি বাণিজ্য’পর্ব ৪৩

CMGPublished: 2023-11-10 18:09:21
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চলতি বাণিজ্যের ৪৩তম পর্বে থাকছে:

১. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শক্ত অবস্থানে চীনের কুরিয়ার খাত

২. চীনের বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয় দুবাইয়ের উটের দুধ

৩. বাংলাদেশে চীনের তৈরি টানেল: কৃষি ও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শক্ত অবস্থানে চীনের কুরিয়ার খাত

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জায়গা করে নিয়েছে চীনের কুরিয়ার খাত। চলতি বছর চীনের কুরিয়ার সেবাখাতের ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বিশেষ করে চীনের মূল ভূ-খণ্ড, হংকং, ম্যাকাও ও তাইওয়ানের পাশপাশি বিভিন্ন দেশে এসব পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাইজেশন ও প্রযুক্তির ব্যবহার আর বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ফলে এ খাত আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।

দেশ-বিদেশে পণ্য পরিবহনের জন্য এক বিশেষ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে চীন। এই ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কেবল মালামাল পরিবহনের জন্যই তৈরি করা হয়েছে কার্গো বিমান পরিবহনের ৭টি আলাদা রুট। এসব রুমের মাধ্যে চীন থেকে খুব সহজে, কম সময়ে দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে মালামাল পরিবহন করা যায়।

অন্যদিকে ট্রেনযোগে মালামাল পরিবহনের জন্য তৈরি করা হয়েছে এক বিশেষ পোস্টাল প্যাকেজ। এর মাধ্যমে চীন থেকে মালামাল পৌছে যায় রাশিয়ার রাজধানী মস্কো পর্যন্ত। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২শ’ দেশের সঙ্গে এই পোস্টাল সরবরাহ সেবা গড়ে উঠেছে।

পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে চীনের পোস্টাল এক্সপ্রেস শিল্পে যুক্ত হয়েছে অন্তত ১০টি আন্তর্জাতিক মালামাল পরিবহনের রুট। এসব রুটে এরইমধ্যে পণ্য পরিবহনের কার্গো ফ্লাইট চলাচলও শুরু করেছে।

বিশেষ করে কেবল কার্গো বিমান চালনার জন্য মধ্য চীনের হুপেই প্রদেশের ইছৌ শহরে গড়ে তোলা হয়েছে বিশেষায়িত বিমানবন্দর। এটি এশিয়ার প্রথম কার্গো-ভিত্তিক বিমানবন্দর। চালুর পর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৫ হাজার টন পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হয়েছে এই বন্দর ব্যবহার করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিমানবন্দর থেকে ইউরোপের দেশ জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ১০০টন পণ্য পরিবহন করতে সময় লাগে মাত্র ১০ ঘণ্টা।

লিউ ছি, এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোলার, ইছৌ হুয়াহু এয়ারপোর্ট

“রানওয়ের কার্যক্রমে গতি আনার সব পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। দিনের বেলা সাধারণত যাত্রী পরিবহনের কাজ করা হয় তাই আমরা একটা রানওয়ে ব্যবহার করি। আর রাতের বেলা দুটি রানওয়েই ব্যবহার করা হয় যেন কার্গোবিমানগুলো আরও সহজেই ওঠানামা করতে পারে।“

এদিকে, চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পণ্য পরিবহন সুবিধার জন্য এখন পর্যন্ত চীন থেকে হামবুর্গ ও ডুইসবুর্গসহ ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে মোট ১০৪টি আন্তর্জাতিক রুটে ট্রেন পরিচালনা করা হয়েছে। বিশেষ করে চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেনের মাধ্যমে ইউরোপের ১৩টি দেশে এই মালামাল পরিবহন করা হয়েছে।

ছাও কুওচুন, পরিচালক, পোস্টাল উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র, বেইজিং ইউনিভার্সিটি অব পোস্টস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস

“এক্সপ্রেস ডেলিভারি কোম্পানিগুলো ক্রমেই তাদের অবকাঠামো নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করছে, বিশেষ করে জল-স্থল ও আকাশে তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করছে। এর মাধ্যমে কাজের মান, স্থিতিশীলতা ও পণ্য পরিবহন অনেক সহজ করছে। এর মাধ্যমে এ খাতের বিদেশী ব্যবসায়ীদেরদের মনোযোগ আকর্ষণ করা সহজ হবে।“

এমন সেবা পেয়ে চাঙ্গা বিভিন্ন রকম পণ্যের ব্যবসা। বিশেষ করে করোনার পর চীনের ই-কমার্স খাতে বেড়েছে পণ্য বেচা-কেনার পরিমাণ। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, মধ্য চীনের হেনান প্রদেশের সুচাং শহরে স্থাপন করা কারখানাগুলোর উৎপাদিত পণ্যের প্রায় ৮০ শতাংশই দেশের বাইরে চলে যায়।

ছাই সিয়াওচিয়ে, ক্রস বর্ডার ই-কমার্স ম্যানেজার, উইগ কোম্পানি

“আমাদের ৬ ধরনের পণ্য রয়েছে যা বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশে বিক্রি হয়। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে আমরা ৫০ হাজারের বেশি পণ্যের আন্তর্জাতিক ক্রয়াদেশ পেয়েছি। এই পণ্যের পরিমাণ গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।“

চায়না পোস্ট বলছে, অন্তত ১২টি দেশ ও অঞ্চলে পণ্য পরিবহন ও বিতরণ সুবিধার জন্য ১৫টি ওয়ারহাউজ নির্মাণ করেছে তারা। এসব ওয়ারহাউজের মাধ্যমে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কোম্পানির পণ্য সরবরাহ করা হয়।

পরিসংখ্যান বলছে, চীনের কুরিয়ার কোম্পানিগুলো এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে মোট ১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন পার্সেল পাঠিয়েছে। চীনের স্টেট পোস্ট ব্যুরো বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় চীনের মূল ভূ-খণ্ডের বাইরের বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠানো কুরিয়ারের পরিমাণ প্রায় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে।

ভিনদেশে চীন:

বাংলাদেশে চীনের তৈরি টানেল: কৃষি ও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: কেবল ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজই করেনি বরং আঞ্চলিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে চট্টগ্রামকে যুক্ত করেছে কর্ণফুলী টানেল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যোগাযোগ সহজ হওয়ায় কৃষিপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা সহজ হবে, ন্যায্য দাম পাবে কৃষক। আবার শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠায় স্থানীয় তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও ভূমিকা পালন করবে এই সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভাগ চট্টগ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সড়ক টানেল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’।

বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণ করা এই টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত ৪ লেন বিশিষ্ট এই টানেলে খরচ হয়েছে ১ হাজার ১শ’ ৪২ দশমিক ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সম্প্রতি এ টানেল উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত এই টানেলটি সংযোগ স্থাপন করেছে চট্টগ্রাম শহরের দুই পাড় পতেঙ্গা ও আনোয়ারাকে।

এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে। সহজ করবে চট্টগ্রাম শহরের ভেতরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে। কিন্তু স্থানীয়রা কীভাবে দেখছেন এই প্রকল্পকে?

স্থানীয়রা বলছেন, এই এলাকার কৃষি ও উৎপাদন ব্যবস্থাকে বহুদূর এগিয়ে নেবে টানেলের কল্যাণে তৈরি সহজ যোগাযোগ। তারা বলছেন, এখানকার উৎপাদন করা কৃষিপণ্য যেমন সহজেই দূর-দূরান্তে পৌছানো সম্ভব হবে তেমনি কলকারখানা স্থাপনের ফলে তৈরি হবে কর্মসংস্থান।

কেবল ঢাকা চট্টগ্রাম নয় বরং সমস্ত বাংলাদেশের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক তৈরিতে ভূমিকা পালন করবে এই টানেল। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রামকে যুক্ত করবে কক্সবাজারের সঙ্গে। অন্যদিকে এই টানেলের মাধ্যমে এশিয়ান হাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে চট্টগ্রাম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ সহজ হওয়ার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মচাঞ্চল্য আরও বাড়বে। বাড়বে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্ভাবনা। আর সব মিলিয়ে ইতিবাচক অবদান রাখবে পুরো দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায়।

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনের বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয় দুবাইয়ের উটের দুধ

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদন করা উটের দুধ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে চীনের বাজারে। ফলে চাঙ্গা হচ্ছে এখানকার উটের খামার।

সম্প্রতি চীনের আমদানি মেলায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে উৎপাদিত উটের গুড়োদুধ প্রদর্শন করা হয়। এখানে ক্রেতাদের ব্যাপক নজরকাড়ে এসব গুড়ো দুধ। চীনের মেলায় অংশ নেওয়া এমনই একটি কোম্পানি ক্যামেলিসিয়াস।

দুবাইয়ের এই কোম্পানির খামার ব্যবস্থাপক পিটার পাল নাগি। তিনি জানান, এক কুজ বিশিষ্ট উটগুলো তীব্র গরম ও তীব্র ঠাণ্ডার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। এসব উট পাওয়া যায় আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও মধ্য এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোতে। উটের কুজ যতো কম হয়, দুধও ততো বেশি হয়।

এটি সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উটের দুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিও। কোম্পানিটি জানায়, প্রতি বছর এই কোম্পানি উৎপাদন করে ৫৫ লাখ লিটার উটের দুধ ও ২৪০ মেট্রিক টন গুড়ো দুধ।

কোম্পানিটি জানায়, ১৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে একটি ফার্ম আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। পুরো আরব উপসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে তারা এখন সবেচেয়ে উন্নত মানের উটের দুধের পণ্য উৎপাদন করে। এসব নানা কারণে চীনের বাজারে কোম্পানিটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে, বাড়ছে বাজার।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn