বাংলা

চলতি বাণিজ্যের ৪০তম পর্ব

CMGPublished: 2023-10-20 18:13:51
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান

‘চলতি বাণিজ্য’

চলতি বাণিজ্যের ৪০তম পর্বে থাকছে:

১. তৃতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন অনুষ্ঠিত

২. গাড়ি উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিতে পারে চীন’

৩. ক্রেতা আকর্ষণে চীনে ‘জুয়লারি আর্ট স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেছে ফ্রান্সের ভ্যান ক্লিফ

তৃতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন অনুষ্ঠিত

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনে হয়ে গেল তৃতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন। এবারের ফোরামে অংশ নেয় ১৪০টি দেশ ও ৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি। ফোরাম উদ্বোধন করে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন চীনের প্রেসিডেন্ট ও চীনের ক্ষমতাসীন দল চীনা কমিউনিস্ট পার্টি –সিপিসি’র সাধারণ সম্পাদক সি চিনপিং। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এই ফোরামে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ও সহযোগিতা জোরদার করতেই প্রাচীন রেশম পথের অনুকরণে প্রস্তাব করা হয় বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ।

তৃতীয়বারের মতো চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে বসে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম। এর আগে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে আরও দুইবার বিআরআই ফোরাম আয়োজন করা হলেও এবারের ফোরামের গুরুত্ব একেবারেই আলাদা। কেননা, চলতি বছর উদযাপন করা হচ্ছে বিআরআইয়ের পথচলার ১০বছর পূর্তি।

বিআরআই সহযোগিতার আওতায় গেল এক দশকে নেওয়া হয় ৩ হাজারের বেশি প্রকল্প। এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বব্যাপী নেওয়া এসব প্রকল্পের অধীন রেলওয়ে, ব্রিজ ও পাইপলাইন তৈরি করা হয়। এছাড়া এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয় এবং যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা হয়। তাইতো উদ্বোধনী ভাষণে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বলেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতা পার করেছে সফলতার এক দশক।

সি চিনপিং, চীনা প্রেসিডেন্ট

“আজ আমরা একত্রিত হয়েছি বৈশ্বিক সহযোগিতার বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। চীন সরকার ও চীনা জনগণের পক্ষ থেকে এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমি যে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ প্রস্তাব করেছিলাম, এ বছর তার দশম বার্ষিকী। বিআরআইয়ের ধারণা নেওয়া হয়েছে প্রাচীন রেশম পথের অনুকরণে। এতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যোগাযোগ বাড়ানো, নীতিগত সহযোগিতা জোরদার, অবকাঠামো-বাণিজ্য-অর্থনীতি ও মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ স্থাপনের ব্যাপারে। পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন চালিকাশক্তি যুক্ত করতে, বৈশ্বিক উন্নয়নের নতুন সুযোগ তৈরি করতে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে।“

এবারের সম্মেলনে যোগ দেয় সারা বিশ্বের ১৪০টি দেশের নেতারা। আসেন ৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। সব মিলিয়ে বেইজিংয়ে জড়ো হয় ৪ হাজারের বেশি অতিথি। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন বিআরআই প্রস্তাবের লক্ষ্য বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে মানুষের পরিস্পরিক বিনিময় বাড়ানো। এ সময় বহুমাত্রিক বিআরআই সংযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করা, বিশ্বব্যাপী মুক্ত অর্থনীতি, পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন উৎসাহিত করা, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এগিয়ে নেওয়া, সহ মোট ৮ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং।

২১ শতকের রেশম পথের অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সমুদ্রের রেশম পথের সমন্বয়ে ২০১৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ প্রস্তাব করে চীন। পরিসংখ্যান বলছে, চীন ও বিআরআইয়ের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আমদানি-রফতানি হয় ১৯ দশমিক ১ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিবছর বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এদিকে চীন ও অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে বিনিয়োগ হয়েছে ৩৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরমধ্যে চীন এককভাবে বিনিয়োগ করেছে ২৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বলেন, আরও একটি সোনালী দশক অপেক্ষা করছে বিআরআই এর অগ্রযাত্রায়।

এই ফোরামের নানা কার্যক্রম সরাসরি প্রচার করে চায়না মিডিয়া গ্রুপ ও চীনের অন্যান্য গণমাধ্যম।

ভিনদেশে চীন:

‘গাড়ি উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিতে পারে চীন’

ঢাকা, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনা গাড়ী উৎপাদন কারখানার গন্তব্য হতে পারে বাংলাদেশ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। চায়না মিডিয়া গ্রুপের বাংলা বিভাগের ঢাকা ব্যুরোকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। এসময় তিনি আরও বলেন, চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

টিপু মুনশি, বাণিজ্যমন্ত্রী, বাংলাদেশ

“চীন কেবল গাড়ি তৈরিই করছে না বরং খুব কম দামে পাওয়া যায়। বেশ কিছু গাড়ির ব্র্যান্ড এসেছে এবং এর মানও ভালো। আমরা চাই তারা বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করুক। তাতে করে আমাদের এখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, আমাদের দেশের মানুষ এখানে তৈরি করা গাড়িই ব্যবহার করতে পারবে, পাশাপাশি আমরা বাইরেও রফতানি করতে পারবো। ফলে আমাদের জন্য একটা বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে। তাদের ডেসটিনেশন হতে পারে বাংলাদেশ, তাদের গাড়ি তৈরির জায়গা হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নিতে পারে, এখাতে বিনিয়োগ করতে পারে। তাদের এগিয়ে আসা দরকার। বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগ করার মতো, যৌথ বিনিয়োগে যাওয়ার মতো কিংবা নিজেরাই শতভাগ বিনিয়োগ করে বাংলাদেশে উৎপাদন করতে পারে। ফলে এখানে উৎপাদন করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারবে, আবার বাইরেও রফতানি করতে পারবে। এটা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে।“

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

কোম্পানি প্রোফাইল:

ক্রেতা আকর্ষণে চীনে ‘জুয়লারি আর্ট স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেছে ফ্রান্সের ভ্যান ক্লিফ

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনে ব্যবসা বাড়াতে ও ক্রেতা আকর্ষণ করতে ভিন্নধর্মী পথ অবলম্বন করছে ফ্রান্সের জুয়েলারি জায়ান্ট ভ্যান ক্লিফ অ্যান্ড অ্যারপেলস। চীনের বাণিজ্য নগরী সাংহাইতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জুয়লারি আর্ট স্কুল। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আধূনিক সময়ের রুচি, ফ্যাশন ও স্টাইলের সঙ্গে মিল রেখে চীনা তরুণ-তরুণীদের প্রয়োজনকে সামনে রেখে সাজানো হয়েছে স্কুলের পাঠক্রম।

ভ্যান ক্লিফ অ্যান্ড অ্যারপেলস। ফ্রান্সের বিখ্যাত অলংকার তৈরির প্রতিষ্ঠান। ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ সারা বিশ্বে সুনাম কুড়িয়ে চীনের বাজার ধরতে মরিয়া এটি। এরই অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে এক ভিন্ন ধর্মী উদ্যোগ। খোলা হয়েছে অলংকার বিষয়ক স্কুল ‘স্কুল অব জুয়েলারি আর্ট’।

নিকোলাস বস

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রেসিডেন্ট নিকোলাস বস বলেন, এই স্কুলটির মাধ্যমে কলা ও সৌন্দর্যের ইউরোপীয় ধারনার সঙ্গে চীনা ধারনার বিনিময় ঘটাতে চান তারা। তিনি একইসঙ্গে আশাবাদী, চীনের বাজার ও ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হবেন তারা।

চীনের মূল ভূ-খণ্ডে স্থাপন করা প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের নাম দেওয়া হয়েছে লিওকোল। সাংহাইয়ের রিচমন্ড টুইন ভিলাতে স্থাপন করা এই ক্যাম্পাসে যেমন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রকমের কোর্স করানো হবে, তেমনি থাকবে নানা রকম প্রদর্শনী ও আলোচনা-সভা-সেমিনারের আয়োজন।

নিকোলাস বস বলেন, চীনাদের মধ্যে অলংকার সম্পর্কে জানার ও বোঝার আগ্রহ দিনদিনই বাড়ছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের চীনাদের মধ্যে অলংকার ও সৌন্দর্যের নানা দিক দিয়ে জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তিনি আরও জানান, দুই দশক আগে চীনে ভ্যান ক্লিফ অ্যান্ড অ্যারপেলস কোম্পানির প্রথম আউটলেট খোলার পর থেকেই তারা খেয়াল করছেন, এখানকার অলংকারের বাজার দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর তখন থেকেই তাদের পরিকল্পনায় একটি অলংকার বিষয়ক স্কুল খোলার চিন্তা আসে।

বস আশাবাদী যে হংকংয়ের মতো চীনের এই স্কুলটিও মানুষের সাড়া পাবে, চীনের মেধাবীদের অলংকার সম্পর্কে পড়ালেখার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারবে। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, চীনা তরুণীদের মধ্যে অনেকেই এখানকার স্থানীয় অলংকারের বাজার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা পোষণ করে ও নিজেরাই কিছু একটা করতে চায়। তাদের জন্য এই স্কুল বেশ কিছু অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করছে বলেও জানান তিনি।

সাংহাইয়ের এই আর্ট স্কুল ছাড়াও ‘স্কুল অব জুয়েলারি আর্ট’ এর আরও দুটি শাখা আছে। এর প্রথম শাখা খোলা হয় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আর দ্বিতীয়টি চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn