বাংলা

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘চলতি বাণিজ্য’ ৩৬তম পর্ব

CMGPublished: 2023-09-22 10:00:05
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চলতি বাণিজ্যের ৩৬তম পর্বে থাকছে:

১. চীন-আসিয়ান নতুন উন্মুকরণের পথে হাঁটছে চীন

২. প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জোরে চীনা বাজারে ফেরার চেষ্টা স্যামসাংয়ের

৩. মালয়েশিয়ার গাড়িশিল্প: ইলেক্ট্রিক রূপান্তরের কারিগর চীন

চীন-আসিয়ান নতুন উন্মুকরণের পথে হাঁটছে চীন

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে নতুন করে উন্মুক্তকরণের পথে হাঁটছে চীন। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে হয়েছে গেল চীন-আসিয়ান এক্সপো ও বিজসেন লিডার্স ফোরাম। নানিং শহরে অনুষ্ঠিত এই এক্সপোতে অংশ নেয় আসিয়ানের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর অন্তত ২ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী নেতারা। এক্সপোতে চীন ও আসিয়াদের দেশগুলোর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নানা খাতে ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি পরিমাণ অর্থের বিনিয়োগ চুক্তি সাক্ষরিত হয়।

চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী নানিংয়ে সম্প্রতি হয়ে গেল চীন-আসিয়ান এক্সপো। কমপক্ষে ২ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এই এক্সপোতে অংশ নেয়।

চীনের বাজারে আসিয়ান দেশগুলোর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এই প্ল্যাটফর্ম। এবারের এক্সপোর বিশেষত্ব হলো, প্রথমবারের মতো এক্সপোতে চীন-আসিয়ান বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে ২০ বছরের অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি এখানে চীন-আসিয়ান শিল্প পার্ক ও চায়না পাইলট ফ্রি ট্রেড জোনের নানা কার্যক্রমও এখানে তুলে ধরা হয়।

চীন-আসিয়ান এক্সপোতে বিপুল সংখ্যক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। এক্সপোর আয়োজকরা জানায়, এই এক্সপোতে মোট ৪৮৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইউয়ানের বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে। এসব চুক্তিতে অংশ নিয়েছে বিভিন্ন দেশের অন্তত ৪৭০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তবে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে।

এবারের এক্সপোতে বিনিয়োগ বিষয়ক ৬০টি প্রচার কার্যক্রম চালানো হয়। এসব কার্যক্রমের ফলে ১৮৪টি বিভিন্ন রকমের প্রকল্প চুক্তিও সই হয়। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক প্রকল্পে এক সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখান আসিয়ানের ব্যবসায়ীরা।

এক্সপোতে ফেডারেশন অব ফ্রেঞ্চ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়শনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লুও চিয়াচুন জানান, এখানে অংশগ্রহণ করে প্রতিবারই নতুন কিছু পেয়েছেন।

লুও চিয়াচুন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, ফেডারেশন অব ফ্রেঞ্চ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়শন>

“সেই ২০০৫ সালে যখন দ্বিতীয়বার আসিয়ান-চীন এক্সপো হয় তখন থেকেই আমি অংশগ্রহণ করে আসছি। আমি ফ্রেঞ্চ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়ে এই বিশাল আয়োজনে অংশ নিয়েছি। এ বছর ২০তম এক্সপো হচ্ছে। আমি বলতে পারি যতোবারই অংশ নিয়েছি, ততোবারই নতুন কিছু না কিছু পেয়েছি।“

এদিকে, আসিয়ান দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম আরও উন্মুক্ত করা এবং ক্রমান্বয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার করতে চায় চীন। বিশেষ করে আসিয়ান দেশগুলো থেকে কৃষি পণ্যের আমদানি জোরদার করা ও শিল্পায়নের মধ্যবর্তী পর্যায়ের পণ্যগুলোর বাণিজ্য আরও জোরদার করতে চায় চীন। সে লক্ষ্যেই চীন-আসিয়ান এক্সপোর সাইডলাইনে বিশেষ এক ইভেন্টের আয়োজন করা হয়।

যৌথভাবে বিশেষ এই ইভেন্টের আয়োজন করে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের স্থানীয় সরকার। এই ইভেন্টের থিম ঠিক করা হয়েছে ‘ইনস্টিটিউশনাল ওপেনিং-আপ ফর নিউ রিজিওনাল ইকোনমিক গ্রোথ’।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভা্সি মিনিস্টার লি ফেই জানান, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে উভয় পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে চায় চীন।

লি ফেই, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার

“চীন-আসিয়ান মুক্তি বাণিজ্য অঞ্চল কার্যকর ও জোরদার করতে আসিয়ানের সঙ্গে কাজ করতে চায় চীন। এ ব্যাপারে আগেভাগেই আমরা একটি সমঝোতায় পৌঁছতে চাই। আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বা আরসিইপি বাস্তবায়ন করা, নতুন সদস্য নেওয়াসহ অন্যান্য যাবতীয় কাজ যতো দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করবো। একইসঙ্গে সত্যিকারের বহুপক্ষবাদ চর্চা করা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও উন্মুক্ত করার ব্যাপারে কাজ করতে চাই।“

আসিয়ানের সঙ্গে ভৌগলিক কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করা এবং চীনের সামনে আসিয়ান দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করছে। এরমধ্যে আছে ভিয়েতনাম-চীন স্মার্ট বন্দর নির্মাণ, বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে খাদ্য নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদার করা এবং নানিংয়ে একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কোর্ট স্থাপন করা।

এর আগে ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত হয় চীন-আসিয়ান প্রথম এক্সপো। ২০২২ সালেও টানা ২৩ বছরের মতো চীনের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে জায়গা দখল করে আছে আসিয়ান।

ভিনদেশে চীন:

মালয়েশিয়ার গাড়িশিল্প: ইলেক্ট্রিক রূপান্তরের কারিগর চীন

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানীতে ফিরতে শুরু করেছে মালয়েশিয়া। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গাড়ি তৈরি শিল্পে রূপান্তর ঘটাচ্ছে এই দেশ। বিশাল এই কার্যক্রমের চালিকা শক্তি হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে চীন।

চীনের বিদ্যুৎচালিত গাড়ি তৈরির অন্যতম প্রতিষ্ঠান গ্রেট ওয়াল মোটর –জিডাব্লিউএম এ বিষয়ে কাজ করছে মালয়েশিয়ায়। জিডাব্লিউএমের তৈরি করা অত্যাধুনিক বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ‘ওরা গুড ক্যাট’ এখন বেশ জনপ্রিয় মালয়েশিয়ায়। চলতি বছরের শুরুর দিকে বেশ কয়েকজন গ্রাহক এ গাড়িটি অর্ডার করলে দ্রুত তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয় গাড়িটি।

২০২২ সালে প্রথম মালয়েশিয়ায় কোম্পানি স্থাপন করে জিডাব্লিউএম। গ্রেটওয়াল মোটর সেলস মায়েশিয়া’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক চুই আনকি জানান, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বিশেষ করে এই দেশে গাড়ির অনেক ক্রেতা। কিন্তু পরিবেশবান্ধব জ্বালানীচালিত গাড়ির কথা বিবেচনায় নিলে বলা যায় এদেশের বাজার এখন এক বিশাল নীল সমুদ্র। কাজেই এই সম্ভাবনা আমরা কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছি। এদিকে, গেল বছর চীনা গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি আনুষ্ঠানিকভাবে মালয়েশিয়ায় তাদের উৎপাদন করা নতুন মডেলের গাড়ি ‘আট্টো-থ্রি’ উদ্বোধন করে।

মালয়েশিয়ান অটোমোটিভ অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশ করা তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালে মালয়েশিয়ায় বিদ্যুৎচালিত গাড়ি বিক্রি হয় ২ হাজার ৬৩১টি। অথচ ২০২১ সালে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি বিক্রির সংখ্যা ছিলো ২৭৪টি। অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে এ সংখ্যা বেড়েছে ৮৬০ শতাংশ।

কোম্পানি প্রোফাইল:

প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জোরে চীনা বাজারে ফেরার চেষ্টা স্যামসাংয়ের

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সমন্বয় ঘটিয়ে চীনা বাজারে আবারো নিজেদের সরব উপস্থিতির জানান দেওয়া শুরু করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি কোম্পানি স্যামসাং। ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী একের পর এক অত্যাধুনিক ফোন উদ্ভাবন করে বাজারে ছাড়ছে এই কোম্পানিটি।

বাজার গবেষণা সংস্থা ক্যানালিসের প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে চীনে ফোনসেট বেচাকেনা হয় ২৮৭ মিলিয়ন। এই সংখ্যা তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালের পর এই প্রথম চীনে ফোন বিক্রির সংখ্যা ৩০০ মিলিয়নের নিচে নেমে যায়।

ক্রমবর্ধমান নিম্নগামী অবস্থা থেকে উঠে আসতে সম্প্রতি চীনের বাজারে ক্রমেই ব্যবসায়ীক কার্যক্রম বাড়াচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রযুক্তি কোম্পানি। বিশেষ করে চীনের স্মার্টফোন বাজারের একটি বড় অংশ দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে স্মার্টফোন উৎপাদনের হার ক্রমেই বাড়াচ্ছে স্যামসাং। আর সে কারণেই তরুণ প্রজন্মের ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে তারা বাজারে আনছে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন ফোনসেট।

চলতি বছর স্যামসাং বাজারে আনে কোম্পানিটির সেরা মানের ৩টি ফ্ল্যাগশিপ ফোন গ্যালাক্সি এস-টুয়েন্টি থ্রি, গ্যালাক্সি এস-টুয়েন্টি থ্রি প্লাস এবং এস-টুয়েন্টি থ্রি আলট্রা। এসব ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ক্যামেরা। এসব ফোনে আছে উচ্চ রেজুলেশনের ইমেজ সেন্সর ও উদ্ভাবনী পিক্সেল প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে পেশাদার ও কাঙ্ক্ষিত মানের ছবি তোলার সুযোগ রাখা হয়। ফলে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যায় স্যামসাং।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn