বাংলা

চলতি বাণিজ্যের ৩৫তম পর্ব

CMGPublished: 2023-09-15 19:20:30
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চলতি বাণিজ্যের ৩৫তম পর্বে থাকছে:

১. প্রতিযোগিতা এগিয়ে চীনের ডিজিটাল সেবা বাণিজ্য

২. চীনের স্বাস্থ্যসেবাখাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে বিদেশি কোম্পানিগুলো

৩. ইকুয়েডরের সব বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে পরিবেশবান্ধব, কাজ করছে চীনা কোম্পানি

প্রতিযোগিতা এগিয়ে চীনের ডিজিটাল সেবা বাণিজ্য

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে চীনের ডিজিটাল সেবা বাণিজ্য। ক্রমবর্ধমান চাহিদার আলোকে ডিজিটাল এই সেবার মান উন্নয়নে নীতিগত সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে চীন সরকার। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে সারা বিশ্বে ডিজিটাল প্রযুক্তি রফতানিতে ৫ম অবস্থানে আছে এই দেশ।

জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাধনা চীনের সঙ্গে মিশে আছে বহু বছর ধরে। আবার চীন সরকার দীর্ঘদিন ধরেই উৎসাহ দিয়ে আসছে প্রযুক্তির উদ্ভাবনের ব্যাপারে।

এবার সেই উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতাই ফল দিতে শুরু করেছে। চীনের নানা বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিপণ্য সারা বিশ্বে চমক দেখিয়ে চলেছে। বিশেষ করে প্রতিযোগিতার বাজার স্থান করে নিচ্ছে শীর্ষ অবস্থানে।

সম্প্রতি চীনের বাণিচ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে উৎপাদন করা প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা বিভিন্ন দেশের বাজারে প্রতিযোগিতা করে টিকেই কেবল থাকছে না বরং সামনের সারিতে জায়গা করে নিয়েছে।

ওয়াং তোংতাং, পরিচালক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

“বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা একটি ধারণা দিয়েছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণকে প্রায় ২ শতাংশ পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে ডিজিটাল প্রযুক্তিখাত। ২০২২ সালে ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে আমদানি-রফতানি করা যায় এমন বাণিজ্যের পরিমাণ ছিলো ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই প্রবৃদ্ধির পরিমাণ গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। একইসঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তি রফতানিতে বিশ্বে ৫ম স্থানে রয়েছে।“

এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওয়াং তোংতাং জানান, চীনের রফতানি করা জিডিটাল পণ্যের পরিমাণ ১২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে এর আর্থিক মূল্য ১ দশমিক ৪২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান।

“সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবশ্যই ডিজিটাল ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে এবং বাণিজ্য ডিজিটাল করার কার্যক্রম নিয়ে অবশ্যই কাজ করবে। আরও উন্নত মানের ডিজিটাল বাণিজ্য ব্যবস্থার সংস্কার করতে নতুন নতুন নীতি প্রণোয়ন করা হবে, সহযোগিতা আরও জোরদার করা হবে এবং ডিজিটাল বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।“

বিগ ডাটা, ক্লাউড কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অব থিংস ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো খাতে চীনের কোম্পানিগুলো খুবই ভালো করছে বলেও জানায় মন্ত্রণালয়। বলা হয়, তথ্য-প্রযুক্তির সেবাভিত্তিক খাতগুলো দারুণ ভূমিকা পালন করছে।

মন্ত্রণালয় জানায়, সামনের দিনগুলোতে সেবাখাতের আউটসোর্সিংয়ের জন্য এখাতকে ডিজিটাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। একইসঙ্গে এই খাতকে ঢেলে সাজাতে গবেষণা ও উন্নয়ন, ডিজআনি, পরীক্ষা-নীরিক্ষা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং লিজিংয়ের বিষয়ে কাজ করবে কর্তৃপক্ষ।

ভিনদেশে চীন:

ইকুয়েডরের সব বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে পরিবেশবান্ধব, কাজ করছে চীনা কোম্পানি

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের চীনা প্রযুক্তি ক্রমেই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বিদেশে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে স্থাপন করা সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে পরিবেশবান্ধব বায়ুচালিত কেন্দ্রে রূপান্তর করে দিয়েছে চীন। চীনের তোংফ্যাং ইলেক্ট্রিক কর্পোরেশন –ডিইসি এই কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৪টি ইউনিটেরই রূপান্তর কার্যক্রম শেষ হয়েছে, যুক্ত করা হয়েছে দেশটির মূল সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে। তাদের দাবি, জাতীয় গ্রিডের বহুমুখীকরণ প্রক্রিয়াকেই উৎসাহিত করা ও প্রথাগত বিদ্যুৎ উৎস থেকে বের হতে সাহায্য করবে ইকুয়েডরকে।

সুন্দর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের দেশ ইকুয়েডর। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি কিছুদিন আগেও জ্বালানী-বিদ্যুতের সংকটে ছিলো। কিন্তু এখন নিজেদের চাহিদার বেশিরভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মনোযোগ দিয়েছে তারা।

কেবল বিদ্যুৎকেন্দ্র নয় বরং নিজেদের আগে থেকে স্থাপন করা সব বিদ্যুৎকেন্দ্রকে রূপান্তর করা হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব বায়ুভিত্তিক কেন্দ্রে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের এই আমূল পরিবর্তন বা রূপান্তরের কাজ করছে চীনা কোম্পানি তোংফ্যাং ইলেক্ট্রিক কর্পোরেশন –ডিইসি। এর অংশ হিসেবে ইকুয়েডরের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৪টি ইউনিটেই ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। সম্প্রতি এসব কেন্দ্রে উৎপাদন করা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় মূল সঞ্চালন লাইনে। কোম্পানিটি বলছে, নির্ধারিত সময়ের ২০ দিন আগেই সবগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্রের রূপান্তর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

ইকুয়েডরের আন্দেস প্রদেশে স্থাপন করা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ মেগাওয়াট। একক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনের হিসেবে এটি ইকুয়েডরের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। আবার দক্ষিণ আমেরিকায় ডিইসি’র স্থাপন করা চীনা বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবেও এর অবস্থান প্রথম।

চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা প্রণয়ন, কাঁচামাল সরবরাহ ও পরিবহন, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ স্থাপন, কার্যক্রম চালু করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া পরীক্ষা-নীরিক্ষা, প্রাথমিক উৎপাদন শুরু করার কাজ করছে তোংফ্যাং ইলেক্ট্রিক কর্পোরেশন –ডিইসি। পাশাপাশি পুরো বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৪ সেট উইন্ড টার্বাইন, ট্রান্সফরমার বক্স ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থাপনার কাজও করবে ডিইসি।

কোম্পানিটি বলছে, পুরো বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবগুলো ইউনিটের এই রূপান্তর কাজ ইকুয়েডরের জাতীয় গ্রিডের বহুমুখীকরণ প্রক্রিয়াকেই উৎসাহিত করবে না বরং প্রথাগত বিদ্যুৎ উৎস থেকে বের হতেও সাহায্য করবে।

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনের স্বাস্থ্যসেবাখাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে বিদেশি কোম্পানিগুলো

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: স্বাস্থ্যসেবাখাতে চীন গুরুত্ব দেওয়ায় ক্রমেই সেখানে বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ। বিশেষ করে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও উৎসাহিত করতে চীন সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর এই সুযোগে দেশটিতে কার্যক্রম বাড়িয়ে চলেছে জার্মানিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি ফ্রেজেনিয়াস কাবি। কেবল নতুন নতুন স্বাস্থ্যসেবা পণ্যই বাজারে আনছে না বরং চীনের বিভিন্ন প্রদেশে গড়ে তুলছে কারখানা।

চলতি বছরের মার্চ মাসে বিনিয়োগ বিষয়ক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে চীন সরকার। সরকারি সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও উৎসাহিত করতে আরো নানামুখী পদক্ষেপ নেবে। বিশেষ করে চীনের বাজারে বিদেশি কোম্পানি ও তাদের প্রস্তুত করা পণ্যের প্রবেশ উৎসাহিত করতে সেবাখাতে আধুনিকায়ন করছে, বিদেশি বিনিয়োগের কোম্পানিগুলোকে দেশীয় কোম্পানিগুলোর মতোই সুবিধা দিচ্ছে।

এই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে বিদেশি কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে চীনের বাজারে গেল ২০ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করা জার্মানির ফ্রাংকুর্ট শহরের কাছে অবস্থিত হমবুর্গভিত্তিক কোম্পানি ফ্রেজেনিয়াস কাবি।

এমনিতেই প্রতি বছরই এই কোম্পানির উৎপাদন করা পণ্যের বাজার বড় হচ্ছে। ফলে বছর বছর বিনিয়োগ ও কার্যক্রম বাড়াচ্ছে এটি। তবে চীনের দেওয়া নানা সুযোগ ও সুবিধা কাজে লাগিয়ে এবার বিনিয়োগের পরিমাণ বড় করছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবাপণ্য উৎপাদনকারী জায়ান্ট কোম্পানি ফ্রেজেনিয়াস কাবি (নানছং) কোম্পানি লিমিটেড।

মূলত ২০০২ সালে এটি পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের রাজধানী নানছংয়ে কার্যক্রম ও বিনিয়োগ শুরু করে। এর পর থেকেই গেল ২০ বছরে একের পর এক নতুন পণ্য বাজারে এনেছে ফ্রেজেনিয়াস কাবি। এ জন্য এ পর্যন্ত অন্তত ৪ বার কোম্পানির কার্যক্রম বাড়িয়েছে এবং বিনিয়োগ করেছে ৫০০ মিলিয়ন ইউয়ান বা ৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে একটি স্বয়ংক্রিয় রক্তের উপাদান পৃথক করার উপাদান তৈরি নিয়ে কাজ করছে এটি।

ফ্রেজেনিয়াস কাবি (নানছং) কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ছ্যাং কুয়াংচোং জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছর পণ্য উৎপাদন কার্যক্রমকে স্থানীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হবে। ছ্যাং জানান, চীনের বিশাল বাজারে ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য পণ্যের চাহিদা পূরণে শিল্প চেইন ও ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে কাজ চলছে।

পরিসংখ্যান বলছে, চীনের বাজারে কোম্পানিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সক্রিয় পণ্যও এবং যন্ত্রপাতির চাহিদা চলতি বছর ৩৪ শতাংশ বেড়েছে যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এসব পরিসংখ্যানের উদাহরণ টেনে কোম্পানিটির মহাব্যবস্থাপক ছ্যাং কুয়াংচোং জানান, চীনে ব্যবসার পরিবেশ ও বাজারে পণ্যের যে চাহিদা তাই কোম্পানিটিকে আরো বেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত করছে। তার প্রত্যাশা, ২০২২ সালের তুলনায় চলতি বছর কোম্পানিটির রফতানি মূল্য ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn