বাংলা

‘চলতি বাণিজ্য’-২৮

CMGPublished: 2023-07-28 23:33:40
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান

‘চলতি বাণিজ্য’

চলতি বাণিজ্যের ২৮তম পর্বে থাকছে:

১. দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে চীনা নুডলস ‘লুওসিফেন’

২. ইকুয়েডরে ৫০ মেগাওয়াটের বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করলো চীনা কোম্পানি ডিইসি

৩. ইলেক্ট্রনিক পণ্যের ইতালিয়ান কোম্পানির নজর চীনের বাজারে

দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে চীনা নুডলস ‘লুওসিফেন’

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: সারা বিশ্বে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে চীনের তৈরি নুডলস। বিশেষ করে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ কুয়ংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী ‘লুওসিফেন’ নুডলস এখন ব্যাপকভাবে রফতানি হচ্ছে। নুডলস শিল্প খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ক্যাম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশে বেশি রফতানি হচ্ছে চীনের তৈরি নুডলস। স্থানীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি বছর কেবল একটি এলাকা থেকে নুডলস রফতানির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।

করোনা মহামারি শুরুর পর চীনজুড়ে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও সবচেয়ে বেশি বিক্রিত রেডি-টু-কুক খাবার ছিলো লুওসিফেং নুডলস।

চালের গুড়া দিয়ে তৈরি কিছুটা কড়া ঝাঁঝালো ও অসাধারণ স্বাদের এই নুডলস দারুণ প্রিয় ভোজন রসিকদের। স্নেইল রাইস নুডলস নামেও পেয়েছি পরিচিতি। ঐতিহ্যগতভাবে এই নুডলস তৈরি হয় চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ কুয়ংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের লিউছৌ শহরে।

এবার সারা বিশ্বের ভোজন রসিকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠছে চীনের বিশেষ এই সুগন্ধি নুডলস। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসে মিল আছে এমন দেশগুলো চীনা নুডলস আমদানি করছে। তাই তো চীনের এই অঞ্চলে গড়ে উঠছে নতুন নতুন নুডলস কারখানা।

এমনই একটি কারখানার বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করেন ছেন চিহাও। তিনি জানান, সম্প্রতি বিপুল সংখ্যক বিদেশি ব্যবসায়ী এই এলাকা পরিদর্শন করছেন এবং নুডলসের স্বাদ ও মান পর্যবেক্ষণ করছেন।

ছেন চিহাও, বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক পরিচালক, নুডলস কারখানা

“আমাদের পণ্যগুলো অনেক বিদেশি এসে দেখে, পরীক্ষা করে আর কিনতে আগ্রহী হয়। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ যেমন ভিয়েতনাম, ক্যাম্বাডিয়া ও থাইল্যান্ডের গ্রাহকরা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। এসব এলাকার মানুষ আমাদের এখানকার ঝাল ও মসলাদার লুওসিফেন নুডলস অনেক পছন্দ করে।“

নুডলস তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় বাদাম, শুকনো শালগমসহ বিভিন্ন রকমের বীজ। ফলে চালের গুড়ার সঙ্গে মিলে অন্যরকম এক স্বাদ তৈরি হয়। আর এটাই এই নুডলসকে ঝাল ও টকের সমন্বয়ে দিয়েছে বিশেষ স্বাদ। ফলে চীন ও চীনের বাইরের মানুষের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। স্থানীয় একজন নুডলস প্রস্তুতকারী কোম্পানির এই কর্মকর্তা জানান, সরবরাহ ব্যবস্থা দ্রুততর করার কাজ করছেন তারা। বিশেষ করে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে সময় মতো পণ্য পৌঁছে দিতে ওইসব দেশে ওয়ারহাউজ নির্মাণসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা।

হু চুনিয়াং, ব্যবস্থাপক, লুওসিফেন নুডলস উৎপাদক

“লুওসিফেন নুডলসের ওজন অনেক বেশি আর দামে কম। কাজে সরাসরি আকাশপথে এটি পাঠানো খুব সুবিধার নয়। বিদেশের স্থানীয় বাজারে আমরা কিছু ওয়্যারহাউজ স্থাপন করেছি। এসব কারণে পশ্চিম মালয়েশিয়া থেকে যেসব ক্রয়াদেশ আসে তা আমরা পরের দিনই সরবরাহ করতে পারি।“

কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কাস্টমস বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, বছর বছর এই নুডলস রফতানির পরিমাণ বাড়ছে। কাস্টমস জানায়, চলতি বছর শুধু লিউছৌ এলাকা থেকে লুওসিফেন নুডলস রফতানির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।

হুয়াং সু, উপ-কমিশনার, লিউছৌ কাস্টমস

“জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অন্তত ৩০৫ ব্যাচ লুওসিফেন রফতানি তদারকি করেছে। এসব নুডলসের দাম ৫০ মিলিয়ন ইউয়ান বা প্রায় ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। গেল বছরের তুলনায় এই নুডলস রফতানির পরিমাণ ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।“

২০০৮ সালে লুওসিফেং নুডলস অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

ভিনদেশে চীন:

ইকুয়েডরে ৫০ মেগাওয়াটের বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করলো চীনা কোম্পানি ডিইসি

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে মেয়ার শেষের ২০ দিন আগেই শেষ হয়েছে বায়ুচালিত একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এরইমধ্যে দেশটির প্রধান বিদ্যুৎ গ্রিডে দেওয়া হয়েছ সংযোগ। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ ও পরিচালনার পুরো কাজটি করেছে চীনা কোম্পানি তোংফেং ইলেক্ট্রিক করপোরেশন –ডিইসি।

ডিইসি জানায়, ইকুয়েডরের আনদেসে অবস্থিত পুরো প্রকল্পের কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। ফলে তা হস্তান্তর করার জন্যও প্রস্তুত। এই প্রকল্পটি থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এটি ইকুয়েডরের সবচেয়ে বড় বায়ুচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

কোম্পানিটি জানায়, পুরো প্রকল্পের ডিজাইন, মালামাল সরবরাহ থেকে শুরু করে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ স্থাপন, চালু করা, পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তারা। পাশাপাশি ১৪ সেট বায়ু কলের নির্মাণ ও হস্তান্তর পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করবে তারা।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবগুলো ইউনিটকে প্রধান গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করার মাধ্যমে তা ইকুয়েডরের জাতীয় গ্রিডের বহুমূখীকরণ সম্পন্ন হলো। এর পাশাপাশি প্রথাগত জ্বালানী ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারা থেকে বের হয়ে আসছে ইকুয়েডর।

কোম্পানি প্রোফাইল:

ইলেক্ট্রনিক পণ্যের ইতালিয়ান কোম্পানির নজর চীনের বাজারে

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: গেল কয়েক বছর ধরে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইতালির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। এর কারণ, ইলেক্ট্রনিক পণ্যের ব্যবহারে বিশ্বের সবেচেয়ে বড় ভোক্তা দেশ চীনের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে ইতালিয়ান কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে চীনের বাজারে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে ইতালিয়ান কোম্পানি মাসেরাটি ও রিয়া চায়না।

নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবনকে সহজ করে তোলার চেষ্টায় এগিয়ে আছেন চীনা নাগরিকরা। আর চীনাদের এই প্রবণতাকে ঘিরেই ইতালির গাড়িসহ নানা ইলেক্ট্রিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী হয়ে উঠেছে চীনে বিনিয়োগ করতে। ইতালির বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাসেরাটি গ্রেটার চায়না এসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম।

কোম্পানিটির ব্যবস্থাপক মিরকো বোরডিগা জানান, চলতি বছর এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া অটো শো’দে আকর্ষণীয় ফিচারের গাড়ি উন্মোচন করা হয়েছে চীনা ক্রেতাদের জন্য। তিনি জানান, অল্প সময়ের ব্যবধানে আরও নতুন পণ্য নিয়ে চীনের বাজারে হাজির হবেন তারা।

মিরকো বোরডিগা, ব্যবস্থাপক, মাসেরাটি গ্রেটার চায়না

“আমরা এই মডেলগুলো চীনে উন্মোচন করতে যাচ্ছি কারণ চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিষয়ক পণ্যের বাজার হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের প্রত্যেক ধরনের পণ্যের ইলেক্ট্রিক ভার্সন থাকবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে কেবল বিদ্যুৎচালিত পণ্যই বিক্রি করবো।“

এদিকে, কফি মেশিন প্রস্তুতকারী ইতালীর ব্র্যান্ড রিয়া ব্যাপক জোর কার্যক্রম চালাচ্ছে চীনে। বিশেষ করে যে কোন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে তারা অংশ নিয়ে নিজেদের পণ্যের প্রদর্শন করছে। সম্প্রতি হাইনানে শেষ হওয়া চায়না ইন্টারন্যাশনাল কনজিউমার প্রোডাক্টস এক্সপোতে অংশ নেয় রিয়া। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক সু সিয়াওলিং জানান, চীনা ক্রেতাদের জন্য বিশেষায়িত পণ্য নিয়ে কাজ করছেন তারা।

সু সিয়াওলং, ব্যবস্থাপক, রিয়া চায়না

“আমরা কিছু নতুন পণ্য বাজারে আনছি। এগুলো বিশেষভাবে চীনা ক্রেতাদের জন্যই আনা হয়েছে। আমরা আশা করি আমাদের প্রদর্শনীর মাধ্যমে চীনা ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবো। আমরা চীনে আমাতের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে চাই।“

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গেল কয়েক বছর ধরেই এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইতালির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। বিশেষ করে গেল ২০২২ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ রেকর্ড ছুয়ে যায়। ওই বছর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বাণিজ্যের পরিমাণ তার আগের বছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn