বাংলা

‘চলতি বাণিজ্য’-পূর্ব ২৫

CMGPublished: 2023-07-07 16:58:21
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান

‘চলতি বাণিজ্য’

চলতি বাণিজ্যের ২৫তম পর্বে থাকছে:

১. সিনচিয়াংয়ের অর্থনীতি ও পর্যটনের বিকাশে চীনের নানা উদ্যোগ

২. দারিদ্র্য বিমোচনে নেপালকে সহযোগিতা দেবে চীন

৩. চীনের বাজারে আরও বিনিয়োগ নিয়ে আসছে ফরাসী কোম্পানি সুয়েজ

সিনচিয়াংয়ের অর্থনীতি ও পর্যটনের বিকাশে চীনের নানা উদ্যোগ

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: পর্যটনখাত চাঙ্গা করতে ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও বাড়াতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে চীনের উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং। বিশেষ করে হাজার বছরের প্রাচীন নগরী কাশগড়, সেখানকার ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানগুলোকে পর্যটকদের উপযোগী করে খুলে দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে পর্যটনখাতের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে নানা রকম সুবিধাসহ নীতি সহায়তা ঘোষণা করেছে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ।

হাজার বছরের প্রাচীন সংস্কৃতি ও সভ্যতার কারণে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এমনিতেই আকর্ষণীয় চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উইগুর স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং। তাইতো যে কোন উৎসব উপলক্ষ্যে চীনের অভ্যন্তরীণ ও দেশের বাইরের পর্যটকদের ভিড় জমে এখানে।

সিনচিয়াংয়ের কাঁদামাটির শিল্প পর্যটকদের কাছে তৈরি করেছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এটি সিনচিয়াংয়ের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। হাতে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইন ও আকারের মাটির তৈজসপত্রের সৌন্দর্য ও কারুকাজ কাছে টানছে শিল্পপ্রেমীদের। বাহারি নকশা আর রংয়ের কারুকাজ যেন মন ছুয়ে দেয়।

উ ইং, পর্যটক

“এখানকার সংস্কৃতি আমার খুবই ভালো লেগেছে। এখানকার কাদামাটির শিল্পের অনেক ছবি তুলেছি। বাড়িতে পৌঁছে আমি আমার পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের এগুলো দেখাবো।“

হাজার বছরের প্রাচীন এই নগরী কাশগড় সিনচিয়াংয়ের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এখানকার নির্মাণশৈলীর যেমন আছে বিশেষত্ব, তেমনি স্থানীয় নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনাচার ও সংস্কৃতিও আলাদা। চলতি বছর এখানকার স্থানীয় সরকার কাশগড় নগরীর অতিপ্রাচীন ভবনগুলোকে সংস্কার করে নতুন রূপে তুলে ধরে পর্যটকদের সামনে। আবার কাশগড়ের গলিপথে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসা দোকান ও কেনাকাটাও দারুণ উপভোগ্য। হাতে তৈরি কুটির শিল্পের নানা আকর্ষণীয় পণ্য থেকে যেন নজর ফেরানোই দায়।

সিনচিয়াংয়ের আকর্ষণীয় আয়োজনের মধ্যে মুগ্ধ করে বিশাল মরুভূমিতে গাড়ি চালানো প্রতিযোগিতা। উন্মুক্ত খোলা প্রান্তরে বন্ধুর পথে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ছুটে চলার যে অনুভূতি তা সত্যিই স্মৃতি হয়ে থাকে যে কারও কাছে। আরও বেশি দুঃসাহসিক লাগে আকাবাঁকা-উঁচুনিচু পাহাড়ি পথধরে এগিয়ে চলার অভিযান।

স্থানীয় সংস্কৃতি ও নিজেদের তুলে ধরার মধ্যদিয়ে এখানকার মানুষ যেন তুলে ধরে নিজেদের পরিচয় ও আলাদা স্বাতন্ত্র্য। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে সিনচিয়াংয়ে ঘুরতে এসেছে অন্তত ৭২ মিলিয়ন পর্যটক। এখাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৬২ বিলিয়ন ইউয়ান বা ৮ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সিনচিয়াংকে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে কাজ করছেন তারা।

ইয়ান নাইমিন, উপপরিচালক, সিনচিয়াং আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও পর্যটন বিভাগ

“আমাদের ডিজাইন ও পরিবেশনা আরও সুন্দর করতে আমরা আরও পরিশ্রম করে যাবো। বিশেষ করে উন্নত মানের প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এখানকার পর্যটনকে আরও আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে চাই।“

এর বাইরেও সিনচিয়াংয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও যে দিকে চোখ যায় উন্মুক্ত নিঃসীম নীল আকাশ যেন জাদুকরী অনুভূতি দেয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতি বছর মধ্য জুনে সিনচিয়াং ঘুরে দেখার সবচেয়ে ভালো সময়।

ভিনদেশে চীন:

দারিদ্র্য বিমোচনে নেপালকে সহযোগিতা দেবে চীন

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: দারিদ্র্য বিমোচন ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে একসঙ্গে কাজ করবে চীন ও নেপাল। নেপালে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ছেনসং সম্প্রতি এ কথা বলেন। তিনি জানান, হিমালয় পর্বতমালা হয়ে দুই দেশের মধ্যকার যোগাযাগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, উচ্চগতির রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠাসহ নানা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে চীন। বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের মাধ্যমে নেপালের যোগাযোগ-অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

চীনের প্রস্তাব করা বেল্‌ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অন্যতম সহযোগী দেশ নেপাল। হিমালের কোল ঘেষে অবস্থান করা এই দেশটি চীনের সীমানা ঘেঁষা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশও। তাই তো দক্ষিণ এশিয়ায় বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ এগিয়ে নিতে নেপালের সহযোগিতাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখে চীন।

এমনই প্রেক্ষাপটে নেপালের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে এগিয়ে এসেছে চীন। নেপালে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ছেন সং সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, করোনা মহামারিতে নেপালের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে চীনের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন আশা জাগায়। বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ গ্রহনের ফলে এখানকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের এক সুযোগ তৈরি হয়েছে।

তিনি জানান, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে নেপালের অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে চীন। রাষ্ট্রদূত বলেন, দেশটির দারিদ্র্য বিমোচনে চীনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় নেপাল। রাষ্ট্রদূত জানান, ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানী কাঠমন্ডুর কেন্দ্রস্থল দুরবার স্কয়ারে অবস্থিত বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম স্থাপনা ৯-তলা বসন্তপুর প্যালেস কমপ্লেক্স পুনর্নিমাণে কাজ করছে চীন। রাষ্ট্রদূত জানান, ২০১৭ সালে কাজ শুরু করার পর চীনের কাঠ শিল্পে ব্যবহৃত প্রযুক্তির কল্যাণে এরইমধ্যে রাজপ্রাসাদটি তার নিজস্ব ঐতিহাসিক রূপ ফিরে পেয়েছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, দশ বছর আগেও মারাত্মক বিদ্যুৎ সংকটে ছিলো নেপাল। বিদ্যুতের জন্য পুরোপুরি ভারতের উপর নির্ভরশীল ছিলো নেপাল। সে সময় দিনে অনেক সময় ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকতো। তিনি জানান, এ সময় চীনা কোম্পানি এখানে বাস্তবায়ন করে ‘থ্রি গর্জেস প্রজেক্ট’ নামের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ফলে এ খাতে ঘটে যায় এক বিরাট বিপ্লব।

ছেন সং, নেপালে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত

“আমরা বলতে পারি খুব শিগগিরই নেপালের বিদ্যুৎ সংকট দূর হবে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে নেপালে বিদ্যুতের সংকট থাকে। তবে বর্ষা মৌসুমি আবার নেপাল বিদ্যুৎ রফতানি করে। নেপালের পাওয়ার সাপ্লাই ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যেই নেপাল বিদ্যুৎ সংকট থেকে বের হয়ে যাবে।“

২০১৯ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের নেপাল সফরের সময় হিমাল পর্বতমালা হয়ে ত্রি-মাত্রিক আন্তঃযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনের ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। সেই উদাহরণ তুলে ধরে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, উচ্চ গতির রেলযোগাযোগের বিষয়ে নেপালী জনগণের আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

“হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণাংশের একটি বড় অংশ এখানে পড়েছে। সারা বিশ্বেই রেল সংযোগের ক্ষেত্রে নানা ধরনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। এখনো অনেক সমস্যা সমাধান করতে হবে। নেপালের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নাগরিক ও বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি চীন ফর করেছেন, চীনের উচ্চ গতির রেল ভ্রমণ করেছেন। তারাই বলছেন, চীন যদি এমন একটি রেলপথ নির্মাণ করতে পারে এবং পাহাড়ে উচ্চ গতির রেলযোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয় তাহলে নেপালও পারবে। এতে অবশ্যই চীনের সহযোগিতা ও চীনের প্রযুক্তি দরকার হবে। চীনের প্রযুক্তির উপর তাদের পুরো আস্থা আছে।“

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, দারিদ্র্য দূর করতে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নেপালে বর্তমানে কাজ করছে চীনের পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির দারিদ্র্য বিমোচন করে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।

কোম্পানি প্রোফাইল:

https://eng.yidaiyilu.gov.cn/qwyw/rdxw/313328.htm

চীনের বাজারে আরও বিনিয়োগ নিয়ে আসছে ফরাসী কোম্পানি সুয়েজ

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের বাজার ধরতে আরও বেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসছে ফরাসী কোম্পানি সুয়েজ গ্রুপ। পরিবেশ দূষণ রোধ ও পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক নানা পণ্য বিপণন করে সুয়েজ। বিশেষ করে পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নানা সেবা দেয় তারা। চীনের বাজারে কাজ করার সুযোগকে অনেকটা আশীর্বাদ হিসেবে দেখছে সুয়েজ।

চীনের পরিবেশবান্ধব নানা পন্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে এ বিষয়ক নানা পণ্য ও সেবার খোঁজে মানুষ। মানুষের এই চাহিদাই কাজে লাগিয়ে বাজারে প্রভাব সৃষ্টি করতে মরিয়া সুয়েজ।

সুয়েজ গ্রুপের চেয়ারওম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা সৌশান জানান, ২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল নাগাদ সময়ের মধ্যে লাভের মুখ দেখার প্রত্যাশা তাদের। তিনি জানান, চীন সরকার এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানানোয় তারা এই দেশে ব্যবসা করতে বিনিয়োগ নিয়ে এসেছেন।

চীনে পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন পণ্যের ব্যাপক চাহিদা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছর পর চীন কম কার্বন নিঃসরণ হয় এমন পরিবেশবান্ধব পণ্য নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এই আগ্রহ চীনাদের মধ্যে এ ধরনের প্রযুক্তি ও পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করেছে। চীনের এই বিশাল বাজার ব্যবসা প্রসারের ক্ষেত্রে ভালো কাজে লাগবে বলেও মনে করেন তিনি।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn