বাংলা

চলতি বাণিজ্যের ২৩তম পর্বে

CMGPublished: 2023-06-23 20:30:48
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চলতি বাণিজ্যের ২৩তম পর্বে থাকছে:

১. চীন-মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি: কূটনৈতিক সংকট নিরসন হতে পারে আলোচনায়

২. রেকর্ড মার্কিন ক্রয়াদেশ পেয়েছে চীনা কোম্পানি সানি

৩. চীনকে ১৬০টি বিমান সরবরাহ করবে এয়ারবাস

চীন-মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি: কূটনৈতিক সংকট নিরসন হতে পারে আলোচনায়

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: পরস্পর নির্ভরশীল ও নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও ভূ-রাজনৈতিক বিরোধ ও বাণিজ্য ঘাটতিজনিত কারণে ক্রমেই বাড়ছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দূরত্ব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিবিদ নিক ভাইয়াস এমনটাই মনে করেন। তার মতে, মতবিরোধ এড়িয়ে সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করা। অন্যদিকে চীন-মার্কিন সম্পর্ক স্বাভাবিক করা উভয় দেশের স্বার্থের জন্যই জরুরি বলে মত দিয়েছেন চীনর রেনমিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক তিয়াও তামিং। তাদের মতে উভয় পক্ষেরই উচিত আচরণে সংযত হওয়া, মূল্যবোধ বজায় রাখা ও একই অবস্থানে থেকে ভূমিকা পালন করা।

২০ শতকের ৭০ এর দশকে চীনের অর্থনীতি সারা বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর থেকেই চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পর বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে গেছে। এমনকি চীন হলো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। একইসঙ্গে গেল দুই দশক ধরে আমেরিকায় বিভিন্ন রকম গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্য রফতানি করে চীন।

তবে সম্প্রতি বাণিজ্যিক ও ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য অনেক। এই মতপার্থক্য প্রভাব বিস্তার করেছে উভয় দেশের স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্কেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিবিদ নিক ভাইয়াসের মতে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বর্তমানে খুবই সংকটাপন্ন পর্যায়ে আছে। এর কারণও ব্যাখ্যা করেন এই বিশ্লেষক।

নিক ভাইয়াস, অর্থনীতিবিদ, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া

“৩ দশক আগে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উন্মুক্ত করার পরই কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয় বরং পুরো বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যও সবচেয়ে বড় উৎপাদন হাবে পরিণত হয় চীন। প্রবৃদ্ধির পুরোটা সময় জুড়েই কিছু কিছু বিষয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হলো বাণিজ্য ঘাটতি। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বছরে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়ে যায়। আর এটাই এমন কঠিন পরিস্থিতির তৈরি করেছে।“

সম্প্রতি চীন সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এ সময় উভয় দেশের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এই আলোচনা ও সফর আলোচনার মাধ্যমে যে কোন সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে দুই দেশের ইচ্ছা ও আগ্রহ প্রকাশ পায় বলে মত চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যামেরিকান স্টাডিজের উপ-পরিচালক তিয়াও তামিংয়ের।

তিয়াও তামিং, শিক্ষক, রেনমিন ইউনিভার্সিটি

“এই বৈঠকটি ভবিষ্যৎ সম্পর্ক আরও স্বাভাবিক ও স্থায়ী করার ব্যাপারে দুই দেশের মনোভাবের একটি পরিস্কার ‘রোড ম্যাপ’ এর ধারনা দেয়। এই রোড ম্যাপের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনামূলক নিয়ম-নীতি আছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তপূর্ণ সহাবস্থান ও উভয়ের জন্য লাভজনক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন নামে এ কথাগুলোই প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বিভিন্ন উপলক্ষ্যে বলে আসছেন। আমার মনে হয় এটাই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সহজ পথ।“

এ দুই বিশ্লেষক মনে করেন, সবচেয়ে বড় ভোক্তা অর্থনীতির দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে চীন উভয়ের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুরো বিশ্বের জন্য যৌক্তিক, ন্যয়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।

“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয় দেশকেই মনে রাখতে হবে তারা উভয়েরই পরস্পর নির্ভরশীল। দুই দেশের এক সঙ্গে কাজ করার, পরস্পরকে সহযোগিতা করার ও একসঙ্গে ভূমিকা পালনের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। সংঘাত তৈরি করা ও কিছু কিছু সমস্যা জিইয়ে রাখা কারও জন্যই কল্যাণকর হবে না। উভয়ের জন্যই একইরকম পরিবেশ তৈরি করে বৈশ্বিক পর্যায়ে ভূমিকা পালন করা জরুরি। তবে এটি বলার চেয়ে বাস্তবায়ন করা কঠিন।“

তাদের মতে, মার্কিন প্রেসিডন্ট জো বাইডেন বিভিন্ন সময় যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা সত্যিকার ও পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করলে দুই দেশের মধ্যকার মতপার্থক্যও কমে আসবে এবং চীন-মার্কিন সম্পর্ক একটি বলিষ্ঠ অবস্থা ফিরে পাবে।

ভিনদেশে চীন:

রেকর্ড মার্কিন ক্রয়াদেশ পেয়েছে চীনা কোম্পানি সানি

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের শীর্ষ ভারি যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সানি হেভি ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি লিমিটেড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহু পণ্যের ক্রয়াদেশ পেয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনেক্সপো-কন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের পরই বিরাট অংকের ক্রয়াদেশ পেয়েছে চীনা এই কোম্পানিটি।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, পদর্শনীতে অংশ নেওয়ার প্রথম দিনই ১০০ মিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের ক্রয়াদেশ আসে মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে। চায়না সিকিউরিটিজ জার্নালে এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়।

সানি হেভি ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি জানায়, প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন করা ৩৪টি পণ্য প্রদর্শনীতে দেখানো হয় এবং এসব পণ্য উৎপাদন করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই।

সানি আমেরিকা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিয়ে মেংতাও বলেন, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতের অন্তত ৪০ হাজার ক্রেতা তাদের পণ্যগুলো দেখেছে। বিশেষ করে প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গ্রাহকদের কাছে কোম্পানিটির তৈরি করা পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

এর আগে ২০১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে সানি হেভি ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি লিমিটেড। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের পিসট্রি শহরে উৎপাদন ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঢেলে সাজানো হয় কোম্পানিটির মানব সম্পদ বিভাগ।

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনকে ১৬০টি বিমান সরবরাহ করবে এয়ারবাস

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: ইউরোপিয়ান বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা এয়ারবাস সম্প্রতি চীনের সঙ্গে ১৬০টি বিমান বিক্রির চুক্তি সই করেছে। এর ফলে চীনের বিমান বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে এই বিপুল সংখ্যক বাণিজ্যিক বিমান।

চীনের এভিয়েশন সাপ্লাইস হোল্ডিং কোম্পানির সঙ্গে এই চুক্তি সই করে এয়ারবাস। এসব বিমানের মধ্যে থাকবে ১৫০টি এ-থ্রি-টু-জিরো মডেলের ফ্যামিলি এয়ারক্র্যাফ্ট ও ১০টি এ-থ্রি-ফাইভ-জিরো ড্যাশ নাইন জিরো-জিরো মডেলের ওয়াইড-বডি এয়ারক্র্যাফ্ট। এভিয়েশন বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা মহামারির পর চীনের বিমান পরিবহনে যে আশার সঞ্চার হয়েছে তারই প্রতিফলন এই বিমান ক্রয় চুক্তি।

এদিকে এয়ারবাস জানিয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর চীন সফরের সময় সঙ্গে ছিলেন এয়ারবাসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গুইলাওমে ফাওরি। এ সময় চীনের তিয়ানচিন ফ্রি ট্রেড জোন ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড ও এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন অব চায়না লিমিটেডের সঙ্গে তার চুক্তি সই হয়। এই চুক্তির আওতায় তিয়ানচিনের কারখানায় এ-থ্রি-টু-জিরো মডেলের বিমান পুনঃসংযোজনের দ্বিতীয় লাইনের কার্যক্রম শুরু হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ। এর ফলে ২০২৬ সালের মধ্যে অন্তত ৭৫টি এ-থ্রি-টু-জিরো মডেলের ফ্যামিলি এয়ারক্র্যাফ্ট প্রস্তুত করা সম্ভব হবে।

এয়ারবাসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গুইলাওমে ফাওরি বলেন, তাদের ব্যবসা প্রকৃতিগতভাবেই বৈশ্বিক। কাজেই করোনা মহামারির পর এখন আবারো কাছে আসার সুযোগ বলেও মনে করেন তিনি।

চীনের বিমান পরিবহন বাজারে এয়ারবাসের আরও ভালো ব্যবসা করার সুযোগ সামনে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, চীনা অংশীদারদের সঙ্গে এয়ারবাসের ঘনিষ্ঠতা ও সহযোগিতা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn