বাংলা

চলতি বাণিজ্যের ২১তম পর্ব

CMGPublished: 2023-06-09 14:55:59
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চলতি বাণিজ্যের ২১তম পর্বে থাকছে:

১. উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে শিল্পায়নের জোয়ার

২. চীনে ই-কমার্স প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলছে অ্যামাজান

৩. চীনকে সঙ্গে নিয়ে চীনের বাজারে ব্যবসার কৌশল নিয়েছে মার্সিডিজ বেঞ্জ

উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে শিল্পায়নের জোয়ার, বাড়ছে কর্মসংস্থান

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: মানুষের উপার্জন বাড়াতে এবার শিল্পায়নের দিকে নজর দিয়েছে চীনের উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং। এই অঞ্চলের ৪টি প্রিফেকচারের টেকসই উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমান বাড়াতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র, কয়লাক্ষেত্র এবং অন্যান্য শিল্পগুলোকে। সিনচিয়াং উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন বলছে, রেশম পথের সঙ্গে যুক্ত এলাকাগুলোতেই প্রাথমিকভাবে নজর দিচ্ছেন তারা। এসবখাতে সত্যিকারের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে যেমন নেওয়া হচ্ছে পরিকল্পনা তেমনি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে গবেষণালব্দ ফলাফলকেও।

শিল্প মানেই বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান, নতুন নতুন চাকরি। বিশেষ করে মানুষের কর্মসংস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থ উপার্জন। মানুষের উপার্জন বাড়ানোর পদক্ষেপ হিসেবে তাই শিল্প কারখানার সংখ্যা বাড়ানো ও উৎপাদনের মানোন্নয়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে চীন সরকার।

হ্যাঁ, এমন কার্যক্রম শুরু হয়েছে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে। সেখানে চলছে বিদ্যমান কারখানার মান উন্নয়ন কার্যক্রম ও নতুন করে শিল্প স্থাপনের কাজ। এমনই একটি শিল্প সিনচিয়াং কাইলাইমু এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্টস কোম্পানি লিমিটেড। এখানকার প্রধান কর্মকর্তা রোজ মেমেট জানান, স্থানীয় শিল্পের বিকাশে তাদের নেওয়া কার্যক্রম সম্প্রতি গতি পেয়েছে।

রোজ মেমেট, প্রধান, সিনচিয়াং কাইলাইমু এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্টস কোম্পানি লিমিটেড

“আমরা শিল্পের কাঁচামাল বিক্রির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। আমরা আমাদের পণ্যের মূল্য সংযোজন করতে এবার প্রক্রিয়াজাতকরণের উপর গুরুত্ব দিচ্ছি।“

এই শিল্পোন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় আছে সিনচিয়াংয়ের কাশগড়, খোতান, আকসু অঞ্চল ও কিজিলসু কিরগিজ স্বায়ত্বশাসিত প্রিফেকচার। আগে এসব অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দাদের স্থিতিশীল উপার্জনের মাধ্যমে ছিলো নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সীমাবদ্ধ। একইসঙ্গে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অবকাঠামো সুবিধাও ছিলো ভঙ্গুর।

তবে চীনের ক্ষমতাসীন দল সিপিসি’র ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাল্টে যাচ্ছে এই এলাকার পরিবেশ। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে এখন পর্যন্ত সিনচিয়াংয়ের ৪টি প্রিফেকচারের অন্তত ২৬ লাখ মানুষ দারিদ্র থেকে বের হয়ে আসে। এসব মানুষের জীবনমান উন্নয়ণ হয় এবং এই এলাকার পণ্য উৎপাদনেও বিপুল পরিবর্তন আসে।

ছ্যাং হু, বিভাগীয় প্রধান, সিনচিয়াং কৃষি ও পল্লী বিষয়ক বিভাগ

“আমরা কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উৎপাদন ও এর মানোন্নয়ন প্রকল্পের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছি। বিশেষ করে জাতীয়ভাবে সামনের সারির বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্প্রসারণ ও শিল্প চেইনে সেগুলোর কার্যক্রম বাড়ানো, পণ্যের মানোন্নয়ন ও মূল্য সংযোজন কার্যক্রমের দিকে আমাদের বেশি মনোযোগ।“

শুরুতেও মনোনিবেশ করা হয় আখরোট, বিভিন্ন রকমের বাদাম ও আঙ্গুরসহ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় এমন কৃষি পণ্যের দিকে। বিবেচনায় ছিলো ইলি জাতের ঘোড়াসহ স্থানীয় অন্যান্য পশুরপালনের দিকেও। এরপরই গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় শিল্প উৎপাদন শুরু হয়।

ওয়াং হুয়ান, প্রকল্প পরিচালক, উন্নয়ন ও সংস্কার কশিমন, উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং

“আমরা এই প্রকল্পকে নিয়েছে আমাদের প্রধান অগ্রাধীকার হিসেবে। বিশেষ করে কয়লা, তেল ও গ্যাসের উন্নয়ন, সিলিকনভিত্তিক নতুন পণ্য উৎপাদন ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য অন্যান্য প্রধান শিল্প প্রকল্প আমাদের বিবেচনায় আছে। প্রায়োগিক বিষয়গুলোকে মানুষের কাছে বোধগম্য করতে আমরা প্রশিক্ষণের উপরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।“

সিনচিয়াং উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন বলছে, কেবল পণ্য উৎপাদন নয় বরং সেসব পণ্যের বাজারে সরবরাহ চেইনে অন্তর্ভূক্ত করা মাধ্যমে মূল্য সংযোজনের কাজও করা হয় পরিকল্পনা অনুযায়ী। ফলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এসব পণ্যের বিক্রি বেড়ে যায়, কারখানাগুলোর উৎপাদনও বাড়তে থাকে। তৈরি হয় আরও কর্মসংস্থান।

ভিনদেশে চীন:

চীনে ই-কমার্স প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলছে অ্যামাজান

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: পূর্ব চীনের ছেচিয়াং প্রদেশে ই-কমার্সের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলছে জায়ান্ট অনলাইন মার্কেট প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজান। অ্যামাজান গ্লোবাল সেলিং সম্প্রতি জানিয়েছে প্রদেশের রাজধানী শহর হুয়াংছুতে এ কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। চীনে স্থাপন করা এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি হতে যাচ্ছে সারা বিশ্বের মধ্যে এমন ভিন্ন ধরনের কোন কেন্দ্র। এখানে পণ্য পরিবেশক ও সরবরাহকারীদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

বর্তমান সময় বাণিজ্যে যুক্ত হয়েছে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, তেমনি বাজার ধরতে ও ধরে রাখতে কোম্পানিগুলোর মধ্যে চলে তীব্র প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকে তারাই যারা বাজার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা রাখে। বিশেষ করে ক্রেতাদের আকর্ষণ, চাওয়া-পাওয়া, সহজে ক্রেতারে কাছে পৌছানো ও ক্রেতাদের মনোভাব বুঝতে পারার মধ্যেই থাকে ব্যবসায়ীক মুনাফার মূলমন্ত্র। এই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই।

এবার সে দিকেই নজর দিয়েছে চীন। বিশ্বের অন্যতম প্রধান অনলাইন মার্কেট প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজান এবার চীনে তৈরি করতে যাচ্ছে এমনই এক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে পণ্য পরিবেশক ও সরবরাহকারীদের দেওয়া হবে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ।

অ্যামাজান জানিয়েছে, পেশাদারিত্ব, জ্ঞান ও মেধার চর্চা এবং সমন্বিত দক্ষতার কার্যক্রম নিয়ে প্রশিক্ষণ চলমান থাকবে। মূলত ৪টি ধাপে সম্পন্ন হবে এই কার্যক্রম। প্রথমত থাকবে তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ, সে অনুযায়ী তৈরি করা হবে কোর্সের নানা অনুসঙ্গ। এরপর মেধাবীদের নিয়ে তৈরি করা হবে একটি কমিউনিটি। যুক্ত থাকবে উদ্ভাবনের নানা ক্ষেত্র। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মানের একটি কেন্দ্র তৈরি করা হবে চীনে।

পরসিংখ্যান বলছে ২০২২ সালে এই হাইনান থেকে ক্রস-বর্ডার ই-কমার্সের নানা অনুসঙ্গ রফতানি হয়েছে ১শ’ বিলিয়ন ইউয়ান বা ১৪ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। রফতানির এই পরিমাণ এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি। এরইমধ্যে শুধু হাংচৌতেই ক্রস-বর্ডার ই-কমার্স সেলারের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

অ্যামাজানের এশিয়া গ্লোবাল সেলিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট সিনডি তাই বলেন, ক্রস-বর্ডার ই-কমার্সের টেকসই উন্নয়ন ক্রমেই বাড়ছে এবং এটি বিদেশি বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও ডিজিটাল অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে চীন ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডিজিটাল অর্থনীতির অন্যত অনুসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনকে সঙ্গে নিয়ে চীনের বাজারে ব্যবসার কৌশল নিয়েছে মার্সিডিজ বেঞ্জ

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনকে সঙ্গে নিয়ে চীনের বাজারে ব্যবসার কৌশল খুঁজছে মার্সিডিজ বেঞ্জ। জার্মাানির এই জায়ান্ট গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিটি সম্প্রতি চীনে আরও বিনিয়োগ ও ব্যবসায়ীক কার্যক্রম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। চীনের বাজারে জনপ্রিয়তা আরও বাড়াতে বাজারে আনছে নতুন মডেলের সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানীচালিত নতুন মডেলের আরও বেশ কয়েকটি গাড়ি।

জার্মানির বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মার্সিডিজ বেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সম্প্রতি বলেছেন, চীনা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়েই চীনের বাজারে গাড়ির চাহিদা মেটাতে কাজ করতে চায় তার প্রতিষ্ঠান।

তিনি জানান, বৈশ্বিক নির্মাতা ও ব্র্যান্ডের খ্যাতি ধরে রাখতে হলে চীনের বাজারকে অস্বীকার করার উপায় নেই।

সম্প্রতি জার্মানির স্টুটগার্টে প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুত করা হয় নতুন নির্মাণ করা গাড়ি। চলতি বছরই বাজারে ক্রেতাদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এসব গাড়ি।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ওলা কাইলেনিয়াস জানান, গেল ১০-১৫ বছরে চীন ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার নজির স্থাপন করেছে। বাজারের ধরন ও চাহিদার আলোকে কোম্পানিটির ব্যবসাও সম্প্রসারণ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, চীনকে সঙ্গে নিয়েই চীনে ব্যবসার পরিসর আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন তিনি।

বাজার ও গ্রাহকদের নানা তথ্য প্রদানকারী সংস্থা স্ট্যাটিস্টার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালেও সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় গাড়ির বাজার ছিলো চীন। এই বাজারে চাহিদা আছে ইউরোপীয় ও মার্কিন বেশ কিছু কোম্পানির তৈরি গাড়ি। মার্সিডিজ বেঞ্জ জানায়, চীনের ক্রমবর্ধমান বাজারের সুবিধা কাজে লাগানে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে আগামী এক দশকে চীনের বাজারে সেরা বিক্রেতা ও সরবরাহকারী হিসেবে বিনিয়োগসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে আসবে মার্সিডিজ বেঞ্জ।

গেল বছরও চীনের বাজারে সাড়ে ৭ লাখ যাত্রীবাহী গাড়ি বিক্রি করেছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, আগামী বছরগুলোতে গাড়ি বিক্রির সংখ্যা আরও বাড়বে।

চীনা গ্রাহকদের প্রয়োজন ও চাহিদা মাথায় রেখে নতুন যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গাড়ির ডিজাইন বাজারে আনার ব্যাপারে কাজ করছে কোম্পানিটির গবেষণা ও উন্নয়ণ বিভাগের কর্মীরা। বিশেষ করে সারা বিশ্বের বাজার ও কোম্পানিটির নেটওয়ার্কের সঙ্গে চীনা অংশের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।

জার্মানিতে অবস্থিত সদর দফতরের পরই গাড়ি নির্মাণ ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে কোম্পানিটি চীনকে সেকেন্ড হোম বিবেচনা করে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

২০ থেকে ৩০ বছর আগের চীন আর এখনকার চীন এক নয় মন্তব্য করে কোম্পানিটি বলছে, ব্যবসার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় চীন এখন অনেক উন্নত এবং ক্রমাগত উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি ও উৎপাদনের হাবে পরিণত হয়েছে চীন। বর্তমানে চীনে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হচ্ছে, নতুন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা হচ্ছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn