বাংলা

চলতি বাণিজ্যের ১৭তম পর্ব

CMGPublished: 2023-05-12 20:18:55
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান

‘চলতি বাণিজ্য’

চলতি বাণিজ্যের ১৭তম পর্বে থাকছে:

১. অর্জনে ইতিহাস সৃষ্টি করলো ১৩৩তম ক্যান্টন মেলা

২. সৌদিতে স্মার্ট সিটি গড়ে তুলছে চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি সেন্স টাইম

৩. বেড়েছে চাহিদা, চীনে বিক্রি বেড়েছে বিএমডাব্লিউ গাড়ির

অর্জনে ইতিহাস সৃষ্টি করলো ১৩৩তম ক্যান্টন মেলা

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বাণিজ্য ও অর্থনীতির নানা সূচকে অর্জনের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে চীনের ১৩৩তম আমদানি-রফতানি মেলা বা ক্যান্টন মেলা। বিশেষ করে রফতানি আদেশ, মেলার পরিসর, বুথের সংখ্যা, নতুন উদ্ভাবিত পণ্য থেকে শুরু করে অংশগ্রহণকারী –সব দিক দিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন রেকর্ড। ক্যান্টন মেলার আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। মেলার উপ-পরিচালক জানান, এ মেলার মাধ্যমে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত দেশগুলোর মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়েছে, খুলেছে ব্যবসায়ীক নেটওয়ার্কের নতুন দরজা।

চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের কুয়াংচৌতে বরাবরের মতো এ বছরও বসে ঐতিহ্যবাহী ক্যান্টন মেলা। দাপ্তরিক নাম ‘আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানি মেলা’। এবার বসে মেলার ১৩৩তম আসর।

সদ্য শেষ হওয়া এই মেলা এবার বাণিজ্য ও অর্থনীতির নানা সূচকে অর্জন করে নতুন ইতিহাস। মেলার আয়োজক কমিটি জানায়, রফতানি আদেশ, মেলার পরিসর, বুথের সংখ্যা, নতুন উদ্ভাবিত পণ্য থেকে শুরু করে অংশগ্রহণকারী –সব দিক দিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন রেকর্ড।

পরিসংখ্যান বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মেলা থেকে চীন রফতানি আয়ের আদেশ পেয়েছে ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি।

মেলায় আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিলো ২৯ লাখ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত বছরের মেলাগুলোর মতোই এবারের মেলার পরিধি বরাবরের মতোই বেড়েছে। বিশেষ করে গেলবার যেখানে মেলার পরিসর ছিলো ১১ লাখ ৮০ হাজার বর্গ মিটার, সেখানে এ বছর মেলার পরিধি বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ লাখ বর্গ মিটার। ১৯৫৭ সালে শুরুর পর এটাই সর্বোচ্চ আয়তনের জায়গাজুড়ে আয়োজন করা মেলা।

মেলায় আসেন বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা। অংশগ্রহণকারী এক পাকিস্তানি ব্যবসায়ী জানান, প্রয়োজনীয় পছন্দের পণ্য পরখ করে দেখতেই তিনি এ মেলায় অংশ নিয়েছেন।

পাকিস্তানি ক্রেতা

“আমি এখানে ভালোমানের জুতা দেখতে এসেছি। বিশেষ করে জুতা তৈরির উপকরণ, রেডিমেড জুতা ইত্যাদি। কারণ চীনে যে মানের জুতা তৈরি হয় তা সাধারণত অন্য কোথাও সহজে পাওয়া যায়না।“

গেল বারের তুলনায় এবার বেড়েছে বুথের সংখ্যাও। এর আগের বার যেখানে বুথ ছিলো ৬০ হাজার, এবার সেটি ১০ হাজার বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ হাজারে। আবার প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৫ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ হাজারে।

ক্যান্টন মেলার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিবারই হালনাগাদ হয়। এবার আধুনিক যুগ, প্রযুক্তির ব্যবহার ও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন বেশ কয়েকটি খাতের প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়। এর মধ্যে আছে শিল্পায়নে অটোমেশন বা আধুনিক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের ব্যবহার, কৃ্ত্রিমবুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন কিংবা বয়স্ক মানুষদের জীবন সহজকরার নানা পণ্য ও সেবাকেন্দ্রীক অর্থনীতির বিকাশ।

চীনা প্রযুক্তি ও বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন আসা পণ্যের পসরা দেখতে মেলায় অংশ নিয়েছেন বলে জানান কানাডীয় এই ক্রেতা।

কানাডীয় ক্রেতা

“ক্যান্টন মেলায় দেখা যাচ্ছে চীনা উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের মান ও ডিজাইনে বৈচিত্র্য এনেছেন। তারা আরো বেশি মানের সৃজনশীল পণ্য উৎপাদন করছে। এসবপণ্যের মানই কেবল ভালো তা নয় বরং সরবরাহ ব্যবস্থায় একটি ভালো চেইনের দেখা মিলছে।“

এদিকে, প্রদর্শনীর যে কাঠামো, তাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে গুরুত্ব দেওয়া হয় বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সঙ্গে সম্পর্কিত দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তাইতো এবারের মেলা বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত দেশগুলোকে নানাভাবে যুক্ত করেছে। আয়োজকরা বলছেন, চীনের বিশাল বাজারে এসব দেশ ও অঞ্চলের পণ্য প্রবেশ করতে পারবে সহজেই। আবার চীনা কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আকর্ষণ করতে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে এই ক্যান্টন মেলা।

আমদানি প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া তুর্কি কোম্পানির এই প্রতিনিধি জানান, তার প্রত্যাশা মেলা অংশ গ্রহণের সুফল খুব শিগগিরই পাবেন তারা।

“বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। কাজেই আমার মনে হয় ক্রেতার সংখ্যা বাড়াতে এটি খুবই সহায়ক হবে।“

এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলোর অর্ধেকই ছিলো বিভিন্ন রকম পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। আবার অংশগ্রহণকারীদের ৯০ শতাংশই ছিলো বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছরের মেলায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনলাইন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। এবারের ক্যান্টন মেলায় অনলাইনে অংশ নেয় সারা বিশ্বের ৩৯ হাজার প্রতিষ্ঠান যা সরাসারি অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের চেয়েও বেশি।

আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ১৩৩তম ক্যান্টন মেলার উপ-পরিচালক ছ শিচিয়া জানান, মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো মেলায় প্রদর্শন করে ৮ লাখ নতুন পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে ৫ লাখই ছিলো কম কার্বন নিঃসরণ হয় এমন শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্য।

ছু শিচিয়া, উপ-পরিচালক, ১৩৩তম চায়না আমদানি-রপ্তানি মেলা

“এই মেলার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা নতুন অংশীদারের খোঁজ পায়, নতুন নতুন সম্ভাবনার ও নতুন অর্থনৈতিক শক্তির দেখা পায়। বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো গভীর করার মাধ্যমে যে কোন পণ্য বৈশ্বিক পর্যায়ে পৌছে দেওয়া সম্ভব। মেলায় অংশগ্রহণকারীদের আগ্রহই বলে দেয় সারা বিশ্বের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় চীনের অর্থনীতির বিষয়ে আশাবাদী এবং তারা বাণিজ্যিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে বাড়াতে চায়।“

মেলার ৩টি পর্বে সব মিলিয়ে সারা বিশ্বের ৪০ দেশ ও অঞ্চলের মোট ৫০৮টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গায় পরিমাণ গেল বারের চেয়ে ১০ হাজার বর্গ মিটার বেড়ে হয় ৩০ হাজার বর্গ মিটার।

১৯৫৭ সাল থেকেই সাধারণত বছরে দুইবার বসে এই ক্যান্টন মেলা। একটি বসন্তকালে আর অন্যটি শরতে। বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়াতে এবং বেদিশী ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে এই মেলা। বিশেষ করে দেশি-বিদেশি সরবরাকারী ও ক্রেতাদের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া, বাণিজ্য সহযোগিতা ও বাড়ানোর ক্ষেত্রে দারুণ ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে ক্যান্টন মেলা। চলতি বছর আবারো অক্টোবর মাসে বসবে ১৩৪তম ক্যান্টন ফেয়ার।

ভিনদেশে চীন:

সৌদিতে স্মার্ট সিটি গড়ে তুলছে চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি সেন্স টাইম

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে স্মার্ট সিটি গড়ে তুলবে চীনের একটি কোম্পানি। শুধু তাই নয়, দেশটির স্মার্ট পর্যটনের বিকাশ ও স্মার্ট বিনোদনের নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা দেবে এই চীনা প্রতিষ্ঠান।

চীনের হংকং-ভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক কোম্পানি সেন্স টাইম এবার পৌছে গেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। সেখানকার কিং আব্দুল্লাহ ফিনানশিয়াল ডিস্ট্রিক্ট –কেএএফডি’র সঙ্গে যৌথভাবে স্মার্ট সিটি নির্মাণ করবে কোম্পানিটি।

এদিকে সৌদির ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সেলা’র সঙ্গে একত্রে ডিজিটাল টুরিজম ও স্মার্ট বিনোদন বিষয়ক কার্যক্রমেও যুক্ত থাকবে কোম্পানিটি। সম্প্রতি একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে এই কোম্পানিটি।

সেন্স টাইমের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সু লি জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহক সেবা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করবে কোম্পানিটি।

সৌদি আরব ২০৩০ সালের মধ্যে যে উন্নত দেশ গঠনের পরিকল্পনা করছে তাতে সক্রিয় সহযোগী হয়ে উঠেছে চীন। ২০১৮ সাল থেকে সৌদি আরবের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে এই কোম্পানিটি।

কোম্পানি প্রোফাইল:

বেড়েছে চাহিদা, চীনে বিক্রি বেড়েছে বিএমডাব্লিউ গাড়ির

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে চীনে। এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের প্রথম ২ মাস অর্থাৎ জানুয়ানি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি বিক্রির হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এতেই চাঙ্গা হয়েছে গাড়ির বাজার। বিশেষ করে জার্মান গাড়ির ব্র্যান্ড বিএমডাব্লিউ তাদের গাড়ি তৈরি ও বিপণনের সংখ্যা বাড়িয়েছে।

কোম্পানিটি বলছে, বিএমডাব্লিউর সবচেয়ে বড় একক মার্কেট চীন। এখানে গেল বছরের তুলনায় চলতি বছর তাদের ব্র্যান্ডের গাড়ির চাহিদা তিনগুণ বেড়েছে। কোম্পানিটির একজন মুখপাত্র চীনা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়াকে জানায়, চীনে কোম্পানিটির মুনাফা হুহু করে বাড়ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির চাহিদা দিনদিনই বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে এই চাহিদা বাড়বে তাই উৎপাদনও বাড়িয়ে দিচ্ছে এই কোম্পানিটি।

কোম্পানির হিসেব বলছে, বিএমডাব্লিউ ব্র্যান্ডের প্রতি ৩টি গাড়ির ১টিই বিক্রি হচ্ছে চীনে। বিএমডাব্লিউ’র সবচেয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনে মুনাফাও বেশি করে কোম্পানিটি। এই মুনাফা অর্জনের হার যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

২০২২ সালে চীনের অংশীদার বিএমডাব্লিউ ব্রিলিয়ান্স অটোমোবাইল –বিবিএ’র সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হয় বিএমডাব্লিউ। এরপর থেকেই মুনাফার পরিমাণ বাড়তে থাকে। হিসেব বলছে, কর পরিশোধের পরও ২০২২ সালে রেকর্ড ২৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা করে বিএমডাব্লিউ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn