চলতি বাণিজ্যের ১৩ম পর্ব
চলতি বাণিজ্যের ১৩ম পর্বে থাকছে:
১. দেশ বিদেশে চাহিদা বাড়ছে চীনা উইন্ড টার্বাইনের
২. মিশরে সৌদি-চীন যৌথ উদ্যোগে বাস সংযোজন কারখানা স্থাপন
৩. চীনে নতুন প্ল্যান্ট চালু করছে জার্মান কেমিকেল জায়ান্ট বিএএসএফ
দেশ বিদেশে চাহিদা বাড়ছে চীনা উইন্ড টার্বাইনের
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীন ও চীনের বাইরে বাড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উইন্ড টার্বাইনের চাহিদা। এই চাহিদা পূরণে এগিয়ে এসেছে বেশ কয়েকটি টার্বাইন উৎপাদন কোম্পানি। বিশেষ করে পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের উইন্ড টার্বাইন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর ব্যস্ততা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো।
একদিকে দেশের ভেতরে চাহিদা বেড়েছে, অন্যদিকে দেশের বাইরে থেকে আসছে একের পর এক ক্রয়াদেশ। এই দুইয়ে মিলে রমরমা চীনের বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের উইন্ড টার্বাইন শিল্পের কার্যক্রম।
বিশেষ করে পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের উইন্ড টার্বাইন উৎপাদনের কারখানায় কর্মচঞ্চলতা চোখে পড়ার মতো। উইন্ড টার্বাইন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির এই কর্মকর্তা চি চুন বলছেন, সক্ষমতার সর্বোচ্চটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন তারা।
চি চুন, উপ-প্রধান, ব্যবসায় বিভাগ, উইন্ড টার্বাইন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি
“এ বছর এরইমধ্যে বেশ বড়সড় ক্রয়াদেশ আমরা পেয়েছি। এসব ক্রয়াদেশ পালন করতে আমাদের ২০টিরও বেশি উৎপাদন লাইনে কাজ চলছে এবং এ বছরের শেষ নাগাদ পণ্য পৌঁছে দিতে হবে। চলতি মার্চের মধ্যে আমরা আশা করছি ১০০ সেট উইন্ড টার্বাইন উৎপাদন করতে পারবো। আর চলতি বছরের মধ্যে মোট ১২শ’ সেট উৎপাদন করতে সক্ষম হবো।“
এখানকার কোম্পানিতে উৎপাদিত ইউন্ড টার্বাইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর বিশাল আকার। একেকেটি টার্বাইনের উচ্চতা হয় ৯০ মিটারের বেশি আর প্রতিটির ওজনও ২৫ টনের মতো। ফলে অনশোর ও অফশোর উভয় ধরনের উৎপাদন কাজেই এগুলো ব্যবহার করা যায়। স্থানীয় একটি কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ছু পিন বলছেন, চাহিদা বাড়তে থাকায় চীনের বাইরেও কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন তারা।
ছু পিন, ভাইস চেয়ারম্যান, উইন্ড টার্বাইন ম্যানুফ্যাক্চারিং কোম্পানি ইন সুছৌ
“আমরা সামনে চিয়াংসু, কুয়াংতোং ও ফুচিয়ানে কার্যক্রম শুরু করবো। বৈশ্বিক এই চাহিদা পূরণ করতে দেশের বাইরে বিশেষ করে জার্মানি, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায় উৎপাদন কারখানা স্থাপনের কথা ভাবছি।“
এদিকে, চীনের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। ফলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রেখে কার্যক্রমে জোরদার করেছে তারা। স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র কুয়োশেং সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ইয়াং রুনসি বলছেন, বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো ও সরবরাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে ঝামেলাবিহীন করার দিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
ইয়াং রুনসি, প্রধান বিশ্লেষক, কুয়োশেং সিকিউরিটিজ
“নতুনভাবে যে অনশোর বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট আছে, আমাদের বিশ্বাস এখান থেকে চলতি বছর ৬০ থেকে ৭০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এবং তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। পুরো আপস্ট্রিম ইন্ডাস্ট্রির সরবরাহ সক্ষমতা গেল বছরের তুলনায় ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।“
পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ২৮ গিগাওয়াটে। এর পরিমাণ গেল বছরের তুলনায় ১১২ শতাংশ বেশি।
ভিনদেশে চীন:
মিশরে সৌদি-চীন যৌথ উদ্যোগে বাস সংযোজন কারখানা স্থাপন
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীন ও সৌদি আরবের কোম্পানি যৌথভাবে মিশরে নির্মাণ করেছে বাস সংযোজন কারখানা। এরইমধ্যে কারখানায় শুরু হয়েছে উৎপাদন।
মিশরের নিউ সুয়েজ সিটিতে কারখানাটি যৌথভাবে তৈরি করেছে সৌদি কোম্পানি এটিএম মিসোর ও চীনা বাস নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কিংলং। কোম্পানিটি বলছে, প্রথম ধাপের উৎপাদন কাজ শেষে শিগগিরই এখান থেকে পাওয়া যাবে বেশ কিছু যাত্রীবাহী বাস।
বাস সংযোজন কারখানাটি নির্মাণ করতে ১ বিলিয়ন মিশরীয় পাউন্ড বা ৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে সৌদি কোম্পানি এটিএম মিসোর। আর পুরো পক্রিয়ায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ সরবরাহ করবে চীনা কোম্পানি কিংলং।
সম্প্রতি এই শহরে এক উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে সৌদি আরবের কোম্পানি এটিএম মিসোর এর চেয়ারম্যান হামেদ আল মুতাবাগানি বলেন, বর্তমানে কারখানাটিতে বছরে ৫শ’ বাস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পুরো কারখানাটি নির্মাণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার বর্গ মিটার জায়গাজুড়ে। এখানে উন্নত উৎপাদন লাইন, ওয়ারহাউজ ও মান যাচাইকরণ সুবিধা আছে।
কোম্পানি দুটির চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদনের পর প্রথমেই ৫১টি বাস সরবরাহ করা হবে সৌদি ভিত্তিক ডিলার ন্যাশনাল ট্রেড কোম্পানিকে। এই ৫১টি বাসের ২৬টিতেই ব্যবহার করা হবে চীনা কোম্পানি কিংলংয়ের সরবরাহ করা যন্ত্রাংশ।
হামেদ আল মুতাবাগানি বলেন, বাস সংযোজনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা ৬০ শতাংশ যন্ত্রাংশ। এই প্রকল্প মিশরের গাড়ি তৈরির শিল্পকে সমৃদ্ধ করবে বলেও জানান তিনি। তিনি বিশ্বাস করেন, এখানে উৎপাদন করা গাড়িগুলো উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর বাজারে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে।
এদিকে, কারখানাটি এমন এক জায়গায় তৈরি করা হয়েছে যেখান থেকে ৩টি প্রধান বন্দর খুব কাছে। এর ফলে আফ্রিকা ও ইউরোপের বাজার ধরাও সহজ হবে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।
কোম্পানি প্রোফাইল:
চীনে নতুন প্ল্যান্ট চালু করছে জার্মান কেমিকেল জায়ান্ট বিএএসএফ
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: জার্মানির সবচেয়ে বড় রাসায়নিক কোম্পানি বাডিশে আনিলিন উন্ড সোডা ফাব্রিক –বিএএসএফ। সম্প্রতি চীনে নতুন করে ২টি মেগাপ্রকল্প চালুর ঘোষণা করেছে এই কোম্পানিটি। এরমধ্যে অন্যতম হলো চীনের কুয়াংতোং প্রদেশে কোম্পানিটির ছানচিয়াং ভারবুন্ড বেজের সাইট্রাল ইউনিট।
কোম্পানিটি বলছে, সারা বিশ্বেই প্রসাধনী পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। আর সে কারণে বাড়ছে সুগন্ধি পণ্য উৎপাদনের কাঁচামালের চাহিদা। নতুন করে শুরু করা এই দুটি ইউনিটের উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে ২০২৬ সাল থেকে। তারা বলছে, চলতি বছর থেকে বিএএসএফের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ১ লাখ ১৮ হাজার টনে পৌঁছে যাবে।
বিএএসএফের অ্যারোমা ইনগ্রেডিয়েন্টসের সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট থিলো বিশফ বলেন, কোম্পানির বৈশ্বিক উৎপাদন নেটওয়ার্ক আরো বড় ও বিস্তৃত করার ফলে এবং সরবরাহ নিরাপত্তা আরো বাড়ানোর ফলে সুগন্ধি ও স্বাদ বিষয়ক শিল্পের ক্রেতারা আরো বেশি সুবিধা পাবেন। তিনি জানান, চীনের ছানচিয়াংয়ে আরো বেশি বিনিয়োগ টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করা ও ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে আরো একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ।
নতুন উৎপাদন প্ল্যান্টগুলোতে অপেক্ষাকৃত কম কার্বন নিঃসরণকারী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব কারখানায় ব্যবহার করা হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানী ও বিদ্যুৎ। বিশেষ করে ২০২৫ সাল থেকে ছানচিয়াং উৎপাদন প্ল্যান্টে ব্যবহার করা হবে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানী।
এদিকে, চীনের এই প্ল্যান্টে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহারেরও ঘোষণা দিয়েছে সারা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রাসায়নিক পণ্য উৎপাদনকারী এই কোম্পানি।
বিএএসএফ বলছে, চীনে নতুন এই দুটি উৎপাদন ইউনিট চালুর ফলে টেকসই রূপান্তরে বিএএসএফ’র শক্তিশালী প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটবে।