চলতি বাণিজ্যের ১২ম পর্ব
চলতি বাণিজ্যের ১২ম পর্বে থাকছে:
১. কয়লাভিত্তিক তরল জ্বালানীর রকেট উৎক্ষেপণ, বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
২. কানাডার খনি শিল্প: চীনা কোম্পানির বিপুল বিনিয়োগ
৩. চীনে বিনিয়োগ বাড়িয়েই চলেছে সুইডেনের ইলেক্ট্রোলাক্স
কয়লাভিত্তিক তরল জ্বালানীর রকেট উৎক্ষেপণ, বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: কয়লাভিত্তিক তরল জ্বালানী ব্যবহার করে এই প্রথমবারের মতো রকেট উৎক্ষেপণ করেছে চীন। তবে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, চীনের একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন বেসরকারি অ্যারোস্পেস কোম্পানি চালিয়েছে এই অভিযান। সম্প্রতি চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় চিউকুয়ান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে রকেটটি মহাকাশে পাঠানো হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, মহাকাশে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে এই বেসরকারি রকেট উৎক্ষেপণ।
এপ্রিলের দ্বিতীয় দিন। বেইজিংয়ের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিট। চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় চিউকুয়ান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে তৈরি হয় আরো একটি সফলতার গল্প।
বিশ্বে প্রথমবারের মতো কয়লাভিত্তিক তরল জ্বালানী ব্যবহার করে মহাকাশের উদ্দেশ্যে ছুটে যায় ক্যারিয়ার রকেট টিএল-টু ওয়াই ওয়ান। এর আগে তরল জ্বালানী চালিত রকেট নির্মাণ করে স্পেস এক্স, ভার্জিন অর্বিট কিংবা চীনের ল্যান্ডস্পেসসহ বিভিন্ন দেশের বেসরকারি সংস্থা। তবে এবারই সফলতার সঙ্গে রকেটটি কক্ষপথে প্রবেশ করে। ইতিহাস তৈরির এই ঘটনা সম্ভব করেছে চীনেরই বেসরকারি অ্যারোস্পেস কোম্পানি স্পেস পাইওনিয়ার।
প্রথমবারের মতো মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা এই রকেট কোন প্রথাগত রকেট নয়। শতভাগ কয়লা-ভিত্তিক তরল জ্বালানী ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। স্পেস পাইওনিয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাং ইয়াংলাই জানান, উৎক্ষেপণের পর পরিকল্পিত কক্ষপথে প্রবেশ করেছে রকেটটি।
ক্যাং ইয়াংলাই, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, স্পেস পাইওনিয়ার
“ছ্যাংচিয়াক্যাং শহরে আমাদের যে উৎপাদন সুবিধা তা পুরোপুরি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি আমরা। এখানে আমাদের বছরে ৩৮টি সম্পূর্ণ রকেট ও ৫০০টি রকেট ইঞ্জিন তৈরির সক্ষমতা আছে। সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি রকট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি।“
এই রকেটটি একটি দূর নিয়ন্ত্রিত স্যাটেলাইট বহন করে নিয়ে যায়। এই স্যাটেলাইটটি বিভিন্ন রকম কারিগরি পরীক্ষা-নীরিক্ষা, ছবি ও ভিডিও ধারণসহ নানা কাজে ব্যবহার করা যাবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মহাকাশখাতের গবেষণায় চীনের বেসরকারি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর দারুণ এস সফলতা এই রকেট উৎক্ষেপণ।
ভিনদেশে চীন:
কানাডার খনি শিল্প: চীনা কোম্পানির বিপুল বিনিয়োগ
চীন আন্তর্জাতিক বেতার: এবার কানাডায় ব্যবসা কার্যক্রম সম্প্রসারণে নজর দিয়েছে চীনা খনি শিল্প প্রতিষ্ঠান সিনোমাইন রিসোর্স। সম্প্রতি কানাডার একটি খনিজ শিল্প প্রকল্পে ১৭৬ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার বা ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তারা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম রাসায়নিক পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহে ব্যাপক প্রভাব তৈরির কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি।
চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনা খনি শিল্প প্রতিষ্টান সিনোমাইন রিসোর্স কানাডায় একটি খনিজ শিল্প প্রকল্পে ১৭৬ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার বা ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে। সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন সহায়ক সংস্থা ট্যানটালাম মাইনিং কর্পোরেশন অফ কানাডা -ট্যানকো সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে।
চায়না সিকিউরিটি জার্নাল জানায়, মিনারেলস কনসেনট্রেটর প্রকল্পটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ মিলিয়ন টন। এই প্রকল্পটি ট্যানকোর লিথিয়াম খনি এবং সিজিয়াম আকরিক সম্পদের উন্নয়নেও ব্যবহার করা হবে।
ঘোষণা অনুযায়ী ট্যানকোর ১০০টি ইকুইটি ইন্টারেস্টের মালিক সিনোমিন রিসোর্স। এসব অংশীদারিত্ব মূলত খনি শিল্প, স্পোডুমিন ও সিজিয়াম গার্নেটের খনন, সিজিয়াম ফর্মেট ও সিজিয়াম রাসায়নিক উৎপাদন এবং বিপণনের সাথে জড়িত।
কোম্পানীর ঘোষণা অনুযায়ী নতুন কনসেনট্রেটর প্রকল্পটি স্থানীয় লিথিয়াম সম্পদে টানকোর প্রভাবশালী অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করবে এবং উত্তর আমেরিকায় কোম্পানিটির একটি সরবরাহ চেইন তৈরি করতে সহায়তা করবে।
এছাড়াও নতুন কনসেনট্রেটর প্রকল্পটি ট্যানকোর উৎপাদন এবং অপারেশন দক্ষতা উন্নত করবে। কমিশনিং কনসেনট্রেটর প্রকল্পটি কোম্পানির লিথিয়াম লবণ এবং সিজিয়াম লবণ ব্যবসার জন্য কাঁচামাল উৎপাদনের ধাপ প্রসারিত করবে।
সিনোমাইন রিসোর্স হল একটি চীন ভিত্তিক কোম্পানী যা কঠিন খনিজ অনুসন্ধান প্রযুক্তিগত পরিষেবা প্রদানে নিযুক্ত।
প্রতিবেদন: রফিক বিপুল; সম্পাদনা: সাজিদ রাজু; কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া
কোম্পানি প্রোফাইল:
চীনে বিনিয়োগ বাড়িয়েই চলেছে সুইডেনের ইলেক্ট্রোলাক্স
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: একদিকে বিশাল জনগোষ্ঠী অর্থাৎ ভোক্তা, অন্যদিকে বাজার ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ সুবিধা। এই তিনে মিলে চীনকে ব্যবসা সম্প্রসারণের সেরা জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে সুইডেন ভিত্তিক ইলেক্ট্রিক পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রোলাক্স।
বৈশ্বিক ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনাকারী এই প্রতিষ্ঠানটি ক্রমেই বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে চীনে। ইলেক্ট্রোলাক্স চায়না’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক র্যামন সারিয়েগো-ভিল্লার জানান, চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। কিন্তু এখানে মধ্যম আয়ের ক্রেতার সংক্যা বিপুল সংখ্যক। এই গ্রাহকরা স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাসের নিয়ামক হিসেবে বিশেষ করে ভালো মানের গৃহস্থালী পণ্য কিনতে ও ব্যবহার করতে পছন্দ করে।
চীনের বাজার সম্পর্কে তার মূল্যায়ন, ইলেক্ট্রোলাক্সের মতো বৈশ্বিক কোম্পানির জন্য চীনা বাজার বেশ উপযুক্ত এবং এখানে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পেরে তারা বেশ আত্মবিশ্বাসী।
গেল কয়েক বছরের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনার অংশ হিসেবে এখানেই উৎপাদন কারখানা তৈরি করেছে ইলেক্ট্রোলাক্স্ বর্তমানে ক্রমেই বাড়ছে কারখার কার্যক্রমের পরিসর। বিশেষ করে বাণিজ্যিক শহর সাংহাইতে গড়ে তোলা হয়েছে গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ। এটি সারা বিশ্বের শীর্ষ ৫টি মার্কেট রিসার্চ ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এদের কাজই হলো চীনা গ্রাহকদের চাহিদা ও রুচির কথা মাথায় রেখে পণ্য তৈরি করা। ফলে বাজারের নানা পরিবর্তন ও সেই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপখাওয়ার পন্থা উদ্ভাবনেও পিছিয়ে নেই কোম্পানিটি। আবার ব্যবসায়ীক কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে স্থানীয় শতাধিক কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইলেক্ট্রোলাক্স।
এদিকে, চীনে স্থাপন করা কারখানাগুলোতে কেবল চীনা বাজারের জন্য নয় বরং সারা বিশ্বের জন্যই পণ্য তৈরি করা হয়। র্যামন সারিয়েগো-ভিল্লার জানান, হাংচৌতে স্থাপন করো কারখানায় তৈরি করা হয় পুরো এশিয়া উপসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোর মানুষের জন্য নানা ধরনের পণ্য। অর্থাৎ চীনে উৎপাদন করা হলেও এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে সেসব পণ্য রফতানিও করা হয়।
এতোসব কার্যক্রম পরিচালনার কারণে চীনে কোম্পানিটির ব্যবসাও সম্প্রসারিত হয়েছে। গেল ৩ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বছরে সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ইলেক্ট্রোলাক্সের। র্যামন সারিয়েগো-ভিল্লার জানান, ২০২০ সালে ব্যবসা সম্প্রসারণ হয়েছে ৬১ শতাংশ এবং ২০২১ সালে হয়েছে ৫৮ শতাংশ।
কোম্পানিটি বলছে, চীনের ব্যবসা বান্ধব নীতি ও পরিচ্ছন্ন ধারণা তাদের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম সম্প্রসারণে সহায়ক হয়েছে। বিশেষ করে টেকসই উন্নয়ন ও কম কার্বন নিঃসরণ বিষয়ক নীতিগুলো শিল্প উৎপাদনের পক্ষে সহায়ক। এই নীতির সঙ্গে মিল রেখে ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্য অর্জন বিষয়ক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ইলেক্ট্রোলাক্সও।