ইউয়ানে এলএনজি আমদানি করলো চীন
চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান
‘চলতি বাণিজ্য’
চলতি বাণিজ্যের ১১ম পর্বে থাকছে:
১. ইউয়ানে এলএনজি আমদানি করলো চীন
২. চীনে আঞ্চলিক হেডকোয়ার্টার্স স্থাপন করলো তেল-গ্যাস কোম্পানি শ্লামবার্গার
৩. কঙ্গোতে আধুনিক সড়ক নির্মাণ করছে চীন
ইউয়ানে এলএনজি আমদানি করলো চীন
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: এই প্রথমবারের মতো ইউয়ানের মাধ্যমে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি করেছে চীন। এরইমধ্যে এলএনজি’র প্রথম চালান সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে চীনে এসে পৌঁছেছে। এদিকে, এদিকে উত্তর চীনের হেবেই প্রদেশের হেচিয়ান কাউন্টিকে স্থাপন করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রথম অনশোর মেমব্রেন স্টোরেজ ট্যাংক থেকে নাগরিকদের জন্য সরবরাহ শুরু হয়েছে।
পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের ইয়ানচেং শহর। এখানকার বন্দরে নামানো হয় সুদূর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে নিয়ে আসা প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি। এই বন্দরে আছে এলএনজি খালাস করার সব রকমের সুযোগ সুবিধা। সম্প্রতি দেখা যায়, আমদানি করা এলএসজি খালাসের নানা রকম কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব কার্যক্রমে রাত-দিন কাজ করছেন কর্মীরা।
এই প্রথমবারের মতো জ্বালানীখাতে ইউয়ানের মাধ্যমে গ্যাস আমদানি করলো চীন। আমদানি করা এসব এলএনজি পৌঁছে যায় পূর্ব চীনেরই আরেক প্রদেশ শানতোংয়ের তোংইং শহর। এখানেই গড়ে তোলা হয়েছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি সংরক্ষণাগার।
চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, চীনের সবচেয়ে তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল কর্পোরেশন –সিএনওওসি’ এই ক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এলএনজি কেনা হয়েছে টোটাল এনার্জিস এর কাছ থেকে।
এলএনজি আমদানির এই বাণিজ্যিক কার্যক্রমটি সম্পন্ন হয় সাংহাই পেট্রোলিয়াম ও ন্যাচরাল গ্যাস এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে। আর এই এলএনজি’র উৎস দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রতিষ্ঠানটি আরো জানায়, আমদানি করা এলএনজির মোট পরিমাণ ৬৫ হাজার টন।
তেল ও গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে ইউয়ানের মাধ্যমে এটাই প্রথম বাণিজ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানী আমদানিতে এটি একটি মাইলফলক এবং একইসঙ্গে বিরাট অগ্রগতি।
চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের প্রকাশ করা এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সালে চীন মোট ৫০০ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত জ্বালানী তেল ও ১০০ মিলিয়ন টনের বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করেছে। এর মধ্যে ৬৩ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন টন ছিলো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস –এলএনজি।
এদিকে উত্তর চীনের হেবেই প্রদেশের হেচিয়ান কাউন্টিকে স্থাপন করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রথম অনশোর মেমব্রেন স্টোরেজ ট্যাংক থেকে নাগরিকদের জন্য সরবরাহ শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে এই ট্যাংক থেকে মোট ৪০ মিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণ করা হয়েছে।
পেট্রো চায়না বলছে, এই গ্যাস সংরক্ষণ কেন্দ্রটির ধারণ ক্ষমতা ২৯ হাজার ঘনমিটার এবং এখান থেকে অন্তত ৮ লাখ নাগরিকের গ্যাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
সংস্থাটি আরও জানায়, এখান থেকে প্রতিদিন ১ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব। চীনের ন্যাশনাল এলএনজি ইমার্জেন্সি প্রজেক্টের আওতায় ১১টি এলএনজি সংরক্ষণ ট্যাংক নির্মাণ করেছে চীন। এই গ্যাস সরবরাহ করতে নির্মাণ করা হয়েছে ২১৫ কিলোমিটার পাইপলাইন।
পরিবেশবান্ধব জ্বালানী খাতের আলোচনায় চীনে নতুন নয়। এবার এই কার্যক্রম যুক্ত হয়েছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস –এলএনজি’র ব্যবহার। এলএনজি ট্যাংকটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রো চায়না জানায়, এরইমধ্যে গেল শীতে ৪০ মিলিয়ন ঘনমিটার এলএনজি নাগরিকদের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে চীনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানী খাতে প্রত্যাবর্তন আরও তরান্বিত হবে। একইসঙ্গে বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৬০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হওয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তা পূরণে সহায়ক হবে চীনের এই পদক্ষেপ।
ভিনদেশে চীন:
চীনে আঞ্চলিক হেডকোয়ার্টার্স স্থাপন করলো তেল-গ্যাস কোম্পানি শ্লামবার্গার
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনে ব্যবসায়ীক কার্যক্রমে গতি ফেরায় নতুন উদ্যোগে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণের কাজ করছে বিদেশি বিনিয়োগে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই একটি তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান শ্লামবার্গার অয়েলফিল্ড ইকুইপমেন্টস (সাংহাই) কোম্পানি লিমিটেড। সম্প্রতি পূর্ব চীনের সাংহাই শহরে স্থাপন করা হয়েছে কোম্পানিটির আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয় বা হেডকোয়ার্টার্স।
বিশ্বখ্যাত তেলগ্যাস অনুসন্ধান ও এ সম্পর্কিত সেবাদানকারী বহুজাতিক কোম্পানি শ্লামবার্গার। জনবহুল চীনের বাজার ধরতে এবার রীতিমত আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয় খুলে বসেছে চীনে। এরআগে ২০০৫ সালে চীনের সাংহাইয়ের ছিংপোউ শিল্প পার্কে অফিস খোলে কোম্পানিটি। সে সময় কোম্পানিটির নিবন্ধনকৃত মূলধনের পরিমাণ ছিলো ৬০ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কার্যক্রম শুরুর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতি বছরই বাড়তে শুরু করে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম আর ব্যবসার পরিধি।
এক পর্যায়ে ছিংপুর সমন্বিত বনডেড এলাকায় বিদেশী অর্থায়নের এই কোম্পানিটি আঞ্চলিক সদর দফতর খোলার কার্যক্রম শুরু করে। নানা দাফতরিক কার্যক্রম শেষে এবার সফলভাবে শুরু হয় আঞ্চলিক সদর দফতরের নিয়মিত কার্যক্রম।
ব্যবসায়ীক নানা জটিলতা সামলাতে এক পর্যায়ে উদ্ভাবনমূলক এক অফিস ব্যবস্থাপনা চালু করে শ্লামবার্গার। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়ে ভ্যাট পরিশোধকারী মর্যাদার কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন নেয় এটি। গঠন করে ক্যামেরন সিস্টেম সাংহাই কোম্পানি লিমিটেড। শ্লামবার্গারের সাংহাই অফিসের মহা-ব্যবস্থাপক সু ছিইউ জানান, এই পদক্ষেপের ফলে বছরে অন্তত ৫ শতাংশ পর্যন্ত পরিচালন ব্যয় কমেছে।
গেল কয়েক বছরে নানাভাবে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম বেড়েছে কোম্পানিটির। বিশেষ করে আগের বছরের তুলনায় গেল ২০২২ সালে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের প্রবৃদ্ধি হয়েছে অন্তত ৫১ শতাংশ। কোম্পানিটি বলছে, ব্যবসায়ীক কার্যক্রমের প্রবৃদ্ধিকে সামনে রেখে চলতি বছরের মধ্যে আরও ২ থেকে ৩টি উৎপাদন লাইন চালু করা এবং নতুন একটি কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, সাংহাই শহরের মোট আদায় করা করের এক তৃতীয়াংশই আসে বিদেশি বিনিয়োগে পরিচালনা করা প্রায় ৬০ হাজার কোম্পানির মাধ্যমে। এই করের পরিমাণ শহরটির মোট জিডিপি’র এক চতুর্থাংশ। পাশাপাশি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়, এই আয় শহরটির মোট বৈদেশিক লেনদেনের ৩ ভাগের ২ভাগ।
কোম্পানি প্রোফাইল:
কঙ্গোতে আধুনিক সড়ক নির্মাণ করছে চীন
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে ৩৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে চীনের দুটি কোম্পানির গঠন করা কনসোর্টিয়াম। বিনিয়োগের অর্থ ব্যয় করা হবে কঙ্গোর জাতীয় মহাসড়ত উন্নয়ন ও একটি বন্দরের আধুনিকীকরণের কাজে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, একইসঙ্গ প্রকল্পের কাজ শেষে তা পরিচালনার কাজও করবে তারা। আমার তৈরি করা প্রতিবেদন জানাচ্ছেন হোসনে মোবারক সৌরভ।
আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো বা ডিআর কঙ্গোতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে কাজ করছে চীনা কোম্পানি। বিশেষ করে চীনের কয়েকটি কোম্পানি যৌথভাবে এই দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কঙ্গোতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে চীনের কয়েকটি কোম্পানি।
চীন সরকারের ভর্তুকি প্রতিষ্ঠান চাইনিজ লজিস্টিকস ফার্ম চিয়াও ইন্টারন্যাশনাল লজিস্টিক্স কোম্পানি লিমিটেড বা সংক্ষেপে চিয়াও ইন্টারন্যাশনাল এক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। চিয়াও ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে বিনিয়োগে অংশ নেবে আরেক ভর্তুকি নির্ভর বৃহত্তম খনি শিল্প প্রতিষ্ঠান সিচিন মাইনিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড।
কোম্পানি দুটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কঙ্গোর কাম্বুলুলু-দিলোলো মহাসড়ক এবং দিলোলো বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পের কাজ করবে তারা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হবে ৩৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চিয়াও ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণ, বন্দরের আধুনিকীকরণ এবং একইসঙ্গে পরিচালনাও করবে তারা।