বাংলা

চলতি বাণিজ্যের ৪র্থ পর্ব

CMGPublished: 2023-02-10 19:01:14
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান

‘চলতি বাণিজ্য’

চলতি বাণিজ্যের ৪র্থ পর্বে যা থাকছে:

২. আন্তর্জাতিক লেনদেনে বাড়ছে ইউয়ানের ব্যবহার

৩. চিপ প্যাকেজিংয়ে সাফল্যগাঁথা চীনা কোম্পানি জেসিইটি’র

১. চীনের স্বপ্ন পূরণ: ওড়ার জন্য প্রস্তুত নিজস্ব যাত্রীবাহী বিমান সি-৯১৯

চীনের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন নিজেদের তৈরি একটি বড় আকারের যাত্রীবাহী এয়াক্র্যাফ্ট উড়বে আকাশে। এবার সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথে। সি-নাইন ওয়ান নাইন এয়াক্র্যাফ্ট প্রকল্প এখন ডানা মেলবার অপেক্ষায় নীল আকাশে। এরইমধ্যে চীনের বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরে কয়েক কয়েক’শ ঘণ্টা উড্ডয়ন পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। হস্তান্তর করা হয়েছে বিমানটির প্রথম ক্রেতা চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের কাছে। সংস্থাটির প্রত্যাশা চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে এই বিমানটি দিয়ে।

চীনের আকাশে উড়ছে নিজ দেশের তৈরি বড় আকারের সি-নাইন ওয়ান নাইন মডেলের যাত্রীবাহী বিমান। চীনের বিভিন্ন বিমান বন্দর থেকে উড়তে দেখা গেছে সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে দেশের কারখানায় তৈরি করা এই বিমানটি। এ যেন নিজেদের দেখা দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্ত!

চীনের বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে এরইমধ্যে কয়েকশ’ ঘণ্টার উড্ডয়ন পরীক্ষায় সফলতা পেয়েছে বিমানটি। পরীক্ষামূলক এসব উড্ডয়নই প্রমাণ করে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি এয়ারক্র্যাফ্ট সি-নাইন ওয়ান নাইন।

ওয়েই ইংপিয়াও, ভাইস প্রেসিডেন্ট, কমার্শিয়াল এয়ারক্র্যাফ্ট কর্পোরেশন অব চায়না

“বৃহৎ এয়ারক্র্যাফ্ট তৈরি ও এর মান ও সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে আমরা নিজেদের সক্ষমতাকে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে নিয়ে যাবো। উৎপাদন যেন ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় এবং অন্যান্য কাজগুলো যেন এগিয়ে নেওয়া যায় সে ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা চলমান থাকবে।“

এয়ারক্র্যাফ্টটির উৎপাদনই কেবল শুরু হয়নি বরং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্যও প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরইমধ্যে কারখানায় উৎপাদন কাজ চলছে পুরো দমে।

নিজস্ব এয়ারক্র্যাফ্ট তৈরির এমন কার্যক্রম শুরুর ইতিহাস আরো স্মৃতিময়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস। রাজধানী বেইজিংয়ের হল অব দ্য পিপলে সি-নাইন ওয়ান নাইন প্রকল্পের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। সেখানে তিনি বলেন, জাতির স্বপ্ন, চীনাদের আকাঙ্ক্ষা আর রাষ্ট্রের এক বিশাল চাওয়া নিজেদের আকাশে উড়বে নিজেদের এয়ারক্র্যাফ্ট।

প্রকল্পের প্রধান ডিজাইনার উ কাংহুই জানান, প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সেই নির্দেশনাই কাজে যুগিয়েছে অনুপ্রেরণা।

উ কাংহুই, প্রধান ডিজাইনার, সি-৯১৯ প্রকল্প

“সাধারণ সম্পাদক আমাদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমাদের নিজস্ব যন্ত্রপাতি উৎপাদনের কারখানা থাকা দরকার। একইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, আকাশে উড্ডীয়মান আমাদের নিজেদের একটি এয়ারক্র্যাফ্ট থাকা উচিত। সেই নির্দেশনাই ছিলো আমাদের অন্যতম সাহস।“

নিজেদের তৈরি এই যাত্রীবাহী বিমান তৈরির কাজ সম্পন্ন করা কোন একক সংস্থার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সি-নাইন ওয়ান নাইন প্রকল্পের উপদেষ্টা জানান, পুরো দেশের ১ হাজার ছোট-বড় সংস্থা যুক্ত ছিলো এই প্রকল্পের সঙ্গে। কাজ করেছে অন্তত ৩ লাখ কর্মী।

গেল ২০২২ সালে সি-নাইন ওয়ান নাইন মডেলের বিমান পেয়েছে বেশ কয়েকটি স্বীকৃতি। বিশেষ করে চীনের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের উড্ডয়ন স্বীকৃতি পায় এই এয়ারক্র্যাফ্ট। বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু আগে এই স্বীকৃতি এক মাইলফলক। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের তৈরি বড় আকারের এই যাত্রীবাহী বিমান নির্মাণের মধ্যদিয়ে এই অঞ্চলের অন্যতম উৎপাদনের পাওয়ার হাউজ বা শক্তিকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে চীন।

নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর এইমধ্যে এই বিমানটি প্রথম ক্রেতা চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে। সংস্থাটি জানায়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিমানটি দিয়ে শুরু হবে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা।

ভিনদেশে চীন: আন্তর্জাতিক লেনদেনে বাড়ছে ইউয়ানের ব্যবহার

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনা মুদ্রা রেনমিনবি বা আরএমবি’র মাধ্যমে ক্রমেই বাড়ছে আন্তর্জাতিক লেনদেন। ফলে চীনের বাইরে অন্যান্য দেশগুলোতেও ব্যবহার করার সুযোগ মিলছে চীনা মুদ্রা আরএমবি’র। পরিসংখ্যান বলছে, বৈদেশিক লেনদেনে আরএমবি ব্যবহারের হার আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে ১৮ শতাংশ বেড়েছে। আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শক্তিশালী নীতি কাঠামো ও বাজারের চাহিদা বাড়ার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।

বহুদিন ধরেই চেষ্টা চলছে বৈদেশিক লেনদেনে সরাসরি চীনা মুদ্রা আরএমবি ব্যবহারের জন্য। ছোট ছোট নানা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার ফলে বর্তমানে ধীরে ধীরে বাড়ছে আরএমবি ব্যবহারের হার।

চীনা মুদ্রা আরএমবি বা ইউয়ানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন বাড়াতে চীনের স্থানীয় সরকার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যুগপথ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশেষ করে ইউয়ানের বিনিময় মূল্য আরো স্থিতিশীল ও বাজারমূল্য অনুযায়ী রাখার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আরো বেশি প্রতিষ্ঠান আরএমবি’র মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন করতে উৎসাহিত হচ্ছে।

ম্যাগি লি, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, টিসিএল টেক

চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান টিসিএল টেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাগি লি বলছেন, সরকারের নানা পদক্ষেপ আরএমবির আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য সহায়ক। বিশেষ করে প্রবাসী চীনাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রস বর্ডার লেনদেনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে চীনের বাইরে কাজ করা শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আরএমবি ব্যবহারে উৎসাহিত করার কাজ করছে চীন সরকার। আবার চীনের সবচেয়ে বড় ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে নিয়মিতই।

জেরেমি স্টিভেন্স, অর্থনীতিবিদ

চীনের স্ট্যান্ডার্ড অ্যাডভাইজরির অর্থনীতিবিদ জেরেমি স্টিভেন্স বলছেন, বিনিয়োগ ও ঋণ কার্যক্রমে এখন আরো বড় ভূমিকা পালন করছে আরএমবি।

চীনের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না –আইসিবিসি। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বিদেশী বিনিয়োগে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে খুব শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করবেন তারা। এরইমধ্যে ৪৫০ বিলিয়ন ইউয়ানের একটি বিশেষ তহবিল গঠনের পরিকল্পনাও করছে তারা। একইসঙ্গে ঋণ গ্রহীতা বা গ্রাহকদের জন্য পেশাদার ও নিরাপদ সেবা নিশ্চিত করারও পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের বাইরে নানা লেনদেনে আরএমবি ব্যবহারের হার আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে ১৮ শতাংশ বেড়েছে। আবার আরএমবিতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ২০২২ সালে বেড়েছে ৭০ শতাংশ। আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শক্তিশালী নীতি কাঠামো ও বাজারের চাহিদা বাড়ার কারণেই বিনিময়ে সরাসরি আরএমবি ব্যবহারের পরিমাণ এতোটা বেড়েছে।

কোম্পানি প্রোফাইল: চিপ প্যাকেজিংয়ে সাফল্যগাঁথা চীনা কোম্পানি জেসিইটি’র

সাজিদ রাজু, চীনা আন্তর্জাতিক বেতার: চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান জেসিইটি সম্প্রতি ৪ ন্যানোমিটার চিপের প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। পাশাপাশি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী চিপ প্যাকেজিং সেবা দিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে এই কোম্পানিটি।

চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক উ চিয়াংসিং জানান, সময়ের সঙ্গে চিপ প্যাকেজিংয়ে যে খরচ বাড়ছিলো তা গোটা খাতকেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যাচ্ছিলো। এমন প্রেক্ষাপটে জেসিইটির পণ্য চেপলেট, কম খরচে উন্নত মানের সেবা দিতে সক্ষম।

জেসিইটি’র এই উদ্যোগ দেশটির চিপ প্যাকেজিং শিল্পে এক বিরাট পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যে কঠোর পরিশ্রম করছে এটি তারই প্রমাণ বলে মনে করেন এখানের বিশ্লেষকরা।

সেমিকন্ডক্টর প্রস্তুত ও ডিজাইনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এই প্যাকেজিং। প্যাকেজিং প্রক্রিয়া বড় পরিসরে ভূমিকা পালন করে এই শিল্পের সুরক্ষা, আধিপত্য ও কার্যক্রমে।

জেসিইটি বলছে, বিদেশী গ্রাহকদের জন্য ৪ ন্যানোমিটার চিপের প্যাকেজিংও এখন তারা করতে সক্ষম। একইসঙ্গে সর্বোচ্চ ১৫শ’ বর্গ মিলিমিটার আকারের চিপের প্যাকেজিং করা সম্ভব তাদের পক্ষে।

চিপলেট এমন একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্লক বা আইসি ব্লককে অন্য আইসিগুলোর সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে একটি জটিল বা কমপ্লেক্স চিপ তৈরি করা যায়।

পরিসংখ্যান বলছে, আগামী ২ বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মাইক্রোচিপের ট্রান্সিসটর তৈরির সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। কিন্তু কম্পিউটার প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ফাইভ-জি প্রযুক্তি, স্মার্ট অটোমোবাইল, ক্লাউডসহ প্রযুক্তির নানা ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক যে দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়েনি প্যাকেজিংয়ের মতো কার্যক্রম। ফলে এই খাতে প্যাকেজিংয়ের মতো একটি ব্যাক-এন্ড প্রযুক্তির একটি বড় অভাব তৈরি হয়েছিলো। চীনের জেসিইটি সেই অভাব পূরণ করতে পারবে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn