বাংলাদেশের মানব সম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করবে চীন
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বাংলাদেশের বিভিন্নখাতে মানব সম্পদ উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে প্রস্তুত চীন। বিশেষ করে নানা ধরণের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই দেশের কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিনিময়ের মতো কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বেইজিং ও ঢাকা। শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত মানব সম্পদ উন্নয়ন সহযোগিতা ফোরামে এমন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ক কাউন্সিলর। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে চীনা উদ্যোগে আয়োজিত প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি কর্মকর্তারা তাদের অভিজ্ঞতা ও এসব ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরেন।
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫ দশকে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার নানা উদাহরণ আছে চীন ও বাংলাদেশের। বাণিজ্য ও অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের নানা বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় কর্মসূচি চলছে জোরেশোরে। হাল আমলে যোগ হয়েছে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র সুনীল অর্থনীতি ও প্রযুক্তির মতো বিষয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সহযোগিতার পালে নতুন মাত্রা যোগ করেছে মানবসম্পদ উন্নয়ন।
বিভিন্ন সময় চীনের উদ্যোগে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও বৃত্তিমূলক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের নিয়ে শনিবার আয়োজন করা হয় ফোরাম অন চায়না-বাংলাদেশ হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন অ্যান্ড রিইউনিয়ন। জানতে চাইলে এসব প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা প্রয়োগের সম্ভাবনা চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে ব্যাখ্যা করেন বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী। এদেরই একজন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক নুসরাত জাহান।
নুসরাত জাহান, ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর
“এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা বাস্তবিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটা সুযোগ পেয়েছি। একটা বিষয় বই থেকে জানা, গাইডলাইনের মাধ্যমে জানা আর বাস্তবিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মধ্যে যে পার্থক্যটা আছে সেই জায়গা থেকে জানার জায়গাটা অনেক ভালো ছিলো। যেমন ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া এই ধরনের রোগগুলো কিন্তু বাংলাদেশেও আছে। এই ডেঙ্গু নিয়ে কিন্তু আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। চীনেও একই রকম ঘটনা আছে। চীন কীভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে যুদ্ধ করছে, কীভাবে ম্যালেরিয়া নিরাময়ে নীতি প্রণয়ন করেছে, সেই বিষয়গুলো প্রশিক্ষণে ছিলো যেটা আমার কাছে খুব কার্যকর মনে হয়েছে।“
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইদুল ইসলাম জানান, সমুদ্র সম্পদ আহরণে অনেক এগিয়ে থাকা চীনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার কথা।
মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সরকার, সহকারী অধ্যাপক, ওশানোগ্রাফি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
“চীন সমুদ্র অর্থনীতি ও সমুদ্র সম্পদ আহরণে প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কেবল তাই নয়, তারা এই ক্ষেত্রে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। তাদের সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশ সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও গবেষণায় অনেক সফলতা পাবে বলে আমার বিশ্বাস।“
বিশ্বে চা উৎপাদনে এক নম্বরে থাকা চীনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা ব্যাখ্যা করে বলেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের কর্মকর্তা আফরিদা ইয়াসমীন।
আফরিদা ইয়াসমীন, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, বাংলাদেশ চা বোর্ড
“চীন তো চা উৎপাদনে বিশ্বের সেরা। তাদের বছরে উৎপাদন ৩ হাজার মিলিয়ন কেজির মতো। আর আমাদের যেখানে ১০০ মিলিয়ন কেজির কাছাকাছি। চায়না বিভিন্ন রকমের, বিভিন্ন স্বাদের ও গন্ধের চা যেমন জেসমিন ফুলের চা এগুলো উৎপাদন করে। আমাদের চা গুলোকে যদি বিভিন্ন ফ্লেভার দিতে পারি, উৎপাদনে কিছুটা বৈচিত্র্য আনতে পারি তাহলে আমরা বাইরের একটা ভালো বাজার ধরতে পারবো।“
বাংলাদেশকে বিশ্বস্ত বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য কৌশলগত অংশীদার উল্লেখ করে ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাউন্সিলর সং ইয়াং বলেন, এসব সহযোগিতার প্রধান লক্ষ্য দুই দেশের কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন।
সং ইয়াং, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাউন্সিলর, বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাস
“বাংলাদেশ ও চীন উভয়ই জনঘনত্বের দেশ এবং মানবসম্পদে পরিপূর্ণ। এই জনসংখ্যাই শিল্পখাতের উন্নয়নে আমাদের অন্যতম মূলধন, অভ্যন্তরীণ বাজার বাড়াতে ক্রমবর্ধমান ক্রেতা চাহিদা তৈরির উপকরণ। এই মানব সম্পদই আমাদের ফোরামকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।“
চীনের দেওয়া এসব প্রশিক্ষণ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক বলে মন্তব্য করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী।
শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী, অতিরিক্ত সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়
“চীন থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে শিখেছি। ভবিষ্যতের কথা এই জন্য বললাম, কেননা আমি নিজে দেখেছি চীনারা ভবিষ্যতের ব্যাপারে প্রচণ্ডরকম আশাবাদী। বাংলাদেশের মানব সম্পদ উন্নয়নের ব্যাপারে নানা ভাবে সহযোগিতার জন্য চীন সরকার বিশেষ করে বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাসকে এ জন্য ধন্যবাদ জানাই।“
চলতি বছর চীনের পক্ষ থেকে ৬০টি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়। এসব প্রশিক্ষণে অংশ নেয় প্রায় ৪শ’ বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা,আমলা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক।
সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম