ডিজিটাল লেনদেনের এক নতুন দিগন্ত ‘বিনিময়’
আফরিন মিম, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএস ও পিএসপির মধ্যে আন্তঃলেনদেনে ‘বিনিময়’ নামে নতুন এক সেবা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সেবার মাধ্যমে বিকাশ থেকে রকেটে অথবা উপায় থেকে এমক্যাশে বা বিকাশে কিংবা ব্যাংকে তাৎক্ষণিক লেনদেন করা যাবে একটি অ্যাকাউন্ট দিয়ে। এতে করে গ্রাহক পর্যায়ে লেনদেন সেবা আরও সহজ হয়েছে। স্বচ্ছতার পাশাপাশি পেমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ও সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিতের পাশাপাশি লেনদেনেরও খরচ কমেছে।
রোববার ডিজিটাল লেনদেনের এ প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। রাজধানীর একটি বেসরকারি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গ্রাহকের বাণিজ্যিক ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসেস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট থাকলে এ সেবা নিতে পারবে। অর্থাৎ গ্রাহকের এমএফএস বা ব্যাংকের যে কোনো অ্যাকাউন্ট দিয়ে বিকাশ, রকেটে উপায় কিংবা এমক্যাশে ‘বিনিময়’ ব্যবহার করে টাকা লেনদেন করতে পারবেন। এতদিন শুধু বিকাশ দিয়ে বিকাশে বা রকেট দিয়ে রকেটে টাকা পাঠানো যেত। এখন যেকোনো অপারেটরে টাকা পাঠানো যাবে।
এজন্য গ্রাহক তার ব্যাংক বা এমএফএস অ্যাপে ‘বিনিময়’ আইকন থেকে এই আইডি খুলতে পারবেন। ‘বিনিময়’ ব্যবহার করে কোনো ঝামেলা ছাড়াই সহজে ও দ্রুত লেনদেন করতে পরবে। এ ক্ষেত্রে শুধু অন্যের ভার্চুয়াল আইডি দিলেই চলে যাবে টাকা। নাম, ব্যাংক বা অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়ারও প্রয়োজন হবে না। প্রাথমিকভাবে ছোট পরিসরের লেনদেন সম্পন্ন করার সুযোগ মিলবে এ ব্যবস্থা থেকে।
প্রাথমিকভাবে ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেন শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি ব্যাংক হলো, সোনালী, ব্র্যাক, ইউসিবি, ইস্টার্ন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী, আল-আরাফাহ ইসলামী ও মিডল্যান্ড ব্যাংক। তিন এমএফএস প্রতিষ্ঠান হলো, বিকাশ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রকেট ও ইসলামী ব্যাংকের এম ক্যাশ। এর বাইরে টালি পে নামের একটি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) যুক্ত হয়েছে।
যেভাবে কাজ করবে ‘বিনিময়’
শুরুতেই বিনিময় নামে ভিন্ন কোনো অ্যাপ তৈরি হচ্ছে না। বিনিময় একটি সেবা হিসেবে ব্যাংক, এমএফএসের অ্যাপে যুক্ত হবে। বিনিময় ব্যবহার করতে চাইলে গ্রাহককে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের পর গ্রাহকের নামের পরে@binimoy.gov.bd যুক্ত হয়ে একটি আইডি তৈরি হবে। নিবন্ধন শেষ হলে গ্রাহক দুটি অপশন দেখতে পাবেন ‘সেন্ড মানি’ ও ‘রিসিভ মানি’। গ্রাহক যদি কাউকে টাকা পাঠাতে চান, তখন সেন্ড মানি অপশনে গেলে নিজের যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট আছে, তা থেকে একটি বেছে নিতে হবে। এবার যাঁকে পাঠাবেন, তাঁর মুঠোফোন নম্বর বা ইতিমধ্যে যদি ওই ব্যক্তির বিনিময়ে আইডি থাকে, সে আইডি নম্বর দিয়ে টাকা পাঠানো যাবে। আর যাঁকে টাকা পাঠানো হলো, তিনি ‘রিসিভ মানি’ অপশনে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে থাকা যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নম্বরে টাকাটা গ্রহণ করতে পারবেন।
খরচ কত, সম্ভাবনা কী
শুরুতে বিনিময়–এর জন্য খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। পরে খরচ বেড়ে হয় ৬৫ কোটি টাকা। মূলত চারটি প্রতিষ্ঠান এ প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ করে। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো ওরিয়ন ইনফরম্যাটিকস লিমিটেড, মাইক্রোসফট বাংলাদেশ লিমিটেড, ফিনটেক সল্যুশন লিমিটেড ও সেইন ভেঞ্চারার্স লিমিটেড (জেভি)। এর মধ্যে ওরিয়ন ইনফরম্যাটিকস লিমিটেড ও ফিনটেক সল্যুশন লিমিটেড রক্ষণাবেক্ষণ সেবা দিয়ে যাবে।
সম্পাদনা – সাজিদ রাজু