খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে চীন
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বিশ্বজুড়েই আলোচনায় ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা। চীনের অন্যতম প্রধান শস্য উৎপাদনকারী অঞ্চল উত্তরাঞ্চলীয় হেইলংচিয়াং প্রদেশ। অথচ এক সময়ের সবচেয়ে ঠাণ্ডা ও বিরূপ আবহাওয়ার শিকার এ অঞ্চল ছিলো পিছিয়ে পড়া। তবে আধুনিক কৃষি ও প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে বর্তমানে চীনের মোট শস্য উৎপাদনের ১১ শতাংশই আসে উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ থেকে। চীনের জাতীয় খাদ্য ও কৌশলগত সংরক্ষণ প্রশাসন বলছে, বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে এরইমধ্যে ভালো মানের পর্যাপ্ত খাবার সংরক্ষণ করা হয়েছে।
কখনো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দা আবারো কখনো বা খরা, বন্যা, ঘুর্নিঝড়-ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসবই আঘাত হানে মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্যের উপর। কখনো অপর্যাপ্ত চাষাবাদ আবার কখনোবা সরবরাহ সংকটে খাদ্য সংকটে পড়ে মানুষ। তাই বিশ্বের যে কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বরাবরই বিবেচনায় থাকে খাদ্য নিরাপত্তা।
পুবের দেশ চীনও খাদ্য নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয় সবার আগে। তাইতো দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে প্রস্তুতি। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ইয়াং শি লাই, কৃষক, তাইলাই কৃষিখামার
“প্রায় ৩০ বছর ধরে আমি এই খামারে কাজ করছি। নিজে দেখেছি কীভাবে এখানকার ফসল উৎপাদনের হার ২০০ কেজি থেকে ৭০০ কেজি হয়েছে। কৃষি শ্রমিকদের আন্তরিকতা আর উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণেই এতো ভালো ফলন অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এখন একজন শ্রমিক একাই বিপুল পরিমাণ জমি চাষ করতে পারে, আগের চেয়ে এটা ৭০ শতাংশ বেড়েছে।“
বিশেষ করে চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের কৃষি খামারগুলোর মাধ্যমে চীনের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে বহুমুখী পদক্ষেপ।
ছাও ছংছেন, জ্যেষ্ঠ কৃষিবিদ, তাইলাই কৃষিখামার
“সাধারণ সম্পাদক সি চিনপিং বলেছেন, কৃষিতে পরিপূর্ণভাবে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন কাজে লাগাতে হবে, আর এই খামারে আমরা সেটাই করছি। এখানে আমরা স্মার্ট কৃষির সমন্বয় ঘটিয়েছি এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। বিশেষ করে বড় আকারের কাজের ক্ষেত্রে আধুনিক কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে চাষাবাদ করছি। আমরা কৃষি উৎপাদন বাড়ানো এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে কাজ করতে চাই।“
চীনের ন্যাশনাল ফুড অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক রিজার্ভ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, সংরক্ষণ করা খাদ্য পণ্যের গুণগতমান ও পরিমাণ যেমন অনেক তেমনি সংরক্ষণের পদ্ধতিও বেশ উন্নত মানের।
ফ্যাং চিন, মুখপাত্র, ন্যাশনাল ফুড অ্যান্ড স্ট্যাটেজিক রিসার্ভস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
“বর্তমানে চীনের মাথাপিছু খাদ্যপণ্য সংরক্ষণের পরিমান ৪৮৩ কেজি। এই পরিমাণ সারা বিশ্বের গড় সংরক্ষণের তুলনায় বেশি। জাতীয় খাদ্যপণ্য সংরক্ষণের পরিমাণ, গুণগতমান ও সংরক্ষণের প্রক্রিয়ার দিক থেকেও বেশ উন্নত।“
এরইমধ্যে গম ও চাল মজুদের পরিমাণ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত শেষ হয়েছে। বিশেষ করে বেইজিং, সাংহাই, তিয়ানচিন ও ছংছিংয়ের মতো ৩৬টি বড় ও মাঝারি শহরে খাদ্যশস্য মজুদের কাজ প্রায় শেষের দিকে।