বাংলা

অস্থিতিশীল দুধের বাজার

CMGPublished: 2022-09-09 15:39:45
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

অস্থিতিশীল দুধের বাজার

আফরিন মিম, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বাংলাদেশে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে শিশু খাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের দুধের দাম। তরল দুধের দাম নতুন করে যেমন বাড়িয়েছে বিপণনকারী কোম্পানিগুলো, তেমনি বেড়েছে গুঁড়ো দুধের দাম।

চলিত বছরের মে মাস থেকে ধাপে ধাপে বাড়ছে বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত তরল দুধের দাম। গত মে মাসে যে দুধের দাম ছিল প্রতি লিটার ৭০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজার, তেজগাঁও, মৌচাক এলাকার মুদি দোকান ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজারে বিক্রি হওয়া তিনটি কোম্পানির পাস্তুরিত তরল দুধের প্যাকেটে লেখা মূল্য যাচাই করে দেখা যায়, তারা নতুন দাম নির্ধারণ করেছে প্রতি লিটার ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। এই দাম আগের চেয়ে ৭ থেকে ১০ টাকা বেশি। এ নিয়ে ৪ মাসে তরল দুধের দাম লিটারে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ -টিসিবি’র পরিসংখানে দেখা গেছে, ডানো ১ কেজি গুড়ো দুধের দাম ৮১০ টাকা, ডিপ্লোমা ৮০০ টাকা, মার্কস ৭২০ টাকা আর ফ্রেশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। মাসের ব্যবধানে ডানো ও ডিপ্লোমার দাম বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। আর বছর ব্যবধানে সব ধরনের দুধের দাম কেজিতে বেড়েছে অন্তত ১৩০-১৫০ টাকা। তবে বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আরও বাড়তি দরে।

এদিকে নতুন করে গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা। টিসিবির হিসাব বলছে, এক বছরে গুঁড়ো দুধের দাম প্রায় ২২ শতাংশ বেড়েছে। টিসিবির এই হিসাবে গুঁড়ো দুধের নতুন বাড়তি দাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সেটি যুক্ত হলে বছরের মূল্যবৃদ্ধির হার আরও বেশি দাঁড়াবে।

দেশের বাজারে মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ং, আকিজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পাস্তুরিত তরল দুধ প্রস্তুত ও বিপণন করে। বাজার ঘুরে মোড়ক যাচাই করে দেখা যায়, আড়ং ব্র্যান্ডের উৎপাদিত এক লিটার পাস্তুরিত তরল দুধের খুচরা দাম লেখা আছে ৯৫ টাকা। দাম বেড়েছে লিটারপ্রতি ৭ টাকা। যা গত মে মাসে বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়।

শুধু আড়ং নয়, বেড়েছে প্রাণ ও আকিজসহ অন্যান্য কোম্পানির তরল দুধের দামও। বুধবার বাজার ঘুরে প্রাণের যে তরল দুধ পাওয়া যায়, তাতে দাম লেখা ছিল প্রতি লিটার ৯০ টাকা। আকিজ গ্রুপের ফার্মফ্রেশ ব্র্যান্ডের দুধের দামও একই, প্রতি লিটার ৯০ টাকা রাখছিলেন বিক্রেতারা।

এছাড়া জানা গেছে, সরকার পরিচালিত সমবায়ভিত্তিক দুগ্ধজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি মিল্ক ভিটাও দুধের দাম ৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।

অন্যদিকে, বাজারে এখন আরলা ফুডসের গুঁড়া দুধের এক কেজির প্যাকেটের দাম ৮৫০ টাকা। যা গত জুনে ছিল প্রতি কেজি ৮০০ টাকা । বাজারে ডিপ্লোমা ব্র্যান্ডের এক কেজি গুঁড়া দুধের দাম এখন ৮৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৭৯০ টাকা।

তরলদুধ ও গুড়োদুধের দাম বাড়ার কারণে অনেকেই পড়েছেন বিপাকে। দুধের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা হতাশ হচ্ছেন দোকানে গিয়ে।

আট মাসের মেয়ের জন্য মৌচাকের খুচরা দোকানে মার্কস গুড়া দুধ কিনতে এসেছেন ওয়্যারলেস এলাকার বাসিন্দা আনসার মিয়া। তিনি জানান, “বড়রা না খেয়েও থাকতে পারে। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য লাগবেই। দাম বাড়াটা আমাদের মধ্যবিত্তদের জন্য কষ্টসাধ্য”।

একই কথা আরেক বিক্রেতার সুরে। তিনি জানান, “দিন দিন দুধের দাম যেভাবে বাড়ছে তা আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে”।

এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, বিশ্ববাজারে গুঁড়া দুধের দাম বেঁড়েছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতে খরচ বেড়েছে। এতে দুধের দাম বাড়াতে হচ্ছে।

মৌচাক মুদির দোকানী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “পাউডার সব দুধই বাজারজাত করা হয় বিদেশ থেইকা। বাইরে থেইকা আসতে খরচ বেশি হয়। সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়”।

আরেক বিক্রেতা বলেন, “আমরা বেশি দামে কিনি তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। গত সপ্তাহে মার্কস দিয়েছে ৬৬০ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে কিনতে হইছে ৭০০ টাকা কেজি। ৪০ টাকা কেজিতে বাড়ছে। এরপরও নাকি আরও বাড়বে”।

সম্পাদনা – সাজিদ রাজু

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn