জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, নাগরিক জীবনে নাভিশ্বাস
আফরিন মিম, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বিশ্ববাজারের সাথে সমন্বয় করতে হঠাৎ করেই বাংলাদেশে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫% বেড়ে হয়েছে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা। পেট্রোলের দাম ৫১.১৬% বেড়ে প্রতি লিটারের দাম হয়েছে ১৩০ টাকা। আর অকটেনের দাম বেড়েছে ৫১.৬৮%, প্রতি লিটার কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৩৫ টাকা। ৬ আগস্ট ভোর রাত থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর করা হয়েছে।
রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বাজার দর আগে থেকেই চড়ে ছিল, এবার নিম্নবিত্তের মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে দিয়ে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে বাড়ানো হয়েছে অনেকটা।
এদিকে জ্বালানির দাম বাড়ায় যাত্রী ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে পরিবহন মালিকরা। দেশের অধিকাংশ গণপরিবহন বিশেষ করে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও নৌযান ডিজেল চালিত। সুতরাং ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পুনরায় সকল প্রকার গণপরিবহণের ভাড়া বাড়িয়েছে পরিবহণ মালিকরা।
জালানির দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। সাধারণ মানুষ অভিযোগ করছে আগের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে কাঁচা- বাজার।
দেশের প্রান্তিক জনপদের গরিব মানুষ ও চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষেরাই বলতে গেলে কেরোসিন তেল ব্যবহার করে। কেরোসিনের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি খেটে খাওয়া গবীর মানুষের জীবন মানের ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। বেড়েছে সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ।
জ্বালানির দাম হঠাত বাড়ায় ক্ষুব্ধ মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা আফসার আলী। তিনি
চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে জানান, “আমাদের দেশেই নাকি অকটেন ও পেট্রোল উৎপাদন হয়। তাহলে এগুলার দাম বাড়লো কেন?
লাইনে ধরে পরিবাগ পেট্রোল পাম্প থেকে তেল নিচ্ছেন গোপীবাগ এলাকার বাসিন্দা রুবায়েত হোসেন। তিনি জানান, “লাইনে দাঁড়িয়েও কোন লাভ হচ্ছে হচ্ছে না। তেল পাচ্ছি না”।
মোহাম্মদ আলম জানান, “আমরা অনেক কষ্টে আছি। এই কষ্টের মধ্যেই সরকার ৪৬ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। ১০ টাকা ৫ টাকা হইলেও হইতো। এতোগুলা টাকা কি মানানসই’।
কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আশা তোফাজ্জ্বল জানান, কাঁচা বাজারে এসে সবজির নতুন দাম দেখে আমি হতাশ। দুইদিন আগেও এর মরিচ, শাকের দাম কম ছিল”।
হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই বলছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী, অধ্যাপক ম তামিম।
অধ্যাপক ম তামিম
“ বাংলাদেশে যে জ্বালানির দাম নির্ধারণ করা হয় তার সাথে ভর্তূকি দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে কিছুটা সমন্বয় করা হয় মাঝেমধ্যে যখন দীর্ঘদিন ধরে মূল্য বৃদ্ধি পায়। কিন্তু আমরা দেখেছি দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানির দাম কম থাকলেও বারানো হচ্ছে এর দাম। বিশ্ব বাজারে ইতিমধ্যে কমে গেছে , ক্রুড অয়েলের দাম এখন ৯০ ডলার, প্রোডাক্টের দামও এখন ১৩০-১৩৫ এর কমে আসছে , যেটা ১৭০ ডলার পর্যন্ত ছিল। এখন বাংলাদেশে যে দাম নির্ধারণ করা হয়ে হয়েছে তা ১৭০ ডলার বা উচ্চমূল্যকে যোগ করেই করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য বাস্তবসম্মত না”।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বাংলাদেশে ১৭ বার ডিজেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ বার বেড়েছে আর চারবার কমেছে।
সম্পাদনা- সাজিদ রাজু