বাংলা

সাগরে কোরালরিফ ফিরিয়ে আনার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ চীনের

CMGPublished: 2022-06-16 20:24:15
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

সাজিদ রাজু, জুন ১৬: সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান স্বাভাবিক রাখতে যেখানে ৫০ শতাংশ হওয়া দরকার কোরালের, সেখানে দক্ষিণ চীন সাগরে কোরালের উপস্থিতি মাত্র ১০ শতাংশ। সমূদ্র বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে সমূদ্রের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, কমছে কোরালের সংখ্যা। তবে চীনের প্রচেষ্টা থেমে নেই। চায়না অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের একদল বিজ্ঞানী কোরালের সংখ্যা বাড়াতে নিয়েছে নানা পদক্ষেপ।

দক্ষিণ চীন সাগরের বিরল বৈশিষ্টের একটি এখনকার বিরল প্রজাতীর কোরাল রিফ। সমুদ্র তলের বাস্তুসংস্থান রক্ষা এবং ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সামুদ্রিক প্রাণি ও মাছের বসবাসের জায়গা এসব কোরাল রিফ। পাশাপাশি জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার অন্যতম উপাদান এই বিশেষ জীবন্ত সত্তা।

সমুদ্র বিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘদিনের বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে এখন ধ্বংসের পথে আড়াই কোটি বছর ধরে সমুদ্র তলদেশে বিস্তার লাভকরা দুর্লভ কোরাল রিফ। বিশেষ করে ১৯৯৮ সালে ঘটা উষ্ণ সমুদ্র স্রোত বা এল নিনোর কারণে বিশ্ব ব্যাপী বিপুল সংখ্যক কোরালের মৃত্যু হয়। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে গেল ৩ দশকে বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত কমছে এই কোরাল রিফের সংখ্যা। দক্ষিণ চীন সাগরের জলজপ্রাণির অন্তত ৫০ শতাংশ যেখানে কোরাল থাকার কথা সেখানে আছে মাত্র ১০ শতাংশ। তাই কপালে চিন্তার ভাজ পরিবেশ কর্মী ও সমুদ্র বিজ্ঞানীদের।

তবে আশার কথা, সীবেডে মহামূল্যবান এসব কোরাল রিফ ধ্বংসের হাত থেকেই কেবল নয় বরং সঠিক অনুপাতে ফেরাতে কাজ শুরু করেছে চীনের একদল বিজ্ঞানী।

চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠান সাউথ চায়না সি ইনস্টিটিউট অব ওশেনোলজি। এখানকার নিবেদিতপ্রাণ গবেষণ হুয়াং হুই। দীর্ঘ ২ দশমের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এ পদক্ষেপের ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন।

হুয়াং হুই, গবেষক, সাউথ চায়না সি ইনস্টিটিউট অব ওশেনোলজি

“কোরালের সংখ্যা এই নাটকীয়ভাবে কম থাকার কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতা। আমাদের লক্ষ্য সমুদ্রের এই মরুকরণ ঠেকানো। অন্যভাবে যদি বলি, আর কোন কোরালকে আমরা হারাতে দেবনা। কোরালগুলো যেন নিজে নিজেই বংশবিস্তার করতে পারে সেই পরিবেশ আমরা তৈরি করে দেব।“

বিজ্ঞানীরা বলছেন গাছের সঙ্গে বৈশিষ্ট্য অনেক মিল থাকায় বৃক্ষরোপনের মতোই কোরালগুলোকে সমুদ্রতলদেশে স্থাপন করা হয়। পরে এদেরকে অযৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তার ঘটানো হয়। তবে কাজটি সহজ নয়। সমুদ্রের তলদেশে অভিকর্ষজ ত্বরণ অনেক কম ও প্লবতা অনেক বেশি থাকায় এখানে কাজ করা খুব কঠিন।

এই সমুদ্র বিজ্ঞানী বলছেন, কোরাল রিফ গঠন করার প্রক্রিয়ার মাত্র প্রাথমিক ধাপ এই কোরাল রোপন করা। কোরাল রিফ হতে হলে সেখানে যেমন মাছ থাকতে হবে, তেমনি থাকতে হবে শেফফিস, শৈবাল, চিংড়ি ও চিংড়িজাতীয় প্রাণি এমনকি অন্যান্য সামুদ্রিক জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণিও থাকতে হবে। তবেই সমুদ্র স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।

“আমাদের দেশ এই গবেষনায় অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। পাশাপাশি বহু নতুন কর্মী যোগ দিচ্ছে গবেষণা দলে। আমরা বলতে পারি, যোগ্য জনশক্তি অন্তত গবেষণায় পাওয়া গেছে। আমি প্রথম ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক কোরাল রিফ বিষয়ক একটি সিম্পোজিয়ামে অংশ নেই। সে সময় এই অঙ্গনে চীন থেকে আমি একাই ছিলাম। তবে বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে চীনই এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে।“

টানা ২০ বছর ধরে নিরলস পরিশ্রমের পর দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় ২ লাখ বর্গ মিটার এলাকায় রোপন করা হয়েছে কোরাল চারা। আর এতেই আসছে ইতিবাচক ফলাফল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কেবল কোরাল রিফ ফিরিয়ে আনাই নয়, মানবতার জন্যই বিভিন্ন প্রাণি ও উদ্ভিদের সুষম বিন্যাসে আবারো পুনর্জাগর ঘটবে সাগরের পরিবেশের।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn