সিলেটের বন্যায় কৃষি ও মৎস্য খাতের ব্যাপক ক্ষতি
আফরিন মিম, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: দেড় যুগ পর বন্যার পানিতে ভাসছে সিলেটবাসী। পাহাড়ি ঢল, উজানের ভারি বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগ সিলেট। চলতি মাসে শুরু হওয়া বন্যার পানি এখন কিছুটা কমে এলেও একে বারে নেমে যায়নি। তাই এখনো ঘরে ফেরা হয়নি ক্ষতিগ্রস্তদের।
গেল কয়েকদিনের বন্যায় ডুবে গেছে কৃষকের ফসল। ভেসে গেছে হাজার হাজার পুকুরের মাছ। পানিবন্দিদের ব্যাপক দুর্ভোগের পাশপাশি ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব পড়েছে এ এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উপর।
মৎস্যখাতে ক্ষতি
সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকার বাসিন্দা মখলুসুর রহমান জানান, “গ্রামে অনেক মানুষের ফিশারী আছে সব ফিশারী গুলার মাছ বাইর হইয়া আসছে”।
একই এলাকার বাসিন্দা সুমন আফসারী জানান, “আমার ৪ টা ফিশারীতে ৭০ হাজার পোনা আছিল। সব পানিতে নাইমা গেছে”।
এদিকে জেলা মৎস্য অফিস বলছে, সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলায় ৮ হাজার ৩২২টি পুকুরে খামারিরা মাছ চাষ করেছেন। এগুলোর মধ্যে ৭ হাজার ২৫১টি পুকুর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরের মোট আয়তন ৮৫৪ দশমিক ৭০ হেক্টর। টাকার হিসাবে মোট ৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সিলেট মৎস্য জরিপ কর্মকর্তা মোঃ গিয়াস উদ্দিন চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে জানান, বন্যায় কবলিত ১১ টি উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মোট ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর, দিঘী ও খামারের সংখ্যা ১৮ হাজার ৭’শ ৪৯ টি। আর্থিক ক্ষতি ২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা”।
সরকার থেকে অনুদান দিলে মাঠপর্যায়ের কৃষকদের কাছে সেই অনুদান পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
মোঃ গিয়াস উদ্দিন, মৎস্য জরিপ কর্মকর্তা, মৎস্য অফিস, সিলেট
‘মৎস্য অধিদপ্তর থেকে যদি সার, পোনা দেওয়া হয়, তাহলে উপজেলা অনুযায়ী আমরা বিতরণ করবো। আর যদি না আসে, তাহলে আমাদের অফিস থেকে আমরা টেকনিক্যাল পরামর্শ যেমন- কীভাবে কাটিয়ে উঠতে পারে, কখন পোনা মজুদ করতে হবে সেসব পরামর্শ দিবো”।
কৃষিখাতে ক্ষতি
এবারের বন্যায় ধানের জমি তলিয়ে গেছে জকিগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রী এলাকার বাসিন্দা আরিফা খাতুনের। তিনি জানান, “ফসল যার যার তলাইছে, হেতো নিতে পারে নাই বাড়িতে। চার পাঁচ পাখি, আবার কারোর দশ পাখি এরকম ভাবে তলাইগেছে গা”।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তের উপপরিচালক কাজী মুজিবুর রহমান জানান, বন্যায় সিলেটের ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, যেখানে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৫ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা, ১ হাজার ৭০৪ হেক্টর বোরো ধানের বীজতলা, যেখানে ক্ষতির পরিমাণ ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ও ১ হাজার ৫৩৮ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, বন্যার পানি এখনো পুরো নেমে যায়নি। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আমরা ধারণা করছি”।
মোহাম্মদ কাজী মুজিবুর রহমান, উপ-পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেট
“বোরো ধান যেহেতু শতভাগ কর্তন করা হয়েছে সেহেতু এখানে কিছু করার নেই। আউশ ধানের ক্ষেত্রে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বীজতলা না করে, কাদা মাটিতে সরাসরি ছিটিয়ে বীজ বুনতে। আর সবজির ক্ষেত্রে আমরা পানি সরে যাওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের সবজি লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছি। এবং আমরা বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি”।
এদিকে, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে। তবে সুরমা নদীর পানি সিলেটের সব পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।