‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজন দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া’
মে ১৯, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বাংলাদেশে অর্থ আত্মসাৎ ও বিপুল টাকা পাচার মামলার আসামি পি কে হালদারকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেপ্তার করার পরই অর্থপাচার ঘটনায় আবার সরব বাংলাদেশ।
দেশ থেকে অর্থ পাচার অত্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারের আইন যতোই কঠোর হোক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে অর্থ পাচার থেমে নেই।
সাধারণত আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার হয়ে থাকে বেশি। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য বেশি দেখানো বা ওভার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে মূল কম দেখানো বা আন্ডার ইনভয়েসিং এই অর্থ পাচারের অন্যতম কৌশল। এছাড়া ভুয়া রপ্তানি এলসি ও ক্রয়চুক্তির মাধ্যমেও অর্থ পাচার হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি -জিএফআই সারা বিশ্বে অবৈধ অর্থ লেনদেনের ওপর গবেষণা করে। সংস্থাটি বিভিন্ন সময় সংশয়পূর্ণ অর্থ লেনদেনের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গেল ২মে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি অর্থ পাচারের যে তথ্য প্রকাশ করে, তাতে দেখা যায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৯১১ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে৷ বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। এবারের প্রতিবেদনে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা৷
বাণিজ্যের আড়ালে দেশ থেকে বছরে পাচার হচ্ছে ৬৪ হাজার কোটি টাকা, জিএফআই’র গ্রাফচিত্র
২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে টাকা পাচার ও তার শাস্তির ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলা আছে। কীভাবে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে, সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও অপরাধীর শাস্তির কথা বলা আছে। বর্তমান আইনে পাচারকৃত অর্থের দ্বিগুণ জরিমানার বিধান আছে। একইভাবে এর সঙ্গে জড়িতদের ৪ থেকে ১২ বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন নেই। ফলে টাকা পাচার বাড়ছে।
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বিভিন্ন সময় নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ । বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার নজিরও রয়েছে। ২০১২ ও ২০১৩ সালে তিন দফায় সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে থাকা আরাফাত রহমান কোকোর ২১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ফেরত আনতে সক্ষম হয় দুদক।
সংস্থাটির প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে জানান, “একশো কোটি টাকার উপরে অর্থ আদালতের নির্দেশে জব্দ আছে বিদেশে। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা অর্থ পাচারকারীর সবোর্চ্চ শাস্তি চাই। আইনী প্রক্রিয়া, চাইলেই টাকা ফেরত আনা সম্ভব না। লিগ্যাল প্রসিডিউর ফলো করতে হয়”।
খুরশীদ আলম খান, আইনজীবী , দুদক
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অর্থপাচারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নজরদারি ও তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করা প্রয়োজন। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার কাজটি যেহেতু অপেক্ষাকৃত জটিল, সেহেতু পাচার রোধের বিষয়টিতে জোর দেওয়া উচিত বেশি।
এদিকে টাকা পাচার বেড়ে যাওয়ায় দেশ বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এটা অব্যাহত থাকলে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন হবে। কাঙ্ক্ষিত হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। বিদেশে অর্থ পাচার হলে দেশের অর্থনীতির উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- সাজিদ রাজু