বাংলা

“উদীয়মান রিসোর্ট শিল্পের মূল চ্যালেঞ্জ সেবার মান ধরে রাখা”

CMGPublished: 2022-05-05 19:43:57
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

সাজিদ রাজু, ঢাকা: প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে আধুনিক সুযোগ সুবিধার সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে রিসোর্ট। শহর থেকে দূরে, খোলামেলা ও নিরিবিলি পরিবেশ এবং দূষণমুক্ত আবহাওয়ার কারণে বহু মানুষ এখন আনন্দ সময় কাটাতে বেছে নিচ্ছে রিসোর্ট। বিশেষ করে এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছুটি কাটাতে মানুষের বিদেশমুখিতা কমাতে ও বিদেশী পর্যটক আকর্ষণ করতে ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন মানের রিসোর্ট।

ইট পাথরের নগরীতে ক্লান্ত মানুষ নিজের মতো করে সময় কাটানোর ফুরসত খোঁজে অহরহ। সুযোগ পেলেই পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়িয়ে আসে একটু স্বস্তির আশায়। সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক পরিবেশের সঙ্গে যদি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় তাতে মন্দ কী? তাই তো পর্যটন আকর্ষণের নানা জায়গার পাশাপাশি বর্তমানে ভ্রমণ পিপাসুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে রিসোর্ট।

নিরিবিলি পরিবেশ ও নিজের মতো একান্তে সময় কাটানোর মোক্ষম সুযোগ করে দেয় এসব রিসোর্ট। বিশেষ করে দীর্ঘ যাত্রা পথের ঝক্কি এড়িয়ে নিরিবিলি পরিবেশ পেতে ঢাকার পাশের জেলাগুলোতে গড়ে ওঠা রিসোর্ট তাই তাদের প্রথম পছন্দ। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন বলছ, দেশজুড়ে অন্তত ৮ শতাধিক রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে কেবল গাজীপুরেই আছে শতাধিক রিসোর্ট। মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকাও পরিচিতি পেয়েছে নানা রকমের রিসোর্টের জন্য।

ঢাকার পাশের জেলা মুন্সিগঞ্জে গড়ে তোলা হয়েছে দর্শনীয় রিসোর্ট ‘নিউ ঢাকা সিটি ইন’। প্রিমিয়াম গ্রুপের অর্থায়নে নির্মিত এ রিসোর্টটিতে আছে নানা সুযোগ সুবিধা। অতিথিদের থাকা-খাওয়াসহ আনন্দ সময় কাটানোর নানা ব্যবস্থা আছে এখানে। গ্রুপের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান শেখ মো. মাসউদ জানান, গেল এক দশকে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রাখছে ইতিবাচক অবদান।

শেখ মো. মাসউদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান, প্রিমিয়াম গ্রুপ

“বিশেষ করে শীতকালে পর্যটন মৌসুমে অন্যান্য স্থানের পাশাপাশি রিসোর্টে মানুষ সময় কাটাতে পছন্দ করে। তাই এ সময় আমাদের এখান ব্যস্ততা অনেক বাড়ে। সাধারণত প্রতি বছর নভেম্বরের শুরু থেকে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রচণ্ড ভিড় থাকে রিসোর্টগুলোতে। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবেও মানুষের ঢল নামে রিসোর্টগুলোতে। তবে ঢাকার পাশে হওয়ার বছরের অন্যান্য সময়েও অতিথিদের বেশ আনাগোনা থাকে।”

বাংলাদেশে গড়ে ওঠা অনেক রিসোর্টে আছে ৫ তারকা মানের সুযোগ সুবিধা। এসব জায়গায় সময় কাটাতে দিনে গুণতে হয় দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। বিশেষ করে রিসোর্টে যেসব সেবার ব্যবস্থা করা হয় তাতে পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দঘন সময় কাটাতে মানুষ উদ্বুদ্ধ হয় বলেই অভ্যন্তরীণ পর্যটনখাত চাঙ্গা হচ্ছে। এমন মত ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ –টোয়াব’র প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের নির্বাহী কমিটির সদস্য রাফেউজ্জামানের। তিনি মনে করেন, রিসোর্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের উচ্চ বিত্তের পর্যটকদের বিদেশমুখীতা থেকেও ফেরানো সম্ভব হয়েছে।

রাফেউজ্জামান, প্রেসিডেন্ট, টোয়াব

“একেকটা রিসোর্ট অনেক পর্যটককে আকৃষ্ট করে। বিভিন্ন রকমের সেবা, খাবার সরবরাহ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ, ইনডোর-আউটডোর বিভিন্ন রকমের খেলাধূলার ব্যবস্থাসহ বিনোদনের নানা উপকরণ রিসোর্টে থাকে বিধায় পর্যটকরা পরিবার পরিজনসহ এখানে এসে আনন্দ পায়। সারা বিশ্বেই রিসোর্টের চাহিদা বেশি কারণ এখানে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সেবা পাওয়ার বিপুল সুবিধা থাকে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে আরও আকর্ষণীয় করতে রিসোর্টগুলো দারুণ ভূমিকা পালন করছে।”

তবে বাংলাদেশের রিসোর্টগুলো কতোটা নীতিমালা অনুযায়ী গড়ে উঠেছে তা নিয়ে আছে সংশয়। ২০১৬ সালে প্রণয়ন করা বাংলাদেশ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট পলিসিতে বলা হয়, ৫ তারকা মানের রিসোর্টে অন্তত ৪৬ ধরনের সুযোগ সুবিধা রাখতে হবে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫০টি কক্ষ থাকতে হবে, ৩টি পিকনিক স্পট, বিনোদন পার্ক, ইনডোর ও আউটডোর খেলার সুযোগ, ২০০ আসনের ব্যাঙ্কুয়েড হল, দুটি খাবার হল ও একটি রেস্টুরেন্ট থাকবে হবে। মিটিং রুম থাকতে হবে কমপক্ষে ৩টি ও একটি ডে-টুর সুবিধা থাকতে হবে।

সাধারণত একজন পর্যটকের তার পরিবার নিয়ে রিসোর্টের ভেতরেই প্রাকৃতিক পরিবেশের যেকোন নিদর্শন যেমন পাহাড়, বন, সমূদ্র কিংবা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারার কথা। সেই সঙ্গে যুক্ত হবে আধুনিক জীবনের নানা সুযোগ সুবিধা। কিন্তু পর্যটন ও রিসোর্ট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গড়ে ওঠেনি বাংলাদেশের রিসোর্টগুলো।

টুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ -ট্রিয়াব’র প্রেসিডেন্ট খবির উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অনেকে ৩-৪ রুমের কটেজ নির্মাণ করেই নাম দিয়েছে রিসোর্ট।

খবির উদ্দিন আহমেদ, প্রেসিডেন্ট, ট্রিয়াব

“আগে মালদ্বীপ, ভূটান, নেপালসহ অনেক দেশের মানুষ খেতে পারতো না। এখন পর্যটনখাত হয়ে গেছে তাদের উপার্জনের অন্যতম খাত, অর্থনীতির চালিকা শক্তি। এখন বহু দেশের জিডিপি’র অর্ধেক বা অর্ধেকের বেশি অবদান রাখছে এ খাত। আমাদের এখন ৪ শতাংশের কাছাকাছি অবদান রাখছে পর্যটন খাত। আমাদের যেসব পর্যটন স্থানআছে, এসবকে যদি আমরা সাজানো-গোছানো ভাবে উপস্থাপন করতে পারি তাহলে এ খাতের সম্ভাবনার কোন শেষ নেই। বিশেষ করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে পর্যটনখাতের এসব প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়ন ও তদারকির তাই কোন বিকল্প নেই।”

২০১০ সালে যাত্রা শুরু করা এই শিল্পের মালিকদের সংগঠনে সদস্য সংখ্যা এখনো ৫০ এর নিচে। এ প্রসঙ্গে ট্রিয়াব প্রেসিডেন্ট বলছেন, মানদণ্ডের আলোকে প্রকৃত রিসোর্টের সংখ্যা ২শ’র বেশি হবে না।

“৮শ’র মধ্যে ৩-৪শ’ আছে মানুষের বাগান বাড়ি। কোনটা রিসোর্ট আর কোনটা রিসোর্ট না এ ব্যাপারে সরকার একটি বিধিমালা তৈরি করেছে। সেই বিধিমালা অনুযায়ী অনেকেই এখন লাইসেন্স নিচ্ছে। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, রিসোর্ট কোথায় হবে এবং কেমন বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। গাজীপুরে শহরের মধ্যে রিসোর্ট বানালেই সেটা রিসোর্ট হবে না। অনেকে ঢাকার মধ্যে কিছু একটা করে বলে রিসোর্ট। শহর থেকে অনেক দূরে, নিরিবিলি ও খোলামেলা পরিবেশ থাকতে হবে। যেখানে কোন দূষণ থাকবে না, মুক্ত আবহাওয়া থাকবে এমন পরিবেশে হতে হবে রিসোর্ট।”

বাংলাদেশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলোতে সামনের দিনগুলোতে সেবার মান ও সুনাম ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।

আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, পরিচালক, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড

“আমরা মনে করি, রিসোর্টগুলোর সেবার মান নিশ্চিত করতে হলে সব সময় তদারকি করতে হবে। সাধারণত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে এগুলোর দেখভাল করা হয়। সব সময় নিয়মিত করা সম্ভব হয় তা বলা যাবে না। মন্ত্রণালয় ও ট্যুরিজম বোর্ডের লোকবল কম। এই মান ধরে রাখা আসলেই একটি চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা আমাদের সেবা ঠিক রাখতে কিছু নতুন পদক্ষেপ ও লোকবল বাড়ানো চেষ্টা করছি।”

নীতিমালায় বলা হয়, ৫ তারকা, ৪ তারকা ও ৩ তারকা মানের রিসোর্টের নিবন্ধন নিতে হবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে। আর ১ তারকা ও ২ তারকা মানের রিসোর্টের নিবন্ধন নিতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn